নারীও হয়ে উঠতে পারে সবার অনুপ্রেরণা

নিরুফার ইয়াসমিন

বর্তমান সমাজে মেয়েদের জীবনের নানা সমস্যার কথা ভাবলেই কেন যেন হতাশা চলে আসে। কিন্তু সমস্যা হয়তো সব মানুষের জীবনেই আছে, তবে সমাজের সব বাঁধা পেড়িয়ে মেয়েদের টিকে থাকাটা একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং।

আচ্ছা ধরুন, একটা মেয়ে যখন জন্ম গ্রহন করে পরিবারের সবাই খুব একটা খুশি হয় না যতটা একটা ছেলের বেলায় হয়। বলতেই পারেন এখন মানুষের চিন্তা ভাবনা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হ্যা, এটা ঠিকই বলেছেন, এখন আর সেই আগের মত অবস্থাটা নেই যে একটা মেয়ে শিশু জন্ম নিলেই তাকে অবহেলা সহ্য করতে হবে। তবে প্রথম একটা মেয়ে সন্তান একটা পরিবারে জন্ম নিলে সবাই যেমন খুশি হয় দ্বিতীয় মেয়ের বেলায় সেই খুশিটা হয়তো প্রথমবারের তুলনায় একটু কম আর তৃতীয় মেয়ে সন্তানের বেলায় সবার মাঝে একটা বিরক্তি চলেই আসে। কারণ একটা ছেলে সন্তান না থাকলে কি করে হবে, ছেলেই তো বাবা-মার ভবিষ্যৎ সম্পদ, এই মানসিকতা থেকে বোধহয় আমরা এখনও বেরিয়ে আসতে পারিনি। মেয়েরাও যে বাবা-মার ভবিষ্যৎ সম্পদে পরিণত হতে পারে সেটা ভাবতে এখনও আমাদের কষ্টই হয়।

এবার আসি পড়াশুনায়, মেয়েদের বাবা-মা পড়াশুনা করায় একটা ভালো পরিবারে যাতে বিয়ে দিতে পারে সেই আশায়। অনেকে বলতেই পারেন এখন আর সেই দিন নেই, এখন আমাদের দেশের সব বড় বড় পজিশনে মেয়েরা বসে রয়েছে। তবে সেই বড় হওয়ার পিছনের গল্পটা সব মেয়ের জন্যই বোধহয় সহজ ছিলো না, একটু ভেবে দেখবেন। আর ছেলেদের পড়াশুনা করানোটা বা জীবনে ভালো কিছু একটা করা বাবা-মার কাছে চ্যালেঞ্জ, ছেলে না চাইলেও বাবা-মা তার নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়।

যে চেষ্টাটা মেয়ে সন্তানের বেলায় তুলনামূলক কম থাকে। যখনি একটা মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে তখনি তাকে শুনতে হয়- ঘরের কাজ শেখো, পড়াশুনা তো করতে পারবে না;বিয়ে দিয়ে দিবো সংসার করবে। এই পরীক্ষায় খারাপ ফল করা মেয়েটিকে কেউ উৎসাহ দিবে না বরং তাকে বার বার মনে করিয়ে দেয়া হবে বিয়ে করে পরের ঘর সংসার করার জন্যই তোমার জন্ম। এই ছোট ছোট কথাগুলো যে সন্তানের মানসিকতার ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে সেটা পরিবারের আর সবাই কখনও ভাবেও না,।এখনও অনেক পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেই বাবা-মা দায়মুক্ত হয়। অথচ একটা ছেলের বেলায় কি তাই হয়? আমার তো মনে হয় না!

তাই বলে যে আমি মেয়েদের বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছি তা কিন্তু নয়। যে মেয়ে সন্তানটা পড়াশুনায় কম ভালো করছে তারও কিন্তু কিছু না কিছু প্রতিভা আছে। আমরা চাইলেই তাকে উৎসাহ দিয়ে তার নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগটুকু তাকে দিতেই পারি। আমরা ভেবেই নেই বিয়েটাই মেয়েদের জীবনের সব সমস্যার সমাধান, অথচ সেই পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করা মেয়েটিও সাবলম্বী হলে একটা পরিবার, সমাজ আর দেশের জন্য সম্পদে পরিনত হতে পারে। একটা ছেলে যখন পিছিয়ে পরে বা পড়াশুনা থেকে ঝরে পরে তখন যেমন আমরা তাকে ভালো পথে ফেরানোর চেষ্টা করি, তাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি, একটা মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রেও আমাদের ভাবনাটা কি এমন হওয়া উচিৎ নয়!!

আবার যে মেয়েটি পড়াশুনায় অনেক আগ্রহী হয়, আন্তরিকভাবে না চাইলেও মেয়ের ফলাফল বা পড়াশুনার আগ্রহ দেখে পরিবারও পেছিয়ে থাকতে পারে না, পরিবার পাশে থেকে বাধ্য হয়ে সাহায্য করে। এই মেয়েগুলোকে যে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয় না তা কিন্তু নয়। বাবা মা চাইলেও সমাজ, আত্মীয়-স্বজন ঠিকই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মেয়ে মানুষ এতো পড়াশুনা করে কি করবে! ঐ মেয়েটাই যখন পড়াশুনার বা জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয় তার পোশাক নিয়ে, তার চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন করে অনেকেই। তাইতো অনেকেই বলে- আগে বিয়ে দাও তারপর না হয় যত খুশি পড়াশুনা করবে।

আচ্ছা বিপদ আর ঝু্ঁকিতো সব মানুষের জীবনেই আছে তাই না! একটা ছেলে যখন বাইরে যায়-তখন সে কি নিরাপদ? সে কি কোনো দুর্ঘটায় পড়তে পারে না? সে কি নেশাগ্রস্থ হয়ে বিপদের পথে যেতে পারে না? এমন অনেক কিছুই কিন্তু যে কোনো মানুষের জীবনে হতে পারে। তাহলে আমরা একটা মেয়েকে নিয়েই বা এতো ভয় পাই কেন? কেন আমরা মেয়েদের দু্র্বল ভাবি? কেন আমরা ভাবি- বিয়ে দিলেই মেয়েটা বিপদ মুক্ত, আর কোনো বিপদ তাকে ছুঁতে পারবে না। একবার কি ভেবেছেন- বিয়ের পর সংসারে মানিয়ে নিতে না পেরে কত মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে, কত মেয়ে  আত্মহত্যা করেছে, যৌতুকের লোভ বা স্বামীর পরকিয়ার বলি হয়েছে! তাহলে যে পরিবার বলছিল- বিয়ে দিলেই দায়মুক্ত হবে সে পরিবার কি এই সংসারে টিকতে না পারা মেয়েটির দায়ভার নিবে?

অথচ সমাজ পরিবার একটু সময় শ্রদ্ধা আর উৎসাহ দিলেই আমাদের সবার ঘরে জন্ম নেয়া মেয়েরাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুন্দর করে সংসার সাজাতে পারে। কখনও সংসারে মানিয়ে নিতে না পারলেও সে সমাজের জন্য বোঝা হবে না। আমরা নিজেদের মানসিকতাগুলো পরিবর্তন করতে পারলেই হয়তো- মেয়েদের নিয়ে আমাদের সমাজের সব জটিলতা একদিন দূর হয়ে যাবে। এই ভাবনাগুলো আমার (লেখকের) একান্ত নিজের, সবার চিন্তা-ভাবনার সাথে নাও মিলতে পারে। তাই ভুল ত্রুটি  ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

লেখিকা: মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, হাজী মোঃ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

২ Comments on “নারীও হয়ে উঠতে পারে সবার অনুপ্রেরণা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *