জীবনের জয়গান

চলে যাচ্ছে সময়, ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবনকাল!
হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান অতীতের গহ্বরে
মরুঝড়ে মরুর পথে চলা কোনো পথিকের পদচিহ্ন
যেন মুছে যাচ্ছে বালির নীচে পরে
যুগের পর যুগ! শতাব্দীর পর শতাব্দী!

চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা!
নব সৃষ্টি পুরাতনেরে ঠেলছে দূরে।
জীবন তরী অস্তিত্ব রক্ষায় অভিনব ভেলা সেঁজে
যেন অজানার পথে ছুটে চলছে সবাই
কোন নিশ্চিত নিরাপদ ঠিকানার খোঁজে!

এই মাটির ওপরে হয়েছে কতই না সংলাপ-কথোপকথন;
সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ মিশে গেছে বায়ুমন্ডলে!
ভূপৃষ্ট বহু ঘটনার নিরব স্বাক্ষী!
সেই আদম থেকে শুরু!
কত মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস এই ভূমন্ডলে!

নবজাতকের কান্না! প্রসব বেদনায় মায়ের চিৎকার!
মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতর কত আহাজারি বাতাসে মিশেছে!
এই ভুপৃষ্টে কতটা যে আর্তনাদ! কান্নার স্বর!
কখনো উল্লাস! কখনো হৈ হৈল্লা!
কত গান! কত কবিতা! কত বক্তৃতা! কত আলাপচারিতা!

বহু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে!
স্বপ্ন পূরণে হয়েছে চেষ্টা সাধনা!
কেউবা স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবী ছেড়েছে!
কেউবা পুরানো স্বপ্ন ছেড়ে নতুন স্বপ্নের পথে ছুটে!
কেউবা স্বপ্নভঙ্গ বা ব্যর্থতায় জীবনের চাঞ্চল্য হারায়!

প্রাণহীন দেহের আশ্রয় এই মাটির ভিতর!
হিসাব কষাকষি নেই! লাভ-ক্ষতির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই!
কত মহাবীর! দাপুটে শাসক! বড় পন্ডিত! ঔদ্ধত শির!
প্রাণ চলে গেলেই সবার একই পরিণতি!
পবিত্র রক্ত! অপবিত্র রক্ত! আনন্দাশ্রু! বেদনার অশ্রু!
সব শোষে নিয়েছে এই মাটি।

কত বীজের অঙ্কুরোদগম হয়েছে এই মাটিতে!
মাটির পেটে একাকার হয়েছে সব ভেজাল আর খাঁটি!
অহংকারীর পদাঘাত সহ্য করেছে মাটি!
ক্ষতি করলেও তাকে আপন করে- বুকে ঠাই দিয়েছে মাটি!
তাই প্রাণের চেয়ে প্রিয়, স্বর্ণের চেয়ে দামি, হীরার চেয়েও খাটি- অফুরন্ত সম্ভাবনাময় এই মাটি।

দারুণ স্বচ্ছ কাচেঁর গ্লাসটিকে হাতে লাঠির আঘাত!
ফলাফল কয়েক টুকরো কাঁচ!
আঘাতের চিহৃ কি আর মুছতে পারবে?
চেষ্টার পর চেষ্টা করলেও পারবে না।
পূর্বের রুপে আর নাহি ফিরবে। মানুষের মনও তেমনি!

নদী কিংবা সাগরে যাও!
পানিতে আঘাতের পর আঘাত করো।
দেখবে মিলিয়ে যাচ্ছে দাগ!
ঢেউ আসছে! পূর্বাবস্থায় ফিরছে!
শত আঘাতেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে কম মানুষই।

মাটির দেহ নিয়ে মাটির ওপরে থাকা!
প্রাণহীন হলেই ঠিকানা মাটির ভিতরে!
মাটিতেই জন্মায় খাদ্য!
কত প্রাণের চাঞ্চল্য এই মাটিতে!
মাটিতেই সৃষ্টি! মাটিতেই বসবাস! মাটিতেই অস্তিত্ব!

আবার কখনো এ মাটিতেই ধ্বংস!
ভুমিকম্পনে হয় ধ্বংসস্তুপ!
ভুমিধ্বসে শেষ হয় জনপদ!
ভুমি উর্বরতা হারালে থামে প্রাণ স্পন্দন!
মাটিতে প্রাণের উৎপত্তি! মাটিতে প্রাণের বিলুপ্তি!

মাটিতে প্রাণের অস্তিত্ব!
নতুন প্রাণের আগমন! মাটিতেই প্রাণের বিসর্জন!
মাটির পেটে কতকিছু ছিল!
মাটির পেটে কতকিছু আছে!
মাটির ভেতর কতকিছু ঢুকেছে!

মাটির নীচ থেকে কতকিছু বের হবে!
যা কিছু মাটিতেই থাকবে!
মাটির পরশে মমতার ছোঁয়ায়!
বাঁচলেও মাটি! মরলেও মাটি!
মাটিবিহীন জীবন-প্রাণ অবিশ্বাস্য বসুন্ধরায়!

পানির কত রুপ! কখনও জীবন! কখনও মরণ।
পানি ছাড়া বৃক্ষ-তরুলতা-গুল্মলতা অকল্পনীয়।
অথচ বন্যায় ফসল ভাসায় পানি! বর্ষায় পানি!
পানি ছাড়া জীবন চলে না।
জীবনের প্রয়োজনে পানি! জগতের প্রয়োজনে পানি!

সাগরে পানি! নদীতে পানি! হ্রদে পানি!
পুকুরে পানি! ঝর্ণার পানি!
জমজমকূপ থেকে হাউজে কাওসার! সর্বত্র পানি!
জল বা পানি-যাই বলুন! কতটা বৈচিত্র্যময়!
আখের রস! খেজুরের রস! তালের রস! ফলের রস!

পানির বিকল্প কেবল পানিই!
খাবারে পানি! সাঁতারে পানি! গোসলে পানি!
চলাচলে পানি। বড় কল্যাণময় পানি!
চাপে পানি! তাপে পানি! উত্তাপে পানি!
মাপে পানি!গতিতে পানি! শক্তিতে পানি! স্বচ্ছতায় পানি।

সুস্থতায় পানি! অসুস্থতায় পানি!
পানি ছাড়া জগৎ অবাস্তব।
পানি নেইতো জীবন নেই!
জীবন নেইতো জগৎ নেই।
বহু দামি-পানি। মূল্যবান পানি!

শ্বাস-প্রশ্বাসে বায়ু।
নি:শ্বাসে বায়ু!
বায়ু ছাড়া কি আর চলে?
পাখি উড়ে, মেঘ ভাসে, পথিক ক্লান্তি ভুলে বাতাসের ছোঁয়ায়। নৌকা চলে পাল তুলে।

কখনও বাতাসের প্রবল বেগ উড়িয়ে নেয় সবকিছু!
উড়িয়ে নেয় সবকিছু!
কেপে উঠে পৃথিবী! বিপন্ন হয় মানবতা!
তবুও বায়ু না থাকলে কি আর আয়ু থাকে?
বায়ুর চাপ! বায়ুর প্রবাহ! বায়বীয় অবস্থা! বাতাসের খেলা!

দিনে সূর্যের উত্তাপ! রাতে চাঁদের আলো!
শীতের ঠান্ডা! গ্রীষ্মের তাপদাহ! ভীষণ বৈচিত্র্যময়!
জীবনের প্রয়োজনে এমন নিখুঁত আয়োজন যার!
জীবনের বিনিময়েও কি হবে তার প্রতিদান?

About আনিসুর রহমান এরশাদ

শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

View all posts by আনিসুর রহমান এরশাদ →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *