কলামিস্টরা স্বচ্ছ ও শুদ্ধ বাংলায় সুনির্দিষ্ট বিষয় খুব সুন্দরভাবে ব্যক্ত করতে পারেন; নিজের চিন্তা, অভিমত, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। তবে বিবেকবান, পাঠকনন্দিত ও সমাজআদৃত কলামিস্টরাই কেবল এই ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পারেন।
কলাম লেখক মানেই যে তিনি বয়স্ক লোক হবেন, চুল পাকা হবেন; এমন কোনো কথা নেই। কেউ ছোটখাটো কলাম বা সিঙ্গেল কলাম দিয়ে শুরু করলেও পরে তা আকারে বড় হতে থাকে। তবে এই দেশে কলামের জন্য নিয়মিত ও যথাযথ সম্মানি পাওয়া ভীষণ ভাগ্যের ব্যাপার! খুব কম হাউজই যথাসময়ে সম্মানি দিয়ে থাকে; ফলে অনেকেই কলাম লেখা আর চালিয়ে যাবার মতো উৎসাহ ধরে রাখতে পারেন না ।
নিরপেক্ষ কলাম যারা লিখেন তাদের কলামের নিয়মিত পাঠক ও ভক্তও তৈরি হয়। কেউ একটানা কলাম না লিখে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেন তথা মাঝে মাঝে লিখেন, কেউ নিয়মিত লিখেন। কখনো কখনো কলামের শেষে ই-মেইল দেওয়া থাকে, কখনো কখনো থাকে না। কখনো কখনো কলামের সঙ্গে লেখকের ছবি দেওয়া হয়, কখনো কখনো লেখকের ছবি দেওয়া হয় না।
কলাম ছাপার দায়িত্বে থাকারা মহাপণ্ডিত হওয়ায় অনেক কলাম লেখকই লেখা বন্ধ করে দেন বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কারণ তারা লেখার মান বিবেচনা না করে লেখককে ট্রিটমেন্ট করে তথা কেশ পাকার লেখা পাতার আপার ফোল্ডে রাখে আর কেশ কাঁচার লেখা যায় নিচে।
কলাম লেখা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার বিশেষ সুবিধা হচ্ছে প্রকাশিত কলামগুলো সম্পাদনা ও সংশোধনের মাধ্যমে বই প্রকাশ করা যায়। প্রকাশযোগ্য কলাম লেখা যে কষ্টসাধ্য কাজ, তা কমবেশি সব লেখকই হাড়ে হাড়ে টের পান।
কারণ বিকৃতি-বিচ্যুতি যাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য অকপটে তুলে ধরতে হয়। নানা আইডিয়া ও চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। লেখার বিষয়বস্তু ঠিক করা, বিভ্রান্ত না হয়ে নিজের ভাব প্রকাশ করা, ভাষার ব্যবহার ও শব্দচয়নে যথাযথ হওয়া, পর্যবেক্ষণে বুকে জন্ম নেয়া ভাবাবেগকে লেখনীতে রূপ দেয়া, সবসময় চোখ কান খোলা রাখা- অত সহজ নয়।
সমাজকে জাগাতে, মানবিকতা তুলে ধরতে চেষ্টা করাটাই বড় কথা! কেউ সমালোচনা করবে, কেউ ঈর্ষা করবে; এসব গায়ে মাখা যাবে না। লিখতে লিখতেই একসময় লেখার মধ্যে নিজের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা চলে আসে। হঠাৎ করে কেউ বড় কলামিস্ট হন না। চর্চা ও অধ্যবসায় অব্যাহত রাখলে যে পেশায়ই থাকুন না কেন, বড় লেখক হতে বাধা থাকবে না।