ডা: শাহজাদা সেলিম
ডায়াবেটিস হৃদরোগীর যেকোনো ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। দুঃখজনকভাবে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ অনেক সময়ই হাত ধরাধরি করে হাঁটে। ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক (এমআই), স্ট্রোক বা রক্তনালীর যেকোনো ধরনের সমস্যা, যা চর্বির সাথে সম্পৃক্ত তা কমপক্ষে দুই গুণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস হৃৎপিণ্ডের স্নায়ুর ক্ষতিসাধন করে, যার ব্যথাহীন হার্ট অ্যাটাক ঘটতে পারে। এরকম ব্যথাহীন হার্ট অ্যাটাকে রোগী যথাযথভাবে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অনেক সময় এরূপ ক্ষেত্রে রোগীর রোগ নির্ণয়ে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ডায়াবেটিস টাইপ-১ ও টাইপ-২ এ দুয়ের বেলাতেই এসব সমস্যা হতে পারে। আর এর কারণ হলো রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে গেলে রক্তনালীর প্রদাহ, রক্তনালীতে চর্বি বা কোলেস্টেরল দিয়ে চাকা তৈরি এবং রক্ত জমাট (রক্তনালীর ভেতরেই) প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব বিক্রিয়া রক্তনালীতে নতুন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস ইনসুলিন প্রতিরোধী অবস্থার কারণে রক্তনালী ও হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
এ অবস্থা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার মতো উপায় আমাদের জানা আছে। প্রথমত, সঠিকভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন ধারণা চালু হয়েছে। এতে প্রতিদিনের খাবারের সাথে গ্লুকোজের পরিমাণের সমন্বয় সাধন করা হয়। ফলে দেহে নিঃসৃত ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে আরো বেশি সক্ষম হবে। ফলে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজজনিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিসে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য আরো একটি ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হয় রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে। এ জন্য যথেষ্ট কার্যকর ও উপকারী ওষুধ (স্ট্যাটিন জাতীয়) বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। নিয়মিত ও পরিমাণ মতো এসব ওষুধ সেবন করে ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ কমাতে সক্ষম হবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেক সময়ই কঠিন হতে পারে। তবে কখনোই অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। হৃদরোগের ভয়াবহতা ও পরবর্তী জীবনযাপনে তার ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে বিবেচিত হয়েছেন।