হোয়াইট ফাঙ্গাস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের তুলনায় বেশি বিপজ্জনক। তাই আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিলম্ব হলে মৃত্যুও হতে পারে। এ ছত্রাক সংক্রমণের বিষয়টি নতুন নয়। সাদা ছত্রাক শ্লেষ্মাজনিত কারণে হয়ে থাকে, যা এরই মধ্যে আমাদের পরিবেশে বিদ্যমান।
হোয়াইট ফাঙ্গাস কী?
হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটি ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং মস্তিষ্ক, শ্বসনতন্ত্র, পাচনতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের ঝুঁকিতে কারা?
হোয়াইট ফাঙ্গাস এমন ব্যক্তিদের আক্রমণ করে; যারা ইমিউনোকম্প্রেসড, অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ছত্রাক সংক্রমণ বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটি সংক্রামক নয়, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষদেরকে বেশি আক্রমণ করে।
অনেকটা করোনাভাইরাসের মতোই হোয়াইট ফাঙ্গাসের জীবাণুও ছড়িয়ে যেতে পারে। যেমন- আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস নেওয়া বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ছত্রাকের জীবাণু। এমনকি ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন; তাদের হোয়াইট ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের লক্ষণ
হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাকের লক্ষণগুলো অনেকটা করোনা উপসর্গের মতোই। ফুসফুসে প্রদাহ, বুকে ব্যথা, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এমনকি ফুলতেও পারে।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের উৎপত্তি
হোয়াইট ফাঙ্গাস মাটি, গাছপালা, সারে উপস্থিত। হোয়াইট ফাঙ্গাসের উপসর্গগুলি প্রকট নয়। ফলে নিঃশব্দেই ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এই ছত্রাক। অনেক ক্ষেত্রেই করোনা রোগীর মত সাধারণ কিছু উপসর্গ থাকে হোয়াইট ফাঙ্গাসে। এজন্য সিটি স্ক্যান করে দেখতে হবে।
হোয়াইট ফাঙ্গাস থেকে বাঁচতে কী করবেন?
করোনাকালে বাড়ছে হোয়াইট ফাঙ্গাসের আশঙ্কা। করোনাতে এমনিতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। আর করোনা চিকিৎসায় স্টেরয়েড দেওয়া হয় যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। ফলে আরও ঝুঁকি বাড়তে থাকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার।
প্রতিদিন সুগারের মাত্রা চেক করা, মাস্ক পরা, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম কাজ হল শরীরচর্চা করা। তবে করোনা থেকে সেরে উঠেই শরীরচর্চা করা ঠিক না। কিছুক্ষণ হাটা ও হালকা শরীরচর্চা করতে হবে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও যাতে ঠিক মাত্রায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
হোয়াইট ফাঙ্গাস ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা
হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক খুব দ্রুত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক, যৌনাঙ্গ— সমস্ত অঙ্গই অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। নখের মাধ্যমে শরীরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে হোয়াইট ফাঙ্গাস (White Fungus) । তারপর অঙ্গগুলিকে বিকলও করে দিতে পারে এই ছত্রাক। হোয়াইট ফাঙ্গাস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক ও ভয়াবহ।
কীভাবে ছড়াচ্ছে এই সংক্রমণ?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শুধুমাত্র মুখের আশপাশের অঙ্গগুলিতেই হয়। কিন্তু হোয়াইট ফাঙ্গাস অন্য অঙ্গে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক, যৌনাঙ্গের সমস্ত অঙ্গকেই দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে এই ভাইরাসে।
কেন বেশি ভয়ানক হোয়াইট ফাঙ্গাস?
এই ছত্রাক অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নানা অঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। যাদের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ পাওয়া যায়, তাদের কোভিডের যাবতীয় উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ে না। হোয়াইট ফাঙ্গাস গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের বেশি পরিমাণে আক্রান্ত করতে পারে। হোয়াইট ফাঙ্গাস বেশ চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
হোয়াইট ফাঙ্গাস বিরল সংক্রমণ
ব্লাক ফাঙ্গাসের বিপজ্জনক রূপ হলো হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক। এই রোগের প্রভাবে ফুসফুসজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। পেট, যকৃত, মস্তিষ্ক, নখ, ত্বক এবং গোপনাঙ্গেও ক্ষতি করতে পারে হোয়াইট ফাঙ্গাস। লক্ষণ দেখে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন হোয়াইট ফাঙ্গাস আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মানবদেহে জিহ্বা বা গোপনাঙ্গ থেকে এই ছত্রাকের সংক্রমণ প্রথম ছড়ায়। এ কারণে জিহ্বা সাদা বর্ণের হয়ে যায়।
নারী ও শিশুদের ঝুঁকি
নারী এবং শিশুদের বেশি পরিমাণে আক্রান্ত করতে পারে হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক। হোয়াইট ফাঙ্গাস গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের বেশি পরিমাণে আক্রান্ত করতে পারে। ছত্রাকটি হল কোভিড পরবর্তী অ্যাসপারজিলোসিস বা এক ধরনের ফাঙ্গাস। যা সাদা রঙেরই হয়। কিন্তু হোয়াইট ফাঙ্গাসের তুলনায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস অনেক বেশি মারাত্মক। তাই হোয়াইট ফাঙ্গাস যে বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা মানা যায় না।”