বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ অনিশ্চিত করে দেয় অনেক ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত। ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর সন্তানদের বেড়ে উঠতে হয় অনেকটাই একা একা। পরিবার থেকেই শিশু আচরণজ্ঞান শেখে। সুস্থ সম্পর্ক ছাড়া সুস্থ পরিবার হয় না। আর সুস্থ পরিবার ছাড়া সুস্থ সমাজ হয় না। সম্পর্কের যত্ন না নিলে আমরাও স্বাভাবিকভাবে বাঁচব না, পরিবারও বাঁচবে না।
বেপরোয়া মনোভাব
বেপরোয়া মনোভাব থেকেই বিধি ভাঙার প্রবণতা বাড়ে। যেহেতু বেপরোয়া মনোভাব রুখতে বাড়তি নজরদারি কমে যায়, ফলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরে সহজেই। অসুস্থ মানসিকতা বেড়ে যায়। চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষও। খামখেয়ালীপনা দেখা যায়। অনেক সময় চরম থেকে চরমতর বিরক্তির উদ্রেক করে।
প্রত্যাখ্যান
মনের পাশাপাশি দেহেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জীবনের গতিপথ বদলে যায়। থমকে দাঁড়ায় প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিকতা। জীবনযাত্রার মান অনেকটা নিচে নেমে যায়। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অবনতি ঘটে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়, ঘুমের প্রচণ্ড অবনতি ঘটে, প্রচণ্ড মানসিক অস্বস্তি ও হতাশায় ভুগে। ধ্বংসাত্মক প্রভাব মারাত্মক হয়ে দেখা দেয় প্রত্যখ্যানের ফলে।
ক্রোধ
থাকা খাওয়া-পড়ার অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েন। মানসিক কষ্টটা ভোগ করতে হয় বলে রাগ বাড়ে। ক্রোধ-অভিমানে কাদতে থাকে। ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে লেখাপড়ার দিক থেকে পিছিয়ে পড়েন। অল্প বয়সেই কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত হতে হয়। তালাকের ব্যাপারে খুব রাগ করে এবং পিতা বা মাতাকে দোষ দিতে পারে ।
বিষণ্নতা
রাতেই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন না। ঘুমিয়ে পড়লেও দুঃস্বপ্ন দেখে কান্না দেখে জেগে ওঠেন। যার কাছে থাকেন অন্যের প্রতি একধরনের ব্রীতশ্রদ্ধ মন নিয়ে বড় হন। যে ফেলে চলে গেছে তার প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধ তৈরি হয়। আর্থিক সংকট দেখা দিলে যাকে দায়ী মনে করেন তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পুরোপুরি হারান। নিজের কষ্টের কথা ভুলতে নিজের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করেন। নিজের হাত-পা পর্যন্ত কাটতেও দেখা যায়।
বাবা-মাকে একসাথে পাওয়ার ব্যাকুলতা
স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে তার সব চেয়ে বড় প্রভাব গিয়ে পরে তাদের সন্তানদের ওপর। বাবা-মাকে একসাথে পাওয়ার ব্যাকুলতা সন্তানদের কষ্ট বাড়িয়ে তোলে।
নিন্দা
স্কুলে সবাই অন্যরকম করে দেখেন। কেউ মিশতে চান না। আশ্রয়হীনও হয়ে পড়ে। পরিচিত সবার চোখের আড়ালে চলে যেতে চায়। কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে। জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভুলে যান। সামাজিক ও মানসিক প্রভাব খুবই মারাত্মক হয়।
আনুগত্যে বিভক্তি
মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বা সামাজিকীকরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে থাকা দরকার তা থেকে তারা বঞ্চিত হন। মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়ান। অভিভবকত্ব নিয়ে সঙ্কট, টানাপড়েনে আনুগত্যে বিভক্তি দেখা যায়। সন্তান কার কাছে থাকবে এটা নিয়ে অনেকসময়ই অভিভাবকদের মধ্যে লড়াই দেখা যায়। কিন্তু বাচ্চাটি কোথায় থাকলে তার জন্য মঙ্গলজনক হবে সে বিষয়ে ভাবা হয় না। টানাপড়েনে ছেলেটি কিংবা মেয়েটির ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশ্বস্ততার পরীক্ষা
আচরণগত অসামঞ্জস্য দেখা যায়, পড়শোনায় মনোযোগ হারায়। বিচ্ছেদের বিরূপ প্রভাব পড়ে সন্তান-সন্ততির ওপর। বিচ্ছেদের পর সংশ্লিষ্ট পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিশ্বস্ততার পরীক্ষা দিতে হয়। ফলে তারা ব্যাপক মানসিক উদ্বেগে ভোগে। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা হতচকিত ও ভীত হয়ে পড়ে এবং বিচ্ছেদের জন্য নিজেদের দায়ী ভাবতে শুরু করে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। অকালে ঝরে পড়ে।
পিছিয়ে পড়া
বিয়ে সম্পর্কে একধরনের অনাগ্রহ কাজ করে তাদের মাঝে। ব্রকেন ফ্যামিলির ছেলে-মেয়েদের সমাজও একদম আলাদা করে রাখে। সমাজে সহজ ভাবে নেয়া হয় না তাদের। এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়। তারা সবসময় একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। তারা স্কুলে যায় না। শিশু অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে পিছিয়ে পড়ে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর করে দেয়
বিবাহ বিচ্ছেদের উচ্চ হারের মতো অর্থনৈতিক বিকাশকে ধীর করতে পারে । বিবাহবিচ্ছেদের ফলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। দম্পতিরা যখন তালাকপ্রাপ্ত হয়, তখন আরও আবাসন, শক্তি এবং সংস্থান প্রয়োজন। বিবাহবিচ্ছেদের হার যত বেশি বৃদ্ধি পাবে ততই অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।