সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। ইনবক্সে, ফোন কলে কিংবা ভিডিও কলে সেনসেটিভ বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। ভার্চুয়াল জগতে কোন কিছু প্রাইভেট নয়, সবই পাবলিক। মোবাইল নেটওয়ার্ক, অ্যাপস, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সার্চ ইঞ্জিন- ইন্টারনেট সংশ্নিষ্ট সব কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখছে হ্যাকাররা।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- ঘুষ না দেয়ায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে ফাঁসানো হয়েছে। সহকর্মীকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। নিজেদের সুবিধা লুফে নিতে নিজ দলের নেতাকেও ফাঁসানো হয়েছে। কাউকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। কাউকে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী বলে ফাঁসানো হচ্ছে। নির্দোষকেও দোষি বানানো হচ্ছে। ফেসবুকে মেয়ে সেজে প্রতারণা করায় যুবক আটকের ঘটনাও ঘটেছে। অনলাইন দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
অন্যকে ফাঁসাতে তার নামে ভুয়া আইডি খুলে কটূক্তি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। নিজের স্বজনকে লুকিয়ে রেখে গুমের নাটক সাজাতে যেয়ে অনেকে ফেঁসেও যাচ্ছেন। অনেককে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হচ্ছে। নিজের দোষকে গোপন করার উদ্দেশ্যও ফাঁসানোর নেপথ্যে কাজ করছে। ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ সাজানো ছবি তোলে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা হচ্ছে।
একাধিক প্রোফাইল চালানোর প্রবণতা খুব মারাত্মক। বিভিন্ন সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় কী পারমিশন বা অ্যাকসেস চাওয়া হচ্ছে তা খেয়াল করতে হবে। যেমন- মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস ইন্সটল করার সময় যদি কন্টাক লিস্ট আর মেসেজ এর এক্সেস চায়, সিক্রেট চ্যাট সার্ভিস ফেসবুক প্রোফাইলের এক্সেস চায় তাহলে সতর্ক হতে হবে। আইডি কার্ডে যে নাম ও জন্ম তারিখ আছে তার সাথে ফেসবুকের নাম ও জন্ম তারিখ যাতে মেলে, না হলে আইডি রিকভার করা যায় না।
পুরো ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে যাবার সময় রেলগাড়ীতে উঠে স্টাটাস, ভ্রমণ স্থানে পৌছে আরেকটা স্টাটাস দিলে ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা কেউ বাড়ি ফাঁকা বুঝে বাসার সব চুরি করে নিয়ে গেলে বিরাট ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই সামাজিত মাধ্যমে পোস্ট বা কমেন্ট করার আগে চিন্তা-ভাবনা করে করা উচিৎ; আর অপরিচিত যাকে তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলেই অ্যাকসেপ্ট করে ফ্রেন্ড বানানো ঠিক নয়।
মোবাইলে কোনো কোড আসলে তা কখনোই কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক না। অনেক ধরনের ফিশিং আছে ; লগইন করতে গেলে ফেসবুকের আইডি আর পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যায়। কোনো লিংকে ক্লিক করে ফেসবুকে রিডাইরেক্ট হলে এবং ফেসবুকের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে বলা হলে ভুলেও আইডি, পাসওয়ার্ড দেবেন না।
ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি, সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড সংরক্ষণ করা ঠিক না। কারণ আইডি হ্যাক হলে সকল ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারদের কাছে চলে যাবে। এমন গোপন কোনো ছবি, ভিডিও বা ডকুমেন্ট রাখাও ঠিক না যা অন্য কারো হাতে পরলে ক্ষতি হতে পারে। হ্যাকার ছাড়াও কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল তো চোর বা মেকানিকের কাছে পড়তে পারে।
একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ফেসবুকে-ম্যাসেঞ্জারে কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক না। ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করার পরবর্তিতে কোনো একজনের ফেসবুক হ্যাক হলেই হ্যাকার ছবি সংগ্রহ করে ব্লাকমেইল করে। ফেসবুকের নাম ও জন্ম তারিখ মিলিয়ে মিথ্যা পরিচয় পত্র তৈরি করে আইডির কন্ট্রোল নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ফেসবুক বা ইমেইল আইডির পাসওয়ার্ড অন্য কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয় বা এটি কারো সঙ্গে শেয়ার করা ঠিক না। কখনোই ফেসবুকের লগইন তথ্য ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও প্রবেশ করানো যাবে না। কখনোই সন্দেহজনক কোন লিংকে ক্লিক করবেন না। ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় যারা সক্রিয় তারাই বেশি ক্ষতি করছে। প্রেমিককে ফাঁসাতে বিচারপতিকে তরুণী কর্তৃক অশ্লীল মেসেজ দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
ভার্চুয়াল জগতে বিপদের মাত্রা কম নয়। বাস্তব জগতের মতো ভার্চুয়াল জগতে তৎপর রয়েছে নানা পর্যায়ের অপরাধী। যারা ভালো মানুষের ছদ্মবেশে প্রতিনিয়ত মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। কখনো হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। অনেক দুষ্টু স্বভাবের পুরুষ নারীর নাম ব্যবহার করে সরল মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ধোকা দিচ্ছে। একটু অসতর্কতা ও অসচেতনতা বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনলাইনে লেনদেন করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
ওয়েব সাইটে তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো কারণে সাইট হ্যাক হলে কিংবা যেকোন উপায়ে তথ্য চুরি হলে ওই ব্যাক্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তথ্যের সাথে ব্যাংক হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লেনদেন থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই জড়িত থাকে। ভার্চুয়াল কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। নিজেই ইয়াবা রেখে অন্যকে ফাঁসানো হচ্ছে। ঋণ বা সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা হচ্ছে। ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা হচ্ছে। ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা হচ্ছে।
প্রতারণার কয়েকটি ধরণ- “ঘরে বসে মাত্র দুই ঘণ্টা কাজ করে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে চান?” “ব্রান্ড নিউ Apple iPhone X (iPhone 10) মাত্র ৫০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকায়!” “অনেক কম দামে ভার্চুয়াল ডলার বিক্রয় করা হয়” “ব্রান্ড নিউ R15 V3 মোটরবাইক মাত্র ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকায়। ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।” “বিদেশ থেকে মূল্যবান গিফট সামগ্রী পাঠানো আর সেগুলো শুধুমাত্র কুরিয়ার চার্জ দিয়ে পেয়ে যাওয়া” ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাইবার প্রতারণা কিংবা অনলাইনে প্রতারণার মূল হাতিয়ার হলো লোভনীয় বিজ্ঞাপন। যে লোভনীয় চাকরির অফার দিয়ে বিভিন্ন অযুহাতে টাকা পয়সা নিয়ে চাকরি দাতা উধাও হয়ে যাওয়া অথবা চাকরি প্রার্থীকে উধাও করে দেয়া। অনলাইনে তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার লোভ দেখিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। ভার্চুয়াল জগতে বন্ধুত্বের নামে চলছে অবাধে প্রতারণা। ইমিগ্রেশনের নামে প্রতারণা হচ্ছে। হজযাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
ফাঁদে ফেলা বা ফাঁসানোর কাজটা যে শুধু ভার্চুয়াল জগতেই হচ্ছে এমন নয়। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বোনকে হত্যার ঘটনা ঘটছে। ভাইকে ফাঁসাতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা ঘটছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াও বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অপচেষ্টাও প্রকাশিত হয়েছে। গালগপ্পো বানিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে অস্ত্র দিয়ে আপন ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা সংবাদপত্রে এসেছে। ফাঁসানোর পেছনে চক্রান্ত পরে কখনো প্রকাশিত হচ্ছে, কখনো হচ্ছে না।
অনেক সময় এমন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়, তখন আর কিছুই করার থাকে না। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফাঁসানোর জন্য হত্যার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, অপহরণের নাটক সাজানো হচ্ছে।