আশেক ওসমানী
সব শিশুর শেখার ধরন এক নয়। তাই সন্তানের শেখার ধরনে ভিন্নতা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। সন্তানকে ভালো করে বুঝুন, যদি আপনার সন্তানকে ভালো করে বুঝতে পারেন, তবে সন্তানকে দিয়ে আপনি সব কিছু সহজেই করিয়ে নিতে পারবেন। দয়াকরে ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার ব্যাপারটাকে সন্তানের কাছে কঠিন বা গুরুগম্ভীর বিষয় করে তুলবেন না। খেলাচ্ছলে শিশুকে পড়তে উৎসাহ দিন, দেখবেন ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সন্তানকে পড়ালেখা থেকে শুরু করে, সব কাজ শুধু মায়ের একার নয়, বাবার ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সময় পেলেই বাবা থেকে সন্তানের বন্ধু হয়ে যান। সন্তানের ভুলগুলো বাবার চাইতে, বাবা নামের বন্ধুরাই বেশি সংশোধন করতে পারেন।
বেশি বেশি করে সেবা করা
যাদের বাবা মা বেচে আছে, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, বাবা-মাকে এই রমজানে বেশি বেশি করে সেবা করুন, কি খেতে পছন্দ করেন, সামর্থ্য অনুযায়ী তা কিনে তাদেরকে খাওয়ান, এই পবিত্র রমজানে মন থেকে তাদের দোয়া নিন। যদি কেনার সামর্থ্য না থাকে তাদের পাশে বসে সময় দিন। মনে রাখবেন সন্তানের জন্য বাবা মায়ের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেন। যাদের বাবা-মা দুনিয়াতে বেচেঁ নেই, তাদের জন্য ইফতারের সময় দু-হাত তুলে আল্লাহর দরবারে পরিবারের সবাই মিলে দোয়া করুন, কারণ ইফতারের সময়ের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেন।
মানবিক ও ভালো আচরণ করা
পৃথিবীতে সব চাইতে জঘন্য বিষয় হচ্ছে ছোটদের সামনে বড়দেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা। এটা না করে, বড় সন্তানকে সংশোধনমূলক বার্তা দিলেই বেশি ফল পাবেন। বড় সন্তানের ভুলত্রুটি নিয়ে, ছোট সন্তানের সামনে তুলনা করে কিছু বলা উচিৎ নয়। কারণ এতে হিতে বিপরীত হয়, মনের অজান্তেই আমরা অভিভাবকরা ছোট-বড়দের মধ্যে দুরত্ব ও হিংসার বীজ বপন করে দিয় নিজ হাতে। সন্তানকে মানবিক ও ভালো গুণ সম্পন্ন করে বড় করতে চাইলে, সন্তানের সাথেও মানবিক ও ভালো আচরণ করুন।
সন্তানকে চুমু খান
সন্তানের খেলাধুলার পার্টনার হউন, খেলার ছলে সন্তানের শিক্ষক হয়ে উঠুন, ওদের কাজের প্রশংসা করুন। নিজের সন্তানের সাথে, অন্যের সন্তানের কখনো তুলনা করবেন না। সন্তানকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন অন্তত একটা ভালোকাজ করুন, ছোট ছোট ভালো কাজের পুরস্কার দিন।প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান, সন্তানের সাথে প্রতিদিন মনখুলে হাসুন। সন্তানের জন্য মন ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। মনে রাখবেন সন্তানের জন্য মা বাবার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
সন্তানদের সময় দিন
সন্তানদের সময় দিন, সন্তানদের সুস্থ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করুন। কারণ ওরা সুস্থ সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠলেই নিশ্চিত হবে আগামীর সুস্থ সুন্দর পৃথিবী। সন্তানকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন ও খেলাধুলা করুন, এতে আপনার সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা নিশ্চিত হবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। প্রতিটি সন্তানের জন্য, বাবা- মায়ের যে কতো কিছুই করতে হয়, তার কোনো হিসেব নেই। পৃথিবীর সব বাবা-মা তাদের সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, নিরাপদে থাকুক। Life is beautiful with family.
পরিবারকে সময় দিন
জীবনে খারাপ মুহূর্ত আসার পূর্বেই পরিবারকে সময় দিন, সুযোগ পেলেই সন্তানদের নিয়ে তাদের দাদার বাড়ী ও নানার বাড়ীতে ঘুরতে নিয়ে যান। এতে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মধ্যে বন্ধনটাও শক্ত হবে। সন্তানকে প্রতিদিন একবার বুকে জড়িয়ে ধরুন শক্ত করে, আর কানে কানে সন্তানকে বলুন, এভাবে জড়িয়ে ধরলে বাবার খুব শান্তি লাগে। দেখবেন কয়দিন পর আপনার সন্তানও আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলবে, বাবা কেমন লাগে???
অসুস্থ হলে পাশে থাকুন
সন্তান অসুস্থ হলে তার পাশে থাকুন, পাশাপাশি আপনার স্ত্রীকে সাহস দিন, ওকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন, কারণ আপনার স্ত্রী স্বাভাবিক থাকলে, সে আপনার সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করতে পারবে, যাতে আপনার সন্তানও খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সুস্থ, সুন্দর ও সুখী পরিবার গড়ে তুলতে স্ত্রীকে সময় দিন, তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন, তার সাথে খুব রেগে গিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন, তাকে নিয়ে কেউ উপহাশ করলে প্রতিবাদ করুন, তাকে নিজেও সম্মান করুন। মনে রাখবেন, এ পৃথিবীতে আপনি ও আপনার বাবা-মা ছাড়া, আপনার স্ত্রী একমাত্র নারী, যিনি শুধুমাত্র আপনাকে ও আপনার পরিবারকে ঘিরেই স্বপ্ন সাজায়।
অপরাধী বানানো থেকে বিরত থাকুন
সন্তান ভুল করলে তাকে সরাসরি অপরাধী বানানো থেকে বিরত থাকুন। সন্তানকে সাথে নিয়ে প্রতিটা ভুলের জন্য খারাপ ভাবে না বলে, সুন্দর করে বিষয়টা বুঝাতে নিয়মিত চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার সন্তানের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিকতা বৃদ্ধি পাবে। সন্তানকে নিয়মিত সময় দিন, মন খুলে সন্তানের সাথে হাসুন ও খেলাধুলা করুন। সময় পেলেই খেলার ছলে সন্তানের শিক্ষক হয়ে উঠুন। বাবা হিসেবে সন্তানের সাথে সকালটা উপভোগ করুন, ওদের সাথে সকালের রোদটায় খেলাধুলা ও হাটাহাটি করুন। সম্ভব হলে নিজের হাতে সকালের নাস্তাটা করান, সন্তানের সাথে পারিবারিক বন্ধন বাড়বে পাশাপাশি সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাড়বে ইনশাআল্লাহ।
বিপদে সহযোগিতা করুন
অনেক সময় আমাদের বাসায় বা অফিসে এরকম কিছু মহিলা তাদের দারিদ্রতার কারনে পেটে বাচ্চা নিয়েও কাজ করেন। আমরা অনেক সময় তাদের কাজ কম করতে পারার কারণে বিদায় করে দিই। অথবা তার রেস্টের জন্য বিদায় করে দিই। কিন্তু কখনো চিন্তা করি না এই মহিলাটির কাজ না থাকলে সংসার চালাবেন কেমনে? অথবা তার কাজ করে খেতে হলে, বাচ্চা নিতে বলছে কে? বলে অপমান করি। কিন্তু একটা বারও ভাবি না যে, মানুষ অনেক সময় পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে যায়, যেখানে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ঠিক যেমন এই মহিলার স্বামীর এক্সিডেন্ট এর উপরও মহিলার নিয়ন্ত্রন নেই। অন্যের বিপদে সহযোগীতার হাত বাড়াতে না পারলেও, না জেনে অন্যের বিপদের সময়, এটা না করলে বিপদ হতোনা টাইপের জ্ঞ্যান দিবেন না, যাতে সে আরো ভেঙ্গে না পড়ে।
দোয়া করুন
সন্তানকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন দৌড়ান, সাইকেল চালান, ব্যায়াম করুন, ওদের সাথে যে কোন ধরনের খেলা খেলুন। সময় পেলেই সন্তানের সাথে মজা করুন ও মন খুলে হাসুন। এতে আপনার সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা নিশ্চিত হবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আপনার সন্তানকে কখনো কারো সাথে তুলনা করবেন না, মনোযোগ দিয়ে সন্তানের কথা শুনুন ও একসাথে খাওয়া দাওয়া করুন, এতে আপনার সন্তান আপনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবে। সন্তানকে সময় দিন, ওদের সাথে মনখুলে হাসুন, খেলাধুলার পার্টনার হউন, ওদের কাজের প্রশংসা করুন। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। সন্তানের জন্য মন ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। সন্তানের জন্য মা বাবার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
বুঝিয়ে বলুন
সন্তানকে সত্যকথা বলার উপকারিতা এবং মিথ্যাকথা বলার অপকারিতা শেখান। পাশাপাশি মন্দ কাজের কুফল ও ভালো কাজের প্রশংসা করতে শেখান, তাহলে আপনার সন্তানের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে। সন্তানকে ভুল ও অপরাধ এর পার্থক্য বুঝিয়ে বলুন, খারাপ কাজের জন্য খারাপ কথা না বলে, বুঝিয়ে বলুন ও খেয়াল রাখুন, পরে যেনো আবারও একই কাজ করতে সে সুযোগ না পায়। এতে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, পাশাপাশি আপনার সন্তান আরো আত্ববিশ্বাসী হবে এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ পাবে। কঠিন মূহুর্তেও রেগে গিয়ে প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। আল্লাহ হয়তো কোন না কোন উসিলায় আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন ইনশাআল্লাহ।
ছোট করা যাবে না
শুধু বাবা-মাকে খুশি রাখতে গিয়ে আপনার স্ত্রীকে ছোট করা যাবে না। আপনার বাবা-মা শুধুই ঠিক, আর সে ভুল। তা প্রমান করতে যাবেন না। মনে রাখবেন আপনার কষ্ট হলে বাবা-মা এর কাছে বলতে পারেন, তার কিন্তু আপনার বাসায়, আপনি ছাড়া কেউ নেই। সুতরাং তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তাকে আস্থায় রাখুন, তাকে সব সময় আগলে রাখার চেস্টা করুন। স্ত্রীর কথা শুনে বাবা মায়ের সাথে যেমন রাগারাগি করবেন না, পাশাপাশি বাবা-মা বা পরিবারের অন্য কারো কথা শুনে স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করবেন না। মনে রাখবেন সবাইকেই নিয়েই আপনার পরিবার।
চিন্তা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করুন
সন্তান কোন কিছুর ভয়ে চুপচাপ হওয়াটা ভালো লক্ষণ নয় বরং এতে করে সন্তানের মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সন্তানের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এ কারনে। সময় পেলে সন্তানকে প্রকৃতির সাথে ও বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির সাথে পরিচয় করে দিন। এসব প্রাণীদের দিয়ে ভয়ের গল্প বলে সন্তানকে ভিতু বানাবেন না বরং পজেটিভ কথা বলে তাদের চিন্তা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করুন। সন্তানের পাশাপাশি তাদের মায়ের মন ভালো থাকাটা বেশ জরুরি। আমাদের মনে রাখত হবে যে, মায়ের মন খারাপ থাকলে এর প্রভাব সন্তানের উপর পড়বেই। সুতরাং সন্তানের পাশাপাশি সন্তানের মায়ের মানসিক দিকটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
কিছু সুবিধা দেয়া
বাচ্চা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলে ভাববেন না যে, সে বড় হয়ে গেছে, তাই চুপচাপ হয়ে গেছে। বরং আপনার বা অন্য কারো আচরণে সে কষ্ট পাওয়ার কারনেও চুপ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে তার মানসিক সমস্যা শুরু হযে যেতে পারে। দুরত্ব তৈরী হতে পারে সন্তানের সাথে আপনার। সুতরাং আপনার সন্তান বড় হয়ে গেলে তাকে বঞ্চিত না করে বরং বড় হওয়ার কারনে কিছু সুবিধা ও দিন। তাতে সে নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করবে, আর ছোটদেরকে ছাড় দিবে।
লেখক: কারাতে এন্ড ফিটনেস ট্রেইনার, ওসমানী কারাতে একাডেমি, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা