আশেক ওসমানী
আমরা অনেক সময়, অন্যের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করি? কিন্তু এটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এতে আপনার আশেপাশের লোকজন আপনার কাছথেকে দুরে সরে যাবে, আপানি একা হয়ে যাবেন। মনে রাখবেন একাকিত্ব মানুষের মনের উদ্যমতাকে নষ্ট করে দেয়। কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সুতরাং অন্যের সাথে এমন আচরণ করুন, যেন আপনার আচরণ তারা বদলে যাওয়ার কারণ না হয়। নিজের পছন্দ মাফিক আচরণ অন্যের সাথে কখনো করবেন না। সবসময় হাসিমুখে কথা বলুন, এতে আপনার কার্যক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
কী করবেন, কী করবেন না
যে আপনাকে সব সময় গুরুত্ব দেন, তাকে আপনিও গুরুত্ব দিন। জীবন অনেক সুন্দর ও উপভোগ্য মনে হবে। মনে রাখবেন এ পৃথিবীতে কেউ এতােটা ব্যস্ত নয় যে, আপনাকে দেওয়ার মতো সামান্য সময়টুকু পর্যন্ত নেই। যার কাছে আপনার গুরুত্ব নেই তাকে এড়িয়ে চলুন, তার পেছনে সময় নস্ট করবেন না।
নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই তৈরি করুন
কারো অনুপ্রেরণা বা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করবেন না, নিজের অনুপ্রেরণা ও সুযোগ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে, বিনাস্বার্থে কেউ আপনাকে সুযোগ দিবে না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কিছু একটা এখনি শুরু করুন, হয়তো সফল হবেন নয়তো কিছু একটা শিখবেন। যা আপনার ভবিষ্যতে সফল হতে কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ।
সমালোচকদের প্রশ্রয় দেবেন না
অন্যের সমালোচনা করে এমন লোকের সাথে আলাপ করবেন না এবং এরকম যারা করে তাদের প্রশ্রয়ও দেবেন না। কারন, তারা আপনার অগোচরে আপনার নামেও বাজে কথা বলবে, সুযোগ পেলে তারা আপনাকে তাদের পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেস্টা করবে। কখনোই কারো কাছ থেকে প্রতিদান আশা করবেন না, কিছুতেই আশাহতও হবেন না,বন্ধুদের অশ্রদ্ধা করবেন না, কাউকে ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করবেন না,নিরাশ থাকবেন না, হাসুন, হাসিই আপনার সাইনবোর্ড, আপনার মূল্যবান শক্তি।
দ্রুত সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন না
অন্যের খারাপ কিছু কখনো অনুকরণ বা অনুসরণ করবেন না। খুব দ্রুত সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন না, মনে রাখতে হবে, সফলতার কোন শর্টকাট সূত্র নেই, ধাপে ধাপে এগোনোর চেস্টা করুন। একটি পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত, সুষ্ঠ-সুন্দর জীবন গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সবার আগে নিজের পরিবার
জীবনে সফলতার জন্য শুধু ভালো পড়াশোনা, বুদ্ধি, আত্মবিশ্বাস ও ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে হয় না, মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মিয়স্বজনদের দোয়াও লাগে, তাদের মনে কষ্ট দিয়ে হয়তো এগুনো যাবে, কিন্তু শান্তি পাবেন না। হয়তোবা তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগেই আপনার বাবা/ মা, তাদের আদরের সন্তানের শোকে পরপারেও চলে যেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন যার উপর ভরসা রাখছেন সে ও কিন্তু কয় দিন পর ভাববে, যে এতোটা বছর যাদের সাথে ছিলো, তাদেরকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে পারে, সে কয়দিন পরে আরো ভালো কিছু পেলে যে চলে যাবে না তার নিশ্চয়তা কি? সুতরাং সব কিছুতে আগে নিজের প্রিয় পরিবার।
শেকড়কে দুর্বল করবেন না
পরিবার হচ্ছে, প্রতিটা মানুষের মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকার শেকড়, সেই শেকড়কে কখনো দুর্বল করে ফেলবেন না। শুধুমাত্র কাউকে কাছে পাওয়ার জন্য। মনে রাখবেন গাছের শেকড় দুর্বল হয়ে গেলে গাছের মূল্য কমে যায় ধীরে ধীরে। যখন টের পাবেন আপনি শেখরহীন হয়ে পড়ছেন, তখন হয়তো আর কিছু করার থাকবেনা। বাবা হিসেবে সন্তানের সাথে সকালটা উপভোগ করুন, ওদের সাথে সকালের রোদটায় খেলাধুলা ও হাটাহাটি করুন। সম্ভব হলে নিজের হাতে সকালের নাস্তাটা করান, সন্তানের সাথে পারিবারিক বন্ধন বাড়বে পাশাপাশি সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাড়বে ইনশাআল্লাহ।
আচরণে কেউ যাতে অসন্তুষ্ট না হয়
মানুষ কখনো ইচ্ছে করে বদলায় না। মূলত কিছু মানুষের অবহেলা, কিছু স্মৃতি, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, পাশাপাশি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই মানুষ কে বদলে যেতে বাধ্য করে। সুতরাং কাছের মানুষ বদলে গেলে তার ভুল না খুজে, আপনি তার সাথে কেমন আচরণ করতেন সে দিকে খেয়াল করুন। তাকে না বুঝিয়ে নিজেকে বুঝান। সব সময় মনে রাখবেন, আপনার আচরনে ছোট-বড় কেউ যেন অসন্তুষ্ট না হয়। অন্যের সাথে এমন আচরণ করুন, যেন আপনার আচরণ তারা বদলে যাওয়ার কারণ না হয়। নিজের পছন্দ মাফিক আচরণ অন্যের সাথে কখনো করবেন না।
কাজে নেমে পড়ুন
আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কোন না কোন কাজ করার চেষ্টা করুন। বিশ্বাস করুন একবার যে কোনো কাজে নেমে পড়লে অনেক কিছুই পাবেন যেমন:- সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবেন। কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা পাবেন। কর্মসূত্রে অনেক মানুষকে সাথে পাবেন। নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারবেন। অন্যের বিপদের সময় পাশে দাড়াতে পারবেন। সফল হন বা ব্যার্থ হন কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা পাবেন। কাজ করার নতুন নতুন রাস্তা খুজে পাবেন। কাজে সফল হলে সবার প্রশংসা পাবেন। আপনার কাজের দ্বারা যারা উপকার পাচ্ছেন তাদের দোয়া পাবেন। মনে প্রশান্তি পাবেন। সুতরাং বসে বসে শুধু স্বপ্ন না দেখে, কোন না কোন কাজে নেমে পড়ুন। কোন কাজকেই ছোট মনে করবেন না। আজকের দিন খারাপ হলেও আগামীতে আপনার জন্য হয়তো ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখবেন, কেউ চেষ্টা করলে এবং মন থেকে চাইলে, আল্লাহ কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।
কাজের পেছনে সময় দিন
সন্তানকে সত্যকথা বলার উপকারিতা এবং মিথ্যাকথা বলার অপকারিতা শেখান পাশাপাশি মন্দ কাজের কুফল ও ভালো কাজের প্রশংসা করতে শেখান, তাহলে আপনার সন্তানের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে। সন্তানকে ভুল ও অপরাধ এর পার্থক্য বুঝিয়ে বলুন, খারাপ কাজের জন্য খারাপ কথা না বলে, বুঝিয়ে বলুন ও খেয়াল রাখুন, পরে যেনো আবারও একই কাজ করতে সে সুযোগ না পায়। এতে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, পাশাপাশি আপনার সন্তান আরো আত্মবিশ্বাসী হবে এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ পাবে। যে কাজই করতে চান, আগে শিখেন, কাজের পেছনে সময় দিন, টাকার পেছনে নয়।
বাবা-মাকে সময় দিন
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে সময় দেওয়াটা বেশ জরুরি। তাদের সাথে কথা বলা, তাদের ঘরের বাইরে হাটতে পাঠানো, ঘরের ছোট-খাটো বাজার সদাই তাদের দিয়ে করানো, ছোট খাটো বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা প্রয়োজন। এতে করা তারা নিসঃঙ্গ হয়ে পড়বে না। মনে রাখতে হবে বৃদ্ধ বয়সে আপনারাই আপনাদের বাবা-মা এর অভিভাবক। সুতরাং তাদের সময় দিন, অন্যের কথা শুনে তাদের সাথে কখনো রাগ দেখাবেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
মনোযোগ দিয়ে শুনুন
শুধু বাবা-মাকে খুশি রাখতে গিয়ে আপনার স্ত্রীকে ছোট করা যাবে না। আপনার বাবা-মা শুধুই ঠিক, আর সে ভুল। তা প্রমাণ করতে যাবেন না। মনে রাখবেন আপনার কষ্ট হলে বাবা-মা এর কাছে বলতে পারেন, তার কিন্তু আপনার বাসায়, আপনি ছাড়া কেউ নেই। সুতরাং তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তাকে আস্থায় রাখুন, তাকে সব সময় আগলে রাখার চেষ্টা করুন। স্ত্রীর কথা শুনে বাবা মায়ের সাথে যেমন রাগারাগি করবেন না, পাশাপাশি বাবা-মা বা পরিবারের অন্য কারো কথা শুনে স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করবেন না। মনে রাখবেন সবাইকেই নিয়েই আপনার পরিবার।
পজেটিভ কথা বলুন
সন্তান কোন কিছুর ভয়ে চুপচাপ হওয়াটা ভালো লক্ষণ নয় বরং এতে করে সন্তানের মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সন্তানের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এ কারনে। সময় পেলে সন্তানকে প্রকৃতির সাথে ও বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির সাথে পরিচয় করে দিন। এসব প্রানীদের দিয়ে ভয়ের গল্প বলে সন্তানকে ভিতু বানাবেন না বরং পজেটিভ কথা বলে তাদের চিন্তা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করুন। সন্তানের পাশাপাশি তাদের মায়ের মন ভালো থাকাটা বেশ জরুরী। আমাদের মনে রাখত হবে যে, মায়ের মন খারাপ থাকলে এর প্রভাব সন্তানের উপর পড়বেই। সুতরাং সন্তানের পাশাপাশি সন্তানের মায়ের মানসিক দিকটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
লেখক: কারাতে, স্ট্রিট ফাইট এন্ড ফিটনেস ট্রেইনার