কাউকে সামনে টেনে আনা হয়, কাউকে পেছনে ঠেলে দেয়া হয়। পক্ষ-বিপক্ষ হয়! শত্রুতা-মিত্রতা থাকে! কেউ টাকার কাছে বিক্রি হয়! কেউ উপহার পেয়ে বশীভূত হয়! কেউ পারিশ্রমিকের চেয়ে বখশিশের জন্য লালায়িত থাকে! আবার কেউ কেউ কাজকে ভালোবাসেন, দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। দান-অনুদান পেতে ব্যাকুলতা নিয়ে স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায় না!
টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন, তা দেয়ার চেয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকা দরকার! অর্থ যেভাবেই আসুক তা গ্রহণ করার মানসিকতা বাদ দিয়ে কে কিভাবে দিচ্ছে তা জিজ্ঞেস করে স্পষ্ট হয়ে নেওয়া দরকার! একজন সামর্থ্যহীন ব্যক্তি সামর্থ্যবান হবার পরে পূর্বে যাদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েছেন; তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়ে তাদের উপকার করতে পারেন, ধার-কর্জ-ঋণ থাকলে তা ফেরৎ দিতে পারেন।
কৃপণ সম্পদশালী কখনো ঋণগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে পারেন না! যে চাইতে পারে না বা সইতে পারে না অধিকাংশক্ষেত্রেই তার ব্যথা বেশি বুঝে গরিবানা হালতে যিন্দেগী যাপনকারীরাই! নরম মনের মানুষের উদার আচরণের জন্য সার্বিক অবস্থা জানার দরকার হয় না! আর মনে সংকীর্ণতা থাকলে কোনো উপলক্ষ্য তৈরি না হলে সমৃদ্ধ পকেট থেকেও পয়সা খসে না!
সব সময় সবার ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ না করাটাই উত্তম বলে বিবেচিত! খুব সহজেই হঠাৎ পরিচয়েই অনাত্মীয়কে আত্মীয়ের মতো আপন ভেবে আবেগপূর্ণ আচরণ না করাটাই যৌক্তিক! অতি আবেগপূর্ণ আচরণের চেয়ে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ! কিছু পেলেই তা গ্রহণ করার মানসিকতা পঙ্গু মানসিকতা, কিছু বাদ দিতে পারার মতো মানসিক শক্তিও থাকা দরকার!
ভুল স্বীকার করে কেউ ক্ষমা চাইলে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা উচিত। কারণ আমি জানিনা সেই ব্যক্তিটির মযাদা সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার চেয়ে বেশি কিনা? তবে অবশ্যই সে মন থেকে অনুতপ্ত কিনা বা পুনরাবৃত্তি করে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে! তবে কোনো ব্যক্তির অপরাধে তার বাবা, মা, বংশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাবজেক্ট, কর্মরত প্রতিষ্ঠান, পেশা, ধর্ম, জাতি বা তার দেশকে আক্রমণাত্মক বা হেয়কর কথা বলা ঠিক হবে না।
আমরা একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষ ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমা চাইলেও ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করতে পারি না । অথচ অমুখাপেক্ষী ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে অসংখ্য ভুল করেও ক্ষমা আশা করি। যেখানে ক্ষমা নেই সেখানে বিরক্ত করা নয় অথবা ভুল করা নয়।
ক্ষমাহীনতা, অতি সহজে ভুল বুঝা ও অধীনস্থের একটি অনাকাংখিত আচরণে পূর্ববর্তী অনেক ভালো আচরণকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতাযুক্ত মানুষের সাথে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের সাথে কাজ করতে চাওয়াটা সমীচিন নয়। মানুষকে অতি তাড়াতাড়ি বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস কোনটাই করা ঠিক না।
বয়সে বা দায়িত্বে সিনিয়র হলেই তার পরামর্শ ও নির্দেশ সাদরে গ্রহণ করে কাজে নেমে পড়া অনুচিত, কাজটা নিয়ে আগে নিজে ভেবে চিন্তে নেয়া অধিকতর ভালো। মনের দ্বিধাদ্বন্ধ দূর করার জন্যে জিজ্ঞাসা ও আলাপ যৌক্তিক মাধ্যম হলেও ক্ষেত্রবিশেষে তা অপ্রত্যাশিত আচরণ বলে বিবেচিত হতে পারে।
বিশ্বাসের গভীরতা মানুষকে আত্মপ্রত্যয়ী করে, ভরসা ও নির্ভরতা মানুষকে সতর্ক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে- ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা ও নির্ভরতার সমষ্টি-ই মানুষের জীবনযাত্রার নির্ভরযোগ্য পুঁজি ও পাথেয়।
পরস্পরে কল্যাণকামী হলে কেউ কারো উপকার করতে না পারলেও অন্তত ক্ষতি করে না, দোয়া করে, ভুল ধরায়ে দেয়। লোক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনভাবেই যাতে ভুল না হয় সতর্ক থাকা দরকার। কারণ এক্ষেত্রে ভুল হলে যেমন বড় ধরনের মাসুল গুনতে হয়, তেমনি সঠিক হলে সুফলও মিলে।
কোনো ব্যক্তি নয়, বৃহত্তর স্বার্থে কখনো প্রতিষ্ঠান-সংগঠন বা কখনো সমাজ-দেশ এর স্বার্থই বড়। উদ্যোক্তা ব্যবস্থাপক ও চাকরিজীবী প্রশাসকের আচরণের যৌক্তিক ভিন্নতা থাকেই! তারপরও যাকেই যখন দায়িত্ব দেয়া হয় তার অধিকার যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সে যাতে মনে কষ্ট না পায়; তা খেয়াল রাখা উচিত।
কারো আগ্রহ থাকে মানুষের ও সমাজের জন্যে কাজ করার আবার কারো থাকে না। কেউ কেউ অন্য মানুষের যাপিত জীবন নিয়ে কৌতুহলী থাকে, কেউ কেউ নিজ ও নিজ পরিবারের বাইরে দৃষ্টিই দেয় না!
কেউ কেউ আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করতে পারায় তার মন আনন্দে ভরে থাকে এবং দিন দিন তার কর্ম দক্ষতাও বাড়ে। কেউ কেউ বিরক্তি নিয়ে অপছন্দের কাজ করে কর্মক্ষমতা হারায়। কেউ কেউ গুছিয়ে কাজ করে আরো স্মার্ট ও চৌকস হন আর কেউ কেউ প্রয়োজন অনুভূত হলে ঠেলায়-ধাক্কায় অনিচ্ছায় কাজ করে আরো অযোগ্য-অদক্ষ-অপদার্থ হতে থাকেন!