আনিসুর রহমান এরশাদ
হৃদয়ের সচ্ছলতাই আসল সচ্ছলতা। সম্পদের প্রাচুর্য সচ্ছলতা নয়। হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। সম্পদের স্বল্পতা দারিদ্র্য নয়। হৃদয়ের বিচারে সচ্ছলরা- অন্যের সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না, ভোগ্যবস্তুর আসক্তিতে আরামকে হারাম করে তোলে না, পেরেশানি বাড়ায় না আর অস্থির লালসায় অতৃপ্ত হয় না। হৃদয়ে প্রাচুর্য না থাকলে জীবনে প্রাচুর্য আসে না। ধন-সম্পদ জীবনধারণের উপকরণ মাত্র; জীবনের সবকিছু নয়। বিত্তশালী হলেই সবাই চিত্তশালী হয় না।
অন্যের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করার অর্থ তার প্রতি দয়া করা, আর নিজের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করার অর্থ নিজের প্রতি জুলুম করা।যত দেরীতেই হোক, কৃতকর্মের বিনিময় মিলবেই। একজন দায়িত্ব-কর্তব্যকে তাচ্ছিল্য ভরে উপেক্ষা করলে আরেকজনকে কষ্ট দেয়া হয়। সত্যকে গোপন করা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা ও সত্যের সাক্ষী দিতে অস্বীকারকারীরা পাপী; তাদের অন্তর পঙ্কিলতাপূর্ণ। গালভরা কথা, পান্ডিত্বপূর্ণ জটিল তত্ত্ব আর বুলির ফুলঝুড়িতো মরিচিকা!
অকৃতজ্ঞদেরকে অকৃতজ্ঞরাও পছন্দ করে না, মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদীরাও বিশ্বাস করে না। চোরও তার সহযোগীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের আত্মীয়তা করতে চায় না। যারা কর্মফলকে ভয় করে না, পরিণতি নিয়ে চিন্তা করে না; তারা সংশোধনের মানসিকতাও পোষণ করে না। ভয় থেকে নির্লজ্জ হওয়া জঘন্য, সাহসীকতা প্রদর্শনে নির্লজ্জ হওয়া ঘৃণ্য এবং ক্ষমতা-দাপট-অহঙ্কার প্রদর্শনে নির্লজ্জ হওয়া নিকৃষ্ট।
দরিদ্রকে ঋণ দেয়া ভালো, ঋণগ্রস্তের ঋণ মওকুফ করা উত্তম আর পরনির্ভরশীলকে আত্মনির্ভরশীল করা অতি উত্তম। সম্পদের মোহ বেহুশ করে, ভোগের মোহ উন্মাদনা জাগায় আর লোভ-লালসার লাগামহীনতা পাশবিকতা বাড়ায়। যে অপ্রকাশ্যে ভালো, সে প্রকাশ্যেও ভালো; তবে যে প্রকাশ্যে ভালো সে অপ্রকাশ্যে খারাপও হতে পারে। পরিচ্ছন্ন চিন্তা, জাগ্রত প্রেরণা, সুচারুরূপে সম্পাদিত কর্ম বেশি বেশি দরকার। চিন্তার মোড় না ঘুরিয়ে কী আর জীবনের মোড় ঘুরানো যায়!
অভাবগ্রস্ত ভিক্ষুকদের জন্য ব্যয় করা ভালো; তবে অভাবী হয়েও বলতে-চাইতে-হাত পাততে পারে না তাদের জন্য ব্যয় করা অধিক ভালো।বিপদগ্রস্তকে প্রকাশ্যে সাহায্য করা উত্তম, তবে গোপনে সাহায্য করা অতি উত্তম। উপার্জন থেকে দানের মাধ্যমেই সম্পদ উত্তম হয়, জ্ঞান বিলানোর মাধ্যমেই উৎকর্ষ সাধিত হয়। জ্ঞান এমন মহাসম্পদ যে, জ্ঞানীদের হৃদয় প্রাচুর্যে ভরপুর। ফলহীন বৃক্ষের মতই জ্ঞানহীন মানুষ।
অনেকের অনেক থাকার পরও তা মূল্যবান কাজে লাগে না আর অনেকের স্বল্প থাকার পরও তা মূল্যবান কাজে লাগে। শারীরিক সামর্থ্য গুরুত্বপূর্ণ, মানসিক সামর্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ, আত্মিক সামর্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশুদ্ধ বাতাস ফুসফুস ভালো রেখে, খাঁটি খাবার শরীর ভালো রেখে, হালাল উপার্জন আত্মা ভালো রাখে আর নেক চিন্তা-কাজ ভবিষ্যত জীবনকে ভালো রাখে।