চিন্তার বিভ্রান্তি থেকে বের হতে না পারলে ধীরে ধীরে বিভ্রান্তিকর অভ্যাস তৈরি হয়! যার চিন্তা উদ্ভট, তার কথাবার্তাও অসঙ্গতিপূর্ণ। যার ভিতরে বিভ্রান্তি কাজ করে, বাইরে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোই হয় তার আসল কাজ!
চিন্তা-ভাবনা করে সঠিক কাজটি করার জন্য মানসিক বিভ্রান্তি থেকে আগে মুক্ত হতে হয়। একদেশদর্শিতা থেকে এক চোখা আচরণ আসে, যে অপছন্দের তারই বিরোধীতা করার মানসিকতা জাগে, অপরের ক্ষতি করতে চাওয়ার মতো প্রবণতা দেখা যায়।
চিন্তা করতে সক্ষমতার চেয়েও বেশি জরুরি সঠিকভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা। ভুল চিন্তা বিপথগামী করে, বিভ্রান্তির জগত তৈরি করে। আর সঠিক চিন্তা বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করে। সঠিক চিন্তার জন্য চিন্তার উৎস সঠিক হতে হয়।
নিজস্ব চিন্তা-চেতনা একবার বিভ্রান্তির গলিপথে হারিয়ে গেলে তা আসল গতিপথে এনে চিন্তার বিভ্রান্তি দূর করা মোটেই সহজসাধ্য হয় না। যিনি নিজে বিভ্রান্ত, তিনি জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনায়ও সাধারণত অগ্রসর থাকেন!
চিন্তার বিভ্রান্তি অনুশীলন থেকে বিভ্রান্ত করে, অসুস্থ পরিবেশ তৈরি করে। আত্মঘাতী চিন্তার কারণে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে মুক্তচিন্তার যেমন যবনিকাপাত ঘটে, জানার বিভ্রান্তি চিন্তার সীমাবদ্ধতাকে বাড়িয়ে চিন্তার পরিসরকে আরো সংকীর্ণ করে।
যে জাতির চিন্তার জগতে নৈতিকতার চর্চা নেই, সেই জাতির মিডিয়া চোখে ধুলা দিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে পারে। যেখানে চিন্তার অভাব নেই তবে সঠিক চিন্তার অভাব- সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ! চিন্তার মুক্তির আন্দোলনের নামে বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তি একটি লেজে গোবরে অবস্থা সৃষ্টি করে!
অন্যের চিন্তা ধারণাকে বদলাতে হলে আগে নিজের চিন্তা ধারণাকে বদলাতে হবে। চিন্তার বিষয় একই রেখেও চিন্তার পদ্ধতি-প্রক্রিয়া বদলানোর মাধ্যমে ভিন্ন ফলাফল আনা যায়! নিজস্ব ভাবনার ও চিন্তার দর্শন বিভ্রান্তির সীমানায় ঘুরপাক খেলে তা থেকে কল্যাণকর কিছু বের হয় না, বরং জটিলতা বাড়ে।
চিন্তা শক্তি থাকার মানে এই নয় যে যেন তেন উপায়ে যখন তখন তার জানান দিতেই হবে! ভাবনা-চিন্তার ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত-প্রক্রিয়াগত স্তর মেনে এগোতে হবে! চিন্তার মৌলিক বিভ্রান্তি চিহ্নিত হলে তা বিবেচনায় নেয়ার মতো উদারতাও লাগবে! কোনো চিন্তায় মস্তিষ্ক মেঘাচ্ছন্ন হলে তা চিন্তার বিভ্রান্তি ! কপালে চিন্তার ভাজই চিন্তাশীল হবার জন্য যথেষ্টও নয়!
যেসব চিন্তার কারণে একাগ্রতা হারায় তা দুশ্চিন্তা! কেউ কেউ চিন্তার সবটুকুই তুলে ধরেন, কেউ কেউ চিন্তার সবটুকুই গোপন করেন! চিন্তার বিভ্রান্তি দ্রুত ছড়ায়। মুক্তবুদ্ধি চর্চা অন্তসারশূন্যতায় ভরে যায় শিকড়-উৎসকে অস্বীকার করলে! অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেন, আবার অনেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে জ্ঞানীয় বিভ্রান্তির জন্ম দেন!
মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দান করা হয়েছে চিন্তার বিভ্রান্তির উন্মোচন ও আমলের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য। চিন্তার স্বাধীনতা মানে এই নয় যে যেকোনো চিন্তার চর্চাই মানুষের শক্তি হয়ে উঠবে, ভুল চিন্তা দুর্বলতাও বাড়াতে পারে! যে চিন্তা হৃদয়কে শক্তিশালী করে, বুদ্ধির তীক্ষনতাকে আরো ধারালো করে- তাই সক্ষমের সামর্থ্যবান চিন্তা!
চিন্তার বৃত্ত কোনো অযৌক্তির ভিত্তির ওপর আঁকলে হবে না বা চিন্তার প্রাসাদ কোনো বিভ্রান্তির ওপর দাঁড় করলে হবে না- চিন্তাকে পরিশুদ্ধ-বিশুদ্ধ-খাঁটি হতে হবে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াসে চিন্তার বিভ্রান্তি ঘটানো কখনোই ভদ্রসমাজে সমাদৃত হতে পারে না।
বিভ্রান্তিকর চিন্তা থেকে বিভ্রান্তিকর সংস্কার আসে, যা পরিহার করাও আসল কারণ খুঁজে বের করায় সহায়ক! সব বিভ্রান্তি ভেঙে যায় যখন চিন্তা তার মূলের দিকে ফিরে আসে! বিভ্রান্ত চিন্তা থেকে বিভ্রান্তিকর সব আয়োজন হয়! মৌলিক বিভ্রান্তি খানিকটা চিন্তার খোরাক যোগালেও দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়।
যখন কোনো মানুষের মনোজগতে বিভ্রান্তি থাকে তখন তা শুধু সেই ব্যক্তিকেই বিভ্রান্তির পথিক বানায়। কিন্তু সেই বিভ্রান্তির ভাবনা সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকেই হ্রাস করে তখন তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে চিন্তার বিভ্রান্তি সীমাহীন, সেখানে কর্মেও বিভ্রান্তি সীমাহীন। চিন্তার পদ্ধতি না মেনে না জেনে যারা চিন্তা করেন, তারা মূলত চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন।
সব স্তরে বিভ্রান্তি নিয়ে বিভ্রান্তিরভিত্তিতেই কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে তা সঠিক হয়? মোটেই নয়। কৌশলগত চিন্তাভাবনাকে বিভ্রান্ত করে কখনোই ভালো ফল আসে না। কিছু কিছু চিন্তার বিস্তর প্রভাব রয়েছে। বিভ্রান্ত ব্যক্তির মনোজগতে যে বিভ্রান্তি থাকে সেটি দূর করতে হলে বিভ্রান্তির ধরণ-প্রকরণ সম্পর্কে স্পষ্ট জানতে হয়।
আল্লাহ মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তবে এই স্বাধীনতার অপব্যবহারের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। ফলে খেয়াল খুশিমত আঁকা-বাঁকা পথসমূহে ঘুরে বেড়ানোর নাম মুক্তবুদ্ধির চর্চা নয়! খেল-তামাশা ও বাজে কাজে সূল্যবান সময়কে মূল্যহীনভাবে ব্যয় করা চিন্তার অবারিত স্বাধীনতা নয়। চিন্তা-গবেষণা হতে হবে নীতিমালার সূত্রপথ ধরে এবং সংস্কারের নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোতেই।
কারণ চিন্তার বিভ্রান্তি থেকে কর্মের বিচ্যুতি ঘটে, মনস্তাত্ত্বিক বিচ্যুতি ঘটে, বিচ্যুতিমূলক আচরণ বাড়ে, অপরাধ কর্ম সংঘটনের প্রবণতা বাড়ে, মানবীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি বাড়ে, আদর্শ বিচ্যুতি বাড়ে, অবৈধ কাজ-কর্মেরও শুদ্ধতা বাড়ে, স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ে, বিচ্ছিন্ন বিচ্যুতি বাড়ে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক বিচ্যুতিও ঘটে। তবে মূল বিচ্যুতির কারণের গভীরে না গিয়ে শুধু একটি কর্মের দ্বারাই পুরোপুরি বিচার-বিবেচনা করে ফেলা ঠিক নয়!