ভ্রমণ- বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়ায়। মানবিকতা ও উদারতা বাড়ায়। শিক্ষায় আগ্রহী করে। সৃজনশীলতা বাড়ায়। চিন্তার জগৎ প্রসারিত করে। জীবনবোধ তৈরী করে। ধৈর্য বাড়ায়। সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। মানসিক চাপ কমায়। মন প্রফুল্ল রাখে। খুশি রাখে । মনের পরিধিকে বিস্তৃত করে। নতুন কিছু দেখে দৃষ্টি পরিতৃপ্তি লাভ করে। চোখ-কান খুলে যায়। বুদ্ধি বাড়ায়ে বুদ্ধিমান বানায়। দুঃসাহসী করে তোলে। ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস।
ভ্রমণের মাধ্যমে পারস্পরিক সহনশীলতা, সামাজিক রীতি-নীতি, সাংস্কৃতিক ভাব, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উপযোগিতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ভ্রমণকে বলা হয় জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। হাজার কর্মব্যস্ততার মাঝে শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে দেশভ্রমণ প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন। নতুন সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ইতিহাস, মানুষ সবকিছুর ব্যাপারে ভাবতে শেখায় ভ্রমণ।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ভ্রমণের পাঁচটি উপকারিতা উল্লেখ করেছেন। এক. দুশ্চিন্তা দূর হয়। দুই. জীবিকা অর্জন করা যায়। তিন. জ্ঞানার্জন করা যায়। চার. সৌজন্যতা ও শিষ্টাচার শেখা যায়। পাঁচ. শারীরিক সুস্থতা অর্জন হয়। শেখ শাদি বলেছেন, দুনিয়াতে দু’ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী- ১. ভাবুক বা চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং ২. দেশ সফরকারী ব্যক্তি।
মুসলিমদের মধ্যে সুলায়মান সায়রাফী, ইবন বতুতা, আলবেরুনি, আরবের হিরোডটাস নামে খ্যাত আল মাসউদি বিখ্যাত পর্যটক ও ভ্রমণ ইতিহাসবিদ হিসেবে বিশ্বনন্দিত। ইবনে বতুতা বলেছেন, ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য জানায়, ভ্রমণ আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রত্যেক মানুষেরই সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে ভ্রমণের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত।
বিশাল সৃষ্টি দর্শন, উপার্জন, জ্ঞান আহরণ, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। দেশ-বিদেশের নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য দেখে জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করা খুবই সহজ। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থেকে বের না হলে সৃষ্টিজগতের অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায়। পৃথিবীর একেক স্থান একেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
কিন্তু করোনা সংকটে থেমে গেছে বিমানযাত্রা, ভ্রমণ, পর্যটন৷ অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করেছে৷ দেশের মধ্যেও ভ্রমণের উপর কড়াকড়ি! অনেকে লকডাউনের ফলে কার্যত গৃহবন্দি! ভ্রমণের ইচ্ছা শুধু যেন স্বপ্ন! এমতাবস্থায় বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ভার্চুয়াল ভ্রমণের প্রবণতা৷ যাতে লাগছে না পাসপোর্ট, লাগছে না টিকিট! করোনা সংকট শেষ হবার পরেও ভার্চুয়াল ভ্রমণের প্রবণতা চালু থাকবে৷ ভবিষ্যতে পর্যটন আরও বেশি করে স্থানীয় পর্যায়ে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে৷ এমতাবস্থায় ভার্চুয়াল ভ্রমণের বিকল্প নেই। ভার্চুয়াল বাস্তবতা ভ্রমণের পথ পরিবর্তন করছে।
অনেক জনপ্রিয় শহর ও অঞ্চল বিনামূল্যে ভার্চুয়াল ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে৷ যেমন চীনের প্রাচীর বরাবর হাঁটার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ পেরুর বিখ্যাত মাচু-পিচু পর্বত নিজের মতো করে আবিষ্কার করা যাচ্ছে৷ জর্ডানের পেট্রা দেখে মুগ্ধ হওয়াও সম্ভব৷ অথবা নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ বাগানের দৃশ্য উপভোগ করা যাচ্ছে৷ প্রকৃতিপ্রেমীরা অনেক জাতীয় পার্কের রূপ দেখতে পাচ্ছেন৷ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিখ্যাত ইয়োসেমাইট ঘুরে দেখা যাচ্ছে৷ অথবা অস্ট্রিয়ার পাহাড়-পর্বত৷
সেমফোর স্টুডিও কর্তৃক তৈরিকৃত ভি-মক্কা থ্রিডি অ্যাপের সাহায্যে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদ ভার্চুয়াল ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।পবিত্র মসজিদের আশপাশের স্থানে অন্যান্য স্থানও পরিদর্শন করা যাচ্ছে। আরাফাহ পর্বত, জামরাত, মুজদালিফাসহ বিভিন্ন পবিত্র স্থান দেখা যাচ্ছে। আরবি, ইংরেজি, তুর্কি, ফার্সি, উর্দু, মালয় ও ইন্দোনেশিয়াসহ মোট সাতটি ভাষায় অ্যাপটিতে পবিত্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা শোনা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি গগলস বিনামূল্যে, ঘরে বসেই পৃথিবী ঘুরে আসার সুযোগ দিচ্ছে। একটা ভিআর হেডসেট থাকলেই ঘরে বসে ঘুরে আসতে পারবেন সারা পৃথিবী, অনেক জায়গা।
‘এস্কেপ নাও: দ্য আইকনস’ সিরিজে মিলবে ইজিপ্টের পিরামিড, ইতালির ফ্লোরেন্স এবং রোম, লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক সিটি এবং ব্রুকলিন ঘোরার অভিজ্ঞতা। ফারব্রিজের দ্বারা বানানো ফ্রি ট্র্যাভেল এক্সপেরিয়েন্স ‘মাস্টারওয়ার্কস: জার্নি থ্রু হিস্ট্রি’ দর্শককে তিনটি মহাদেশ দেখিয়ে আনবে, সঙ্গে ৩০০০ বছরের মানব ইতিহাস সম্বন্ধে জানান দেবে। রোম রি-বর্ন এর সাহায্যে দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রাচীন রোম ঘুরে নিতে পারবেন। সোফার স্টুডিও-র বানানো মাউন্ট এভারেস্ট ভিআর ট্র্যাভেলের মাধ্যমে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে মাউন্ট এভারেস্ট চড়তে পারবেন।
এসব অ্যাপ ও ভিআর হেডসেট ঝামেলা মনে করেন এমন প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুরা চোখ রাখতে পারেন স্ক্রীণে। দেখতে পারেন বিভিন্ন ভিডিও। ঘরে বসে ঘুরে আসতে পারবেন সারা পৃথিবী। দেখতে পারেন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির লীলা ও বৈচিত্র্য। করোনা মহামারিতে সরাসরি ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন! অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করুন! করোনার ঝুঁকি এড়াতে ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বন করুন!