১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরের কোনো এক বিকাল!
মৌলভী কাকা পত্রিকার একটি কপি হাতে দিলেন।
টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত আজকের টেলিগ্রাম পত্রিকা।
পত্রিকার ওপরে দুটি ডাকটিকিট লাগানো দেখলাম।
মোজাম্মেল কাকার হাতে লেখা মৌলভী কাকার ঠিকানা ছিল।
ডাকযোগে টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল হয়ে কামালিয়া চালায় পত্রিকাটি পৌঁছেছে।
তখন ডাকঘরগুলোর ছিল ভরা যৌবন।
মৌলভী কাকা খুব আনন্দিত ছিলেন।
বললেন- বাবাজি তোমার লেখা ছাপা হয়েছে।
আমি আমার লেখাটি খুঁজতে লাগলাম। দারুণ উত্তেজনা!
একসময় ‘নকল’ কবিতাটি চোখে পড়ল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না!
নিজের নামটি পত্রিকায় ছাপানো হরফে দেখে ভালোই লাগলো।
নিজের লেখা নিজেই বারবার পড়লাম। আরো অনেককে দেখালাম!
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে ছাপা হওয়া কবিতাটি হাতে লিখে পাঠিয়েছিলাম।
১৯৯৯ সালের এপ্রিলে আদি টাঙ্গাইলে ছোটফুফুর বাসায় বেড়াতে গেলাম।
ছোটফুফুর বাসায় থাকা মানেই সারাক্ষণ বই ও ম্যাগাজিন পড়া!
হাসিমুখ গল্পটি লিখে সাংবাদিক আংকেলকে দিয়েছিলাম।
২২ এপ্রিল সেটি ছাপা হয়েছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে।
সোনালী বার্তা পত্রিকার সোনালী সাহিত্য পাতায়।
তখন পত্রিকায় নিজের লেখা ছাপা দেখা সুখের ছিল। আনন্দের ছিল!
এত খুশি হয়েছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব, বর্ণনাতীত!
টাকা খরচ করে ফটোকপি করে বন্ধু-সহপাঠীদের দিয়েছিলাম!
ছোটবেলায় এসব ঘটনা লেখালেখিতে দারুণ উৎসাহ জুগিয়েছে।
লিখতে আগ্রহ ও ভালোবাসা তৈরি করেছে।
লেখালেখির কাজে আনন্দ তৈরি করেছে।
এখনতো মানুষ হাতে লেখা কমিয়ে দিয়েছে।
লেখে না বললেই চলে! প্রয়োজনও কমেছে।
ব্লগ, ফেসবুক, সাহিত্য পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনসহ অনেক মাধ্যম।
আগে যোগোযোগ কঠিন ছিল। মাধ্যম কম ছিল।
মোবাইল ছিল না। কম্পিউটার ছিল না।
তখন কষ্ট করে হাতে লিখতে হতো! খাম কিনতে হতো!
হাতে ঠিকানা লিখতে হতো!
পাঠাতে পয়সা খরচ করতে হতো!
ডাকঘরে পায়ে হেঁটে যেতে হতো!
(স্মৃতির দর্পণ থেকে : তিন)