বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন ভিত্তিক গেম ব্লু হোয়েল আতঙ্ক। বিশেষ করে রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী এই গেমের কারণে আত্মহত্যা এবং ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্ত আরও ২ কিশোরের সন্ধানের গুঞ্জন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর এই নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আতঙ্ক বা ভয় নয় এই গেমের ব্যাপারে সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে টিনেজারদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তারা।
ব্লু হোয়েল গেমের উৎপত্তি রাশিয়ায়। এর গেমের কারণে রাশিয়া, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেকে আত্মঘাতী হয়েছেন। তাই দেশের সচেতন মহলে এই নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, দেশে কত কয়েকদিন ধরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন। অনেকে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই প্রাণঘাতী গেমের খবর ও গুজব বন্ধ করার পরামর্শ দেন। তবে অনলাইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়, ফেইসবুকের বিভিন্ন ক্লোজড গ্রুপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যম যেহেতু কিশোর ও তরুণদের খুব প্রিয়, তারই সূত্র ধরে অনেকে এ ধরনের চ্যালেঞ্জের প্রতি সহজেই আকর্ষিত হয়।
তবে ব্লু হোয়েল গেমের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অনলাইনভিত্তিক গেম ‘ব্লু হোয়েল’র বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এদিকে, একইদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক অনুষ্ঠানে দেশে ব্লু হোয়েল গেম বন্ধে সরকারের উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে তিনি ব্লু হোয়েল নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, ব্লু হোয়েল নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লিঙ্ক ছড়াচ্ছে। আমরা সেটা সব সময় নজরদারিতে রাখছি। আমরা সব সময় খেয়াল করছি কতগুলো লিঙ্ক থেকে এগুলো করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেসব লিঙ্ক পাওয়া যাচ্ছে, যতগুলো সম্ভব বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিটিআরসির সঙ্গে লিঙ্ক গুলো ব্লক করে দেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আইসিটি ডিভিশনও নজর রাখছে।
ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে বিভ্রান্তি না ছাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই গেমটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন জন মেসেঞ্জারে বিভিন্ন লিঙ্ক দিচ্ছে, এসএমএস দিচ্ছে। এগুলো সব কিছু কিন্তু সঠিক নয়। দয়া করে আপনারা বিভ্রান্ত ছড়াবেন না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি শুধু একটা কথাই বলবো আমাদের পরিবার, সামাজিক ভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং গণমাধ্যমে এই ব্লুহোয়েলের মত যত ধরণের ক্ষতিকারক গেম আছে তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ব্লু হোয়েলের মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে-
১। আপনাকেই সচেতন হতে হবে। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় কাজ করবেন। আপনি যাকে কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় কেন চলবেন বা তার কথামতো কেন কাজ করবেন- সেটি নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।
২। অযাচিত কোনো লিংক সামনে এলে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
৩। সমাজের তরুণ-তরুণীদের মাঝে এই গেমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে।
৪। সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।
৫। সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ- এটা বুঝতে পারে।
৬। সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা- সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।
৭। কৌতূহলি মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু।