চলতে ফিরতে কত কিছু দেখি। কত কিছু ভাবি, কত কিছু লিখি। অনেকের সাথেই ফোনালাপ হয়। দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কথাবার্তা হয়। বহু প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। নানা প্রস্তাব আসে। বিচার-বিবেচনা বোধ থেকে কিছু সিদ্ধান্তও হয়। কমজনই গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অটল-অবিচল থাকতে পারে। কমজনই ‘না’ বলার মতো দৃঢ়তা দেখাতে পারে!
আলাপন-আলাপচারিতা বা আড্ডায় উত্থাপিত বিষয়গুলোতে যেমন সিরিয়াস ব্যাপার থাকে, তেমনি হালকা রসিকতাও থাকে। কেউ ঘটনা ঘটায়, কেউ ঘটনা বলে, কেউ ঘটনা শোনে। উপলব্ধির ভিন্নতা থাকে, অভিজ্ঞতার ভিন্নতা থাকে; ফলে একই প্রসঙ্গ কাউকে আনন্দিত করে, কাউকে শিহরিত করে, কাউকে পুলকিত করে!
বাস্তবতা হচ্ছে- জীবন ও জগৎ থেকে খুব কমজনই শিক্ষা নেয়। অনেকে প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার জন্য! পরামর্শ দেয় দায় এড়ানোর জন্য! কৌশল বলে আমানতের খেয়ানত করে! আধুনিকতা বলে আচার-প্রথা-ঐতিহ্যকে এড়িয়ে যায়!
সাধারণত অধিকাংশ মানুষই পড়াশুনা ও গভীরভাবে চিন্তা করে কাজ করার দরকার আছে বলে মনে করে না! চিন্তার মৌলিকত্ব, কাজে স্বতন্ত্রতা ও আচরণে ব্যক্তিত্ব ভাবনাও জোরালো নয়! ব্যস্ততা বেশি! পেরেশানি বেশি! নিজ বিবেচনা, আগ্রহ, প্রয়োজন ও মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রবণতা বেশি! সবসময় সহনশীল হয়ে ক্রোধকে দমন করে ঠান্ডা মাথায় কাজ করার সামর্থ্য কম!
পরের মান-সম্মান ও ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে এমন কথা বলা বা লেখা ব্যক্তিত্বহীনতা! কাজের আগে ভাবার বা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়ার মানসিকতা কম! অনেকের জ্ঞান বৃদ্ধির আগ্রহ কম আবার অনেকের জ্ঞানকে কাজে লাগানোর দক্ষতা কম! বুঝাপড়া স্পষ্ট না হলে শুধু নৈতিক দায়িত্ব থেকে কোনো কাজকে অগ্রাধিকার দেয়া অনেকেরই সম্ভব হয় না।
আল্লাহর ওপর সবসময় যারা নির্ভর করে, তারা প্রাপ্তিকে নয় কাজ ও দায়িত্বকেই ভালোবাসে। যারা নিজের সবকিছু স্রষ্টার সাথে শেয়ার করে, তাদের অতিব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় অন্য কোনো সৃষ্টির সাথেই শেয়ার করার প্রয়োজন হয় না। আসলে একজনের যা দরকার, আরেকজনের তা দরকার নেই; ফলে সব ধরনের চাহিদা বা প্রয়োজন নিয়ে সাধারণীকরণের যৌক্তিকতাও নেই!
স্বচ্ছতার সাথে যারা কাজ করেন, তারাই সংশ্লিষ্টদের নিজে থেকে অবহিত করেন। যাদের বক্রতা বা অসততা থাকে, তারা সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে দিতে চান না বা কেউ বুঝে নিতে চাইলেও এড়িয়ে যেতে চান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি ও ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়, যোগাযোগে পারদর্শি না হওয়ায়।
মানুষ য্খন মন-প্রাণ উজার করে দিয়ে কাজ করে তখন প্রাতিষ্ঠানিক রীতি অনুযায়ী অনেক কাজই কাজ হয় না। ফলে মূল্যায়নও হয় না, ইতিবাচকভাবে বিবেচিতও হয় না। স্বচালিত মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বতস্ফূর্ততা থেকে এমন অনেক কাজই করেন যেগুলোতে সময়দানটা হিসেবে আসে না!
কোনো চিন্তাশীল ব্যক্তির শুভ চিন্তা, কোনো স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্ন কিংবা উদ্যোক্তার শুভ উদ্যোগে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করার মানুষের অভাব রয়েছে! খারাপ পরিস্থিতির পেছনে যেমন অসচেতনতা দায়ী থাকে তেমনি অবহেলাও কম দায়ী নয়। টাকাই যার কাছে মুখ্য, তার কাছে সম্পর্ক সাধারণত গৌণ হয়ে যায়!