প্রচলিত একটি ধারণা হলো, পয়সা না থাকলে পুষ্টি হয় না। ধারণাটি আসলে ঠিক নয়। পুষ্টির জন্য সবসময় দামি দামি খাবার খেতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। খুব সাধারণ খাবার থেকেও ভালো মানের পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে। আসল কথা হলো, তার সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। কোন ধরনের খাবারের মধ্যে কোন ধরনের পুষ্টি রয়েছে সেটি জানতে হবে। যেমন : আমরা মনে করি প্রোটিনের একমাত্র উৎস মাংস। মাংস দামি। তবে যদি আমরা এটি না করে মাছে যাই, আবার যদি আমরা ডাল, বিচি জাতীয় খাবারে যাই- সেগুলো আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। এগুলো খুব সহজলভ্য। কিন্তু দাম কম। এটি একটি বিষয় হতে পারে।
আবার বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফুড ভ্যালু রয়েছে। একেবারে সবুজ যে শাকটি এর মধ্যে যেমন ভিটামিন এ রয়েছে, ভিটামিন রয়েছে তেমনি আয়রনও পর্যাপ্ত রয়েছে। ডিম, দুধ দুটো জিনিসের মধ্যে আমরা অনেক বেশি জোর দেই। তবে এগুলো যে একমাত্র পুষ্টিকর খাবার সেটি কিন্তু নয়। আমাকে খুঁজতে হবে, কোথায় আমিষ রয়েছে। কোথায় শর্করা রয়েছে। কোথায় চর্বি জাতীয় খাবার রয়েছে। খুঁজতে হবে ভিটামিন, মিনারেলস কোন খাবারে রয়েছে। এসব বিষয়ে যদি আমরা স্কুল থেকেই বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে পারি, অ্যান্টিনেটাল কেয়ারে আমরা মায়েদের শিক্ষা দিতে পারি বা পুরো পরিবারকে আমরা যদি এই পুরো শিক্ষার আওতায় আনতে পারি, তাহলে ভালো।
পয়সা না থাকলে পুষ্টি হবে না- এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। তবে এতটুকু আর্থ সামাজিক অবস্থা তার ঠিক থাকা লাগবে যে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিটুকু সে কিনে খেতে পারবে। আমাদের দেশে কিন্তু নারী বা নারী-শিশুরাই বেশি বঞ্চিত থাকে, অপুষ্টিতে ভোগে। আমাদের দেশে অপুষ্টির মূল কারণ দরিদ্র হওয়া নয়। যদিও আর্থসামাজিক অবস্থানে এর একটি ভূমিকা রয়েছে। তবে মূল কারণ হলো অজ্ঞতা। কারণ, মানুষ জানে না কোনটির মধ্যে কী রকম পুষ্টি রয়েছে। মানুষ জানে না, সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টিটা খেতে হবে। কোন বয়সের জন্য কোনটি উপযোগী। আবার সঠিক রান্না পদ্ধতিও অনেকে জানেন না। ভুল পদ্ধতিতে রান্নার কারণে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে ফেলে।
এখানে আবার একটি কথা বলতে হয়, প্রকৃতি আমাদের উদারভাবে দিয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে সব ধরনের পুষ্টি কিন্তু ছড়ানো রয়েছে। শুধু নিতে জানতে হবে। সময়টা নির্দিষ্ট করতে হবে। প্রবীণ নারীর খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তা হলে তিনি দীর্ঘদিন সুস্থ ও কর্মঠ থাকতে পারেন। প্রবীণ নারীদের বেলায় বার্ধক্য এলে ক্যালসিয়াম কমে যায়। এটি একটু বেশি হয়। সামাজিকভাবে এরা কিন্তু বাইরের কাজকর্ম কম করে। এসব কারণে তার নড়াচড়া যেমন কম হয়, পাশাপাশি তার খাওয়ার পরিমাণও কম হয়ে যায়। আমাদের একটি ধারণা, উনি বয়স্ক, উনি ভালো খাবার খেয়েই বা কী করবেন।
আবার কোনো ক্ষেত্রে অযত্নের বিষয়টি থাকে। অনেক কারণ রয়েছে তাঁদের অপুষ্টির। না জানার কারণে এমন হয়। বয়স্ক মানুষটিকে সুস্থ রাখতে হবে নিজেদের কারণে, সমাজের কারণে, দেশের কারণে। উনাদের যদি সুস্থ রাখতে হয়, তাহলে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার তাঁকে দিতে হবে। তাঁকে তাঁর প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিনটা খেতে দিতে হবে। হয়তো চর্বি একটু কম হবে। তাঁর বয়স, তাঁর শ্রম মিলে সঠিক খাবার যদি সঠিক সময়ে দেওয়া যায়, তাহলে প্রবীণ নারীটিও দীর্ঘজীবন কর্মঠ ও সুস্থভাবে দিন কাটাতে পারবেন।
অনেকে শাকসবজি ধোয়ার আগে কাটেন, আবার অনেকে শাকসবজি ঢেকে রান্না করেন না। বিষয়গুলো সঠিক নয়। শাকসবজির বেলায় অনেকে কেটে ধুই। এটা একটা ভুল পদ্ধতি। প্রথমে পুরোটা পরিষ্কার করে ধুতে হবে, এরপর কাটতে হবে। আমরা খুব ছোট করে এটি কাটি। তবে এটি একটু বড় করে কাটতে হবে। রান্না করার সময় সেদ্ধ করতে করতে গুণ নষ্ট করে ফেলা যাবে না। আরেকটি বিষয় হলো, ঢেকে রান্না করতে হবে। এমনকি আমরা যে লবণ দিই, সেটি তেলের মধ্যে দিই, এতে করে লবণের পুষ্টিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা যদি নামানোর আগে লবণটা ব্যবহার করি, তরকারি ঢেকে রান্না করি, অনেক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। আমার যখন খাবারটা রাখব, তখন যদি ঢেকে রাখি, তাও অনেক পুষ্টি রক্ষা হবে।
বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি প্রচলিত খাবার হলো ভাত। তবে ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতি অনেকে মেনে চলেন না। অনেকে ভাতের মাড় ফেলে ভাত রান্না করেন। তবে ভাত রান্নার স্বাস্থ্যকর কিছু উপায় রয়েছে। ভাত মূলত হলো শর্করা, কার্বোহাইড্রেট। ভাতের পরিমাণ যদি অন্য খাবারের পরিমাণের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে চর্বি হয়ে জমে যাবে। মানুষের কর্মক্ষমতা কমবে। ভাতের পরিমাণকে ঠিক রাখতে হবে। অনেক জেলায় আতপ চাল খায়। সেটি না করে যদি সেদ্ধ চালটা খাই, যদি রান্নার সময় বসা-ভাতটা খাই, মাড় না ফেলে বসা ভাতটা খাই, তাহলে ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি ঢেঁকি ছাঁটা চাল হয়। তবে সেটি তেমন পাওয়া যায় না। মূলত মাড় না ফেলে, বসা-ভাতটা খেলে পুষ্টি অনেকটাই ঠিক থাকবে।