ইয়েলো ফাঙ্গাস ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের থেকে বেশি ভয়াবহ। বেশি প্রাণঘাতীও। কারণ এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে। ইয়েলো ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আলস্য, ওজন ও খিদে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণগুলো হলো ক্লান্তিবোধ, ক্ষুধা না থাকা ও ওজন হ্রাস। সংক্রমণ গুরুতর হলে সে ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হওয়া, ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হওয়া, অপুষ্টি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল ও চোখ বুজে আসা প্রভৃতি।
ইয়েলো ফাঙ্গাস কেন হয়?
নোংরা খাবার দাবার থেকে ছড়িয়ে যায় ইয়েলো ফাঙ্গাস। এছাড়াও প্রবল পরিমাণে স্টেরয়েড ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ নিলে এই রোগ ছড়িয়ে যায়। কোভিড সারিয়ে ওঠা রোগীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ প্রবল পরিমাণে দেখা যায়।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের উপসর্গ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে মুখের আকৃতি বদল থেকে তোখ লাল হওয়া যেমন কিছু উপসর্গ, তেমনই ইয়লো ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে খিদে না থাকা একটি বড় উপসর্গ। এছাড়াও প্রবলভাবে দুর্বল থাকা ইয়লো ফাঙ্গাসের একটি বড় দিক। খিদে না থারা জন্য এই সময় রোগীর ওজন কমতে পারে বলে দাবি বহু চিকিৎসকের।
সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির ওজন কমে যাওয়া, ক্লান্তিভাব, ক্ষুধা না পাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে রোগীর দেহে পুঁজ ফেটে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা গেছে। এছাড়া ক্ষত থাকলে তা না সারা বা শুকাতেও সময় লাগে। সেই সঙ্গে চোখ বসে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেয়। শেষমেশ সংক্রমিতের দেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পচন ধরে।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেহের ভেতরে প্রভাব বিস্তার করে বলে চিকিৎসকরা একে ব্ল্যাক বা হোয়াইট ফাঙ্গাসের তুলনায় ক্ষতিকর বলে দাবি করছেন। এ ফাঙ্গাসের উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করা । স্বাস্থ্যবিধিতে অবহেলা করলে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাসি খাবার খাওয়া বা অত্যন্ত বেশি আর্দ্র পরিবেশে থাকলেও এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
কীভাবে বুঝবেন কে আক্রান্ত?
অতিরিক্ত শারীরিক ক্লান্তি দেখা দেবে। ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকবে। খিদে কমে যাবে বা একেবারেই থাকবে না। সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বেরোবে। কোনও ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে না ওঠা। হজমে সমস্যা। বিপাক প্রক্রিয়া ধীরগতির করে ফেলা। ক্ষুধামান্দ্য।
অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস। ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব। ক্ষত থেকে পুঁজ বের হওয়া। ক্লান্তিবোধ। আলস্য। চোখ বুজে আসা প্রভৃতি। অপুষ্টি। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল। শরীরে পচন ধরা।
ইয়েলো ফাঙ্গাসে শরীরের ক্ষতি
ছত্রাকের প্রভাবে চোখ ধীরে ধীরে বুজে আসতে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। শরীরের কোনও অংশে পচনও ধরতে পারে।
আরো কিছু লক্ষণ
হজমে সমস্যা, শরীরে শক্তির অভাব ইয়েলো ফাঙ্গাসের উপসর্গ। এ ছাড়া কোনো আঘাত শুকাতে দেরি হওয়া, সহজে না সারা ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ। চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়াও এই রোগের লক্ষণ। পরিস্থিতি গুরুতর হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতেও শুরু করে। অপুষ্টি ও নেক্রোসিসও দেখা যেতে পারে এই ছত্রাকের কারণে।
চিকিৎসা ও করণীয়
মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতো ইয়েলো ফাঙ্গাসের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অ্যাম্ফোটারেসিন-বি ইঞ্জেকশন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে- নিজের রুম, বাসা-বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশের জায়গা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে।
বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরের আদ্রতা যেন বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর ঘর যেমন পরিষ্কার রাখা জরুরি একইভাবে ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর ঘরেও পর্যাপ্ত বাতাস এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত যেন ইয়েলো ফাঙ্গাসের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে না পারে।
সাধারণত করোনায় আক্রান্ত বা এ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই এ ধরনের লোকজনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
কেন বেশি ভয়ঙ্কর
ব্ল্যাক বা হোয়াইট ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে সাধারণত শরীরের বাইরের অঙ্গে প্রভাব ফেলে। দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। বুকে ব্যথা হয়। কাশিতে রক্ত পড়ে। তবে ইয়েলো ফাঙ্গাস ধীরে ধীরে শরীরের ভিতরের অংশকে আঘাত করে। তার ক্ষয় করে।
সাধারণ প্রবণতা
পোকার শরীরে সাধারণত ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যায়। মানুষের শরীরে এ ছত্রাক আগে দেখা যায়নি। তবে ইদানীং ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রোগীদের চোখ ফুলে উঠে এবং হঠাৎই দুই চোখ এক সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তার নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগ শুরু হয়। এ রোগে আক্রান্তরা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক বা দুই চোখ, এমনকি চোয়ালও ফেলে দিয়ে বাঁচতে হয় বাকি জীবন।
সতর্কতা
বিপজ্জনক ইয়েলো ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সতর্ক হতে হবে। না হলে শরীরের ভেতরে অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে। ইয়েলো ফাঙ্গাসে সংক্রমণে মৃত্যুহার তুলনায় বেশি। প্রতিদিন সুগারেরমাত্রা চেক করা, মাস্ক পরা, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলছেন। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম কাজ হল শরীরচর্চা করা। তবে করোনা থেকে সেরে উঠেই শরীরচর্চা করার পক্ষে না চিকিৎসকরা। কিছুক্ষণ হাটা ও হালকা শরীরচর্চার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও যাতে ঠিক মাত্রায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রতিকার
ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। নিজেকে সব সময় সুরক্ষিত রাখা দরকার। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হলে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেও ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে আর্দ্রতা বাড়লে এই রোগ ছড়ায়। গরমে আর্দ্রতা বাড়লে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়। প্রথমেই ধরা পড়লে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
ভারতে সংক্রমণ শনাক্ত
ভারতে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির দেহে হলুদ ছত্রাক সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ৪৫ বছরের ওই ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার দেহে কালো, সাদা এবং হলুদ তিন ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ পাওয়া যায়। সাধারণত সরীসৃপের দেহে হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যায়। প্রথম কোনো মানুষের দেখে এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখতে পান চিকিৎসকরা।
যে ব্যক্তির দেহে হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ পাওয়া গেছে তার ছেলে বলেন, তার বাবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন এবং ভালোভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তুদুই/তিন দিন ধরে তার চোখ ফুলে উঠতে শুরু করে এবং হঠাৎ করে তিনি আর দুই চোখ খুলতেই পারছিলেন না। তার নাক দিয়েও রক্ত পড়ছিল এবং তিনি মূত্র ধরে রাখতে পারছিলেন না।