ষড়যন্ত্রকারীরা স্রষ্টার নিকট অভিশপ্ত। অতি চালাক-চতুর স্বার্থপর ও সুবিধাবাদীরা সবসময়ের জন্যই ঘৃণিত! কেউ ষড়যন্ত্র করে, কেউ ষড়যন্ত্র করায়। অনেকের চারপাশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়। কেউ ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে, কেউ নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি করে।
ষড়যন্ত্র কী?
ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ সম্পন্ন করার জন্য একজোট হওয়া।
ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে
কখনো ষড়যন্ত্র প্রকাশ পায়, কখনো ষড়যন্ত্র গোপন থাকে। সাধারণত ষড়যন্ত্রের সুফল পায় অল্প কজন, আর কুফল ভোগ করে বেশিরভাগ মানুষ। যিনি ষড়যন্ত্রে অংশ নেন তিনি পেছন থেকে থাবা দেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন
ষড়যন্ত্রে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধ্বংসের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন যারা সেসব উস্কানিদাতাদারা অপরাধী। সবখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাওয়ার চেয়ে নানা ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত হওয়া ঠেকাতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মূল করা দরকার। অথচ কেউ কেউ ষড়যন্ত্রকারীদের অর্থ যোগান দেয়, কেউ কেউ পিঠ চাপড়ে দিয়ে উৎসাহ দেন। অবলীলায় জালিয়াতি করায় প্রয়াসীদের বন্ধুর অভাব হয় না।
ষড়যন্ত্রের ধরন
ষড়যন্ত্র রাতের অন্ধকারে হয়, দিনের আলোতেও হয়।যেখানে ষড়যন্ত্র বাড়তে থাকে, সেখান থেকে বিশ্বাস পালাতে থাকে। ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করার মুহুর্তেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হয়। ষড়যন্ত্র বিচ্ছিন্ন ও স্বতঃস্ফুর্ত নয়। অনেক সময় ছোট ছোট ষড়যন্ত্রকারীরা বড় বড় ষড়যন্ত্রকারীদের গভীর ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হিসেবেও ব্যবহারিত হয়।
ষড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা
অনেক সময় অন্যের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে তা নিজের বিরুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ষড়যন্ত্রকারীরা অন্যের জীবনের মলিন মুহূর্ত দেখলে পুলকিত হয়। গোপন চক্রান্ত হালে পানি পেলে ভিকটিম বিহ্বল হয়ে পড়ে। ষড়যন্ত্রকারী অশুভ শক্তিকে জড়িয়ে কষ্ট দিয়ে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। কখনো ষড়যন্ত্রের গুমোর ফাঁস হয়ে গেলে ষড়যন্ত্রকারী আফসোসও করে।
কনস্পিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
বর্তমান বিশ্বে কনস্পিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যথেষ্ট আলোচিত, বহুল প্রচারিত ও উচ্চারিত। কেউ ষড়যন্ত্র তত্ত্বে গভীরভাবে বিশ্বাসী। বাড়ছে বিদ্বেষভাব। বাড়ছে ক্ষোভ। মনোভাব শক্ত হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা কখনো প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনো পরোক্ষভাবে সমাজের ক্ষতি করে, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে, নিয়ম-কানুনকে উপড়ে ফেলে, সন্দেহ-সংশয় বাড়িয়ে তোলে, ভেদাভেদ বাড়ায়।
ষড়যন্ত্রের দৃশ্যপট ও নীলনকশা
গভীর ষড়যন্ত্রের দৃশ্যপট তৈরি করার মাধ্যমে ক্ষমতাশীল মানুষ অসৎ উপায়ে এবং ক্ষতিকর পন্থায় নিজেদের ফায়দা লাভ করে থাকে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করলে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। কারণ অন্যকে বলির পাঠা বানাতে চাওয়ার নীলনকশার কথা প্রকাশ হলে গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। পরের অমঙ্গল সাধনে কাজ করতে করতে আচরণগত নেতিবাচক পরিবর্তন বাড়তে থাকে। ষড়যন্ত্রের প্রভাবে পক্ষপাতিত্ব বাড়তে থাকে।
ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রে জটিলতা
ষড়যন্ত্রকারীরা সাধারণত নৈতিকভাবে দুর্বল থাকে। ষড়যন্ত্রের নাটক যত বেশি জমে উঠে, বিনোদিত চোখগুলো তখন শয়তানের চোখে রূপ নেয়। ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্বাসের মাঝে ফাটল ধরায়। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যার উত্থান যত দ্রুত হয়, তার পতনও তত দ্রুত হবার আশংকা থেকে যায়। ষড়যন্ত্রে জটিলতা বাড়ে, অযাচিত নিয়ন্ত্রণ বাড়ে, বিভাজন বাড়ে। কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে পারে, কেউ কেউ পারে না। কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে পারে, কেউ কেউ পারে না।
ষড়যন্ত্রের পথ শয়তানের পথ
ষড়যন্ত্রকারীদেরকে সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভাবে শয়তান। ফলে ষড়যন্ত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও, দীর্ঘমেয়াদে বেশিরভাগ ষড়যন্ত্রকারীরই সর্বনাশ হয়। ষড়যন্ত্রের পথ অনেকেরই পছন্দের! হরেক রকমের ষড়যন্ত্র হয়। চরিত্র হননের ষড়যন্ত্র! লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র! ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! প্রাসাদ ষড়যন্ত্র! সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র! দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র! হত্যার ষড়যন্ত্র! ষড়যন্ত্র মামলা! বিদেশি ষড়যন্ত্র! দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র! হিংসার ষড়যন্ত্র!
ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো ফাঁদ
কেউ ষড়যন্ত্রের গন্ধ ছড়ায়, আর কেউ ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। কেউ ষড়যন্ত্র পাকানোর মধ্যে সেরা, কেউ ষড়যন্ত্র দ্রুত কার্যকর করায় ওস্তাদ। যারা অন্যের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারে, সাধারণত তারা ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো ফাঁদে পা দেয় না। তবে যার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়, সেই ভুক্তভোগী ক্ষতির মুখে দায়ীকে অভিশাপ দিয়ে থাকে। ষড়যন্ত্র পরিহার না করলে যারা মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়ে, তারা ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যায়।
ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষতি করে নীরবে
বিচক্ষণ ও ধূর্ত ষড়যন্ত্রকারীও মাঝে মাঝে নিজের তৈরি ফাঁদে নিজেই পড়ে। এদের ভেতরটা পঁচে যায় বলে বাইরে এরা দুর্গন্ধই ছড়ায়, সুগন্ধ দূরাশা মাত্র। ষড়যন্ত্রকারীরা সরবে যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে নীরবে। যখন একজনের ষড়যন্ত্র আরেকজনকে অনুপ্রাণিত করে তখন দু’জনের কেউই আর প্রকৃত মানুষ থাকে না।
ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ও বিভ্রান্তি
ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়নেও কিছু মানুষ আনন্দিত হয়। তবে এই খুশি পিশাচের খুশি হবার মতো! কারণ ষড়যন্ত্রে মাথা নষ্ট হয়, অন্ধকারে ছেয়ে যায় চারপাশ, বিভ্রান্তি বাড়ে, বিপথে হাঁটে । কেউ ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকাকে শ্রেয় মনে করে, আর কেউ ষড়যন্ত্রের সাথে থাকতে পারাকেই জীবনের সার্থকতা মনে করে!
ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি ভয়াবহ
ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকৃত বিজয় অর্জন করে না কখনো। ষড়যন্ত্র সাময়িক প্রশান্তি দিলেও ভবিষ্যতের বহু সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যায়। সুবিধাবাদী ও ভাগ্যান্বেষী ষড়যন্ত্রকারী শয়তান হিসেবে ক্ষমতার পঙ্কিল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। ছলনা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে, পরিস্থিতি তখন দ্রুত পাল্টায়। ষড়যন্ত্রকারী মুনাফিক! আর ষড়যন্ত্রের ফলাফল দেখায় কৌতূহলীরা মিনমিনে শয়তান।