বিপর্যস্ত পারিবারিক জীবন থেকে সামাজিক সমস্যা

আনিসুর রহমান এরশাদ

মানুষ পরিবার প্রথা অবলম্বনের মাধ্যমে সভ্যতা সংস্কৃতি নির্মাণ করেছিল আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল আয়োজনে পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলেছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ পারিবারিক জীবন মন ও প্রাণের গভীর সূক্ষ্ম মিলনসূত্রে গ্রথিত নয়। পরিবার ও পারিবারিক জীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। অথচ মানুষকে ভালোবাসা, দরদ, প্রীতি ও সহানুভূতি প্রভৃতি সুকোমল ভাবধারা থেকে বঞ্চিত করে দিলে তখন আর মানুষ প্রকৃত মানুষ থাকে না। এছাড়া পরিবার প্রথা যেখানে ভগ্নপ্রায়, মানসিক প্রশান্তিও সেখানে অনুপস্থিত।

বিয়ে আইনগত চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার আওতায় সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য সাধনে নারী-পুরুষকে একসাথে নিয়ে আসে; যা পরিবারের আসল বুনিয়াদ। পারিবারিক জীবন সন্তান ও নাতিদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত এর পরিধি বিস্তৃত হয়। জীবন সঙ্গী নিজের অনুভুতি ও বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে পরিবারে কলহ বিবাদ হয় না, শান্তি-সুখ বিরাজ করে। পারিবারিক সমস্যা অনেক সময় সামাজিক সমস্যাও তৈরি করে। পারিবারিক জীবন যদি আদর্শভিত্তিক, পবিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ না হয়; তাহলে সমগ্র জীবনের সমগ্র দিক ও বিভাগ হবে বিপর্যস্ত, বিষাক্ত ও অশান্তিপূর্ণ।

সমাজকেন্দ্রিক সমস্যা 

আদর্শ জীবনবোধের অনুপস্থিতি, সামাজিক অনাচারের বিস্তৃতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বিনোদনে রুচিহীনতা, বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব, ইন্টারনেট আসক্তি, নিঃসঙ্গতা, পর্নোগ্রাফি, ফাস্টফুড আসক্তি, গৃহবন্দি জীবন, মাদকাসক্তি, ভোগবাদিতা ও সাংস্কৃতিক নোংরামী ইত্যাদি।

মূল্যবোধের অবক্ষয়

সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে পারিবারিক বলয়ে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  গণমাধ্যমে ‘২ শিশুকে হত্যার পর আত্মঘাতী মা’ ও ‘মায়ের ওপর অভিমানে ঢাবি ছাত্রীর আত্মহনন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে পিতা-মাতা সন্তানের হাতে, সন্তান পিতা-মাতার হাতে, স্বামী স্ত্রী কর্তৃক, স্ত্রী স্বামীর দ্বারা খুন হচ্ছে পৈশাচিকভাবে। পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে হতাশা, পরকীয়া, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক বিষণ্নতা, আর্থিক দৈন্য, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি। পারিবারিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধি পারে এসব অপরাধ কমাতে।

পরকীয়া

পরকীয়া এমন এক অপরাধ যার পরিণতি দীর্ঘশ্বাস-অবিশ্বাস-আয়ুহ্রাস। স্বামী বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে পরকীয়া বৈবাহিক জীবনের ইতি টানতে বাধ্য করে। পরকীয়া মূলত  দাম্পত্য জীবনে একটি বারের জন্য হলেও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আদুরীর মতো অনেক গৃহকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে, আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে, ছুড়ে ফেলা হচ্ছে বহুতল ভবনের ছাদ থেকে। যদি মনের সৌন্দর্য না থাকে, সংসারে অন্যকে গুরুত্ব দেয়ার ও যথাযথ মূল্যায়ন করার মানসিকতা না থাকে, সমস্ত কাজ সঠিকভাবে সময়মতো করার ইচ্ছাও না থাকে, গুরুতর অপরাধেও সীমাহীন আনন্দ পাবার মতো পশুত্ব থাকে; তবে সকল পরিশ্রম বৃথা, উদ্যোগ নিরানন্দের, রাগ-ক্রোধের জয়-জয়কার।

মোবাইল ফোন, চ্যাটবক্স, ফেসবুক, নেশার উন্মাদনা, বিপরীত লিঙ্গ থেকে যৌন চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, আর্থিক দৈন্য, বিদেশি (বিশেষ করে ভারতীয়) টিভি চ্যানেলের নাটক-সিনেমার প্রভাবসহ মানসিক হীনম্মন্যতার কারণে সংসার ভাঙছে। মূল বিষয় পরকীয়া, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও দাম্পত্য যৌনজীবন।

মোবাইল ফোন আর ফেসবুকের মাধ্যমে দিনে দিনে মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। পরকীয়াকে উসকে দিচ্ছে বিদেশি টিভি চ্যানেলের নাটক ও সিনেমা। আয়-রোজগার-চাকরি-ব্যবসার কারণে স্বামী থাকছে শহরে আর স্ত্রী থাকছে গ্রামে কিংবা স্ত্রী থাকছে দেশে আর স্বামী থাকছে বিদেশে। দীর্ঘ সময়ের দূরত্ব পরকীয়া বাড়াচ্ছে, কষ্টার্জিত শ্রমে উপার্জিত অর্থেই প্রিয় মানুষটি অন্যের সুুখ-ভোগের মাধ্যম হচ্ছে।

কমছে পারস্পরিক আস্থা

শিশু-নারী নির্যাতন বাড়ছে, ধর্ষণ ও হত্যা এমনভাবে বাড়ছে যে পরিবারগুলোও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় প্রতারণা ও অপরাধ বাড়ছে, কমছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। বয়স্কদের যেতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে আর সন্তান লালন পালন করছে গৃহকর্মীরা। ভাঙনের ধাক্কায় পারিবারিক মূল্যবোধ তথা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে চরমে। অনেকের পারিবারিক জীবন অসুস্থ ও নড়বড়ে হওয়ায় তথা ভাঙন ও বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় তাদের সমাজ জীবনে নানা অশান্তি ও উপদ্রব সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্বল বিশ্বাস আর স্নেহ ভালোবাসার ঘাটতির ফলে পারিবারিক সদস্যদের ক্রমাগত মানসিক উৎপীড়ন অনেককে আত্মহননের পথে যেতে বাধ্য করছে।

সুস্থ পরিবার গঠন না হওয়ায় সমাজের সাফল্য ও সামাজিক জীবনের কল্যাণ লাভ তাদের ভাগ্যে জুটছে না। নিরাপত্তাহীনতা, বাল্যবিবাহ ও অপুষ্টি  বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চবিত্ত পরিবারই হোক বা নিম্নবিত্ত কোথাও কন্যাশিশুরা যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা থেকে বাদ পড়ছে না এবং তা ঘটছে পরিবারের অভ্যন্তরে, যাত্রাপথে সকল ক্ষেত্রে। কন্যাশিশু জন্ম নিলে পরিবারে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি এখনো রয়ে গেছে।

অপরাধের জয়জয়কার

পড়াশুনা,  চাকরি তথা জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকে পরিবার ছাড়ছে, গ্রাম থেকে শহরে কিংবা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। পরিবারের সাথে তাদের দূরত্ব বাড়ছে, ফলে পারিবারিক মূল্যবোধের বিষয়গুলো অজানা রয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধ প্রবণতায়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ অনেক বহির্মুখী হয়েছে। জীবনের ধারণায় আকাশপাতাল বদল এসেছে। পরিবারের গন্ডিতে বাঁধা পড়তে মানুষ আর অতটা স্বচ্ছন্দ নয়। সে স্বাধীনচেতা। তার উচ্চাশা বাড়ছে, জীবন ধারণে ঔজ্জ্বল্য চায়, কেনাকাটায় ব্র্যান্ড চায়, আয় যাই হোক ফ্ল্যাট-গাড়ি চায়। সামাজিক জীবনের চাহিদা বদলে যাওয়ায় পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভেঙ্গে না গেলেও বন্ধন ঢিলে হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে- বয়োজ্যেষ্ঠদের অনৈতিকতা, দুর্নীতি ও মিথ্যাচার দেখে; ভেজাল খাবার খেয়ে, দূষিত আবহাওয়া আর অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মধ্যে; ধর্মীয় উন্মত্ততা দেখে, ধর্মের নামের ভণ্ডামি দেখে। ছোটরা দেখছে বড়রা কিভাবে চুরি করছে, দুর্নীতি করছে, কিভাবে ভোট জালিয়াতি করে নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে। খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সুকুমারবৃত্তির অনুশীলনসহ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন গড়ার উপাদানসমূহ থেকে তারা বঞ্চিত থাকছে। পরীক্ষায় ভালো করার চাপে মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক সম্পর্কও নষ্ট হচ্ছে।

অনৈতিক সম্পর্ক

স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন- এমন শিরোনাম খুব সাধারণ বাংলাদেশে। কিন্তু হঠাৎ করে ‘মা’র হাতে সন্তান খুন’ প্রায় নিয়মিত শিরোনাম হয়ে উঠছে। মাদকাসক্ত মা বা বাবা সন্তানকে মেরে ফেলছে। মা বা বাবা কোনো অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সন্তানরা তা জেনে গেলে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।

একসঙ্গে একাধিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে ছেলেমেয়েরা। আর বাবা-মা এতে বাধা দিলে তাদের হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না সন্তান। দারিদ্র্য, ভূমিহীনতা, সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিবর্তন, স্থানান্তর, শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বস্তুতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ ইত্যাদি কারণে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে।

বন্ধনে শিথিলতা

বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে  বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ফ্ল্যাটবাসীর সংখ্যা। দেখা দিচ্ছে এক ধরনের বন্ধনহীনতা। নারীরা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে বিপুল সংখ্যায় বাড়ির বাইরের কর্মজগতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, আত্মীয়তার বন্ধন কমে যাচ্ছে, বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে, পরিবারের স্থিতিশীলতা কমে যাচ্ছে, একের অধিক সন্তান না নেওয়ার সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে, অবৈধ সন্তান গ্রহণ ও প্রতিপালন করা হচ্ছে, পরিবারে নারীদের ভূমিকায় পরিবর্তন এসেছে, পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা দেখা দিয়েছে।

পারিবারিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তনই প্রমাণ করে পরিবার প্রথা একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। ভাঙনমুখর পরিবারের সন্তানেরা প্রচণ্ড মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ছে, বার্ধক্যেও অসহায় হয়ে পড়ছেন প্রবীণরা। বাবা-মায়ের প্রতি অবিশ্বাস এবং বিশ্বাসভঙ্গের কারণেই পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো মন্থর হয়ে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মানুষের স্বাভাবিক মানবিক মূল্যবোধ। বন্ধনে শিথিলতার কারণেই ভয়ঙ্কর সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে পারিবারিক নির্যাতন।

পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি খুন হচ্ছে, ২৯ জন আত্মহত্যা করছে, ৫৭ জন নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশের ১০ হাজার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন ৪০ শতাংশ। দেশে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন শিশু এবং ৩ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমন অবস্থার পরিবর্তন চাইলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে।

বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে

আজকাল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কোনো বিষয়কে উদযাপন করার জন্য উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনকে বেছে নিচ্ছে। ডিজে পার্টি, বিভিন্ন নিষিদ্ধ পানীয় পান থেকে শুরু করে রাত যাপন এখন অনেক সহজসিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো যে শুধু পারিবারিক বাঁধনই ছিন্ন করছে তা নয়, আত্মহত্যার মতো অসংখ্য ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের উদার মানসিকতায় ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন রকমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। শুধু যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সর্ম্পকের টানাপড়েন তা নয়, সন্তানরাও হরহামেশা ঘটিয়ে যাচ্ছে এই অপরাধ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় অনেকেই প্রেমে জড়িয়ে পড়ে গোপনে বিয়ে সেরে ফেলছে। এরপর কয়েক বছর যেতে না যেতেই পরিবারের মনরক্ষা অথবা নানা দৈন্যদশায় পড়ে তারা তালাকের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধনাঢ্য পরিবারে সবচেয়ে বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। বাদ পড়ছে না মডেল-তারকা পরিবারও।

সারা বিশ্বেই বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়াটা কিসের ইঙ্গিতবহ? ১৯৭০ সালে সারা বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ছিল ১৬%, ১৯৮০ সালে ২৬%, ১৯৯০ সালে ২৮%, ২০০০ সালে ৩৫%, ২০১০ সালে ৪১% এবং ২০১৭ সালে ৪৪% অর্থাৎ ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে ২৫১.৮%। অবশ্য সব দেশেই মাত্রা সমান নয়। বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে: লুক্সেমবার্গে ৮৭%, স্পেনে ৬৫%, ফ্রান্সে ৫৫%, রাশিয়ায় ৫১%, যুক্তরাষ্ট্রে  ৪৬%, জার্মানিতে ৪৪%, যুক্তরাজ্যে ৪২%, নিউজিল্যান্ডে ৪২%, অস্ট্রেলিয়ায় ৩৮%, কানাডায় ৩৮%। বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম হচ্ছে- ভারতে ১%, চিলি ৩%, কলম্বিয়া ৯%, মেক্সিকো ১৫%, কেনিয়া ১৫%, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭%,  মিসর ১৭%, ব্রাজিল ২১%, তুরস্ক ২২% এবং ইরান ২২%।

পরিবার বিচ্ছন্নতা বা পরিবারে ভাঙনে স্বস্তি ও শান্তি কমছে। পারিবারিক বন্ধন যে ঢিলেঢালা হচ্ছে তার প্রমাণ দেশের এমন একটি কোণও খুঁজে পাবেন না যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেনি। ঢাকার দু’টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিবছর ৫ হাজার ১৪৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে তালাকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টির মতো বিচ্ছেদের আবেদন জমা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া ৮৭ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে পরকীয়ার জের ধরে। ৭০ দশমিক ৮৫ ভাগ নারী এবং ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষরা।

একাকিত্বে হতাশা

কথায় কথায় ডিভোর্স, লিভ টুগেদার, নারী নির্যাতন, নারীর পিতৃগৃহ থেকে উৎখাত, ভ্রƒণ অবস্থায় সন্তান হত্যা তা কন্যা ভ্রƒণই হোক বা পুত্র ভ্রƒণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির অসাধারণ অগ্রগতি ইত্যাদি বাড়ছে। এমনকি মাতৃগর্ভও এখন ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ স্নেহ-মায়া-মমতার বশে, প্রজাতি সংরক্ষণ তথা বংশ রক্ষা করতে, অন্যের ভ্রুণ গর্ভে ধারণ করেন। কোন কোন দেশে তা আইন সিদ্ধ। জন্মনিয়ন্ত্রণ সহজলভ্য হওয়ায় সন্তানের সংখ্যা একজনে নেমে এসেছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে আত্মীয় বলতে মা, বাবা, দাদা আর দাদীতে এসে ঠেকে যাবে।

ভাই-বোন, মামা-মামী, কাকা-কাকী- এসব আত্মীয় সম্পর্ক গল্পের বইয়ের বিষয় হয়ে উঠবে। পাশ্চাত্যে সন্তান প্রতিপালনের প্রবণতা বাবার দিকে ঝুঁকছে, স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করার সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে, অনাগত ডিভোর্সের ভয়ে বাচ্চা অনেকেই নিতে চাচ্ছে না, সন্তান নিয়ে একাকী বাস করা বাবার সংখ্যা বাড়ছে এবং স্বাধীনভাবে একা বসবাসের পক্ষপাতী নারীর সংখ্যাও বাড়ছে। সন্তান প্রতিপালন ঝামেলা মেনে নিতে চাচ্ছে না অনেক কর্মজীবী নারী। এর ফলে বাড়ছে একাকিত্ব, বাড়ছে হতাশা।

দুর্বল পারিবারিক কাঠামো

যেখানে সুদৃঢ় পারিবারিক কাঠামো অনুপস্থিত, সেখানে সুস্থ জীবন গঠন এবং নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অলীক কল্পনা বিলাস!  ভারসাম্যপূর্ণ পরিবার সুখী জীবনের অন্যতম মূল ভিত্তি। পরিবার হচ্ছে অগ্রসর সভ্যতার মূল বিন্দু। সুশৃঙ্খল পারিবারিক কাঠামো নিশ্চিত না করে পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা রোধ করা যাবে না।  পর্নগ্রাফি সমর্থন, সমকামিতা বৈধতা দান, গর্ভপাতকে বৈধতা দান, যৌন স্বাধীনতা দান পরিবার ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করছে।

অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার বিপক্ষে এবং চারিত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থানের মাধ্যমেই পারিবারিক বন্ধন রক্ষা করা সম্ভব। সামাজিক জীবনের প্রাথমিক বুনিয়াদ পরিবার। পারিবারিক বিপর্যয়ই সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। পারিবারিক কলহ, অবাধ যৌনাচার, যৌন   বিকৃতি, অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ সমকামি ও বহুকামিতার মতো পশুসুলভ যৌন আচরণ সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্তে।  অনেকে বিয়ে করে গোপন রাখছে; অথচ পরিবার এমন একটি সামাজিক কাঠামো যা নারী-পুরুষের প্রকাশ্য ও বৈধ বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়।

পরিবারে  ভাঙন

বর্তমানে দুর্বল ভারসাম্যহীন পরিবার সমাজে ঘুণ ধরাচ্ছে, পারিবারিক সম্পর্কগুলো খুব ঠুনকো ও খুব অনাত্মীয়ধর্মী হয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক জীবনে সুষ্ঠুতা না থাকায় সামাজিক জীবনের সুষ্ঠুতা ব্যাহত হচ্ছে। মা বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সন্তানরা এই অবস্থার শিকার হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, নেশায় আসক্ত হয়ে যায়। মা বাবা আলাদা থাকায়ও পরিবার ভেঙে যায়। দাম্পত্য কলহের জের ধরে পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে চরম পর্যায়ে যায়, অনেকক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতার কারণ হয় ও পরিবার ভেঙে যায়। বাল্যবিবাহের ফলে অসম সম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং এসব পরিবারে বেশিরভাগ সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে; যা পরবর্তীতে সহজেই বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত যায়। বর্তমানে বিয়ের পূর্বে প্রেম পরিবার ভাঙার অন্যতম কারণ। বর্তমানে অনেক পরিবার এই কারণে ভেঙে যাচ্ছে। পরিবারে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে পারিবারিক কলহ বাড়ছে ও যা পরিবার ধ্বংস করে দিচ্ছে। অভাব পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে যার চূড়ান্ত পরিণতি বিচ্ছেদ।

অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের মধ্যে অসামঞ্জস্যতাও পরিবার ভাঙার অন্যতম কারণ। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, সামাজিক অস্থিরতা, যৌতুক দাবি, নির্যাতন, তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক কলহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, সন্দেহ প্রবণতা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা, নারীর পুরুষ নির্ভরশীলতা কমা, নারীর আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বিচ্ছেদ ঘটছে। পারিবারিক ভঙ্গুরতা আমাদেরকে দিয়েছে সমকামিতা, মদের নেশা, এইডস এর মত ভয়ঙ্কর ব্যাধি, বাপ-মা সহ বয়স্কদের প্রতি সন্তানদের অবহেলা, সামাজিক অস্থিরতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরধন লোলুপতা, জাতিগত বিদ্বেষ, আগ্রাসন ও অগণিত মানুষ হত্যা।

বিয়েতে অনাগ্রহ

ইদানীং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য দেরিতে বিয়ে করতে গিয়ে অনেক নারী সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারাচ্ছেন, কর্মজীবনের ব্যস্ততায় বিয়ে করার আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক পুরুষ। বিয়েতে দেরি হলেও অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোয় বাড়ছে ভ্রƒণ হত্যা, পরকীয়া, আত্মহত্যা। স্বল্পস্থায়ী ঝোঁক, ক্ষণস্থায়ী আনন্দ বা উচ্ছ্বাস অথবা দীর্ঘস্থায়ী উদ্দেশ্যহীন ও আক্রোশের ভিত্তিতে গঠিত বিয়ে অনেক সমস্যার উৎস হয়। তাই সঠিক বিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ।  হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্বের অধ্যাপক হার্ডন বলেছেন, ‘ছাত্রজীবনে বিয়ে ক্ষতিকর তো নয়ই, উপরন্তু তা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভবিষ্যত সম্পর্কে অধিকতর সচেতন ও অধিকতর সময়ানুবর্তী হতে সাহায্য করে।’

রাসূল (সা.) বলেন, যার বউ নাই, সে গরিব, গরিব, গরিব। তিনবার। লোকেরা তখন জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল, যদি লোকটা অনেক সম্পদশালী হয়? তারপর ও কি গরিব? তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন তারপরও সে গরিব। তিনি আরো বললেন: যে নারীর স্বামী নাই সে মিসকিন! লোকেরা আরজ করলো হে রাসূল (সা.), যদি ঐ মহিলা অনেক সম্পদের মালিক হয়। তারপরও কি মিসকিন? তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যে নারীর স্বামী নাই সে মিসকিন।১৪৪

বিবাহ দানের ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্মতি বিশেষ করে ছেলেমেয়ের সম্মতি অবশ্যই নিতে হবে। বিবাহে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সামাজিক স্বীকৃতিই শুধু স্থাপিত হয় না, ভরণ-পোষণ, সন্তান জন্মদান-লালন-পালন-নিরাপত্তাদানের দায়িত্বও চলে আসে। জীবনসঙ্গিনীদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি হয়। বিয়ে চারিত্রিক অবক্ষয় রোধের অনুপম হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানবিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ।

বিয়ের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে- বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া। যেমন- ঔরশগত কারণে হোক অথবা দুগ্ধপানের কারণে বর-কনে পরস্পর মোহরেম না হওয়া; বর কাফের কিন্তু কনে মুসলিম হওয়া  ইত্যাদি। এরপর বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা। বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হচ্ছে- ইশারা করে দেখিয়ে কিংবা নামোল্লেখ করে বর-কনে উভয়কে সুনির্দিষ্ট করে নেয়া। বর-কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া।

স্বামীহারা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীকে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। বিয়ের আকদের সময় অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী রাখতে হবে। সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি, বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা করতে হবে, গোপন রাখা যাবে না।

কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া, কনের ধর্মানুসারী হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, পুরুষ হওয়া, বুদ্ধিমত্তার পরিপক্বতা থাকা এবং যাকে বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণের দিক বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকা।

কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না; কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। এক নারী অন্য নারীকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। নিকটবর্তী অভিভাবক না থাকলে অথবা তার মধ্যে শর্তের ঘাটতি থাকলে দূরবর্তী অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে। নারীর অভিভাবক হচ্ছে- তার পিতা। এরপর পিতা যাকে দায়িত্ব দিয়ে যান সে ব্যক্তি। এরপর পিতামহ, যতই ঊর্ধ্বগামী হোক। এরপর তার সন্তান। এরপর সন্তানের সন্তানেরা, যতই অধস্তন হোক। এরপর তার সহোদর ভাই। এরপর তার বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর এ দুই শ্রেণীর ভাইয়ের সন্তানেরা। এরপর তার সহোদর শ্রেণীর চাচা। এরপর বৈমাত্রেয় শ্রেণীর চাচা। এরপর এ দুইশ্রেণীর চাচার সন্তানেরা। এরপর মিরাসের ক্ষেত্রে যারা ‘আসাবা’ হয় সে শ্রেণীর আত্মীয়গণ। এরপর নিকটাত্মীয় থেকে ক্রমান্বয়ে দূরের আত্মীয়।

পারিবারিক সমস্যা

সহিংসতার ফলে নারী ও শিশু গৃহহীনতা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। পারিবারিক সমস্যাগুলো তৈরিই হয় ছোটখাটো মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। একজনের ভুল কথা পারিবারিক সমস্যাকে বড় করে তোলতে পারে। নিজেদের ছোটখাটো ভুলগুলো সামলে সামনে এগিয়ে নিতে বড়দের যথাযথ হস্তক্ষেপ ভালো ফল আনে। সংসারে অশান্তি শুরু হয় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুই পরিবারে সৃষ্ট সমস্যা দেখা দিলে,  অহেতুক ভুল বোঝলে ও খারাপ আচরণ করলে। সংসারের অশান্তি নিরসনে আইনি পরামর্শ বা পরিবার-স্বজনদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা অনেক সময় হিতে বিপরীতও হয়। সম্পত্তির জন্য ভাই-বোনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, ভাই ভাইকে খুন করে এমন ঘটনাও বিরল নয়। কেউ হয়তো ভাবেন- জীবন যাপনের জন্য নয়, জীবন উপভোগের জন্য। ফলে ধীরে ধীরে সম্পর্ক হালকা হয়ে যায়, গল্প-গুজব দূরে থাক দেখা-সাক্ষাৎ হয় না।

নৈতিক অবক্ষয়

বর্তমান সমাজের অবক্ষয় ও সামাজিক ব্যাধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্ল্যাক মেইলিং, ইভটিজিং, অবাধ মেলামেশা, যত্রতত্র আড্ডা, মাদক, পরকীয়া ও সন্ত্রাসের সয়লাব চলছে যেন সর্বত্র। সামাজিক অস্থিরতা ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়েও পরিবারহীন মানুষকে সঠিক পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেয়ার তেমন কেউ থাকে না। ফলে খারাপ সঙ্গ বা অসৎ লোকদের সংস্পর্শে সহজেই প্রভাবিত হয়ে পরিবারহীন লোকেরা নৈতিক অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়।

শিক্ষাকেন্দ্রিক সমস্যা

নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি, বহুধারার শিক্সাব্যবস্থা, ঘনঘন শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন, অনাকর্ষণীয় শিক্ষা পরিবেশ, পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, কোচিং নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষাব্যবস্থায় অনৈতিক লোভ উৎপাদন, শিক্ষাব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতা, শিক্ষকের নৈতিক মানের ক্রমাবনতি ও সহশিক্ষা ইত্যাদি।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *