ডা: জ্যোৎস্না মাহবুব খান
নারীর জীবনে সন্তান জন্ম হওয়া স্বাভাবিক হলেও এটি একটি অতি আশ্চর্য ঘটনা, যা এক মুহূর্তে নারীকে মাতৃত্ব প্রদান করে। নারীর জীবনে কোনো ঘটনার সাথেই এর তুলনা হয় না। যেকোনো নারী মাত্র দু’টি উপায়ে শিশুর জন্মদান করতে পারে। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে প্রসব এবং সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার পদ্ধতি।
স্বাভাবিক পদ্ধতি বলতে বোঝায় জরায়ু থেকে যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে শিশুর জন্ম লাভ করা। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ডেলিভারি হতে কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয়- মায়ের শক্তি ও শারীরিক সুস্থতা, জরায়ুর গঠন, যৌনপথের গঠন, জরায়ুর ভেতরে শিশুর অবস্থান ও শিশুর গঠন। এদের কোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে অস্বাভাবিকতা থাকলে তা স্বাভাবিক ডেলিভারিতে মা ও শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সে জন্য মা ও শিশুর সুস্থতার স্বার্থে ক্ষেত্রবিশেষে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির আবশ্যক হয়।
যেসব কারণের জন্য সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো হলো- প্রসবপথ যদি গর্ভস্থ শিশুর মাথার আয়তনের তুলনায় ছোট হয়। মায়ের একলাম্পসিয়া এবং প্রি-একলাম্পসিয়া দেখা দিলে। গর্ভস্থ অবস্থায় কোনো কারণে শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে অথবা ফিটাল ডিসট্রেস বা শিশুর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা গর্ভফুলের অবস্থান জরায়ুর গ্রিবার ওপরে থাকলে। এতে প্রসব পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ থাকে ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মধ্যে রক্তপাত হলে একে বলা হয় অ্যাক্সিডেন্টাল হেমোরেজ। যদি প্রসব পদ্ধতি চলাকালে নাড়িরজ্জু যোনিপথে বেরিয়ে আসে এবং সন্তান জীবিত থাকে তাহলে জরুরি অপারেশন করা হয়। গর্ভস্থ শিশুটির যদি অস্বাভাবিক অবস্থান থাকে যেমন বস্তি উপস্থিতি, Brwo বা কপাল উপস্থিত ইত্যাদি। জরায়ুর মুখে বা যোনিপথে টিউমার থাকলে বা প্রসব পথ সরু থাকলে।
নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও যদি প্রসব বেদনা শুরু না হয়। প্রসব ব্যথা ৮-১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি প্রসবের উন্নতি না হয়। প্রথম এক বা দুটি শিশুর জন্ম যদি এই পদ্ধতিতে হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী প্রসব অবশ্যই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হতে হবে। আগের শিশুটি গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় মারা গেলে। সন্তানহীনতার ইতিহাস থাকলে। মায়ের কিছু রোগের ক্ষেত্রে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী নেক্রাইটিস। গর্ভবতী মহিলার বেশি বয়সে প্রথম শিশুর প্রসবের ক্ষেত্রে।
সিজারিয়ান অপারেশনে মায়ের সুবিধা কী কী- বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে এই অপারেশন করে মা ও শিশুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার হাত থেকে জীবন রক্ষা করা হয়। জরায়ুর নিচের অংশ কেটে সন্তান বের করে আনার পর কাটা স্থান দ্রুত শুকিয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
শিশুর সুবিধা কী কী- সঠিক কারণে এই অস্ত্রোপচার শিশুর জীবন বাঁচাতে অপরিহার্য পদ্ধতি।
বিলম্বিত কষ্টসাধ্য স্বাভাবিক পদ্ধতিতে প্রসবের চেয়ে এ অপারেশনে অক্ষত শিশুর জন্ম হয়, যা শিশুর জন্য যথেষ্ট হিতকর।
মায়ের অসুবিধা- এই অপারেশনের সময় উদরের ভেতরের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।অনেক সময় সংক্রমণ বা প্রদাহের জন্য প্রসূতির সুস্থ হতে বিলম্ব হতে পারে। অচেতন অবস্থা সৃষ্টি করতে যেসব ড্রাগ ব্যবহার করা হয় সেগুলো অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অপারেশনের পর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। স্বাভাবিক ডেলিভারিতে অক্ষম হওয়ায় মানসিক অবসাদ হতে পারে। আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শিশুর অসুবিধা- এই অপারেশনের পর শিশুর অবস্থা স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। অচেতনকারী ওষুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
দুই দশক ধরে সিজারিয়ান অপারেশন হলেও ঐচ্ছিক অপারেশনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও স্বাভাবিক প্রসবে মা ও শিশুর সুস্থতা দ্রুত ফিরে আসে তবুও অনেক ক্ষেত্রে মা ও শিশুর ঝুঁকিপূর্ণ জীবনকে নিরাপদ প্রসবের মাধ্যমে সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে দিতে পারে সিজারিয়ান অপারেশন।