সানি সানোয়ার
অফিসের কাজে একটু বাইরে বের হলাম
কাজ শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে গেল। সেখান থেকে অফিসে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল হল আমি তো ছোট ছেলের স্কুলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। আর স্কুল ছুটির সময়ও প্রায় হয়ে এসেছে। বুকটা ধুক করে উঠল একটা কথা ভেবে-
ছেলেটা মায়া ভরা কণ্ঠে একবার বলেছিল,
– বাবা, তুমি আমাকে আজ স্কুল থেকে আনতে যাবা?
– কেন বাবা? আজ কি কোন বিশেষ দিন?
– না, এমনি। অনেকদিন তো যাও না। যাবা বাবা?
– যাব বাবা। তবে আজ না। আজ অফিসে অনেক কাজ।
ছেলেটা মন খারাপ করে স্কুলে চলে গেল, আর আমি গেলাম অফিসে। সারাটা দিন চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিজের শৈশবের অপ্রাপ্তীর কষ্টগুলো। যাহোক, এরপর কয়েকমাস চলে গেল ছেলেটার সখ আর পূরণ করা হল না।
তাই একটা সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেলাম সেদিন। অফিসে না ফিরে সোজা গিয়ে হাজির হলাম আমার সোনা বাবাটার স্কুলে।
ততুক্ষণে স্কুল ছুটি হয়ে গেছে।
অভিভাবকগণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যার যার সন্তান বুঝে নিচ্ছে। আমার দু’চোখ খুঁজছে আমার সোনা বাবার মুখটা।
আমি খুঁজে পেলাম না, কিন্তু কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল একটি ছোট্ট উষ্ণ দেহ। শরীরের তাপ, চুলের গন্ধ আর দু’হাতের মায়াবী চাপের অনুভূতি আমাকে বুঝিয়ে দিল – সে কে।
আনন্দের বণ্যায় ভেসে যাচ্ছে তার চোখমুখ।
সেসিন তার চোখেমুখে ফুটে উঠা সেই খুশীটা আমাকে প্রচন্ড দু:খীও করে দিল। কতদিন তাকে আমি এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছি!
তবে দেরীতে হলেও তাকে তৃপ্ত করতে পেরে আমি নিজেও একটু তৃপ্তি পেলাম। গাড়িতে উঠে দু’জনেই দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বাসায় চলে গেলাম।
সেদিন মনে হয়েছিল, সুখের চাবি আর দু:খের তালা আশপাশেই থাকে। একটু খুঁজে নিতে হয়। যদিও আমরা সেটা খুঁজি দূর-দূরান্তে।
আজ আমার সেই ছোট বাবাটার জন্মদিন। একটু দোয়া করবেন। ছেলেটা আমার খুব লক্ষ্মী, নামাজী, তথা ধর্মপরায়ণও। সে বড় হয়ে ভাল মানুষ হতে চায়।