সুস্থতার জন্য প্রতিদিন বাদাম খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি৩, ফলিক অ্যাসিড ও প্রোটিন রয়েছে। কাঁচা বাদামের চেয়ে ভেজে খাওয়া বাদামে পুষ্টিগুণ আরও বেশি। তাই প্রতিদিন বাড়তি টাকা খরচ করে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস না খেয়ে বাদাম খান নিশ্চিন্তে।
বাদাম সুস্থ রাখবে আপনাকে। বাদামে প্রচুর পরিমাণে মনো আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য খুব উপকারি। খাবারের সঙ্গে বাদাম মিশিয়ে খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক থেকে দূরে থাকা যাবে। ভেজে নিলে এতে পলিফেনলের পরিমাণও বেশি হয়। বাদামে থাকা ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, নিয়াসিন ও ম্যাঙ্গানিজ হার্টের জন্য খুব ভালো। এতে কো এনজাইম কিউ টেন এর পরিমাণ অনেক যা আপনাকে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখবে।
আলঝেইমার মানে স্মৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া রোগ নিরাময়ে বাদাম উপকারি। এতে নিয়াসিন বেশি থাকে যা আলঝেইমার রোধ করে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে। নিয়মিত বাদাম খেলে তা গলব্লাডারের পাথর হওয়া রোধ করে। দুর্বল স্বাস্থ্য ও কম ওজন যাদের, তারা নিয়মিত বাদাম খেতে পারেন। উঠতি বয়সী শিশুদের জন্যও বাদাম খুব উপকারি, কারণ এতে প্রচুর অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে।
বাদামে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। আর তাই শরীর থেকে টক্সিন অর্থাৎ ক্ষতিকারক উপাদান বের করে ওজন কমাতে সাহায্য করে বাদাম।গর্ভবতী নারীরা নিয়মিত বাদাম খেলে তাদের সন্তানের অ্যাজমা হওয়ার আশংকা কমে যায়। আপনি যদি হতাশায় ভোগেন, তাহলে বাদাম খান। এতে আছে ট্রিপটোফান, যা সেরোটনিন মুক্ত করে হতাশা দমনে সাহায্য করে। এছাড়া পাকস্থলির ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার ও স্ট্রোক রোধে বাদাম খুব উপকারি। তাই প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খান, সুস্থ থাকুন।
বাদাম হচ্ছে শক্তি, প্রোটিন ও ভালো চর্বির উৎস। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত বাদাম রাখা দরকার। অনেক ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। এর মধ্যে চিনাবাদাম, আখরোট, কাজু ও পেস্তাবাদাম খেতে পারেন। সুস্থ থাকতে খাবারের সঙ্গে নানাভাবে বাদাম যুক্ত করতে পারেন। খাবারের পরপর রক্তে লিপিড ও ট্রাইগ্লিসারাইডসের মতো একধরনের চর্বি রক্তে বেড়ে যায়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলেও যদি তিন আউন্স পরিমাণ বাদাম খাওয়া যায় রক্তে লিপিড বাড়ার হার কমে। খাবারের সঙ্গে চিনাবাদাম খেলে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত ট্রাইগ্লিসারাইডস স্তর কমতে দেখা যায়। খাবারের পর ধমনি কিছুটা দৃঢ় হয়ে যায়। কিন্তু খাবারের সঙ্গে বাদাম যুক্ত করলে এ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কাঠবাদামে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় শরীরের হাড়গুলোকে শক্ত ও মজবুত করে। শরীরের কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে কাঠবাদাম। এতে চর্বির পরিমাণ কম। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন আছে। হৃদ্রোগ যাঁদের আছে, তাঁরা এ থেকে উপকার পাবেন। কাজুবাদামে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক আছে। কাজুবাদাম শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।পেস্তাবাদামে প্রচুর পরিমাণে চর্বি আছে, এটি শক্তি জোগায়। এতে পটাশিয়াম, আয়রন, কপার, জিংক ইত্যাদি আছে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। চিনাবাদামে প্রোটিন বেশি থাকায় এটি হৃদ্রোগীদের জন্য উপকারী। শরীরে রক্ত চলাচল সাহায্য করে। আখরোটে ওমেগা-৩ ও ৬ বিদ্যমান আছে। কিন্তু কোলেস্টেরল নেই।
বাদাম কী ওজন কমানোর কোন গোপন রহস্য। বেশ কয়েকটি জরিপে বেশি পরিমাণ বাদাম খাওয়া (দিনে ২/৩ বার) এবং ওজন কমে যাওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। বেথ ইজরায়েল মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা ২০১০ সালে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ছোট একটি জরিপ পরিচালনা করেন। এতে দেখা যায় নাস্তার সময় কিছু আখরোট খেলে দুপুরের খাবার সময় পেট ভরাভরা লাগে, ফলে কম খাওয়া সম্ভব হয়। ক্যালরি কম খাওয়া হলে ওজন হ্রাসে সহায়তা হয়। বাদাম খেলে যেহেতু পেট ভরাভরা লাগে, তাই তো কম ক্যালরি খাওয়ার ব্যাপারে সহায়ক হবে।
বাদামে থাকে পর্যাপ্ত চর্বি ও প্রোটিন এবং এর চর্বির প্রায় পুরোটাই অসম্পৃক্ত ধাঁচের অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর। এতে ভিটামিন বেশি না পাওয়া গেলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। তাছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম সহ প্রয়োজনীয় আরো কিছু খনিজ এতে রয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ যারা করেন, তারা ক্যালরি বেড়ে যাওয়ার ভয়ে বাদামের চর্বি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। বাদামে শর্করা সামান্যই আছে। ফলে বাদাম খেলে ওজন বাড়বে না।
১.৫ আউন্স বাদামে বিদ্যমান পুষ্টি (গ্রাম হিসেবে): সাধারণ বাদাম, ক্যালোরি ২৪৯ গ্রাম, ফ্যাট ২১.১ গ্রাম, প্রোটিন ১০.১ গ্রাম, পেস্তা বাদাম- ক্যালোরি ২৪৩ গ্রাম, ফ্যাট ১৯.৬ গ্রাম, প্রোটিন ৯.১ গ্রাম, বিদেশী বাদাম- ক্যালোরি ২৫৪ গ্রাম, ফ্যাট ২২.৫ গ্রাম, প্রোটিন ৯.৪ গ্রাম, বড় বাদাম- ক্যালোরি ২৭৯ গ্রাম, ফ্যাট ২৮.২ গ্রাম, প্রোটিন ৬.১ গ্রাম, কাজু বাদাম- ক্যালোরি ২৪৪ গ্রাম, ফ্যাট ১৯.৭ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৫ গ্রাম, বাদুর বাদাম- ক্যালোরি ২৭৫ গ্রাম, ফ্যাট ২৬.৫ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৪ গ্রাম, আখরোট- ক্যালোরি ২৭৮ গ্রাম, ফ্যাট ২৭.৭ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৫ গ্রাম, ম্যাকাড্যামিয়াস- ক্যালোরি ৩০৫ গ্রাম, ফ্যাট ৩২.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৩.৩ গ্রাম, পেক্যান্স- ক্যালোরি ৩০২ গ্রাম, ফ্যাট ৩১.৬ গ্রাম, প্রোটিন ৪.০ গ্রাম।