পর্নোগ্রাফি, প্রকাশ্যে যৌনতা উৎপাদন ও প্রদর্শন করাসহ সব ধরনের অশ্লীলতাকে স্বতন্ত্র শিল্পের দাবী পাশ্চাত্য জগতে হতে পারে এদেশের সংস্কৃতি, প্রচলিত মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধ সমর্থনযোগ্য নয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের চিত্তবিনোদন বা মনোরঞ্জনের জন্য প্রকাশ্যে যৌনদৃশ্য উৎপাদন, অশ্লীল ছবি সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও বিপণন বা প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্নো ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য কী?
পর্নোশিল্প শিশু, নারী-পুরুষ ও সমাজে বিষাক্ত দূষণ ছড়াচ্ছে। শিশু পর্নোগ্রাফি কোমলমতি শিশুদের সুন্দর মনকে বিষিয়ে তুলছে। এর প্রভাবে ধর্ষণ, যৌন অপরাধ এবং পুরুষ-নারীর বিপথগামী আচরণ বাড়াচ্ছে।
‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২’ আইনে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গী, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়াল চিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিক্স বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই; যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা লিফলেট এবং উল্লেখিত বিষয়াদির নেগেটিভ ও সফট ভার্সন পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য করা হয়।
পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, ধারণ বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার বা কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, অপটিক্যাল ডিভাইস, ম্যাগনেটিক ডিভাইস, মোবাইল ফোন বা উহার যন্ত্রাংশ এবং যে কোনো ইলেক্ট্রনিক, ডিজিটাল বা অন্য কোন প্রযুক্তিভিত্তিক ডিভাইসকে ‘পর্নোগ্রাফি সরঞ্জাম’ বলা হয়েছে।
সর্বজন স্বীকৃত অশ্লীলতা পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের ফলে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানব সমাজকে পুত:পবিত্র এবং বিশৃঙ্খলামুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে সকল প্রকার অশ্লীলতাই নিষিদ্ধ। যৌনসঙ্গমরত কোনো স্থিরচিত্র ও ভিডিও তথা পর্নোগ্রাফি ছবি বা অশ্লীল সিনেমা দেখা, এরূপ গান শুনা কিংবা গাওয়া, কারো হাত-পা এরূপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার মতোই অপরাধ; কারণ ব্যভিচারের চূড়ান্ত কাজটি এসবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়।
পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করা নিষিদ্ধ। কেননা মুসলিমদের দৃষ্টি অবনত করার আদেশ করা হয়েছে যেন সে অন্য কারো গোপন অঙ্গ দেখা থেকে বিরত থাকে। নারী-পুরুষকে পরস্পরের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দান ও সকল প্রকারের অবৈধ দৈহিক সংস্পর্শ থেকেও বিরত থাকার মানে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই পথগুলো বন্ধ করা। অশ্লীলতার সকল দুয়ার উন্মুক্ত রেখে শুধু আইন করে অশ্লীলতাকে রোধ করা যায় না। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির মননে নৈতিক মূল্যবোধ অভাবনীয় প্রভাব ফেলতে পারে, মহামারি থেকে সমাজকে রক্ষা করতে পারে এবং মানুষকে সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখতে পারে।
পর্নাসক্তি মাদকাসক্তির মতোই। যতই দেখবে ততই দেখতে ইচ্ছা হবে। সাময়িক সুখের বিনিময়ে বিষণ্ণ এবং নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করবে। যা স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। স্ত্রীর সাথে শারীরিক মিলনের আগ্রহ হারায়। আসক্তির মাত্রা বাড়লে তা ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন এবং অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দেয়; যৌনতা নিয়ে মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয় এবং কামশক্তি বা যৌন চেতনা লোপ পেতে থাকে, তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
পর্নাসক্তি সমাজের একটি ভয়াবহ ক্যান্সার যা নৈতিক মূল্যবোধকে নিয়ে যায় একেবারে নিম্নস্তরে, চিন্তা-ভাবনাকে পুরোটাই যৌনতায় ঘিরে ফিলে, অন্তরকে ধবংস করে যৌন-বিকারগ্রস্ত করে, মনকে দূষিত করে মেরে ফেলে, বড় ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে ফেলে,মানুষের প্রতি মানুষের সম্মান দেওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং এলোমেলো করে দেয় সব স্বাভাবিক চিন্তাকে। যা ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত।
পর্নোগ্রাফি অজান্তেই মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিচ্ছে। পর্ন দেখতে অভ্যস্তরা আরো বেশি উত্তেজনা পাবার জন্য আরো এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকতে থাকে। ফলে বড় ক্ষতিটা হয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের ব্রেইনে। পর্ন দেখা কালে ব্রেইন ব্যস্ত থাকে, যৌন অনুভূতিকে স্ক্রিনে দেখার সাথে সংযুক্ত করায়। পর্নাসক্ত পুরুষরা স্ত্রীর যৌন আবেদনে সাড়া দেয় না, যৌন চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে এবং নারীদের সাথে বেশি প্রতারণা করে।
২০১৫ সালে ৭টি দেশে ২২টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যারা অতিরিক্ত পর্নে বুদ হয়ে থাকে, তাদের কেউকেউ যৌন নির্যাতনকে সমর্থন করে, এমনকি নিজেরাও যৌন নির্যাতন করে থাকে। যারা পরকীয়ায় যুক্ত তারা ২১৮ শতাংশ বেশি পর্ন দেখেন। যারা যৌনকর্মীদরে সাথে যৌন মিলন করেন তারা ২৭০ শতাংশ বেশি পর্ন দেখেন। পর্নোগ্রাফি ভূমিকা রাখছে পরিবার ভাঙ্গার কারণ হিসেবে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ম্যাটরিমোনিয়াল লইয়ার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পিছনে ৫৬ শতাংশই থাকে পর্নোগ্রাফি আসক্তি।
পর্ন ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে যৌন অক্ষম করে তোলে। পর্ন দেখার সময় কিংবা শারীরিক মিলনের সময় মস্তিষ্কের কিছু হরমোন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা দেহে যৌন উদ্দিপনার সঞ্চার করে, মস্তিষ্কে নিঃসৃত প্রচুর ডোপামিন আনন্দ-হাসি-কান্নাসহ যৌন অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মনোযোগকে একীভূত করে যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তোলে। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ডোপামিন নিঃসরণ কমিয়ে দিলে খুব তীব্র উত্তেজক পর্ন ভিডিও দেখার ইচ্ছে বাড়ে, মস্তিষ্কে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, শারীরিক মিলনের ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে, স্ত্রীর সাথে অনুত্তেজক সম্পর্ক তৈরি হয়, বিষণ্ণতা বাড়ে, সহজেই মনোযোগ হারায় এবং উত্তেজনা ফিরে আসে না।
এছাড়া অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রসিন নামক দুইটি হরমোন এসময় নিঃসৃত হয়ে সর্বোচ্চ সুখের অনুভুতিকে মেমোরিতে জমা রাখে এবং সেই সুখের অনুভুতির দিকে ধাবিত করায় আবার পর্ন দেখতে ইচ্ছা হয় কিংবা শারীরিক মিলনে ইচ্ছুক করে। এছাড়াও শারীরিক উত্তেজনাকে চরমে নিতে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। মিলনের শেষ মুহূর্তে সেরাটোনিন নিঃসৃত হয়।
পর্নোগ্রাফি মস্তিষ্ককে অস্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত করে তোলে, কামশক্তি সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে। ফলে বিবাহিত পর্নাসক্তরা স্ত্রীর সংস্পর্শে স্বাভাবিক উত্তেজনা কিংবা কামনা অনুভব করে না। পর্নাসক্তি ভালোবাসার অন্তরায়। পর্ন ভিডিওতে পেশাদার শিল্পী-মডেল অভিনেত্রীদের শারীরিক সৌন্দর্যের কালোজাদুর মোহে অভিভূতরা সঙ্গিনী কিংবা স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যের সাথে তাদের তুলনা করেন।
এতে হতাশা বাড়ে, সঙ্গী/সঙ্গিনীর মনে বিরুপ প্রভাব ফেলে, সম্পর্ক ভাঙ্গনের দিকে গড়ায়, সম্পর্কে অবিশ্বাস-অনাস্থা দেখা যায়, বিষণ্ণতা বাড়ে এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও বহুগামিতাও বৃদ্ধি পায়। পর্নাসক্তরা ঘোরের মাঝে সময় কাটায়, তাদের মস্তিষ্ক ভার্চুয়াল উত্তেজনায় অভ্যস্ত হওয়ায় সঙ্গীর সাথে শারীরিক মিলন বিরক্তকর হয়ে দাঁড়ায়।
অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক বিকৃতি দেখা যায়, নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু মনে করে, চিন্তা-ভাবনা নিম্নস্তরে নেমে যায়, নারীদের নিয়ে বিকৃত ধারণা পোষণ করে। উঠতি বয়সী মেয়েরা লজ্জা-ভয় এবং ঘৃণায় কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পর্নের সহজলভ্যতা শিশুদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে- নিজেকে নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে, সংগ্রহে থাকা পর্ন ভিডিওগুলো ডিলিট করতে হবে, সাইটগুলো ব্লক করতে হবে। Parental Controls ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে Settings > Control Panel > Family Safety > Manage settings on the family safety websites। কম্পিউটার টেবিল বাসার এমন জায়গায় সেট করবেন যেখান থেকে মনিটর সহজেই দেখা যায়।
পিসি বা ল্যাপটপ রুমের এমন একটা পজিশনে রেখে ইউজ করুন, যেন সেটা রুমে ঢুকলে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। রুমের দরজা খোলা রেখে কম্পিউটার ব্যবহার করাটা বেশ জরুরি। টিনএজ বয়সী সন্তানকে ল্যাপটপ নয় ডেস্কটপ কিনে দিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিছানাতে নিয়ে ল্যাপটপে কাজ করার সম্ভাবনা থাকায় সে আদৌ কাজ করছে নাকি পর্ন সাইট ব্রাউজ করছে তা মনিটর করা অসম্ভব হবে।
পর্ন আসক্তদের পর্ন ছাড়াতে পছন্দের কোনো সখ বা বিনোদনের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। হবি হতে পারে বডিবিল্ডিং এর জন্য জীমে জয়েন করা, গিটার, কবিতা আবৃত্তি কিংবা গান শেখা, ফটোগ্রাফি কিংবা পেইন্টিং, বই পড়া, গাড়ি চালানো শেখা, খেলাধুলা কিংবা সাতার শেখা, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা… মোট কথা, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কাজের মাঝে মাঝে সেই পছন্দের কাজ করুন কিংবা গান শুনতে পারেন অথবা ৫ মিনিট হেঁটে আসতে পারেন।
পর্নাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমে পর্ন দেখা পুরোপুরি ছাড়তে মনস্থির করা, নিজের সাথে আর না দেখার প্রমিজ করা দরকার। মোবাইলের মেমরি কার্ড, পিসি/ল্যাপটপ/ট্যাব থেকে যত পর্নগ্রাফিক ছবি এবং ভিডিও আছে, ডিলিট করুন। পিসি থেকে পর্ন সাইটগুলো ব্লক করুন, ফ্রি সফটওয়্যার K9 ইন্সটল করুন, সফটওয়্যারটির ব্যবহার বুঝতে How to use K9 web protection লিখে ইউটিউবে সার্চ দিন। বুকমার্ক এবং ব্রাউজারের হিস্ট্রিগুলো ডিলিট করুন।
ইউটিউবে বেশি সময় না কাটায়ে প্রয়োজনীয় ভিডিওটা দেখেই বেরিয়ে আসুন। ইউটিউবের Safe ফিল্টারটি অন করে রাখলে এ্যাডাল্ট ভিডিওগুলো দেখাবে না। পর্নের সংস্পর্শে যাওয়াটা নিজের জন্য কঠিন করে তুলুন। মনকে শান্ত-পরিশুদ্ধ রাখতে এবং মনের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে নামাজ পড়ুন অথবা মেডিটেশন করুন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে পর্নাসক্তি থেকে দূরে থাকাটা কোনো ব্যাপারই না।
পর্ন দেখার প্রতি আগ্রহ বা ইচ্ছে তৈরি হবার পেছনে কারন ফাইন্ডআউট করুন এবং সেই কারন বা সমস্যাটাকে সলভ করতে চেষ্টা করুন। মনিটর বা চোখে পড়ে এমন জায়গায় মা, বোনসহ ফ্যামিলি বা ধর্মীয় ছবি রাখুন। এটা মনের প্রতি এক ধরণের প্রেশার ক্রিয়েট করবে। কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিনের সামনে সময় কমিয়ে আউটডোর লাইফে সময় বেশি দিন। খেলাধুলা করুন এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিন।
কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কারণ চোখের সামনে স্বামী বা স্ত্রীর নিরাবরণ দেহ থাকা স্বত্তেও পর্নের উপর ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়ে গেলে কয়েক বছর পর অবস্থা হয় ভয়াবহ। ভয়াবহ স্লো পয়জন পর্ন শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিবে। পর্ন ব্রেইনকে ভুল পথে নিয়ে ড্যামেজ করে শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি করছে, সোশ্যাল এনগেজমেন্টকে ব্যহত করছে, পারিবারিক জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে।
পর্ন, পর্নগ্রাফিক ছবি, লেখা, অডিওসহ সব ধরণের পর্ন এবং পর্নগ্রাফিক আইটেম ড্রাগের মতই আমাদের ডোপামিনার্জিক সিস্টেমকে ট্রিগার করে ডোপামিন রিলিজ করার জন্য। পর্নের সংস্পর্শে আসার কারনে ডোপামিনার্জিক সিস্টেমের উপর ফোর্স তৈরি হয়ে যে ম্যাসিভ এ্যামাউন্ট ডোপামিন রিলিজ হচ্ছে; তা শর্ট টার্ম মেমরিতে না গিয়ে সরাসরি লং টার্ম মেমরিতে গিয়ে স্টোর হচ্ছে। এ কারনে পর্ন বা পর্নগ্রাফিক আইটেম চোখের সামনে থেকে দূর করা হলেও লং টার্ম মেমরি তে তা গেঁথে যাবার কারনে তা ব্যক্তির চাহিদা মত কল্পনা করলেই রিপ্লে মোডে ফিরে আসে।
রিয়্যাল লাইফ ফ্যান্টাসি পর্নগ্রাফি যারা নিয়মিত দেখে, তারা নিশ্চয়ই একই পর্ন বারবার দেখে না! প্রথমদিকে সফটকোর পর্নে চাহিদা মিটলেও কিছুদিন পর চাহিদা এবং রুচি বদলে যায়। তখন প্রয়োজন হয় হার্ডকোর কিছুর। প্রতিদিন মাংস খেলেও এক সময় অরুচি ধরে যায়, তখন কচু শাক আর ডাল ও অমৃত মনে হয়। শুরুর দিকে নর-নারীর স্বাভাবিক যৌনতা দেখে খায়েশ মিটলেও কিছুদিন পর চাইল্ড পর্নগ্রাফি, এ্যানিমেটেড পর্নগ্রাফি, এ্যানিমাল পর্নগ্রাফি, সিম্যুলেটেড রেপিং সীন, থ্রি-সাম, ফোর-সাম… গে পর্ন, লেসবিয়ান পর্ন… এভাবে জ্যামিতিক হারে চাহিদা দিন কে দিন বাড়তেই থাকে এবং সেইসাথে রুচিও অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে থাকে।
বারবার পর্ন দেখার কারনে নতুন নতুন নারীর সাথে নতুন ভঙ্গিমা আর কলাকৌশলের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স দেখতে দেখতে ব্রেইনটাও সেভাবে প্রোগ্রামড হয়ে যায়। কিন্তু রিয়েল লাইফে স্বামী/স্ত্রী সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নিতে গিয়ে যখন পর্নে দেখা পুরুষ/নারীর মত আকর্ষণীয় ফিগার, মোহনীয় শরীর, আর্টিফিশল সাউন্ড-চিৎকার, বিহেভিয়ার, সেক্স এ্যাপিল পায় না এবং পর্নে দেখা নানাপ্রকার ছলা-কলা-কৌশল জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনীর উপর প্রয়োগ করতে পারে না, পর্নে দেখার সাথে বাস্তবের অমিলেই শুরু হয় বিপত্তি।
নিয়মিত পর্ন দেখলে সেক্সুয়াল অর্গান পর্ন দেখার সময়ই পুরোপুরি ইরেক্ট হয়, বাস্তবে সেক্সুয়াল অর্গান সেভাবে সাড়া দেয় না। কারণ এক্সপেক্টেশন পরিপূর্ণ না হওয়ায় অনুভূতিতে সেই আনন্দটা আর জাগে না। মস্তিস্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED) রোগের সৃষ্টি করে। এতে পর্নাসক্ত ব্যক্তি পর্ন অপছন্দকারীর কাছে রুচিহীন, হীনমন্য এবং চরিত্রহীন মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। মাত্রাতিরিক্ত পর্ন দেখলে পুরুষদের নারীদের প্রতি আর নারীদের পুরুষদের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে।
পর্ন নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ায়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিলেও নতুন মুখের চাহিদা এখানে প্রবল। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বাড়াতে গিয়ে বাড়ে নারী পাচারের সংখ্যা। পর্ন অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। নিয়মিত পর্ন দেখলে মাস্টারবেশন ও অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং পরবর্তীতে যৌন জীবনে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, ওরা হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ এবং অসুখী। পরবর্তীতে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেবার সময় ব্রেইন তার সেক্সুয়াল অর্গান এবং ফিলিংকে কমান্ড দেয় দ্রুত অর্গাজম প্রাপ্তির জন্য।
পর্নাসক্তির কারনে ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়, পড়াশোনায় মনোযোগ বসে না, নিজের প্রতি হীনমন্যতা তৈরি হয়, রুচিশীল বন্ধু-বান্ধবদের কাছে হেয় হতে হয়, পরিবারের কাছেও ছোট হতে হয় অর্থাৎ সামাজিক, মানসিক, শারীরিক,আনুভূতিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত অনেক সমস্যা তৈরি হয়। পর্নোগ্রাফির নেশা সর্বনাশা, মরণফাঁদ; এই নেশার প্রকোপ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেকে বিচ্যুত করে।
পর্নের নেশা হলে লিঙ্গ উত্থান ও বীর্যপাতের সময় সমস্যা দেখা দেয় অথবা স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপন ব্যাহত হয়, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা অথবা পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে পর্ন দেখে বেশি আনন্দ পান, ক্লান্তি-বিষন্নতা-বিরক্তি দূর করতে পর্নকেই একমাত্র বিনোদন হিসেবে বেছে নেন। ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন অফ করার পরেও মনের মধ্যে যৌন উত্তেজক দৃশ্য ঘুরতে থাকার ফলে মানসিক পরিশ্রম বাড়ে।
পর্নগ্রাফি আসক্তির ভয়াল নেশায় মত্তদের রূচিবোধের অধঃপতন হয়। বাস্তব জগৎ ছেড়ে ফ্যান্টাসি দুনিয়াতে চলে যাওয়ায় সাধারণ নারী/পুরুষদের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। স্ক্রিণে দেখা মেকআপ, লাইট ও ক্যামেরার কারসাজিতে দেখানো আকর্ষনীয় দেহ ও ফটোশপ ও কসমেটিক সার্জারির চেহারার মতো সঙ্গী বাস্তব জীবনে খোঁজে না পেয়ে হতাশ হয়।
পর্নাসক্তরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিঃসঙ্গ থাকে, সংসারে অসুখী হয়, হস্তমৈথুনের অভ্যাসে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ে, পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়, সমাজের মানুষজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে হেয় হতে হয়, পড়াশোনায় ক্ষতি হয়, নিজের মধ্যেও হীনমন্যতার সৃষ্টি হয় এবং নষ্ট হয় স্বাভাবিক যৌনজীবন। পর্ন ড্রাগ, মদ বা সিগারেটের চেয়েও মারাত্মক আসক্তি তৈরি করে। পর্ন দেখলে মস্তিস্কে ডোপামিন নামক ‘ফিল গুড’ রাসায়নিকের পরিমাণ বেড়ে যায়।
তখন সামান্য ডোপামিনের ক্ষরণে উত্তেজনা তৈরি না হওয়ায় বেশি ডোপামিনের জন্য মস্তিস্ক বেশি পর্নের রসদ খোঁজে। অলীক ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাবার ফলে বাস্তবের সম্পর্কগুলো সুখ দিতে পারে না, সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। অতিরিক্ত পর্নাসক্তি অপরাধ বোধ থেকে মানসিক রোগের জন্ম দেয়, মনে ভাবনার সাম্যতা নষ্ট করে।