পরিবারে স্বাস্থ্য সচেতনতা খুব জরুরি। পরিবারে একজন অসুস্থ থাকলে তার ভোগান্তি সকলের। কিছু দৈনন্দিন সঠিক অভ্যাস ও চর্চাই পারে পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখতে। কিছু স্বাস্থ্য কথা রয়েছে যেগুলো মানলে সুফল মিলবে। যেমন: ‘ঘন দুধ আর দুধের সর, হার্টের ক্ষতি নিরন্তর। চামড়া আর মাছের পেটি, সর্বনাশা ঐ দুটি। তেল যত কম খাবে, হার্ট তত ভালো রবে। চর্বি আর লাল মাংস, স্ট্রোক আনে, জীবন ধ্বংস। চা-তে দুধ আর চিনি, নেই উপকার, ক্ষতি জানি। নিত্য লাল চা খেলে, অনেক উপকার চা-তে মেলে। খুব বেশি গরম চা, পেটের অপকার জানো না। রোজ একটু টক খেলে, প্রেসার অনেক যায় চলে। খালি পেটে নিমপাতা খায়, ডায়াবেটিস দূরে যায়। মাঝে মাঝে উপবাস, অনেক ব্যাধি করে নাশ। থুথু দিয়ে টাকা গোনা, দেহে ব্যাধির বীজ বোনা। যেথা সেথা থুথু কাশ, পরিবেশের সর্বনাশ। প্রাণ খুলে হাসে যারা, সুস্বাস্থ্য পায় তারা। বিধি যে মানে না, ব্যাধি তার সারে না। খাবারের আগে হাতে সাবান, বহু ব্যাধিতে পরিত্রাণ। বাচ্চার মুখে চুমু খাওয়া, নিজের রোগ তাকে দেয়া।’
সুষম খাবার
শুধু মুখরোচক নয়, নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে। ফলমূল জাতীয় খাদ্য: আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, জাম, কামরাঙ্গা, আনারস, জাম্বুরা ইত্যাদি। দুধ-দধি জাতীয় খাদ্য: দুধ, দধি, পনির ইত্যাদি। ভাত, রুটি জাতীয় খাদ্য: ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলু ইত্যাদি। শাক সবজি জাতীয় খাদ্য: লাল শাক, পুঁই শাক, গাজর, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি ইত্যাদি। মাছ, মাংস, ঢাল জাতীয় খাদ্য: মাছ, মাংস, ডিম, ঢাল ইত্যাদি। তেল, মাখন, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য: তেল, মাখন, ঘি, মিষ্টি ইত্যাদি। পরিবারে যেহেতু নানা বয়সের মানুষ থাকে তাই খাবারের আইটেম ও মেন্যুর ক্ষেত্রে সবার পুষ্টি ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করতে হবে। প্রতিদিন একটি আপেল আপনাকে চিকিৎসকের কাছ থেকে দূরে রাখবে। প্রতিদিন তুলসী পাতা ক্যান্সারের কাছ থেকে দূরে রাখবে। প্রতিদিন একটি লেবু দেহের চর্বি থেকে দূরে রাখবে। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ হাড়ের ক্ষয়রোগ থেকে দূরে রাখবে, অন্তত ৮ গ্লাস পানি সকল রোগ থেকে দূরে রাখবে।
খাওয়ার সঠিক সময়
সকালের নাস্তার আদর্শ সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টা। সকাল ১০টার পরে নাস্তা খাওয়া উচিত নয়। সকালের নাস্তা ঘুম থেকে উঠার ৩০ মিনিটের মধ্যে করা উচিত। দুপুরের খাবারের আদর্শ সময় দুপুর ১২.৩০টা থেকে ২টা। ৪টার পর দুপুরের খাবার না খাওয়া ভাল। সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারে ৪ ঘন্টার ব্যভধান থাকা উচিত। রাতের খাবারের আদর্শ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা। রাত ১০টার পর রাতের খাবার না খাওয়া ভাল। রাতের খাবার ঘুমানোর ২ থেকে আড়াই ঘন্টা আগে খাওয়া উচিত। পানি পান করার সঠিক সময় সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে। ঘুম থেকে ওঠার পর এক গ্লাস পানি পান শরীরের অঙ্গ পরিষ্কার করে। খাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানি পান পাচক রস পাতলা করে। গোসল করার পূর্বে এক গ্লাস পানি পান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বিছানাতে যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানি পান হার্ট অ্যাটাক দূরে রাখে।
নিয়ম মানা
আমাদের শরীরে নানা কারণে অসুখ হতে পারে। অথবা হতে পারে বিভিন্ন অঙ্গে সমস্যা। শরীরের কিছু প্রধান অঙ্গ ভালো রাখা যায় কিছু নিয়ম মেনে চললে ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে। চোখের যত্ন- রোদে সানগ্লাস ব্যবহার; টাটকা-সবুজ ও রঙিন সবজি খাওয়া, এসটাজ্যানথিন খাবার গ্রহণ করা এবং সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ইত্যাদি। ফুসফুস ভালো রাখবে- দূষণমুক্ত বসতবাড়ি, ধূমপান ত্যাগ করা, ধূমপায়ী থেকে দূরত্বে থাকা, ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা, বাইরে থেকে ঘরে এসে ভালোভাবে হাত-মুখ ধোয়া।
পাকস্থলী ও অন্ত্র ভালো রাখতে- টক দই খাওয়া, তাজা ফল খাওয়া, ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া এবং খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। অস্থিসন্ধির জন্য খান ভিটামিন ডি ও ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার, আদা, আনারস, কালো কিশমিশ, হলুদ, মাছ। কারকিউমিনের উৎস হলুদ আর ওমেগা থ্রির উৎস মাছের তেল। ত্বকের যত্নে খান-সুষম খাবার, অরগ্যানিক খাবার, রঙিন সবজি, সবুজ-পাতাবহুল সবজি (পালংশাক, বাঁধাকপি) এবং ওমেগা থ্রি ও ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার।
অবশ্যই ক্ষতিকর কেমিক্যাল/প্রসাধনী পরিহার করুন, তীব্র রোদ থেকে দূরে থাকুন। হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে- কম খান শর্করা, যথাসম্ভব কম খাবেন চিনি বা মিষ্টি, খাঁটি দুধ পান করুন, কোলেস্টেরল নিরাপদ সীমায় রাখুন এবং দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ পরিহার করুন। মস্তিষ্কের জন্য ভালো- ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিকত ব্যায়াম, বুদ্ধির খেলা ও অ্যালুমিনিয়াম পরিহার। যথাসময়ে টিকা নেয়া নিশ্চিত করুন। সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধ করা যায়।
হাঁচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন অথবা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন অথবা মুখ একপাশে ঘুরিয়ে নিন। ব্যবহারের পর রুমাল ধুয়ে ফেলুন অথবা টিস্যু নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধোন। কফ, থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন। যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলে পূর্ণমেয়াদে চিকিৎসা নিন। নিয়ম মেনে চলুন, যক্ষ্মা থেকে দূরে থাকুন।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রেখে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের জন্য করণীয়। ধূমপান বর্জন করুন। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খান। লবণ ও চিনি কম খান। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন। বেশি বেশি হাঁটার অভ্যাস করুন। উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বাচ্চাদের গলাব্যথা ও বাতজ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বয়স ৪০ বা তার বেশি হলে প্রতি ৬ মাসে ১ বার রক্তে চর্বির পরিমাণ পরীক্ষা করুন। পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করুন। মনের প্রভাব শরীরের ওপর পড়ে, তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করুন।
এজন্য নিয়মিত নামাজ-প্রার্থনা, মেডিটেশন ও শিথিলায়ন করুন। সুস্থ থাকার জন্য মাদককে না বলুন। মাদক সেবনের কারণে কাশি, হাঁপানি, আলসার, লিভার সিরোসিস, ক্যান্সার থেকে মৃত্যুও হতে পারে। সচেতন হোন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ুন, ঘাতকব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন। ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ: খুসখুসে কাশি বা গলার ভাঙা স্বর, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, সহজে ভালো হচ্ছে না এমন ক্ষত, কাশির সাথে রক্ত আসা, স্তনে বা শরীরের অন্য কোথাও চাকা বা পিন্ডের মতো অনুভব হওয়া, খাবার গিলতে অসুবিধা, খাবার হজম না হওয়া, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন, শরীরে তিল বা আঁচিল ওঠা বা এ জাতীয় লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা দেয়া ইত্যাদি।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে: চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করে অধিক পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, তামাকজাত দ্রব্য-অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা, ধূমপান বর্জন করা, সুপারি-গুল-জর্দা পরিহার করা। দৈনন্দিন ব্যবহারে প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা, বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পবিত্রতা ও প্রফুল্লতা বজায় রাখা।
সুস্থ থাকা
বেশি রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়া ও সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। নিয়মিত হাঁটা ও শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্ত হোন। প্রতিদিন গোসল করা, ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করা এবং বাসা পরিচ্ছন্ন রাখায় বিশেষ যত্নবান হতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে ও মাছি-পিঁপড়া-ছারপোকা-ইঁদুরের উৎপাত এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে রোগ জীবাণু না ছড়ায় এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। বাচ্চারা যাতে ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড আর ভাজা-পোড়া-তৈলাক্ত খাবারে অভ্যস্ত না হয়ে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারে আগ্রহী হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। টিভিতে উচ্চস্বরে গান বাজানো, শব্দদূষণ, ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তি, ইলেক্ট্রিক রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে হবে।
এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের সুস্থ রাখতে পারে। ছোটখাট অসুখের পাশাপাশি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো অসুখ থেকেও বিভিন্ন খাবার রক্ষা করতে পারে। বাঁধাকপি পেট ফাঁপা ও কৃমির সমস্যা দূর করে। গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। কাঁচা আম হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারে। মধু আয়ুর্বেদ অনুযায়ী সর্বরোগের ওষুধ। হাড়ের চিকিৎসা, ঠাণ্ডা, দাদ ও আলসারে হলুদ উপকারী। কাশি, ডায়রিয়া ও ফুসফুসের সংক্রমণ দূর করে আদা। কাঁচা নিমপাতা চিকেন পক্সসহ অনেক ধরনের চর্মরোগ ঠেকায়। স্কুল ব্যাগের সর্বোচ্চ ওজনের ব্যাপারে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ১ কেজি, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি ২ কেজি, ৫ম-৭ম শ্রেণি ৪ কেজি, ৮ম ও তার উপরে ৫ কেজি।
শরীর চর্চা
নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস বাড়ালে সুস্থ পরিপাটি থাকে জীবন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করুন। শরীরচর্চায় হাড় ও মাংসপেশি শক্তিশালী হয়, শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিষণ্নতা ও স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে, শরীরের ব্যথা কমায়, মনকে সতেজ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত শরীর চর্চা করে সুস্থ থাকুন। সারাদিন বসে কাজ করা, কায়িক পরিশ্রম না করা মেদ বাড়ায়। সকালে খোলা বাতাসে ব্যায়াম করলে তা আলস্য কাটিয়ে সজীব হতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যায়াম সৃজনশীলতা ও মৌলিকতা বাড়ায়, নব যৌবন ফেরায়। দৈনিক কমপক্ষে আধঘণ্টা হাঁটুন। খেলাধুলা ও দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা বজায় না থাকলে শুধুমাত্র ঘরে বসে একাগ্রতা বাড়ানোর উপায় অভ্যাস করলে ক্ষতি হতে পারে। নিয়মমাফিক কাজ করা, সান্ধ্যকালীন চা-কফি পান থেকে বিরত থাকা, প্রতিদিন অন্তত দুবার গোসল করা, ঘরের ভেতর রোদ আসতে দেওয়া প্রয়োজন।
খাদ্যাভ্যাস
সুস্থ হার্ট, সুস্থ জীবন। তাই কম চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন। শাক-সবজি ও বিভিন্ন ফল বেশি খাবেন। খাদ্যে পরিমিত লবণ খাবেন। কাঁচা লবণ পরিহার করুন। প্রক্রিয়াজাত ও টিনজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান ও সকল ধরণের তামাক দ্রব্য বর্জন করুন। উচ্চরক্তচাপ, রক্তের চর্বি ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। হৃদরোগ প্রতিরোধ করুন, সুস্থ থাকুন। শর্করা জাতীয় খাবার প্রচুর খেলে শক্তি পাব কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাব না। পরিমাণমতো বিভিন্ন খাবার খেলেই কেবল আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারব। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জীবনটা দুর্বিষহ মনে হয়। সুখী জীবনের প্রথম শর্তই হলো সুস্থ শরীর। সঠিক খাবারই পারে আপনার শক্তি বাড়াতে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং সঠিক সময়ে সঠিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে।
পুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখতে। দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। দিনে কিছুক্ষণ পরúর অল্প অল্প করে খাবেন, একেবারে বেশি খাবেন না। কর্মব্যস্ত মানুষেরা অনেকেই অত্যন্ত মানসিক চাপের মধ্যে দিন যাপন করেন এবং সেই সাথে ঠিকমতো খাবার গ্রহণ করেন না, এতে করে তাদের কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং ক্লান্তিকর দিন পার করেন। সুস্থ হৃৎপিণ্ডের আদর্শ খাবার হলো প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি এবং খুব কম সম্পৃক্ত চর্বি। স্রেফ স্বাস্থ্যকর, চমৎকার সুষম খাবার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে। বাড়ির বাইরে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন । পথে ঘাটে খোলা খাবার খাবেন না। খাবার গ্রহণের সময় খাবার গ্রহণ করুন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও পানি।
খাওয়ানোর সময় আনন্দপূর্ণ করুন
শিশুকে খাওয়ানোর সময় যতটা সম্ভব আনন্দপূর্ণ করে তুলুন, জোর করে খাওয়ানো শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সমস্যা করে, কখনো ওজন হারাতে থাকে। মনে রাখবেন শিশুরও স্বকীয়তা আছে, স্বাধীনতা আছে। শিশু যে খাবার পছন্দ করছে না, তা তার প্লেট থেকে সরিয়ে নিলে সে স্বস্তি পায়। জোর করে গলাধঃকরণ করালে, ছোট থেকেই ফিডারে বা বোতলে করে শিশুকে খাওয়ালে মা ও শিশুর মধ্যে আত্মিক সম্পর্কে ভাটা পড়ে। যেসব খাবার মজাদার বলে শিশু পছন্দ করলেও সহজে হজম করতে না পারায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার চকোলেটে বাচ্চাদের হজম শক্তি নষ্ট করে এবং দাঁতের ক্ষতি করে। এ থেকে অনেক শিশুর অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। শিশুদের কিডনি লবণ ও সোডিয়াম সহ্য করতে না পারায় খাবারে আলাদা লবণ না মেশানই ভালো।
প্রতিদিনের দরকারি পুষ্টি
ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ভালো স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আর ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতে পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রাখুন। একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২১ থেকে ২৫ গ্রাম আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটি শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরে শক্তি জোগায়। পেট ফোলা ভাব ও গ্যাসের সমস্যা প্রতিরোধ করে। শাকসবজিতে আঁশ পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। দুধ, দই, মটরশুঁটি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে; পেশির গঠনে সাহায্য করে।
১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সের নারীদের ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম খাওয়া জরুরি। ত্রিশের বেশি বয়সের নারীদের ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে হয়। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি মিনারেল। এটি পেশির কার্যক্রমকে ভালো রাখে; শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে কাজ করে। কাঠবাদাম, শাক, শিমের বিচি ইত্যাদিতে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিটামিন-ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাবি। এটি ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। ফ্রি র্যাডিকেল কোষকে নষ্ট করে দেয়। পালংশাক, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই রয়েছে। প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম ভিটামিন-সি শরীরে প্রয়োজন। কমলা, মাল্টা, ব্রকলি, জলপাই ইত্যাদির মধ্যে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস; যা ত্বককে ভালো রাখে, শরীর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। মাংস, ডাল, দইয়ের মধ্যে প্রোটিন থাকে। পেশির গঠনে ও শরীরে শক্তি জোগাতে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিদিন ১৮ গ্রাম আয়রন শরীরে প্রয়োজন। কাঁচা কলা, কলিজা, লতি, ডালিম ইত্যাদির মধ্যে আয়রন রয়েছে। আয়রন শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের রক্তশূন্যতা ও অবসন্নতার সমস্যা হয়। প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ৬০০ আইইউ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলোতে। এ ছাড়া টুনা, স্যামন, ম্যাকরেল ইত্যাদি মাছে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন-ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এটি পেশির গঠন ও হাড় ভালো রাখতে কাজ করে।
প্রতিদিন ৭০০ আইসিইউ ভিটামিন-এ গ্রহণ করতে হয়। গাজর, লালশাক ও আলুর মধ্যে ভিটামিন-এ রয়েছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে ও কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং দৃষ্টি ভালো রাখতে কাজ করে। প্রতিদিন ৪ দশমিক ৭ গ্রাম পটাসিয়াম শরীরের জন্য জরুরি। কলা ও আলুর মধ্যকার পটাশিয়াম কার্বোহাইড্রেটকে ভাঙতে সাহায্য করে এবং হৃদস্পন্দন ভালো রাখে।
ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করা
সস্তা ও স্থূল করে দেয় এমন খাবার সহজলভ্য হয়ে ওঠা এবং এসব খাবারের ব্যাপক প্রচারণা শিশুদের মধ্যে ‘ওবেসিটি’ ছড়ানোর জন্য দায়ী। এছাড়া খেলাধুলার সুযোগের অভাব এবং হাই ক্যালরি যুক্ত ফাস্ট ফুড ও জাংক ফুডের কথা বলা যায়। ওয়ার্কিং মাদার বাড়ার ফলে হোমমেড খাবারগুলো মায়েরা আগের মতো বাচ্চাদের ঠিকমতো দিচ্ছে না। সারাক্ষণ কম্পিউটার, ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেও ওজন বাড়ছে এবং ওজন জনিত সমস্যা বাড়ছে। বাজার থেকে ফ্রেশ শাক-সবজি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ছাদে টবে কিংবা গ্রামে জমিতে সবজি ও ফল-মূল চাষ করার উদ্যোগ নিন, সুযোগ থাকলে পুকুর খনন করে মাছ চাষের ব্যবস্থা করতে পারেন। অর্থাৎ ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা
শরীর, পোশাক-আশাক, বিছানাপত্র সবকিছুই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এতে মনে প্রফুল্লতা আসে এবং রোগ-জীবাণু থেকে বাঁচা যায়। পড়ার টেবিল থেকে শুরু করে বুকসেলফ, আলনা, খাবার রুম, পড়ার রুম, শোবার রুমসহ পুরো বাসাটাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখলে মন ভালো থাকে, মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। অগোছালো জীবন যাপনের বিড়ম্বনা অনেক। প্রয়োজনের সময় দরকারি জিনিস হাতের কাছে পাওয়া না যাওয়ার সময় অপচয় হয়। অপরিচ্ছন্ন, নোংরা পরিবেশ আর বিশৃঙ্খল জীবনাচরণকারী ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। তাই এক্ষেত্রে সচেতন থাকাই উন্নত রুচিবোধ ও সুন্দর মানসিকতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কার্যকর।
বিছানায় প্রস্রাব বন্ধ করা
বিছানায় প্রস্রাব করার সমস্যায় শিশুকে শাস্তি দেয়া, প্রহার করা বা তাকে বকাঝকা করা উচিত নয়। এই সমস্যা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে বলে শিশুকে আশ্বাস দিন। যেমন- রাতে প্রস্রাব না করলে শিশুর প্রশংসা করুন এবং ছোট উপহার দিন। এতে শিশু বিছানায় প্রস্রাব না করতে উৎসাহিত হবে। শিশুটিকে দারুচিনি চিবিয়ে খেতে দিন, সকালের নাস্তায় দারুচিনি গুঁড়োর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খাওয়ান, অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে বাচ্চার নিম্নাঙ্গের আশপাশে প্রতিদিন ভালো করে ম্যাসাজ করুন, প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে শিশুকে এক চামচ মধু খাওয়ান ও সকালের নাস্তার পর এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ান। তবে শিশুর বয়স ১ বছর হওয়ার আগে মধু দেয়া উচিত নয়। শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া কোনো খাবার মুখে দেয়া যাবে না।
চাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিমিত ঘুম
রাত জেগে থাকা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সুস্থতার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মানসিক বিশ্রামও প্রয়োজন। সময় মতো বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সুন্দর ঘুমের জন্য শোবার ঘরটাকে নিস্তব্ধ রাখা, আরামদায়ক তাপমাত্রায় রাখা দরকার। অ্যালকোহল পরিহার ও ধূমপান ত্যাগ করা বড়ই মঙ্গলজনক। বিছানায় যাবার আগে মনকে শান্ত করুন। ঘুম না হলে প্রথমে চোখের তলায় কালি পড়ে। দীর্ঘদিন হলে ত্বকের রং কালো হয়ে যায়। ঘুম না হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং ব্রুণ হতে পারে। ঘুম কমে যাওয়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তিও কমে যেতে পারে।
সৌন্দর্যহানির সাথে সাথে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের মাধ্যমে শরীর বিশ্রাম পায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে। তাই দিবানিদ্রা পরিহার করুন, ঘুমের ওষুধ পরিহার করুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন। অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে জাগার অভ্যাস করুন। ঘুমের সময় রাত্রিই, দিন কর্মব্যস্ত থাকার সময়।
কখনোই দুশ্চিন্তা নয়, প্রাণখুলে হাসুন
বিভিন্ন ইমোশন কিভাবে শরীরের ক্ষতি করে। রাগ- লিভার দুর্বল করে। দু:খ- ফুসফুস দুর্বল করে। দুশ্চিন্তা- পাকস্থলী দুর্বল করে। চাপ- হার্ট ও ব্রেন দুর্বল করে। ভয়- কিডনি দুর্বল করে। দুশ্চিন্তা কোনো কাজের সমাধান করে না বরং নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা ঘটার তাতো ঘটবেই। শুধু দুর্ভাবনা করে কী লাভ। তাই উদ্বেগপূর্ণভাবে সময় না কাটিয়ে একটু শান্ত হোন। দুশ্চিন্তা সমস্যার সমাধান করে না, বাড়ায়। তাই বাস্তববাদী হোন। অন্ধ আবেগকে প্রশ্রয় দিবেন না। জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। শারীরিক সুস্থতার জন্য হাসি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। কঠিন বাস্তবতায় আমরা হাসতে ভুলে যাই। শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ দূরে রাখতে বা দূর করতে দরকার হাসি-আনন্দে দিন যাপন করা।
বদ অভ্যাস বর্জন করুন
গরমের দিনে ধূমপানে শরীর আরও গরম হয়ে উঠে, ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে তাই ধূমপানের বদলে খান একটি করে ভিটামিন সি ট্যাবলেট, সজীবতা বাড়াবে। রোদে বাইরে বেরুলে সানগ্লাস পরুন। ধূসর, সবুজ, বাদামি রঙের কাচ সূর্যালোককে প্রতিহত করে। দুবেলা দাঁত ব্রাশ করুন, প্রতিদিন গোসল করুন। আর দাঁত দিয়ে নখ কাটা, অপরিচ্ছন্ন থাকা খুবই খারাপ। শব্দদূষণের ফলে কানের শ্রবণশক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়, শব্দদূষণযুক্ত এলাকাবাসীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং এরা প্রচুর এন্টাসিড ও ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করে।
শব্দদূষণের ফলে কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে অসচেতন থাকার মতো মূর্খতা আর নেই। হস্তমৈথুনের ফলে শারীরিক ও মানসিক অনেক ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্নায়ুতন্ত্র। হার্টের পাশাপাশি হজম ব্যবস্থা, মূত্রতন্ত্র এবং অন্যান্য কার্যপ্রণালির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং ক্রমাগত পুরো শরীর দুর্বল ও রোগে বাসা বাধে। চোখ ডুবে যাওয়া, গালের হাড়গুলো প্রসারিত হওয়া এবং চোেেখর চারপাশে কালো দাগ পড়া। নিরবচ্ছিন্নভাবে মাথা ও পিঠে ব্যাথা।
মাথা ঘোরা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া। অল্প পরিশ্রমে হাপিয়ে ওঠা। ভীত হওয়া। কোনো ভারী শারীরিক ও মানসিক কাজে অক্ষমতা। সঙ্গ অপছন্দ করা, কোলাহল এড়িয়ে নির্জনতা পছন্দ করা। দূর্বলতা বোধ করা। ইন্দ্রিয় সক্রিয়তা কমে যাওয়া। দৃষ্টি ম্লান হওয়া। জিহ্বা কাঁপতে থাকে। বধিরতা বোধ হওয়া। টিবি বা পাগলামি বা অন্য কোন মারাত্মক রোগ ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নেয়।
নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা
স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ অল্প বয়সেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেন নারীরা। কিছু নারী হাইপোথ্যারয়ডিজমে ভোগেন আবার কিছু নারী হাইপারথ্যারয়ডিজমে। পা ফোলা, হাত-পা ও জয়েন্টগুলোতে ব্যথা থাইরয়েড সমস্যার সাধারণ উপসর্গ। অতিরিক্ত ওজন থাকলেও হাইরয়েডের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। সার্ভিক্যাল ক্যান্সার রোধে প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষাটি চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের আবশ্যক; সার্ভিকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। হিউম্যান পাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) বা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) থেকে সার্ভিকাল ক্যানসার হতে পারে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায় ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা। চল্লিশ পেরোলেই নিয়মিত হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত চেকআপে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে আকস্মিক মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়। চল্লিশের পরে নারী শরীরে হাড়ের ঘনত্বের ও ভিটামিন ডি-এর মাত্রার পরীক্ষা দরকারি। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারা টাইপ-টু ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হন, তাই ডায়াবেটিসের হানা রুখতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা জরুরি। ওভারিয়ান ক্যান্সার বেশিরভাগই মেনোপজের পরে দেখা যায়। তাই ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে ঋতুজরার আগেই নির্দিষ্ট পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
চল্লিশে পৌঁছলেই নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তচাপে নজর রাখা আবশ্যক এবং নিয়মিত চোখের পরীক্ষা ভীষণ জরুরি। কিডনি সংক্রান্ত রোগগুলো নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। সামাজিক কাঠামো ও জীবনযাপনের ধরনের কারণেই বিষাদগ্রস্ততার ঝুঁকিতে অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষের তুলনায় এগিয়ে থাকেন। কিডনি, নিয়মিত পানি পান না করা এবং প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে জরায়ু, মূত্রথলি ও মূত্রনালিতে সংক্রমণের রোগ ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় বিশেষ সতর্কতা
গর্ভ ও প্রসবের সময় জটিল অবস্থা হচ্ছে-রক্তস্রাব, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব, ভীষণ জ্বর, মাথা ব্যথা ও ঝাপসা দেখা। গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব কিংবা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তস্রাব ও গর্ভফুল না পড়া। গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খিঁচুনি। গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পরে শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা। গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিন দিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। প্রসব ব্যথা ১২ ঘন্টার বেশি থাকা। প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রথমে বের হওয়া।
এসব কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উপর গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৩ বেলা খাবারের সাথে নিয়মিত কমপক্ষে এক মুঠ বেশি খাবার খেতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা, ঘন ডাল, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি ও মৌসুমি দেশি ফল খেতে হবে। রান্নায় যথেষ্ট পরিমাণ তেল ব্যবহার করতে হবে।
গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হবার সাথে সাথে প্রতিদিন রাতের খাবারের পরপরই ১টি করে আয়রন ফলিক এসিড ট্যবলেট খেতে হবে। ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। ৩ মাসের পর থেকে প্রতিদিন ২টি করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। গর্ভবতীকে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তিতে রাখতে হবে। ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কষ্টকর পরিশ্রম বর্জন করতে হবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। প্রথম ৩ মাসের পর প্রয়োজনে ১টি কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অন্তত চারবার গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। টিটেনাস টিকার ৫টি ডোজ সম্পন্ন করতে হবে।
প্রসব পরবর্তী সতর্কতা
প্রসবের পর থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের বিশেষ সেবা প্রয়োজন। কারণ এই সময় শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের শরীরের ক্ষয় হয়। শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান মায়ের দুধে বিদ্যমান; যা শিশু মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। এজন্য এ অবস্থায় মায়ের শরীর সুস্থ রাখার জন্য দুগ্ধদানকারী মাকে সব ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ (আয়রন, ভিটামিন-এ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি) খাবার খেতে হবে। শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ দিতে হবে এমনকি এক ফোঁটা পানিও না। জন্মের পর ১ ঘন্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
পুরুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা
পুরুষদের জন্য কিছু অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছয় মাস বা বছর খানেক পর পর করা উচিত। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কেমন তার পরীক্ষা করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ও চিকিৎসাবিহীন উচ্চরক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই উচ্চরক্তচাপ পরীক্ষা জরুরি। ক্যান্সারের ঝুঁকি পরিমাপের জন্যে ফ্লেক্সিবল সিগমোইডোস্কপি করিয়ে নিতে হবে। ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট (এফওবিটি), কোলনোস্কপি আর মোল স্ক্রিনিং করানোটাও খুবই জরুরি।
ধূমপায়ীদের জন্যে লো-ডোজ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি করানো অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন এবং ডিজিটাল রেক্টাল করিয়ে নিতে হবে। শ্রবণজনিত সমস্যা রয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য অডিওগ্রাম পরীক্ষা করতে হবে। দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছয় মাস পর পর চোখের পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস মারাত্মক একটি রোগ। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কতটা বা রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য ঠিক আছে কী না তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া উচিত। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিতে পারলে শরীরিকভাবে ভালো থাকা সম্ভব হবে।
পুরুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় থাকা উচিত নিয়মিত সবজি, ফলমূল ও ফ্যাট ফ্রি খাবার। কারণ পুষ্টিকর খাবার দেহে উদ্যম জোগায় এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাতে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই বডিম্যাস ইনডেক্স দেখে দেহের ওজন ঠিক রাখতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমে জড়িত থাকা প্রয়োজন। শারীরিক অনুশীলন বা পরিশ্রম না করা হলে তা দেহে নানা রোগের কারণ হতে পারে। ধূমপান ফুসফুসের রোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিলতার আশঙ্কা বাড়ায়। তাই ধূমপান বাদ দিতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা রোগ নিরূপণের জন্য প্রয়োজনীয়। কোনো রোগ শুরুতেই ধরা পড়লে তা নিরাময় করা সহজ হয়। অ্যালকোহল পানে বহু ধরনের ক্যান্সার ও উচ্চরক্তচাপসহ শারীরিক নানা সমস্যা হয়। এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য অ্যালকোহল পান বাদ দেওয়া প্রয়োজন। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের সঠিক ভারসাম্য রক্ষা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা হয়। মুড খারাপ হয় এবং মানসিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিরাপদ ও সুস্থ থাকার জন্য মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট পরিধান, গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধা, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার, হাত ধোয়ার মতো কিছু নিয়ম পালন করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা সর্বাগ্রে।
ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্যের যত্ন
ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি রোগব্যাধির প্রকোপ যায় শ্বাসতন্ত্রের উপর। শীতের শেষে আর গরমের শুরুতে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময়টাতে বেশি দেখা দেয় ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সবার সর্দি-কাশি। দুই তিন দিন নাক বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরে। হাঁচির সাথে গলাব্যথা করে, শুকনা কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, লক্ষণ ভিত্তিক কিছু চিকিৎসা বা কোন চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়, কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। তবে শুকনা কাশিটা কয়েক সপ্তাহ ভোগাতে পারে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, এন্টি হিস্টাসিন খেতে হবে। আর গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। গরম গরম চা বা গরম পানিতে আদা, মধু, লেবুর রস, তুলসী পাতার রস ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রংয়ের কফ বের হলে সাথে জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। জ্বর যদি বেশি দিন থাকে, কাশি যদি দুই সপ্তাহের বেশি হয়, সর্দি যদি না-ই সারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই সময়টাতে ভাইরাস রোগ সিজনাল ফ্লুর প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলোও কমন কোল্ডের মতোই। আলাদা কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না, উপরের কমন কোল্ডের মতোই উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা দিলেই ঠিক হয়ে যায়।
জলবসন্ত হলে প্রথমে একটু জ্বর-সর্দি, তারপর গায়ে ফোস্কার মতো ছোট ছোট দানা ওঠে। সঙ্গে থাকে অস্বস্তিকর চুলকানি, ঢোক গিলতে অসুবিধা, অরুচি ইত্যাদি। গায়ে প্রচন্ড ব্যথা থাকতে পারে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, শরীর চুলকালে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করলেই রোগের প্রকোপ কমে আসবে। আর সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সাইনসাইটিস ও টনসিলাইটিস জাতীয় রোগগুলোও এই সময়ে দেখা দিতে পারে। টনসিলের সমস্যা যে কারোরই হতে পারে, তবে ছোট বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়। হঠাৎ শীত চলে যাবার প্রাক্কালে গরমের শুরুতে ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খাওয়ার প্রবণতার কারণে, বাচ্চারা স্কুলে বা অন্যান্য যায়গায় ধুলাবালিতে খেলাধূলা করলেও এসমস্ত রোগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগে ভোগেন, তাদের এ রোগের প্রকোপ শীতের পর বসন্তে এমনকি গরমের শুরুতে বাড়তে পারে।
প্রচন্ড গরমে পিপাসার কারণে রাস্তাঘাটে পানি বা শরবত খাওয়া আর খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল গ্রহণ করার ফলে প্রায়ই ডায়রিয়াজনিত রোগব্যাধি দেখা দেয়। এসব গ্রহণ করার কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস, সাধারণ আমাশয়, রক্ত আমাশয়ও হতে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিট স্ট্রোকের মতো জটিল সমস্যার প্রকোপও দেখা দিতে পারে। শীতের শেষে গ্রীষ্মের আগমনে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই মোটামুটি সুস্থ থাকা সম্ভব। ঘাম হলে মুছে ফেলুন। ঠান্ডা পানি বা খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত গরমে বা ধূলাবালিতে যাওয়া পরিহার করুন। ভাইরাসজনিত অসুখে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। যেখানে-সেখানে দূষিত পানি বা অন্যান্য পানীয় খাওয়া বর্জন করুন। বিশুদ্ধ পানি বা অন্য তরল জাতীয় পান করুন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। যারা অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজকর্ম করেন তারা তরল পানীয়ের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে বা ওরস্যালাইনও খেতে পারেন।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে একেক সময় একেক রোগব্যাধির প্রকোপ হতে থাকবে। সে অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। বসন্তের উষ্ণ আবহাওয়ায় বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে আর বাতাসের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়টাতে সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে শুরু করে জলবসন্ত আর হাম জাতীয় রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এগুলো খুবই সংক্রামক বা ছোঁয়াচে, খুব দ্রুতই একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। বাসায় একজন আক্রান্ত হলে অন্য সকলেই ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি অফিসে বা ছোট বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে অন্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়। শিশু-বৃদ্ধ ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের থেকে এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে হলেও পৃথক রাখতে হবে।
বসন্তে গাছে গাছে থাকে হাজারো ফুলের সমাহার, আর তার সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের পরাগরেণু। এসব রেণু অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা বা হাঁপানির অন্যতম কারণ এই পরাগরেনু। এই সময় বাতাসে অ্যালার্জেন বেশি থাকায় হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসসহ অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। এই পরাগরেণু এড়িয়ে চলাই ভালো। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো, বিশেষ করে যাদেরকে বাইরে বেশি কাজ কর্ম করতে হয়।
এন্টিবায়োটিক সচেতনতা
অতিরিক্ত, অপর্যাপ্ত ও অযৌক্তিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উদ্ভব হচ্ছে। অযথা এন্টিবায়োটিক সেবন ক্ষতির কারণ, বিনা প্রেসক্রিপশনে তা কিনতে বারণ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর ও ডায়রিয়াতে এন্টিবায়োটিক নিবেন না। নিয়মিত গড়ে তুলি হাত ধোয়ার অভ্যাস, বিশুদ্ধ জল পান করি নিয়মিত বারো মাস। টিকা দিলে অনেক রোগের হবে জেনো প্রতিষেধ, এন্টিবায়োটিক ছাড়াই হবে জীবাণুদের প্রতিরোধ। এন্টিবায়োটিক গ্রহণের আগে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়ম মেনে এন্টিবায়োটিক ব্যভহার করুন ও কোর্স সম্পূর্ণ করুন। ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। মাছ, হাঁস-মুরগী ও পশুর খামারে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিরত থাকুন। সচেতনতা গড়ে তুলে প্রতিরোধ করুন এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।