আদর্শ পরিবার গঠন অনেক কঠিন, তবে খুবই প্রয়োজনীয়-জরুরি-গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ পরিবার থেকেই সমাজে আদর্শ মানুষ আসে। একবার পরিবার ছাড়া নিজেকে কল্পনা করুন তো। কল্পনা করুন এমন একটি পৃথিবীর কথা, যেখানে কোনো পরিবার নেই। পরিবার বিচ্ছিন্ন করে আপনি নিজের অস্তিত্ব ভাবতেই পারবেন না! পরিবারই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ও যত্ন পাবার দাবি রাখে। আপনি ভালো আছেন মানে আপনার পরিবারও ভালো আছে। পরিবারের সদস্যদের কষ্টে রেখে কোনো মানুষই শান্তিতে থাকতে পারে না।
মা-বাবা, ভাই-বোনের পারস্পরিক ভালোবাসাকে ভিত্তি করেই পরিবার। নৈতিকতাসম্পন্ন, সুরুচিপূর্ণ ভালো মানুষ সৃষ্টিতে আদর্শ পরিবারের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য পরিবারপ্রধানদের প্রকৃত জীবনবোধ ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সক্রিয় সহযেগিতাও লাগবে। পারিবারিক বন্ধন সব সময় রক্তের নয় তবে এটি পরস্পরকে সম্মান করতে ও ভালোবাসতে শেখায়। অন্যের জীবন ও সম্মানকে নিজের কাছে মূল্যবান ও দামি করে তুলে। পারস্পরিক ভালোবাসাময় পারিবারিক পরিবেশ জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সম্মিলিত রূপ হচ্ছে পরিবার। পরিবারে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটি সুন্দর পরিবার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত প্রদানের অধিকার রয়েছে। তাই অন্যের মতামতকে সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।
আদর্শ পরিবারের বৈশিষ্ট্য
সময় দেয়
আধুনিক যুগে পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্যই যে যার মতো করে ব্যস্ত থাকে। শত ব্যস্ততার মাঝেও সুখী পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে সময় দেয়। আধুনিক জীবনব্যবস্থায় বাবা-মা চাকরি বা জীবিকা নিয়ে যত ব্যস্তই থাকুক না কেন, দিন শেষে সন্তানদের সময় দেয় ও দেখাশুনা করে। জীবনের শেষ সময় পরিবারে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও কিছু সময় আর ভালোবাসা পায়।
বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানদেরও বাবা-মা সময় দেয়। সপ্তাহে ছুটির দিনগুলোতে প্রত্যেকে পরিবারকে সময় দেয়। পরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সময় দেওয়ার মাধ্যমে পরিবারের বন্ধন দৃঢ় হয়, পরিবারের ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানা যায়। ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরে থাকা যায়, যা একটি সুন্দর পরিবার গঠনের জন্য অপরিহার্য।
যোগাযোগ থাকে
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পরিবারকে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে দূরে রাখে। লেখাপড়া বা চাকরি বা অন্য কারণে পরিবারের বাহিরে থাকলেও পরিবারের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয় না। কারো অপরাধমূলক কাজে জড়িত হবার আশঙ্কা দেখলে অন্যরা তাকে সুপথে রাখতে এগিয়ে আসে।
সবাই গুরুত্বপূর্ণ
পরিবারের ছোট-বড় সকল সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারে সবার গুরুত্ব নিশ্চিত হলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবারের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করে। অনেক সময় বাবা-মা দারিদ্র্যের শিকার হয়ে সন্তানের খাবার, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারে না। অনেক সময় যথাযোগ্য দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে মায়ের দুধের পরিবর্তে গরুর দুধ, নৈতিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে চরিত্র গঠনের পরিবর্তে সাফল্যের উন্মাদনা জাগিয়ে দেয়ার ফলে সন্তান পিতা-মাতাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে না, দুর্ব্যবহার ও নিপীড়ন করে, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য মাকে কষ্ট দেয়, সন্তান মানুষ করার জন্য পিতা-মাতার খোঁজখবর রাখে না। আদর্শ পরিবারে এসব সমস্যা দেখা যায় না।
শৃঙ্খলা
শৃঙ্খলা একটি সুখী-সুন্দর পরিবার গঠনের প্রথম শর্ত। পরিবারের সদস্যদের মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে শৃঙ্খলা সহায়ক। পরিবারের উশৃঙ্খল সদস্যরা পরকীয়া, মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেন। তাই পরিবারের সদস্যদের উচিত পরিবারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। সন্তান একটু বড় হলেই পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কহীনতা কিংবা সন্তান বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতার খোঁজখবর না রাখার ফলে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। মানুষের জীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অব্যাহত কর্মচাঞ্চল্য প্রয়োজন। শৃঙ্খলা উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়।
জীবনকে কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে এবং শারীরিক শক্তি মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে ব্যয় করতে শৃঙ্খলা লাগে। জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সঠিকভাবে করতে চাইলে বিশৃঙ্খল হলে হবে না। ভুল চিত্তবিনোদনের পথে না গিয়ে সৎ-স্বাভাবিক আনন্দের জন্য সুস্থ বিনোদন বেছে, নিজের সম্পর্কে উদাসীন না থেকে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যানুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে সঠিক পথে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই সম্ভব অশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ ও চিন্তা-চেতনায় অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়া। একঘেয়ে কাজ বা একঘেয়ে জীবন বিরক্তিকর; যা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য আনতে হয়।
মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপর পড়ালেখা করা অন্তরকে প্রশান্ত ও সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটি বিনোদন-মাধ্যম; যা শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দ দেয়। বই পড়া মানুষের মনের খোরাক দেয়, আত্মিক এবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে, অন্তরগুলোকে বিনোদিত করে, মনের ক্লান্তি দূর করে। সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হওয়া, সুস্থতা রক্ষা ও মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব কিছু বিশৃঙ্খল জীবন যাপনকারী মানুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।
ক্ষমাপূর্ণ মনোভাব
বিভিন্ন সময় পরিবারের সদস্যরা বুঝে না বুঝে ভুল করে থাকে। এজন্য পরিবারের গুরুজনেরা তাদেরকে বকা-ঝকা, মার-ধোর, রাগ করা ও প্রহারের মাধ্যমে শাসন করেন। অনেক সময় এই শাসন তাদের জেদি ও পথভ্রষ্ট করে। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্ক ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তাই অতিশাসন না করে আদর স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে তাদের ভুলগুলো বোঝাতে হবে এবং ক্ষমাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস-শ্রদ্ধাবোধ-নৈতিকতার বন্ধন একটি সুখী-সমৃদ্ধ-শান্তিপূর্ণ পরিবার গড়ে তোলে।
সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব
পরিবারের সদস্যদের একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি গড়ে ওঠে সুখী পরিবার। সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বার্থপরতা দূর হয়, আপস করার মনোভাব তৈরি হয়। একে অপরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার মনোভাব ভালো কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠে নিরাপদবোধ করার উপায় হচ্ছে- স্রষ্টার উপর আস্থা রাখা, মনের কথা জানাতে পারার মতো কিংবা সমস্যায় পড়লে সাহায্য করবেন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া- যে কষ্ট বুঝবে, আন্তরিকভাবে ভালোবাসবে, সান্নিধ্যে রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করবে, মন দিয়ে কথা শুনবে, মনের কথা বলে নিজেকে হালকা করা যাবে, অন্যদের প্রতি প্রেম ও দয়া দেখাবে, গ্রহণ করা অপেক্ষা দান করাকে পছন্দ করবে, অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে পরিতৃপ্তিবোধ করবে, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে ও বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে, ভয় দেখাবে না বা ক্ষতি করবে না, অন্যকে নিরাপদ মনে করে কৃতজ্ঞ থাকা যাবে বা নিরাপত্তা খুঁজে পাবে।
পাশে থাকা ও বিশ্বাস করা
পরিবার মানে একে অপরের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে নেয়া। তা না হলে অনেকে মানসিক অশান্তিতে ভোগে, অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যা পরবর্তীতে জীবননাশের কারণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই পরিবারের সকল সদস্যের উচিত যেকোন বিষয়ে অন্যদের পাশে থাকা। একটি সুস্থ সুন্দর পরিবার গঠনে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা জরুরি। অবিশ্বাস শুধু পরিবারে ভাঙনই সৃষ্টি করে না, নিরাপত্তাহীনও করে তোলে। বিশ্বাস পরিবারের শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।
নিরাপদবোধ করা
মানুষের জান-মালের হেফাজত করা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে সম্মান করা, মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা, মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করা, সততা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকা, সৎপথ অনুসরণ করা, অহমিকা থেকে দূরে থাকা, আগ্রাসন বা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থাকা, কাউকে লাঞ্ছিত না করার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করা উচিত।
স্মার্টনেস থাকা
স্মার্টনেস হলো বুদ্ধিমত্তার ও প্রকাশভঙ্গির পরিচয়। স্মার্ট লোকেরা যেকোনো সময় অন্যদের কাছে নিজের আইডিয়া বা কথাকে শেয়ার করে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। বুদ্ধিমত্তা ও শরীরী ভাষার সমন্বয়ে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের উপস্থাপনের জন্য তৈরি থাকে। কথায়, কাজে, চলাফেরায় কিংবা আচরণে আকর্ষণ থাকে। পটিয়ে ফেলা বা কনভেন্সড করার ক্ষমতা থাকে। যেকোনো বিষয় সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকে। স্টাইল হলো সে সব ভিজিবল কিংবা অদৃশ্য প্রকাশ যা অন্যকে প্রভাবিত করে। যেমন হাঁটার স্টাইল, কথার স্টাইল, লেখার স্টাইল, চুলের স্টাইল, নখের স্টাইল, পোশাকের স্টাইল, চিন্তা করার স্টাইল, সমাধান দেওয়ার স্টাইল ইত্যাদি।
এসব স্টাইল ও আউটলুকিং মিলে হয় স্মার্টনেস। নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হলে প্রথমে আমরা হাত মেলাই। হাতের নখ পরিষ্কার রাখুন। কারণ আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। মানুষের প্রথম প্রকাশ হয় তার কথায় ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন-সাদামাটা-কমন-মানানসই-রুচিশীল পোশাকে। তাই পোশাক নির্বাচনে সতর্কতা অপরিহার্য, দরকার পোশাক জ্ঞান। চকচকে কালার পরিহার করুন। কোথায় কী কাজে যাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে পোশাক নির্বাচন করুন। গায়ে হলুদে গেলে পাজামা-পাঞ্জাবি, কারও রিসিপশনে গেলে ক্যাজুয়াল ফরমাল লুকটা নিয়ে আসুন। পোশাকের রংটা আপনার সঙ্গে ঠিক যাচ্ছে কিনা সেটা ভেবে নিন।
স্যান্ডেল-জুতা ছেলেদের স্মার্টনেসের উপকরণ। ঘড়ি, বেল্ট, পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহারে সচেতন থাকা উচিত। ছেলেদের চুলের ব্যাপারটিতে খানিকটা সতর্ক থাকা উচিত। চুল বেশি বড় বা এলোমেলো রাখা অনেকের চেহারার সঙ্গে মানায় না। উচিত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা, ফালতু ও বেশি কথা না বলা, কোনো অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য না করা ও কারো নেগেটিভ দিক না বলে পজেটিভ দিক বলা। পরিস্থিতি মোতাবেক প্রয়োজনের সময় জোরালো কথা বলতে হবে। অন্যদের সম্মান করতে- দিতে শেখা। ভাব ধরে মুড নিয়ে চলাফেরা না করা। কারো কৃতিত্বকে হিংসা না করে প্রশংসা করা। ছোটদেরও আপনি সম্বোধন করা। আচার ব্যবহার আকর্ষণীয় হওয়া।
নেশাভান করা, নারীর প্রতি দুর্বলতা, অশোভন কিছু করা, উৎকট পোশাক ব্যবহারের মতো খারাপ অভ্যাস যত দ্রুত পারা যায় বদলে ফেলতে হবে। গান শোনা, বই পড়া, ভালো মুভি দেখা, চিত্রকর্ম, সামাজিক সহযোগিতা, স্বেচ্ছাসেবী কর্ম অনেক স্মার্ট করে। যে যত বেশি স্মার্ট সে তত বেশি রুচিশীল কাজ করেন। স্মার্ট ব্যক্তির মেজাজের কন্ট্রোল বা মেজাজের ভারসাম্যতা থাকবে অনেক বেশি। তাই মেডিটেশন করুন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। ব্যতিক্রম, বুদ্ধিদীপ্ত আর সত্যবাদী-সদাচারী হোন। মিথ্যাবাদী মানুষের স্মার্টনেস স্থায়ী হয় না। অপরিচ্ছন্ন পোশাক, চলাফেরায় এলোমেলো ভাব, অগোছালো কথাবার্তার কারণে অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারেন। পরিশীলিত ব্যক্তিত্ব ছাড়া অফিসে গুরুত্ব পাওয়া কঠিনই হয়। চাকরির ক্ষেত্রে ছেলেদের ফরমাল শার্ট, ফরমাল গেটআপটা বেশ জরুরি।
সব সময় জানতে উৎসুক- উৎসাহী থাকুন, নতুন কিছু শিখতে সব সময় প্রস্তুত থাকুন। শেখার ক্ষেত্রে কোথাও না শব্দটি বলবেন না। সারা পৃথিবীর কোথায় কী ঘটছে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস করুন। ভালো ভালো বই পড়া সৃজনশীলতাকে প্রখর করে তুলবে, ভেতরের সংকীর্ণ চিন্তা ও সীমাবদ্ধতাকে দূর করে দেবে। তাই নিয়মিত বেশি বেশি বই পড়ুন, ভালো ভালো বই টানা শেষ করতে চেষ্টা করুন। যেসব মানুষ যত নতুন নতুন আইডিয়া বের করতে পারে তারা তুলনামুলকভাবে বেশি স্মার্ট হয়। স্মার্ট হতে হলে শেখার জন্য আপনার মনের দরজা সব সময় খোলা রাখতে হয়, চারপাশ থেকে গ্রহণ করতে হয়, প্রতিনিয়ত শিখতে হয়। স্মার্ট মানুষজনের সাথে মিশুন, আড্ডা দিন, চলুন, খাতির জমান। অনেক কিছু শিখতে পারবেন, অনেক অজানা বিষয়ে জানতে পারবেন। মনকে উজ্জীবিত-সক্রিয়- সতেজ রাখুন।
মাথায় কোনো আইডিয়া আসলে তাৎক্ষণিকভাবে লিখে রাখুন। সব সময় সাথে একটি ছোট নোটবই রাখুন। মাঝে মাঝে নোটে লিখে রাখা আইডিয়াগুলো পড়ুন। এর ফলে দুর্বলতা ও শক্তির জায়গা বুঝে শুনে পরিকল্পনা করা সহজ হবে। যা জানেন বা শিখেছেন তা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার আইডিয়া সম্পর্কে অন্যদের মতামত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানুন; আপনার আইডিয়া আরো সুক্ষ্ম পরিপূর্ণ হবে। অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখুন। ভেতরে লুকয়ে থাকা প্রকৃত শক্তির জায়গা খোঁজে বের করুন, টিকে থাকুন। আপনি ভালো পারেন এই কাজটিই আপনাকে অন্যদের চেয়ে সেরা বানাবে এই বিশ্বাসটা তৈরি করুন।
স্মার্ট লোকজনের সাথে মেলামেশা করুন, আড্ডা দিন, বন্ধুত্ব পাতান। নিজের আইডিয়া অন্যদের কাছে প্রকাশ করুন। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের বক্তব্য রাখুন। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করলে অন্যরা দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে। তাই নিজের দুর্বলতা নিজেই অতিক্রম করার চেষ্টা করুন। সবসময় নিজের আত্মবিশ্বাসে স্থির থাকুন। কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। স্মার্টলি কথা বলুন। বাড়িতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্মার্টলি কথা বলার অভ্যাস করুন। অন্যদের বক্তব্য ভালো করে শুনুন। অনলাইনের সঙ্গে ও সোস্যাল সাইটগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকুন।
সব সময়ের জন্য
আপনার পরিবার মানে সবকিছুই আপনার; পরিবার ছাড়া আপনি গন্তব্যহীন কোনো পথিক। আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য পরিবার সর্বোৎকৃষ্ট। বন্ধু আসে ও যায় কিন্তু পরিবার সব সময়ের জন্য। একটি সুখী পরিবার হচ্ছে এক টুকরো স্বর্গের মতো, যেখানে বর্তমান প্রজন্ম আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলে। রক্ত কিংবা বিবাহ পরিবারের সাথে সম্পর্কিত করে কিন্তু আনুগত্য ও বিশ্বস্ততাই পরিবারের সাথে যুক্ত রাখে। মাদার তেরেসা বলেন, তুমি যদি বিশ্ব পরিবর্তন করতে চাও, গৃহে ফিরে যাও এবং তোমার পরিবারকে ভালোবাসো।
মানসিক শক্তির উৎস
পরিবারই বিশ্বে সবচেয়ে দামি, মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র; মানসিক শক্তির অন্যতম উৎস। পরিবার থেকে নারীদের সম্মানের জায়গা তৈরি করুন, গৃহিণী পেশাটিকেও মর্যাদায় আনুন। গৃহিণী পেশা সম্মানিত হলে সম্মানিত হবে পরিবারের নারী; এতে নারীদের হতাশা কমবে, বাড়বে কর্মস্পৃহা এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সামাজিক ব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রে। পরিবারের সদস্যরা অঘোষিতভাবে যেন এমন প্রতিশ্রুতি প্রত্যেককে দিয়েছে যে- তুমি ডাকলে আমি শুনব, তুমি আমার কাছে এলে আমি তোমাকে রাখব, যদি আমাকে তোমার প্রয়োজন হয় তবে আমি সেখানে যাব, যখন তুমি রাখবে তখন আমি থাকব।
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ
পরিবারে একজনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে আরেকজনেরও আন্তরিক প্রয়াস দেখা যায়। পরিবারে সবার সুখ-শান্তি নিশ্চিতকরণে ও স্বপ্ন সত্যে পরিণত করতে আজকেই আগামীর পরিকল্পনা নিন। একটি পরিবারের সম্পূর্ণ নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ হবার প্রয়োজন নেই, ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। সততা ও বিশ্বস্ততার মাধ্যমেই একতা অর্জন খুব সহজ। জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবারেই মানুষের জীবনের শুরু ও শেষ হওয়াটা অপরিবর্তিত। প্রবীণ-নবীন, স্ত্রী-সন্তান- এমনকি কাজের লোকের প্রতি সদয় আচরণ কাম্য। সঠিকটাকে গ্রহণ করেই প্রকৃত সুখী হওয়া সম্ভব।
ভালোবাসা
পরিবারের সদস্যদের উচিত একে অপরকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা। প্রত্যেকের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দের প্রতি খেয়াল রাখার ফলে পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়, একটি সুখী-সুন্দর পরিবার গড়ে ওঠে। মানুষের অন্যতম গুণ ভালোবাসা। মানুষ মূলত ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ভালোবাসা হৃদয়ের- মনের একটি অনুভূতি; যা কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। ভালোবাসা মানে- দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভূতি, একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা, সম্পর্কের মাঝে কমিটমেন্ট ঠিক রাখা, অশুভ আচরণ না করা, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়ে পাশে থাকা, ক্ষতি না চাওয়া, সব সময় মায়া-আদর- সহানুভূতি দেখানো, ছেড়ে না যাওয়া, বিশ্বাস করা, মানুষের সঙ্গে মানুষের আবেদনময় সম্পর্ক।
ভালোবাসার সম্পর্কে দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে ভালো দিকটিই প্রকাশ ঘটে, খারাপটাকে পেছনে ফেলে ভালোকে গ্রহণ করা হয়, ভুলগুলোকে বড় করে না দেখে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়, মন্দ দিকগুলো আড়ালে রাখা হয়, সংশোধন করার চেষ্টা থাকে, একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ থেকে শ্রদ্ধা-সম্মান দেখানো হয়, কোনো প্রতারণা থাকে না, খারাপ কিছু বলা বা ভাবা হয় না। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা বাবা-মার জন্য, ভাই-বোনের জন্য, বন্ধুদের জন্য, একান্ত প্রিয় মানুষটির জন্য, প্রতিবেশীর জন্যও। ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়; সব জীব ও জড়ের প্রতিও হতে পারে, স্রষ্টার প্রতিও হতে পারে। ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়; বছরের প্রতিটি দিনের জন্যই। প্রতিনিয়ত ভালোবাসতে হয়।
ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়। ভালোবাসা হলো জীবনের কর্মশক্তি; যা মানুষকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে, হতাশার-আশাভঙ্গের-শূন্যতার অনুভূতি দূর করে, জীবনে উদ্দেশ্য দেয় এবং অর্থবহ করে। তাই কঠোরতা নয় ভালোবাসাই বেছে নিলে ভালোবাসা অনেক কিছুকেই সহজ ও আলোকিত করবে। পরিবার একটি গাছের শাখা প্রশাখার মতো, বিভিন্ন নির্দেশনায় বেড়ে উঠে; তবে মূল গন্তব্য বা শিকড় একই। তাদের জন্য আপনার সময় থাকা উচিত নয় যারা আপনাকে অপছন্দ করে, আপনি ব্যস্ত থাকুন তাদের নিয়ে যারা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। দিনশেষে সবাই ভালোবাসাই মনে রাখে, এর বিপরীতে সবকিছুই ভুলে যায়।
আদর্শ দম্পতি
ভালো স্ত্রী বা ভালো স্বামী নির্বাচন করতে পারা জীবনে বড় ধরনের সম্পদ। উত্তম মাটিতেই উৎপন্ন হয় উন্নতমানের ফল; নিম্নমানের মাটি থেকে উৎপন্ন হয় অনুন্নত ফসল। শত দায়িত্ব ও কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের লোকদের শিক্ষার ব্যাপারে গাফেল ও উদাসীন থাকা যাবে না। বাড়ি ও ঘরের ভেতর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে এমন সুন্দর ও উপযুক্ত জায়গায় বই রাখা বা লাইব্রেরী করা; যাতে বই পড়ার আগ্রহ ও পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনুমতি ব্যতীত অন্যের ঘরে প্রবেশ না করা, কারও ঘরের ভেতরে উঁকি না দেওয়া, বাড়িতে একাকী না ঘুমানো, একাকী সফরে না যাওয়া, রেলিংবিহীন ছাদের ওপর রাতে না ঘুমানো সচেতনতারই অংশ।
সুযোগ হলে পরিবারের সকল সদস্য একত্রে বসবে এবং পরিবারের ভেতরের ও বাইরের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ঘরোয়া বৈঠক করা উচিত। দাম্পত্য করহের বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করা ঠিক না। কারণ এতে পারিবারিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। যারা স্ত্রীকে স্বামীর ওপর সন্দেহপ্রবণ করে তোলে এবং স্বামীকে স্ত্রীর ওপর সন্দেহপ্রবণ করে তোলে এবং বাবা ও সন্তানদের মাঝে শত্রতা সৃষ্টি করে এই ধরনের লোকদের ঘরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন।
আপনার সন্তানের বন্ধুবান্ধব কারা? আপনার অগোচরে আপনার সন্তান কোথায় যায় এবং কী করে? আপনার সন্তান বাহির থেকে ঘরে কী নিয়ে আসে? আপনার মেয়ে কোথায় যায়? কার সাথে যায়? পরিবারের সদস্যদের অবস্থা ও প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। সন্তানের মধ্যে কখনো ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, এতে সন্তান আস্থাহীন হয়ে পড়ে। সন্তানকে উপদেশ অথবা শাস্তিপ্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার বয়স, বুদ্ধি ও ভুলের পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখুন। গোপনেও সন্তানকে পর্যবেক্ষণ করবেন তবে কখনো নেতিবাচকভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন না। সতর্ক থাকতে হবে, তারা যাতে রাস্তার ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশতে না পারে। তাহলে তাদের মুখের ভাষা খারাপ হবে এবং চরিত্র নষ্ট হবে।
তাদেরকে শিক্ষামূলক খেলনা দিতে হবে। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কাজের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা উচিত। ছোটরা বাড়ির বাইরে যেতে হলে অনুমতি নিবে এবং বাড়িতে ফেরার একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেবেন। নারীরা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে কাজ করবে তবে তা সুবিন্যস্তভাবে করবে। পরিবারের আর্থিক তীব্র প্রয়োজন ছাড়াও অনেক সময় নারীর চাকরির কারণে বাড়ির কাজে অবহেলা হয়, স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়, সন্তানদের দেখাশুনায় ঘাটতি হয়, শারীরিক কষ্ট হয়, মানসিক চাপ অনুভূত হয়, কাজে একগুঁয়েমিভাব চলে আসে এবং পারিবারিক অশান্তি বেড়ে যায়।
ঘরের কোনো গোপন কথা বা স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার কথা বাইরে প্রকাশ করা ঠিক না। পারিবারিক ছোটখাটো সমস্যার মধ্যে তৃতীয় পক্ষকে টেনে এনে বেশিরভাগ সময়ই সমস্যাকে আরো গুরুতর করা হয়। ঘরের সুখ-শান্তি নিশ্চিত হয় মূলত একে অপরের সাথে কোমল আচরণ করা ও ঘরের কাজে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে; বিনয়ী ও অহংকারমুক্ত হলেই কেবল এটা বাস্তবায়ন সম্ভব। স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে রসিকতা ও হাসিঠাট্টা পরিবারকে সুখ-সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং ঘরে পরস্পরে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যদের চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি,খারাপ-নোংরা স্বভাবগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।
বাড়ির ভেতর ও বাহির উভয় দিক থেকেই অতিরিক্ত কারুকাজ করা থেকে বিরত থাকুন। ঘরে ধুমপান নিষিদ্ধ করতে হবে। বাড়ির কাজের লোক ও গাড়ির ড্রাইভারদের থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে গায়রে মাহরাম কোনো পুরুষকে ঘরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। বাড়ি আলো-বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন। বাড়ি নির্বাচনের পূর্বে উত্তম প্রতিবেশী নির্বাচন করা উচিত। খারাপ প্রতিবেশীর প্রভাব সবার ওপর পড়ে। কষ্ট ব্যতীত সস্বস্তির সাথে কাজ আঞ্জাম দিতে সামর্থ্য থাকলে ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন রাখাই যেতে পারে; তবে ব্যবহারে অপচয় করা যাবে না।
প্রয়োজনীয় সুন্দর জিনিস দিয়ে ঘর সাজাবে, অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে নয়। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের প্রতিটি সদস্যের শারীরিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সারা দিন বাইরে কঠিন পরিশ্রম করে একজন মানুষ যখন বাসায় ফিরে, তখন আপনজনদের একটু হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ ও জীবনসঙ্গিনীর পরম ভালোবাসা সে প্রত্যাশা করে।
বিপদগ্রস্তকে সহযোগিতা
বিলিয়ে দেয়ায় প্রকৃত সুখ; চাই ত্যাগের মানসিকতা। দুঃখীর দুঃখ দূরের প্রচেষ্টা হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ লাগায়। তাই দুঃখে, কষ্টে, অভাবে পতিত আর্তমানবতার কল্যাণে যতটুকু পারা যায় ততটুকুতেই এক নির্মল আনন্দের স্বাদ পাওয়া সম্ভব। নিজের জন্য নয় পরের কল্যাণে কিছু করতে পারার মধ্যেই সার্থকতা। অবৈধ আকর্ষণ বাড়লে জ্ঞানের আলো নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাই জ্ঞানের শক্তির যথার্থ ব্যবহারেই অবৈধ আকর্ষণ এড়ানো সম্ভব। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে তার দেহ ও মন তেজহীন ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। যারা পরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মতো নির্মল শান্তির ছোঁয়া তারাই পায়।
কেউ আকাশছোঁয়া অট্টালিকায় বিলাস বহুল জীবন যাপন করেন, আর কারো পুরো আকাশটাই ছাদ আর জমিনটাই বিশ্রামের জায়গা। নেই নিরাপদ আশ্রয়। নিজের মনের মতো করে সাজানোর মত কিছু। সম্পদ বলতে নিজের দেহটাই। দুমুঠো খাদ্যের সন্ধানকারী ব্যক্তির বাঁচার কী করুণ আকুতি। নিরস কঠিন সে জীবন। নির্মম বাস্তবতা ও নির্দয়তার অস্তিত্ব। বিশাল জগতে সংকীর্ণ পরিসরে টিকে থাকা। বেঁচে থাকাই নিরন্তর সংগ্রামে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত, নিঃশ্বাসটা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্যেই সর্বশক্তি নিয়োগ, অসহনীয় অস্বাভাবিক জীবনযাপন। নশ্বর দেহটাতে প্রাণটাকে কোনোমতে ধরে রাখাটা যে কী কষ্টকর হতে পারে বিকলাঙ্গ, অসুস্থ, পঙ্গুদের বেঁচে থাকতে কঠোর সংগ্রামে নিয়োজিত হওয়া থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়।
ব্যক্তিস্বার্থে চিন্তা না করে অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ান; উপলব্ধি করবেন ভোগে নয় ত্যাগেই সুখ। মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে উদার মানসিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষগুলোতেই। প্রত্যেকেই মানুষ, প্রত্যেকেরই খেয়ে পরে বাঁচার অধিকার আছে। আপনার অতিরিক্ত পোশাকটি একজন উদাম গায়ের মানুষকে দিন। দুঃখী মানুষের মাথায় হাত বুলায়ে সান্ত্বনা দেয়া, চোখের অশ্রু-মুছে দেয়া, সম্ভাবনাময় কাউকে বড় হবার স্বপ্ন দেখানোর কাজ শুরু করুন। অন্যকে দোষারোপ করার চাইতে একটি উদ্যোগ নেয়াই উত্তম। সমালোচনায় সময় ব্যয় না করে নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করাতেই কল্যাণ। অন্যকেও উৎসাহিত করুন, প্রয়োজনে বাধ্য করুন, দায়িত্ব ও কর্তব্য বেমালুম ভুলে যাবেন না।