স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আনন্দ

আনিসুর রহমান এরশাদ

পরস্পর সম্পূরক-পরিপূরক-সম্মানবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা ও বোঝাপড়ার নামই জায়াপতি। নিজকে, নিজেদের  সন্তান-সন্ততি, পিতামাতাসহ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে অসামান্য হতে পারে দুই হৃদয়ের যৌথতা। সেবাধর্মী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি মানব সভ্যতার বিকাশে ভূমিকা রেখে সফল হতে পারে দম্পতি। যেসব জায়াপতি স্ব-স্ব পর্যায়ে মহান কর্মকাণ্ডে অবদান রাখেন তাদের কর্মকাণ্ড হয় সমাজে আলোক-বর্তিকা স্বরূপ, যা গণ মানুষকে প্রভাবান্বিত করে। কোনো পরিবার যদি এমন হয় যে পরিবারের প্রত্যেকেই ভদ্র-নম্র-বিনয়ী ও সদাচারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত, কোনো ধরণের বিরক্তিকর-বিড়ম্বনা উদ্রেককারী-ক্ষতিকর নয় বরং পরোপকারী-সজ্জন পরিবারটি সবার কাছে সমাদৃত হয়। যারা বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান, পাড়া-প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজনের দুঃখে-কষ্টে ত্যাগ স্বীকার করেন। এই ধরণের মানবপ্রেমী ও আলোকিত পরিবারগুলোকে সম্মান করে মানুষ। যে পরিবারের ব্যাপারে আশপাশের মানুষ থেকে শুরু করে দূরের মানুষজন সুধারণা পোষণ করে এবং কারো  অমঙ্গল-অকল্যাণ করেছে বা সামাজিক গর্হিত-ঘৃণিত-অপরাধ করেছে- এমন রেকর্ড অতীত থেকে বর্তমানে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে কারো থাকে না তাদেরকে একটু ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়।

পারস্পরিক কার্যকরী যোগাযোগ

বিবাহের মূল হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, একতা ও সম্পূর্ণ আত্মদান। পরস্পরের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মর্যাদাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা পারস্পরিক দাম্পতিক দায়িত্বশীলতায় সচ্ছলতা এবং সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দান করে। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন যত সুদৃঢ়, আদর্শ পরিবার গঠন ততই সহজ। যেসব স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের কোনো সমস্যা থাকে না, পরস্পরের মধ্যে মতের অমিল হলেও ভিন্নমতকে সহ্য করার মানসিকতা থাকে; তারা সবসময়ে একে অপরের সাথে আনন্দে, খুশিতে মেতে থাকে। অপরের সমস্যার কথা সহানুভূতি সহকারে শুনা, নিজের মতামতকে চাপিয়ে না দেয়া, নিজেদের কথোপকথন গোপন রাখা, পারস্পরিক কথা-বার্তা গঠনমূলক হওয়া, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই সমানভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়া, একটা পক্ষ অবলম্বন না করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা পারিবারিক শান্তি বজায় রাখে।

সহযোগিতা ও সহমর্মিতাপূর্ণ মনোভাব

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতাপূর্ণ মনোভাব থাকা দরকার। একে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করার মাধ্যমে বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি গড়ে ওঠে সুখী পরিবার। সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যেম স্বার্থপরতা দূর হয়, আপস করার মনোভাব তৈরি হয়। তাই একে অপরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন  করা উচিত। এছাড়া একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকাটা অত্যন্ত জরুরি, বিশ্বাসের মর্যাদা রাখাও জরুরি। অবিশ্বাস শুধু পরিবারে ভাঙনই সৃষ্টি করে না, নিরাপত্তাহীনও করে তোলে। নিয়মিত যোগাযোগ হওয়াটা খুব প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় চাকরি বা ব্যবসায়িক কাজে পরিবারের বাহিরে থাকতে হয়; অনেকে বিদেশেও থাকেন। ব্যস্ততার কারণে যাদের সুখ-শান্তির জন্য এই ব্যস্ততা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলে গেলে চলবে না। যোগাযোগহীনতায় স্বভাবতই দূরত্ব সৃষ্টি হয়, নানা অবিশ্বাস ও সংশয় তৈরি হয়; যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দূরে কাছে যেখানেই থাকুন বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রাখা পরবর্তীতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দূর করতে সহায়ক। তাছাড়া একে অপরের পাশে থাকতে হবে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে নিতে হবে। নতুবা মানসিক অশান্তিতে ভোগে আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করা চরম ক্ষতির মুখোমুখি করতে পারে।

ভালোবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক

পারিবারিক অশান্তি জীবনের অন্যান্য সব শান্তিকে ম্লান করে দেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদ্যতা এবং সহমর্মিতা বিদ্যমান থাকলে জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে দুঃখ দুর্দশা ও চিন্তার শিকার হলেও তাতে সহনশীলতা ও ধৈর্যধারণ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। মানুষ যেহেতু অতি সূুক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন জীব, সেজন্য আনন্দ অথবা দুঃখ তাকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে। ফলে তার প্রয়োজন হয় সুখ-দুঃখের অকৃত্রিম সাথীর যে তার আনন্দে আনন্দিত হবে, দুঃখে সমান দুঃখী হবে। নারী ও পুরুষ উভয়েই সমানভাবে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকে। প্রয়োজন পূরণের জন্যেই নারী ও পুরুষের মাঝে স্থায়ী বন্ধন স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরুষ নারীকে নিয়ে ঘর বাঁধে, আর নারী হয় পুরুষের গড়া সে ঘরের কর্ত্রী। উভয়ই উভয়ের কাছ থেকে লাভ করে পারস্পরিক সহযোগিতা, কর্ম প্রেরণা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজে অগ্রসর হয় উদ্যমতার সাথে। নারী ও পুরুষের এ সহযোগ ব্যতীত মানবতার এ অগ্রগতি আদৌ সম্ভব নয়। মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি পারিবারিক জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর পরম শান্তি, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং পরিতৃপ্তি লাভের মাধ্যম। স্বামী-স্ত্রী হবে পরস্পরের চক্ষুসমূহের শীতলতা দানকারী।

নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা

পারিবারিক জীবনের শান্তির মূল উৎস, স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকই স্ব-স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা। স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকা। পারিবারিক জীবনে উভয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে কেউ কারো দ্বারা কষ্ট পায় না। আসলে দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, প্রত্যেকেরই দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। পারিবারিক জীবনের  সর্বোৎকৃষ্ট মডেল হলো প্রিয় নবীর দাম্পত্য জীবন। তার আদর্শ অনুসরণ করলে কখনো অশান্তি ও দুঃখ দুর্দশার শিকার হবে না। ভালো স্ত্রীর গুণ হচ্ছে- তারা উত্তম আচরণকারী, চরিত্রবান, স্বামীর আদেশ মানেন, স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, স্বামীকে কথা দিলে তা পূরণ করেন এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার নিজের ব্যাপারে ও স্বামীর ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে স্বামীর কল্যাণকামী হয়ে থাকেন। স্ত্রীর সর্বোত্তম গুণ- স্বামীর যৌক্তিক মতের বিরোধিতা না করা এবং স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ না করা। আর মর্যাদাবান স্বামী- সুন্দর চরিত্রের অধিকারী, স্ত্রীর সাথে নম্র আচরণকারী, স্ত্রীর সাথে উদারতার চর্চাকারী এবং স্ত্রীর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলায় অগ্রগামী।

ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ

একজন আদর্শ স্বামী ঘরে প্রবেশ করেই স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করেন না, তার চেহারায় মারমুখী ভাব প্রকাশ পায় না, কথায় কথায় রেগে যায় না, চোখ মুখ রক্তিম হয়ে যায় না, স্ত্রীকে প্রহার করেন না এবং স্ত্রীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভয়-ভীতি দেখান না। স্ত্রীকে প্রহার করা কাপুরুষের কাজ, অসভ্য ও অভদ্রতার পরিচায়ক; বীরত্বের কাজ নয়, অভিজাত লোকের কাজ নয়। একজন খুবই রাগান্তিত হলে  আরেকজন ধৈর্য ধরে চুপ থাকতে হবে। দেশে বা ঘরের আশপাশে আয় রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারলে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ হয়। তারপরও জীবিকা অন্বেষণের জন্য ভিন দেশে থাকতে হলে সুযোগ থাকলে স্ত্রীকেও সাথে রাখাই বেশি প্রত্যাশিত আচরণ। বাসস্থান-ঘর-বাড়ি প্রশস্ত হলে মন প্রফুল্ল ও আনন্দিত থাকায় হৃদয়ে উদারতা সৃষ্টি হয় আর ঘর সংকীর্ণ বা অসংকুলান হওয়ার কারণে অন্তরও সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাই সামর্থ্যানুযায়ী প্রশস্ত বাসায় থাকা, সবর করা ও স্রষ্টার শুকর করা কল্যাণকর। আসলে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, কৃপণতা পরিহার, কৃতজ্ঞতার চর্চা এবং সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব না চাপানো সম্পর্কের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণকর।

আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল হওয়া

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র; এই সম্পর্ককে উন্নত ও নিবিড় করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।  উভয়কে উভয়ের প্রতি আন্তরিক ও  সহানুভূতিশীল হতে হবে।  স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর পরিচ্ছদ এবং স্বামী হচ্ছে স্ত্রীর পরিচ্ছদস্বরূপ। পরস্পরের মধ্যকার প্রেম ও সহানুভূতিই জীবনে আনন্দ ও শান্তি লাভে সহায়ক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের উদ্দেশ্য শুধু আনন্দ উপভোগ, যৌন সম্ভোগ ও আত্মতৃপ্তি লাভ করা নয়; উভয় উভয়ের জন্য শান্তির আধার। বংশধারা সংরক্ষণে একমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়াই স্ত্রীর জন্য যথেষ্ট নয়; সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রতিপালনের সুষ্ঠু দায়িত্বও পালন করতে হয়। নারী শুধুমাত্র মানব বংশ উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়; স্বামীর প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারেও দায়িত্বশীল। সম্পর্কের অবনতির পরে কখনো যদি বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটানোর মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তবে তা ভব্যজনোচিত ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই হতে হবে। এমনকি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে যা দেয়া হয়েছিল এমন মালসামগ্রী ফিরিয়ে নিতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন অর্থাৎ সুন্দর তথা ভদ্রভাবেই বিদায় দিতে হবে।

মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি

সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াতে মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নিতে হবে, স্ত্রীকেও ঘ্যানর ঘ্যানর করা বন্ধ রাখতে হবে, সঙ্গীর দেয়া কষ্টও সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে, অতীত জীবনের জন্যে অনুতাপ করা শিখতে হবে, মনের দিক থেকে সতেজ থাকতে  হবে, নিজের হাত ও পা কাজে লাগানো শেখাতে হবে, স্বাস্থ্যরক্ষায় শান্ত ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে হবে, জীবনে অগ্রগতি আনার মতো কর্ম বাড়াতে হবে, ভুল থেকেও শিখতে হবে, সমস্ত কাজ ঠিক সময়মতো করে ফেলতে হবে, জীবনকে সহজভাবে নিতে জানতে হবে, পরিতৃপ্ত মন থাকতে হবে, পরিশ্রম বাড়াতে হবে, রাগ-ক্রোধ মুক্ত থাকতে হবে, অন্যকে ক্ষমা করার মতো কলুষতামুক্ত মন থাকতে হবে, সময় নষ্ট না করে কাজে লাগাতে হবে, সবকিছুই বিশ্বাস করা যাবে না আবার সবকিছুতে সন্দেহ প্রকাশ করাও যাবে না।

ভালোবাসা বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন

দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা বৃদ্ধির কয়েকটি উপায় হচ্ছে: বাড়িতে প্রবেশ করার সময়, বের হবার সময়, সফর থেকে ফিরে আসার সময় বা টেলিফোনে কথা বলার সময় সালাম বিনিময় করা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানানো। উপহার বিনিময় করা। হাসি মুখে সাক্ষাৎ করা ও কথা বলা। গোমড়া মুখ দেখলে ভালো মনও খারাপ হয়ে যায়। পরস্পরের কথা মন দিয়ে শুনা এবং তাতে অনুভূতি প্রকাশ করা। কোনোকিছু ভালো লাগলে তার প্রশংসা করা। যেমন- সুন্দর  পোশাক, সাজ-গোঁজ, বিশেষ কোনো কথা, বিশেষ কোনো কাজ বা চারিত্রিক গুণ ইত্যাদি। ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করা। একজন রাগ করলে অপরজন চুপ থাকা। স্বামী-স্ত্রী যে কেউ হঠাৎ কোনো ভুল করে ফেললে সেটাকে ক্ষমা করে দেয়া এবং বারবার সেটা তার সামনে পেশ করে তাকে বিব্রত না করা। পারিবারিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদি বিষয়ে দুজনে পরামর্শ করা। একে অপরের কাজে যথাসম্ভব সাহায্য করা। অসুখ-বিসুখ, মানসিক অস্থিরতা বা স্ত্রীর গর্ভ ধারণ ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয়ে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। একে অপরকে সুখী করার মানসিকতা নিয়ে আচরণ করা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা। একে অপরের চাওয়া পাওয়ার প্রতি সম্মান ও বিশ্বাস না থাকলে ভালোবাসা কিংবা সুখী হওয়া যায় না। স্বামী মনে রাখবে তার স্ত্রী তার সন্তানদের মা; আর স্ত্রী মনে রাখবে তার স্বামী পরম বন্ধুই শুধু নয় তার সন্তানদের বাবা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার৬৬ নিজের স্ত্রী ক্যানডিস সোয়াইনপল সম্পর্কে বলেন, স্ত্রী আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। বিপদের দিনে আমি স্ত্রীকে পাশে পেয়েছি। সে সত্যিই এক শক্তিশালী নারী।

স্বামীই পরিবারের দায়িত্বশীল

স্বামী স্ত্রীর বন্ধু আবার অভিভাবকও। অর্থোপার্জন, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুদায়িত্ব এবং নারীদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পুরুষের ওপর। তবে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের মানে এই নয় যে জ্ঞান-চরিত্র-কর্মদক্ষতা-যোগ্যতায়ও নারীর ওপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রগুলো নারী-পুরুষ সকলের জন্য অর্জনযোগ্য এবং হযরত মারিয়ম (আ.)৬৭, হযরত খাদিজা (রা.), হযরত আয়েশা (রা.), হযরত আসিয়ার মত নারীরা পুরুষদের জন্যও আদর্শ। অনেক নারীই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়ে যেতে পারে বা প্রকৃতিগতভাবেই অধিকতর যোগ্যতার অধিকারী হতে পারে। কিন্তু তার এ যোগ্যতা সত্ত্বেও পরিবারের দায়িত্বশীল পুরুষই, সংসারের কর্তৃত্ব পুরুষেরই। পরিবারের কর্তা হিসেবে স্ত্রী ও সন্তানদের সুখী রাখার দায়িত্ব স্বামীরও। সংসারের সবার বিষয়ে তার খোঁজ রাখতে হবে। নারীর করা বাড়ির কাজকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে, কারো মন খারাপ করে এমন কিছু করা যাবে না। কারো সংসারের বিষয়ে কোনো কথা থাকলে তা মন দিয়ে শুনুন। পারলে প্রশংসাও করুন। কখনো মিথ্যা বলবেন না। সঙ্গীর পরিবার, আপনজন বা প্রিয় বন্ধুদের সম্পর্কে কোনোরকম সমালোচনা করবেন না। কখনো অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। সঙ্গীর উপস্থিতিতে কখনো তৃতীয় ব্যক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না। কোনো পুরনো বন্ধু বা পরিচিত কেউ সামনে থাকলেও সঙ্গীকে সমানভাবে গুরুত্ব দিন। বাসার কাজ ও সন্তানের যত্ন নিতে পরস্পরকে সহযোগিতা করুন। সঙ্গীর মন জয় করতে মাঝে মাঝে তাকে ফুল ও ছোট ছোট উপহার দিন।

হৃদয়ে প্রবেশ করুন

নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘যদি তুমি কারো সাথে তোমার ভাষায় কথা বল, তার কাছে যেতে পারবে! যদি তার ভাষায় কথা বল, তাহলে তার হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারবে।’ তাই ভালোবাসা ও বিশ্বাসকে ভিত্তি করেই সুখী হতে হবে। একে অপরের চাওয়া পাওয়ার প্রতি সম্মান দিতে হবে। স্ত্রী বা স্বামীর পাশাপাশি পরম বন্ধু হতে হবে। চোখকে শাসন করার মতো শক্তিশালী, সুখী এবং পরিতৃপ্ত  মনই সৌন্দর্যকে ঐশ্বর্যে পরিণত করতে পারে। আত্মসমৃদ্ধির মাধ্যমেই জীবন উপভোগ্য হয়। স্বর্গীয় ফুলের মতো সুন্দর মন, বুদ্ধি ও রুচিবোধ থাকলে সুন্দরভাবে বাঁচা সহজ হয়। মনের সৌন্দর্যই বড় সৌন্দর্য। মন সুন্দর না হলে দরিদ্রকে দান করা যায় না, অভাবগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা যায় না, মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তাতে নিবেদিত হওয়া যায় না।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *