পুরুষদের শরীরে যে হারে শুক্রাণুর সংখ্যা বা স্পার্ম রেট কমে যাচ্ছে, শুক্রাণু কমে যাবার সেই হার বজায় থাকলে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ৪০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট। তাদের শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে এসেছে ৫২.৪ শতাংশ এবং স্পার্ম কাউন্ট কমে এসেছে ৫৯.৩ শতাংশ। উন্নত অর্থনীতির আরো অনেক দেশেও স্পার্ম কাউন্ট কমে আসছে।
পুরুষত্ব ধ্বংস হচ্ছে কিভাবে?
পুরুষের শারীরিক অক্ষমতা বা পুরুষহীনতা বা নপুংসকতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেক সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ বিতৃষ্ণা হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে। শারীরিক সমস্যার কারণে দাম্পত্য জীবনে মানসিক দিক হতে চরমভাবে অশান্তিতে ভোগছেন। অবিবাহিতরাও অনেকেও চিকিৎসকের কাছে আসছেন, হতাশার কথা বলছে।
পুরুষের বন্ধ্যাত্ব কী?
পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ: বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম হওয়া। যে দম্পতিদের সন্তান হয়না, তাদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে – স্বামীর শুক্রাণুর মান নিম্ন ও সংখ্যা কম হওয়া। প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটির কম হলেই প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। অথচ পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে বা উর্বরতার ব্যাপারটি সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয়।
শুক্রাণু কমার কী কী কারণ
কীটনাশক এবং প্লাস্টিকে থাকা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, ওবেসিটি বা স্থূলতা, ধুমপান, মানসিক চাপ, খাদ্যভ্যাস, এমনকি অতিরিক্ত টিভি দেখা এক্ষেত্রে ক্ষতিকর। জীবনযাপনের ধরন, পরিবেশ এবং রাসায়নিক ব্যবহার বড় কারণ। তাপমাত্রা, মাদক সেবন এবং অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরা।
আকর্ষণীয় হতে গিয়ে পুরুষত্ব হারানো
নিজেকে যৌন আবেদনময় হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে কিছু পুরুষ বাবা হওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছেন! অত্যন্ত পুরুষালি হিসেবে পরিচিত পুরুষেরা অনেক সময়ই নিজেকে আরও ‘যৌনাবেদনময় ও পুরুষ-দীপ্ত’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে যেসব কৃত্রিম পদ্ধতির সাহায্য নেন, তা কেড়ে নিচ্ছে তার পুরুষত্ব। শরীরকে পেশিবহুল করতে গিয়ে যে সব স্টেরয়েড ব্যবহার কর হয়, তা শুক্রাণু সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া মাথার চুল কমে যাওয়া ঠেকাতে অর্থাৎ টাক হয়ে যাওয়া রোধ করতে গিয়ে যেসব চিকিৎসা নেন পুরুষেরা তাও কমায় তাদের শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া।
পেশিবহুল শরীর বানানোর জন্য যে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার হয়, তা পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ বাড়ানোর কথা। কিন্তু অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের কারণে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্র্যান্ড শুক্রাণু তৈরির দুটি মূল হরমোন এফএসএইচ ও এলএইচের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। একই ঘটনা ঘটে যখন টাক ঠেকানোর জন্য তৈরি ওষুধ ব্যবহার করে কোন পুরুষ। ফলে একজন পুরুষ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে যান। পুরুষ নারীকে আকর্ষণ করার জন্যই জিমে যাচ্ছেন, স্টেরয়েড নিচ্ছে, কিন্তু শেষ বিচারে তা তাকে পুরুষত্বহীন করে দিচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধের উপায় সম্পর্কে পুরুষদের সচেতন হতে হবে।
আন্ডারওয়্যার ও পুরুত্বহীনতা
আটসাট জাঙ্গিয়া ব্যবহার করা উচিত নয়, বিশেষত বয়সন্ধি কালের ছেলেদের জন্য। এ সময় শুক্রাশয থেকে টেসটোস্টেরন নামক হরমোন নিসৃত হয় যা পুরুষাঙ্গকে বড় ও সুগঠিত করে এবং পুরুষত্বের বিকাশ ঘটায়। আটসাট জাঙ্গিয়া ব্যবহারের ফলে এই বিকাশ ব্যহত হতে পারে। ফরাসি পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এমনকি তাদের শুক্রাণুর ডিম্বাণু নিষিক্ত করার সক্ষমতাও কমে গেছে ভয়াবহভাবে। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- আঁটসাঁট অন্তর্বাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি।
১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল এ ১৭ বছরের ব্যবধানে ফ্রান্সে পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদন (Sperm Production) হার কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। একই সঙ্গে উৎপাদিত শুক্রাণুর সক্ষমতাও কমেছে। ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের বীর্যের প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা ৭ কোটি ৩৬ লাখ থেকে ৪ কোটি ৯৯ লাখে নেমে গেছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হতে একজন পুরুষের বীর্যে গড়ে প্রতি মিলিলিটারে এক কোটি ৫০ লাখের ওপরে শুক্রাণু থাকতে হয়। একজন সুস্থ পুরুষের স্বাভাবিক শুক্রাণুর (Sperm) পরিমান প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ২ কোটি থেকে ১৫ কোটির মধ্যে। সুতির আন্ডারওয়্যারের (Cotton Underwear)বদলে পলেস্টারের অর্থাৎ সিনথেটিক কোন আন্ডারওয়্যার পরলে পুরুত্বহীনতা ঘটতে পারে। এমনকি সুতি ও পলেস্টারের মিশ্রণের আন্ডারওয়্যারও কিছুটা পুরুত্বহীনতা ঘটায়। খুব টাইট কাপড় পড়লে লিঙ্গ একটু সংকোচিতও হয়।
জননাঙ্গ ধ্বংসের বদঅভ্যাস
স্বাস্থ্যবান জননাঙ্গ পেতে হলে পুরুষত্বকে ধ্বংস করছে এমন অভ্যাসগুলো ছাড়তে হবে। নিষ্ক্রিয় জীবন যাপনে প্রজনন তৎপরতা অনেক কমে যায়। ধুমপানের কারণে প্রজনন তৎপরতায় সমস্যা হয়। দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ হলে, দাঁতের মাড়ির রোগ থাকলে প্রজনন সক্ষমতা কমে যায়, জননাঙ্গের উত্থান হয় না। মুখের ব্যাকটেরিয়া দেহের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং জননাঙ্গের রক্ত সরবরাহের শিরা-উপশিরাগুলোকে আক্রান্ত করে।
দেহের চাহিদা ও প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমানো ক্ষতিকর। এতে দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের হার কমে যায়। ফলে দেখা দেয় ক্লান্তি ও অবসাদ , মাংসপেশি ও হাড়ের ঘনত্বও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জনননাঙ্গও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যথেষ্ট পরিমাণে প্রজনন তৎপরতায় লিপ্ত না হলে, তথা সপ্তাহে একবারের কম দৈহিক মিলন করলে পুরুষদের জননাঙ্গ উত্থানে সমস্যা দেখা দেয়। ট্রান্স ফ্যাটজাতীয় খাদ্য বেশি খেলে শুক্রাণুর গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। যারা সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি টিভি, সিনেমা বা ইন্টারনেটে ভিডিও দেখেন তাদের বীর্যে শুক্রাণুর হার ৪৪% কমে আসে।
সিমেন পাতলা হয়ে যাওয়া
যে সব পুরুষের বীর্যের ঘনত্ব কমছে, তাঁদের ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরেসিস, হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরেসিস, হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো রোগগুলির প্রথম লক্ষণই হল বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়া। শরীরে সেক্স হরমোন কমে যাওয়ার জন্য যৌন অনুভূতি কমে যায়। শরীরে রোগ বাসা বাঁধে।
মোবাইল ফোনের তরঙ্গে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
সচল যেকোনো মোবাইল ফোনই পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং যেসব পুরুষ স্বভাবতই মোবাইল ফোনটি চালু অবস্থায় তাদের প্যান্টের পকেটে রাখেন তাদের শুক্রানুতে মোবাইল ফোনের তরঙ্গ বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেসব পুরুষ কমপক্ষে চার ঘণ্টা সময় ধরে তাদের প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘোরেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর শুক্রাণু জন্মানোর হার অর্ধেক হয়ে যায়। মোবাইল ফোন যে ধরনের মাইক্রো ওয়েভ তরঙ্গ প্রেরণ বা গ্রহণ করে সে ধরনের বিকিরণ গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে শুক্রাণুর ওপর প্রয়োগ করে দেখা যায় যে এতে করে শুক্রাণুগুলো দুর্বল, চিকন এবং সাঁতারে অক্ষম হয়ে পড়ে।
নপুংসকতা বা ধ্বজভঙ্গ
নপুংসকতা বা ধ্বজভঙ্গকে ইংরেজীতে বলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন। যৌন কাজে পুরুষের ভূমিকা মূখ্য বলেই এ সমস্যায় পুরুষের মাঝে উদ্বিগ্নতা, হতাশ ও দুশ্চিন্তা বেশী দেখা যায়। শারীরিক দূর্বলতাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ইরেকশন ফেলিওর: এতে পুরুষাঙ্গ উত্থানে ব্যর্থ হয়। প্রি ম্যাচুর ইজাকুলেশন: যৌন মেলামেশায় স্থায়ীত্ব কম, ফলে অতি দ্রুত বীর্যপাত হয়। পোনিট্রেশন ফেলিওর: এতে পুরুষাঙ্গ যোনিদ্বার ছেদনে ব্যর্থ হয়।
এর কারণগুলো- যৌন সংগীকে অপছন্দ করা।বয়সের পার্থক্য থাকা। ধুমপান, মদপান, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হিরোইন ইত্যাদি গ্রহনের কারণে পুরুষাঙ্গ উত্থানে ব্যর্থ হওয়া। থাইরয়েড, মেরুদন্ড, কিডনী, লিভার ইত্যাদি রোগীদের প্রোলাকটিন হরমোনের আধিক্যে পুরুষত্বহীনতা করতে পারে। প্রষ্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের কারণেও পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয়। যৌনবাহিত রোগ, সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি কারণে পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয়। রক্তে যৌন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। নারীর ত্রুটিপূর্ণ যৌন আসন।
রেডিয়েশন, কেমিক্যাল মিশ্রিত খাদ্যগ্রহনের পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে কমে যাচ্ছে শুক্রানু উৎপাদন ক্ষমতা, ফলে দেখা দিচ্ছে পুরুষত্বহীনতা। পুরুষাঙ্গের ধমনি সরু হয়ে যাওয়া অথবা শিরার রক্ত ধারণ ক্ষমতা লোপ পাওয়া। বয়স বাড়ার কারণে ও শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের প্রভাবে পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয়। হতাশা, রাগ, উত্তেজনা ইত্যাদি কারণে পুরুষাঙ্গ উত্থানে ব্যর্থ হয়। অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে স্থায়ী পুরুষত্বহীনতায় পতিত হচ্ছে।
বাইসাইকেল চালানো ও পুরুষত্বহীনতা
দীর্ঘ সময় বাই সাইকেল চালালে সাইকেলের সিট থেকে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে এবং লিঙ্গের রক্ত চলাচলের ওপরও চাপ পড়ে। ফলে সাময়িক পুরুষত্বহীনতা ও লিঙ্গে অসাড়তা দেখা দেয়।
ল্যাপটপ ও পুরুষত্বহীনতা
ল্যাপটপ বা একটি নোটবুক ক্রমশ নিরব ঘাতকে পরিনত হয়েছে। দৈনিক মোটামুটি এক ঘণ্টার বেশি ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করলেই পুরুষদের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলো এটি আপনাকে দিনের পর দিন পুরুষত্বহীনতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি ক্রমাগত ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে কাজ করলে একজন পুরুষ হারাতে পারেন বাবা হওয়ার ক্ষমতা। ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় এর নিচের অংশ থেকে তাপ নির্গত হয়। সেই তাপেই ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুক্রাণু। ঠিক কতক্ষণ ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করা বিপজ্জনক নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ একেক কোম্পানির ল্যাপটপ থেকে নির্গত তাপের পরিমাণ একেক রকম।
যারা কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন তাদের অন্ডদেশে হাইপারথার্মিয়া বা অতিমাত্রার তাপীয় অবস্থার শিকার হন যার ফলে অন্ডদেশে তাপমাত্রা ২°C বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রার ফলে পুরুষত্বহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা ল্যাপটপ কুশন বা বালিশ ব্যবহার করেও কমানো যায় না। এছাড়া ল্যাপটপের ফ্যান অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে গরম বাতাস তৈরি করে যা পরিস্থিতিকে আরো বিপদজনক করে তোলে। কোলের ওপর ল্যাপটপ রাখলে ‘ল্যাপটপ থাই ডিসঅর্ডার’ নামে ত্বকের সমস্যা তৈরি হয়। সাধারণত তরুণরা দীর্ঘক্ষণ কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে ব্যবহার করে। সেই সাথে টাইট জিনস পরিহিত থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় তাদের উরুতে হালকা দাগ দেখা যায় যা পরবর্তিতে গাঢ় কালো হয়ে ত্বকে সমস্যা তৈরি করে। তাই ল্যাপটপের জন্য ছোট টেবিল, বই বা ডেস্কের ব্যবস্থা করুন। না পারলে বিছানায় রেখেই কাজ করুন। ল্যাপটপকে এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে করে ল্যাপটপ এবং শরীরের সর্ম্পক না থাকে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি
টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে-মধু, বাঁধাকপি, রসুন, ডিম, কলা, কাঠবাদাম, ঝিনুক, টক ফল, পালংশাক, আঙুর, ডালিম, মাংস। পুরুষের যৌনসসঙ্গমের ক্ষমতা এবং শুক্রানু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘টেস্টোস্টেরন’। তাই এর মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে এলে যৌনক্ষমতা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যৌনক্ষমতায় ভাটা পড়ে, সঙ্গমের আগ্রহও কমে যায়।
‘নাইট্রিক অক্সাইড’ সরবরাহের মাধ্যমে ‘টেস্টোস্টেরন’ হরমোনই মূলত লিঙ্গ দৃঢ় হওয়ার ঘটনাটি ঘটায়। যেসব পুরুষের ‘টেস্টোস্টেরন’য়ের অভাব রয়েছে তাদের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। ফলে দিন শেষে তারা অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যান। শারীরিক বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যাবলীতেও প্রভাব ফেলে এই হরমোন। তাই এর অভাবে একজন পুরুষের মানসিক অবস্থা অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে যায়। ‘টেস্টোস্টেরন’য়ের অভাবে অণ্ডকোষ এবং পুরুষাঙ্গ দুটোর আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।
শুক্রাণু বাড়ায় যে খাবার
শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ায় টমেটো, আনার, ডার্ক চকলেট, ওয়ালনাট ও কুমড়ো বীজ। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন। এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে কাজ করে। রান্না টমেটোয় জলপাইয়ের তেল যোগ করলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণ ভালো হয়। আনারের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি টেসটোসটেরন ও শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে উপকারী। ডার্ক চকলেটে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড এল-আরজিন। এটি শুক্রাণুর মাত্রা ও বীর্যের পরিমাণ বাড়ানোর উপাদান হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
ওয়ালনাটের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড। প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ওয়ালনাট খাওয়া ২১ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়ায়। কুমড়ো বীজের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড ও ফাইটোসটেরল। এ খাবারটি পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এ ছাড়া শুক্রাণুর মাত্রা, জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কাজ করে। গাজর শুক্রাণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি করে, আর এভাবে সেটিকে ডিম্বাণুতে পৌঁছাতে সাহায্য করে। মটরশুটি, সম্পূর্ণ গমের দানা, ফর্টিফায়েড বা বলবৃদ্ধিকারী সিরিয়াল বা দানাশস্য এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
দৈনিক কাঠবাদামসহ যে কোন বাদাম খেলে শুক্রানুর স্বল্পতা রোধ করা সম্ভব। প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজী খেলেও পুরুষত্বহীনতা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।রসুন খুবই কার্যকর। পেয়াজ অত্যন্ত কার্যকরী। লাল আটার রুটির সাথে রসুন খেলে শুক্রানু বৃদ্ধি পায় ফলে যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। কলা ভিটামিন বি ও ব্রমেলেইন নামক এনজাইমের চমৎকার উৎস, যা দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুক্রানু উৎপাদন করে পুরুষত্বহীনতা দূর করে। প্রতিদিন আপেল খেলেও দৈহিক শক্তির বৃদ্ধির সাথে যৌবন শক্তি বৃদ্ধি পায়। গরুর মাংস শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে, শুক্রাণুর উৎপাদন এবং গতিশীলতায় সাহায্য করবে। মেথি বা ফেনুগ্রীক, শুক্রাণুর সংখ্যা এবং কামশক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। নিয়মিত অলিভ অয়েল গ্রহণ করলে তা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং তার গুণমানের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
প্রজনন ক্ষমতার উন্নতিতে টিপস
দীর্ঘ সময় ধরে একটানা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন কারণ এটা আপনার স্ক্রটালের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে যা আবার আপনার প্রজনন ক্ষমতাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে টাবে উষ্ণ স্নান করবেন না। বারেবারে সঙ্গম করলে প্রজননের মাত্রা উন্নত হবে, স্ত্রীর ওভ্যুলেটিং পর্বে সঙ্গম করলে গর্ভবতী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে।
অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হলে ওজনকে একটা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় নিয়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করুন। স্থূলতা হরমোনের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে, পরিণামে যা আবার শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করে। ডায়েটের সাথে পুষ্টিকর খাদ্যগুলি অন্তর্ভূক্ত করা এবং একটা স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা, আপনার প্রজনন ক্ষমতার মাত্রায় উন্নতি ঘটাবে।দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে চিনির পরিমাণ বেশি হলে কমতে পারে শুক্রাণুর মান। খাদ্যাভ্যাস শুক্রাণুর মৃত্যুর হারকে প্রভাবিত করে।
শুক্রাণুর শক্তির নেপথ্যে
সবসময়ে শুক্রাণুর মান একরকম থাকে না৷ বেশিরভাগ পুরুষ সারা জীবন ধরেই শুক্রাণু উৎপাদন করেন বটে, কিন্তু অত্যন্ত গতিশীল শুক্রাণুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে৷ সেই কমার হার বছরে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ৷ ঋতুও বীর্য উৎপাদনের উপর প্রভাব রাখে৷ বসন্তকালে সবচেয়ে বেশি এবং গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে কম সংখ্যক শুক্রাণুর উৎপাদন ঘটে৷
সুষম খাদ্য শুক্রাণুর মানের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ দস্তা, সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি ও ই, ফলিক অ্যাসিড এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শুক্রাণুর গতিবিধির ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে৷ এই সব পদার্থ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে৷ এগুলি এপিডাইডিমিসের মধ্যে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ প্রতিরোধ করে৷ সেখানেই শুক্রাণুর গতিশীলতা নির্ধারিত হয়৷ শুক্রাণুর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত খাদ্য হলো সামুদ্রিক মাছ, ফুল গ্রেন বা দানাযুক্ত খাদ্য এবং ফলমূল ও শাকসবজি৷
শুক্রাণুর মান বাড়াতে শরীরের সঞ্চালন অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ এর মাধ্যমে টেস্টোস্টেরোন হরমোনের মাত্রা ও সেইসঙ্গে শুক্রাণু উৎপাদন বেড়ে যায়৷ তবে যারা একস্ট্রিম স্পোর্টস চর্চা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায়৷ পেশি মজবুত করতে যে সব বেআইনি শক্তিবর্ধক ব্যবহার করা হয়, সেগুলি শুক্রাণুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ অ্যানাবোল স্টেরয়েড শুক্রাণুর জন্য আসলে বিষ৷
শুক্রাণু অপেক্ষাকৃত শীতল তাপমাত্রা পছন্দ করে৷ অণ্ডকোষ শরীরে বাইরে থাকে বলে শরীরের ভিতরের অংশের তুলনায় সেখানকার তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কম৷ যৌনক্রিয়া যে শুক্রাণুর জন্য উপকারী, এমন ধারণা অবশ্যই প্রমাণিত হয়েছে৷ নিয়মিত শুক্রাণু ত্যাগ করলে উর্বরতা বাড়ে৷ যৌন সংসর্গ ছাড়া এক বা দুই দিন কাটালে শুক্রাণুর মান কমে যায়৷
শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায়
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, মধু মিশিয়ে নিয়মিত এক গ্লাস করে দুধ খেলে স্পার্ম কাউন্ট শূন্য থেকে বেড়ে ৬ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ পুরুষ সেক্স হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। মধুতে থাকা ভিটামিন ই ও জিঙ্ক সেক্স স্টিমুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে পুরুষদের যৌনশক্তি বাড়ায়। এক গ্রাস দুধ ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে, তাতে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২/৩ কোয়া রসুন মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
অনলাইন এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ১৮ থেকে ৫০-এর মধ্যে বয়স এমন ১০ শতাংশ পুরুষই লো স্পার্ম কাউন্টের শিকার। তাই নিয়মিত মধু মিশিয়ে দুধ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। যেসকল পুরুষ ধুমপান করেন তাদের বীর্যে শুক্রানুর পরিমান যারা ধুমপান করেন না তাদের তুলনায় ১৭% কম। যেসকল পুরুষ দিনে ৪ গ্লাসের বেশি মদ্যপান করে থাকেন তাদের শুধুমাত্র সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নয় – মোটের উপর যৌনক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে সকালবেলা প্রাকৃতিক ভাবেই বীর্যে শুক্রানু সংখ্যা সর্বোচ্চ পরিমানে থাকে।
পুরুষত্বহীনতার সমাধানে পরামর্শ
যৌন সঙ্গী এবং সঙ্গিনীর মধ্যে খোলামেলা যৌন আলোচনা করা। এটি পরস্পরের যৌনানুভূতিকে চাঙ্গা করে এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা সৃষ্টি করে। নারী পুরুষ উভয়েরই উচিত যৌনতার ব্যাপারে একজন অন্যজনকে সাহায্য করা। এর ফলে যৌন অনুভূতি এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা তৈরী হতে পারে। পরস্পরের সাথে গভীর স্পর্শের সম্পর্ক থাকা উচিত। একজনের উত্তেজনা কম থাকলে আরেকজনের উচিত পুরুষকে উত্তেজিত করে তোলা। লিঙ্গের উত্তেজনা দীর্ঘক্ষণ ধরে না রেখে পুরুষের উচিত একবার লিঙ্গ শিথিল করে আবার লিঙ্গের উত্তেজনা তৈরি করা। এতে করে পুরুষত্বহীনতা সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।
করণীয় কী?
সক্রিয় জীবন-যাপন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিকোটিন মুক্তদের প্রজনন তৎপরতায় পারফর্মেন্সের উন্নতি ঘটে। ক্ষতিকর চর্বিবহুল খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে শুক্রাণুকে স্বাস্থ্যবান রাখুন। সপ্তাহে তিনবার দৈহিক মিলনে জননাঙ্গের স্বাস্থ্য সবচেয়ে ভালো থাকে। যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমান। অতিবেশি টিভি ও সিনেমা দেখা বন্ধ করুন।
সেক্সের উত্তেজনা বাড়াতে তরমুজ আর পাতি লেবুর বিকল্প নেই! এই দুয়ের মিশ্রণে বানানো যায় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা! তরমুজের অনেকগুলো উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তরমুজ মানুষের সেক্স পাওয়ার বৃদ্ধি করে। তরমুজে সিট্রুলিন অ্যামিনো এ্যাসিড থাকে। এটি শরীরের আরেক ধরনের অ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি করে। একে আরজিনাইন বলা হয়। আরজিনাইনে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিকারক ঔষধ ভায়াগ্রার প্রভাব থাকে। তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি ও ৮ শতাংশ চিনি থাকে। তাছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স ও বোল্ডস্কাই