বাংলাদেশে দেখা যায়, বেশির ভাগ সিঙ্গেল মা-ই বিয়ের পর স্বামীর পরকীয়া, দ্বিতীয় বিয়ে, নির্যাতন, বিয়েবিচ্ছেদ, স্বামীর মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নিয়ে একা জীবন কাটান। ঢাকা শহরে আলাদা থাকছেন এমন সিঙ্গেল মায়ের হার ২১ দশমিক ২ শতাংশ, বিয়েবিচ্ছেদের কারণে ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং স্বামী মারা যাওয়ার কারণে ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ একাকী মা জীবনযুদ্ধ করছেন। বেশ কিছু মা আছেন যারা সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতি পাননি। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে সিঙ্গেল মায়েদের বেশির ভাগই মানে ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ কর্মজীবী। সংসার, চাকরি ও সন্তান সামলাতে গিয়ে তারা একসময় হাঁপিয়ে যান।
এসব মায়ের মনের যাতনা তাদেরকে বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন করে বেশি। গত ১২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয় মনোরোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব সাইকিয়াট্রিক ২০১৭’। সেখানে শহুরে মানুষের জীবনের প্রতিদিনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেকগুলো অধিবেশন হয়। এর মধ্যে একটি বিষয় ছিল- ঢাকা শহরের সিঙ্গেল মায়েদের মানসিক অবস্থা কেমন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা: ঝুনু শামসুন্নাহার ১৫৬ জনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে তিনি গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
১৫৬ জনের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গেছে, অতিরিক্ত কাজের চাপে মানসিক চাপ বোধ করেন। অর্থনৈতিক চাপে আছেন এবং সামাজিক অপদস্থতা ও অপমানের কারণে কোনো-না-কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত হন সিঙ্গেল মায়েরা। এই সিঙ্গেল মায়েরা তাদের বাবার বাড়ি থেকেই বেশির ভাগ সময় সমর্থন পেয়ে থাকেন। জরিপে দেখা গেছে, সন্তানের দেখাশোনার ক্ষেত্রে সেই হার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ, আন্তরিক সমর্থন পান ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ। পুরোপুরি আর্থিক সমর্থন পান ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। অনেকে স্বামী মারা গেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছুটা সমর্থন-সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। তবে সেই হার খুবই কম।
একাকী মায়ের সবচেয়ে বেশি দরকার নিজের ও সন্তানের জন্য সমর্থন। একাকিত্ব যেন একাকী মায়ের জীবনে অন্ধকার না নিয়ে আসে। মনের জোরে বলীয়ান হয়ে নিজের স্বপ্ন, সাধ ও লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন সেই সাহসী ও উদ্যমী মনোভাব তার মধ্যে জাগ্রত থাকতে হবে।সমাজবিজ্ঞানী আফরোজা খানম বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা স্বামীর মৃত্যুর পর কিংবা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে বা পরকীয়া সম্পর্ক, পুত্রসন্তানের জন্ম না হওয়ায়, বিয়েবিচ্ছেদ, স্বামীর নিরুদ্দেশসহ বিভিন্ন কারণে সন্তানকে সাথে নিয়ে তাদের আশ্রয় হয় বাবার বাড়ি কিংবা ভাইয়ের সংসারে। যুগ যুগ ধরে তা চলে আসছে। তারা সামাজিকভাবেও অন্ধকারের এক কোণেই থাকতেন। সব দোষ, ভুলত্রুটি অপবাদ মুখ বুজেই সহ্য করতেন। সেই প্রেক্ষাপট বেশ কয়েক বছর ধরেই পাল্টে গেছে। এখন নারীদের কর্মপরিধি বিস্তার লাভ করেছে। নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারে, সংসারের সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই এখন অনেকটাই অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীলতা কমে গেছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ও পরিবর্তন হয়েছে।