প্রকৃত মানুষ কারা? অমানুষ চেনবেন কিভাবে?

মানুষ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং ভারী সরঞ্জাম ব্যবহারে সক্ষম। যোগাযোগের ক্ষেত্রে জটিলতর ভাষার ব্যবহারে পারদর্শী। জটিল মস্তিষ্ক এবং খুবই উন্নত ও সংঘবদ্ধ প্রাণী। বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও শিল্পকলা উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পারদর্শী।

অকৃতজ্ঞ মানুষ চেনার উপায়

জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদের সাহায্য পাওয়াটাকে অধিকার মনে করে। সাহায্যকারীকে প্রাপ্য সম্মান বা ধন্যবাদটুকু দেন না। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন না। সন্তুষ্টি নেই। জীবনের ওপর কখনই খুশি হতে পারে না। চাহিদার কোনো সীমা থাকে না। আরো কিছুর অর্জনের চেষ্টায় মত্ত। যা নিজের কাছে আছে সেটুকুর মূল্যায়ন করেন না। এরা হিংসাপরায়ন। অন্যের প্রাপ্তিগুলো দেখে নিজের জন্য আশা করে। নিজের জীবনকে সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করে। ‘অন্যের কি আছে যা আমার নেই’ এই হিংসায় নিমজ্জিত, তবে ‘আমার যা কিছু অন্যের নেই’ সেদিকে কৃতজ্ঞতা নেই।

এই মানুষগুলোর মেজাজ খিটখিটে। খুব সহজেই রেগে যায়। অনেকদিন আগের ঘটা ঘটনা নিয়েও ক্ষোভ পুষে রাখে। নেতিবাচক প্রত্যাশা করেন। মানসিক কষ্টের শিকার হয়ে বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে ইতিবাচক কিছু আশা করার সাহস হারায়। তাদের চাওয়ার শেষ নেই। অন্যের কাছে কিছু চাইতে কুন্ঠাবোধ করে না। সবসময়ই তাদের কিছু না কিছু প্রয়োজন। একবার কারো জন্য ভালো কিছু করলে তার কাছ থেকে ১০টি উপকার সে নেয়। কোনো কারণে কেউ তাদের উপকার বা সাহায্য করতে না পারলে তাকে ভুলে না, ভুলেও যেতে দেয় না।

অন্যদের ব্যাপারে তারা চিন্তিত নয়। স্বার্থপর। অন্যরা তাদের জন্য কিছু করবে এটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যের কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে সেদিকে তাদের নজর থাকে না। নিজের প্রয়োজন ছাড়া অন্যের জন্য তাদের সময় নেই। এই মানুষগুলো তখনই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তার কিছু একটা দরকার। শুধুই গল্প করার জন্য, একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তারা কারও সঙ্গে দেখা করে না, মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। সবসময় তারা ভুক্তভোগী হওয়ার অভিনয় করে, নিজেদের সবসময়ই ভুক্তভোগী মনে করে। তারাই ভাবে তারাই সবচাইতে কষ্টে আছে, তারা নিজেদের পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল বলে তুলে ধরে, সহানুভূতি বা সমাধানের পথ আমলে নেয় না।

অকৃতজ্ঞ মানুষদের সামলাবেন যেভাবে

অকৃতজ্ঞ মানুষের আচরণ যদি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেক্ষেত্রে তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গলজনক।অকৃতজ্ঞদের সঙ্গে সময় কাটালে জীবন হয়ে উঠে অতিষ্ট।কেউ অকৃতজ্ঞ আচরণ করলে মুখোমুখি বসে নিজের অনুভূতিটা প্রকাশ করে বলতে হবে তার কারণে আপনি কতটা খারাপ বোধ করছেন। সময় ও সুযোগ নিয়ে বসে সুন্দর ধীর স্থির ভাবে বুঝিয়ে বলুন কেমন লাগছে তার সেসব আচরণে। অভিযোগ বা দোষ না দিয়ে কাজের মূল্য দিতে বলুন, যাতে কিনে নিয়ে আসছে মনে না করে। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিন।

বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কোনো ব্যবহারের কারণে সে এরকম অকৃতজ্ঞ মনোভাব দেখাচ্ছে কিনা।ঠাণ্ডা মাথায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পর্যালোচনা করুন। অকৃতজ্ঞ আচরণের কোনো বিশেষ কারণ আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। বোঝার চেষ্টা করুন তিনি কি এরকমই নাকি বিষয়টা সাময়িক।পছন্দ না করলে বা ‘কেয়ার’ না করলে একটা সীমারেখা তৈরি করুন কী রকম ব্যবহার তার সঙ্গে করবেন, তার জন্য কী করবেন আর কী করবেন না। কেউ সবসময় অকৃতজ্ঞ আচরণ করেই গেলে এবং নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কোনো সমাধান না হলে ওই মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের পুর্নমূল্যায়ন করুন।তার সঙ্গে আর একক সময় না কাটানো বা আর সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তার জীবনে আপনি বা আপনার জীবনে সে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা ঠিক করুন। নিজের প্রতি সৎ থাকলে, অন্যদের সঙ্গেও সদাচরণ করলে জীবন অনেক সুন্দর হয়।

ভালো মানুষ আসলে কেমন

একজন ভালো মানুষ সহজেই অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারে। সবার প্রতি দয়াশীল এবং ভদ্র স্বভাবের হয়। অন্যরা তাকে নিয়ে কী ভাবছে সেই বিষয়ে সে সতর্ক। সে নিজের আবেগ অনুভূতিকে সবার কাছে প্রকাশ করে না। সে সহজে বিশ্বাস করে। নতুন কাজের প্রতি কৌতূহলী। কোনো কাজ সফলভাবে করবে মনস্থির করলে ঠিক তা করে। স্বাধীন মনের বুদ্ধিমান মানুষ। কারোর খারাপ চিন্তা করে না। সব কাজেরই উদ্দেশ্য ভালো থাকে।

কারোর সাহায্য ছাড়াই নিজের যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করে। সে অনেক সৎ এবং কারোর সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রাখতে চায় না। পরিচিত সবাই তার কাছে পরামর্শ চায় এবং কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ তারা জানে সে বিশ্বস্ত।  সে নিজেকে কেয়ার করে, এবং পরিবার ও দেশকেও ভালোবাসে। দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতেও এগিয়ে আসে। কখনো মা-বাবাকে ছাড়ে না। বিলাসবহুল জীবনে হারিয়ে যাবে। অতীত আর অতীতের স্মৃতি ভুলে না। কঠোর পরিশ্রম করে। পরের জন্যেও ত্যাগ স্বীকার করে।

ভাল মানুষ মানুষের উপকারের জন্য সেবামূলক কাজ করেন। বাবা মায়ের খেদমত করেন। উন্নত চরিত্রের অধিকারি, ধৈর্যশীল ব্যক্তিত্ব। মিথ্যা পরিহার করেন। সত্য কথা বলেন। অবৈধ কোনো সম্পদ অর্জনের জন্য বিপথে পা বাড়ান না। মিতব্যায়ী। অপরের কল্যাণে নিয়োজিত থাকেন। হিংসা করেন না। অহংকারী হন না। কারো উপর কোনো প্রকার জুলুম নির্যাতন করেন না।

বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায়

বুদ্ধিমান ব্যক্তির হৃদয় সাধারণত অত্যন্ত কোমল। বিশ্বাস নয়, যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে কথা বলেন। কোনো বিষয় জানা না থাকলে ‘জানি না’ বলেন। অযথা পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের চেষ্টা করেন না।অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।প্রশ্ন করেন। উদার হৃদয়ের হয়ে থাকেন।বুদ্ধিমানরা ছবি তোলা বা বই পড়ার মতো কোনো না কোনো নেশায় আসক্ত থাকে। এরা হৈ হৈল্লোড় এর মধ্যেও প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগী থাকতে পারেন।শেখার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। অপ্রয়োজনীয় কোন তথ্য মাথায় রাখেন না। রাত জেগে চিন্তা-ভাবনা-কাজে লেগে থাকার অভ্যাস থাকে। সর্বদা বিভিন্ন বিষয়ে নিজের জ্ঞানবৃদ্ধির চেষ্টা করেন।

মুখ দেখে মানুষ চেনার উপায়

মুখই মনের দর্পন। মানুষের মুখের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে বোঝা যায় তার চরিত্র। মুখে কিছু পরিবর্তন দেখে বুঝে নেওয়া যায় মস্তিষ্কে কি চলছে। মুখের ভাবভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয় বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। যাদের মুখ লম্বার তুলনায় ৬০ শতাংশের কম চওড়া তারা পরিস্থিতি বিশেষে সচেতন হন। আবার যাঁদের মুখ লম্বার তুলনায় অন্তত ৭০ শতাংশ চওড়া তাদের মধ্যে জন্মগতভাবেই আত্মবিশ্বাস থাকে। যে ব্যক্তির ভ্রু চোখ থেকে যত উপরে তার আত্মকেন্দ্রিকতা তত বেশি; সে নিজেকে তত বেশি ব্যক্তিগত রাখতে পছন্দ করে। দুটি ভ্রুয়ের মধ্যে যত বেশি তফাত থাকে তার সহ্য ক্ষমতা তত বেশি।উপরের ঠোঁট এবং নাকের দূরত্ব যার যত বেশি তার মধ্যে হাস্যরসও তত বেশি। উপরের ঠোঁট যত বেশি মোটা হয় তার কথায় ও আচরণে ততই ভদ্রতা এবং মহত্ব থাকে।যাদের চোখের পাতা যত মোটা, স্পষ্ট এবং কোঁকড়ানো তাদের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মক মনোভাব তত বেশি। যাদের চোখের পাতায় কোনও ভাঁজ নেই তারা তত বেশি সিদ্ধান্তগ্রহনকারী। চোখের মণির রঙে যার গভীরতা বেশি তার আকর্ষণ ক্ষমতাও তত বেশি।

মানুষ চিনতে ওমরের (রা.) পদ্ধতি

একবার এক লোক এসে ওমরের (রা.) কাছে নিজের ব্যাপারে বলতে লাগলো। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি তোমাকে চিনি না। আমি তোমাকে না চিনলে তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই যদিও। তুমি কি এমন কাউকে আনতে পারো যে তোমাকে চেনে? তখন উপস্থিত লোকদের একজন হাত তুলে বললো, ‘আমি তাকে চিনি’। ওমর (রা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই লোকের ব্যাপারে তুমি কি জানো?’ – ‘আমি তার ন্যায়পরায়ণতা এবং সদগুণ সম্পর্কে জানি’।

ওমর (রা.) বললেন, ‘তুমি কি তার নিকট প্রতিবেশি হও যে তার দিন এবং রাতের কর্মকান্ড সম্পর্কে তুমি অবহিত?’ লোকটা বললো, ‘না। আমি তার প্রতিবেশি নই’।তখন ওমর (রা.) বললেন, ‘তাহলে, তুমি কি তার সাথে কোন ব্যবসায়িক কিংবা অর্থনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলে যার ফলে তুমি তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অবগত?’ লোকটা বললো, ‘না। তার সাথে এরকম কোন সম্পর্কে আমি কখনো জড়াইনি’। ওমর (রা.) বললেন, ‘কিংবা, তুমি কি তার সাথে কোন সফর করেছো যার ফলে তুমি তার সৎ চরিত্র সম্পর্কে অবহিত?’ লোকটা বললো, ‘না। তার সাথে আমি কখনোই সফর করিনি’। এবার ওমর (রা.) বললেন, ‘তাহলে তুমি লোকটাকে আসলে চিনোই না’।

উপরের এই ঘটনা থেকে ‘মানুষ’ চেনার তিনটা উপায় পাওয়া যায়। ১. প্রতিবেশি হলে। ২. আর্থিক লেনদেন করলে।৩. সফর করলে।

আবেগহীন মানুষ চেনার উপায়

আবেগহীন ব্যক্তি নিজের অনুভূতির প্রকাশ করতে পারে না। তারা নিজেকে আবেগময় মুহূর্ত থেকে দূরে রাখে। একজন আবেগহীন ব্যক্তির অন্যের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া কষ্টসাধ্য।আবেগহীন ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক  রাখে না, সম্পর্কে সিরিয়াস নন। সিরিয়াস কথোপকথনে থাকেন না। সিরিয়াস কোনো প্রসঙ্গ আনার চেষ্টা করলেও বিষয়টিকে পরিবর্তন করতে চায়। খুব অল্পই মায়ার প্রকাশ করতে পারে। তাদের স্পর্শ, প্রশংসা বা ঘনিষ্ঠতা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানে না। স্নেহের প্রকাশ এড়ানোর চেষ্টা করে।

তারা কল-মেসেজ উপেক্ষা করে এবং ভাসা ভাসা সম্পর্ক রাখার জন্য সবকিছু করে ইচ্ছাকৃতভাবে। দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করে, আসল সংযোগ তৈরি করতে চায় না। সঙ্গীকেও গুরুত্ব দেন না। দেখা করার কথা থাকলে দেরিতে উপস্থিত হওয়াকেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবেন। একসঙ্গে যেন বেশি সময় কাটাতে না হয় সেজন্য কোনো একটি উপায়ও আবিষ্কার করবে। আবেগহীন ব্যক্তি মনে করে, আবেগ প্রকাশ করে এমন লোকদের বিচার করা এবং সমালোচনা করা সহজ। তারা মানসিকভাবে নেতিবাচক হয়। অনুভূতি দেখালে স্বস্তিবোধ করেন না। সুস্থ সম্পর্কের জন্য দু’জনেরই সমান প্রচেষ্টা কখনোই করবে না।

মানুষকে বুঝতে কী করবেন?

মানুষটির আচরণের বেসিক মডেল খুঁজে বের করুন। কেউ হয়ত কথা বলার সময় ফ্লোরের দিকে তাকায়। কেউ বা হাত ক্রস করে রাখে, কেউ মাথায় বার বার হাত দেয়, কেউ নখ কাটে, কেউ আঙ্গুল দিয়ে ফ্লোরে আঁকতে শুরু করে। প্রতিটা মানুষেরই এরকম কিছু শারীরিক আচরণ আছে যা সে সবসময় করে। তার এই শারীরিক আচরণগুলো কি স্বাভাবিক, নাকি সে এগুলো বিশেষ বিশেষ অবস্থায় করে! অভ্যাসবশত করে নাকি এর পেছনে রাগ, বিরক্তি লুকানোর কৌশল কাজ করে!

ছলগুলো ধরার চেষ্টা করুন।প্রকৃত অনুভূতি এবং প্রকাশের মাঝে পার্থক্য খুঁজে বের করুন। যেমন, এমন হতে পারে যে একজন মানুষ যখন নার্ভাস বোধ করেন তখন আসল অনুভূতি ঢাকতে তিনি বার বার কেশে গলা পরিষ্কার করেন। কেউ হয়ত কথা বলার সময় অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু গোপন করতে চাইছেন কিনা বেঝার চেষ্টা করুন।অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করুন। একই ধরনের অঙ্গভঙ্গির পুনরাবৃত্তি ঘটলে মনোযোগ দিন তার দিকে। আসলে তার মনে কি চলছে বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষটি গলা পরিষ্কার করার জন্য বার বার কাশলে, একই সাথে পা নাড়ালে, মাথা চুলকালে সতর্ক হওয়া উচিৎ।

তুলনামূলক আচরণ খেয়াল করুন, মানুষটি যেমন আচরণ আপনার সাথে করছেন তেমন কি তিনি সবার সাথেই করছেন? রুমের অন্যান্য মানুষের সাথে কথা বলার সময়ও কি তিনি একই রকম থাকছেন? তাদের বসার ধরণ, বডি ল্যাংগুয়েজ সহ সব কিছুই খেয়াল করুন। মনে থেকেই খুশী হয়ে হাসলে মুখের, গালের, চোখের মাসল প্রসারিত হয়। পছন্দের মানুষের দিকে তাকালে মুখের মাসল শিথিল থাকা মানসিক অবস্থার সাথে শরীরের সরাসরি সংযোগ। মানুষটি ভ্রু কুঁচকে থাকলে বা মুখ শক্ত করে থাকলে বুঝবেন মুখে যা প্রকাশ করছেন আসলে তা ভাবছেন না।

কে কেমন মানুষ চেনার ট্রিক্স

মানুষ চেনার এমন ট্রিক্স আছে যেগুলো খেয়াল করলে যেকোনো মানুষের চরিত্র বুঝতে পারবেন সহজেই। যাদের হাতের তালু খুব চওড়া হয়, তারা যেকোনো সমস্যাকে সামনে থেকে ফেস করতেই বেশি পছন্দ করেন। তবে নিজের মনের কথা বলতে এরা একেবারেই অপারগ হন। যাদের হাতের তালু গোলাকার হয় এবং আঙুল হয় ছোট ছোট তারা খুব সাহসী হন, অচেনা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেও ভালোবাসেন। যাদের হাতের তালু হয় আয়তক্ষেত্রাকার, তারা বেজায় বাস্তববোধ সম্পন্ন হন, যেকোনো বিষয়কে পরখ করে গ্রহণ করতেই বেশি পছন্দ করেন! আর যাদের হাতের আঙুল খুব লম্বা লম্বা হয় এবং তালু হয় ছোট, তারা মূলত শৈল্পিক মনের অধিকারী হয়ে থাকেন।

কে কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করে সেদিকে নজর রেখেও ব্যক্তির মানসিক গঠন সম্পর্কে অনেকাংশেই ধারণা করা সম্ভব। যারা ক্ল্যাসিকাল বই পড়তে পছন্দ করেন, তারা সাধারণ যেকোনো মানুষকে খুব ভেতর থেকে জানার চেষ্টা করেন। ডে ড্রিমাররা ফ্যান্টাসি কেন্দ্রিক বই পড়তে ও স্বপ্নের জগতে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। ইতিহাস সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা যেকোনো বিষয়ে খুঁটিয়ে জানতে খুব ভালোবাসেন। ভূতের বই পড়তে পছন্দকারীরা অ্যাড্রেনালিন রাশ খুব ভালোবাসেন, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়ও হয়ে থাকেন! যারা মানসিকভাবে খুব অস্থির অবস্থায় থাকেন, তারাই মূলত বারে বারে মোবাইল চেক করে থাকেন। আলাপ করার সময় চোখে চোখ রেখে কথা না বলার মানে, কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন অথবা মানসিকভাবে একেবারেই ভালো অবস্থায় নেই। আত্মবিশ্বাস কমে গেছে! এদিকে যারা সবসময় চোখে চোখ মিলিয়ে কথা বলেন, তারা খুব আত্মবিশ্বাসী হন।

যারা খুব শক্তভাবে হাত ধরে হ্যান্ডশেক করেন, তারা খুব স্ট্রং পার্সোনালিটির হন। যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন, তারা কোনো মতে হাতের তালু পাকড়ে করমর্দন সারার চেষ্টা করেন! যারা খুব হালকা চাপ দিয়ে খুব সুন্দরভাবে হাত মেলান, তারা মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন, নিজের মনের কথা খুলে বলতে এদের জুড়ি মেলা ভার।

মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝা কতটা কঠিন?

মানুষের মনস্তত্ত্ব খুবই জটিল। আলাপে খুব মিষ্টভাষী হলে বা অন্যদের আগ বাড়িয়ে সাহায্য করলেই বিশ্বাস করা যায় না। অন্যের গোপন কথাকে বিকৃত করে বাকিদের কাছে রটানো, তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধানোর ফলে মুখোশ খুলতে থাকে। মিথ্যাবাদিরা দুমুখো সাপ। অনেকেই সামনে পছন্দের কথা বলবে, আবার শত্রুর কাছে তার হয়ে কথা বলবে। কাদের সাথে মিশছে সেটাও খেয়াল রাখলে মানুষটি ধারণা করা যায়। উঠতে বসতে অকারণে যে মিথ্যে বলছে, তাকে বন্ধুর স্থান দেওয়া নিজের মুর্খামি।

কেউ বললেই বিশ্বাস না করে ভালো করে যাচাই করে নেবেন কাজ দেখে। সেটা চাকরি দেয়ার সময় হোক, বা কাউকে ভালোবাসার সময়। স্রেফ মুখে ভালোবাসার কথা বলে যাওয়াদের সংখ্যাই বেশি। কিছু মানুষ আছে যারা মুখে বলে কম, নিঃশব্দ দায়বদ্ধতার সাথে কাজের মধ্যে প্রকাশ করতে চায় বেশি।

অনেকে অপরিচিত মানুষদেরও সাহায্য করেন। সবাইকে সম্মান করেন।ভুলগুলো অত‍্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দেন। নিজের ভুল স্বীকার করার ক্ষমতা রাখেন। নিজেকে শুধরে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।পরিবারকে প্রাধান্য দেন।অপরের কথাকে গুরুত্ব দেন।কাজে উৎসাহিত করেন।পরনিন্দা পরচর্চা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। সামাজিক মূল্যবোধ অনেক। শিক্ষায়, অর্থে, প্রতিপত্তিতে নিজের থেকে কম যোগ্যতা সম্পন্নদের সাথেও অবাধে মেলামেশা করতে পারেন।

স্বার্থপর মানুষকে কিভাবে চিনবেন?

প্রতিটা মানুষই আলাদা, আলাদা তাদের বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনা, নিজস্বতা, স্বকীয়তা, জীবন-যাপন ইত্যাদি। আমরা মানুষকে চিনি কোন একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অথবা তাঁর সাথে মিশতে গিয়ে অর্থাৎ সেই মানুষটার কাছে গিয়ে। দূর থেকে তো সবই সুন্দর লাগে, কেবল কাছে গেলেই তার স্বচ্ছতা হারায়। আর মানুষ চেনা যত কঠিন, নিজেকে চেনা তার থেকেও কঠিন। নিজেকে চিনতে পারলে অন্যকেও চিনতে পারাটা সহজ হয়। নিজের দোষ-গুন, বিচার-বুদ্ধি সম্পর্কে পরিষ্কার থাকেন তবে অন্যকেও তাড়াতাড়িই চিনতে পারার কথা।

অনেকেই বলেন- উনি এমন একটা কাজ করেছে আমি তার জায়গায় থাকলে এই কাজটা করতাম না। পরিস্থিতি মোকাবেলা না করেই বিচারটা করে দিলেন? আত্মবিশ্বাসের জোরে এভাবে বললে বা ভাবলেও ঘটনা ঘটলেই কেবল বোঝা যায়- কতটা কঠিন আর কতটা সহজ। কতটা ভালো বা মন্দ। বলা যত সহজ, করা তত কঠিন। আজকে যাকে ভালো মনে হচ্ছে- কাল সে ভালো নাও থাকতে পারে। আবার আজকে যাকে খারাপ ভাবছেন কোনো একদিন তারই এমন কোনো কাজে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন।

মানুষ চেনার মনোবৈজ্ঞানিক টিপস্

মানুষকে চেনার দুইটি প্রক্রিয়া রয়েছে। একটি হচ্ছে পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা (ধোকা খাওয়া, খারাপ অভিজ্ঞতা) থেকে ধারণা নিয়ে প্রথম দেখাতেই তার সম্পর্কে নিজের মধ্যে তাড়াতাড়ি এক ধরনের ধারনা সেট করে নেওয়া। আরেকটি হচ্ছে- একজন মানুষের সাথে দীর্ঘদিন থেকে তার সাথে কাজ করে বা তার সাথে লেনদেন করে ধীরে ধীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার আসল রূপ সম্পর্কে জানা। একজন মানুষ সম্পর্কে জানতে হলে তার সাথে ছোট ছোট ডিল করুন, এবং সেগুলো সে কতটুকু যত্ন সহকারে পালন করতেছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। টাকা ধার দিয়ে নির্ধারিত দিনে টাকা ফেরত চাইলে তাকে চিনবেন। ভালোবাসা হয়ে গেলে সারাজীবন তার সাথে থাকতে চাইলে তাকে চিনবেন। লেনদেনের সম্পর্ক হলে মানুষ চেনবেন। অসুস্থ হলে পাশে পেতে চাইলে বা সাহায্য চাইলে চিনে যাবেন। কিছু না দিয়ে কিছু চেয়ে দেখুন কিংবা কাউকে অনেক কিছু দেন, পরীক্ষা করার উদ্দ্যেশ্যেই দেয়া বন্ধ করে চুপচাপ দেখে যান, তার স্বরূপ প্রকাশ পাবে। নিজের কিছু গুণ থাকা লাগে, ধৈর্য থাকা লাগে, টাকা পয়সা থাকা লাগে, নইলে প্রকৃতি তার নিজেস্ব নিয়মে সব কিছু আপনাকে চিনিয়ে দিবে।

বোকা ও নির্বোধ চেনার উপায়

কখনো পরাজয় স্বীকার করে না। ‍যুক্তিতে হারতে চায় না। অহংকার করে কথা বলে। নিজের ক্ষমতা দেখাতে চেষ্টা করে। সব বিষয়ে পারদর্শিতা দেখায়। সবাইকে সন্দেহ করে। সামান্যতেই রেগে যায় এবং আঘাত করার চেষ্টা করে। সত্য মিথ্যা বুঝতে চায় না। অন্যের সম্মান দেখানোকে দুর্বলতা ভাবে। কথায় কথায় তিরস্কার করে। মানুষের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। নিজের স্বার্থ আগে দেখে। যে কোন প্রতিভাকে ছোট করে দেখে। নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করে।

বাজে মানুষ চেনার জন্য সতর্ক চিহ্ন

বাজে ব্যক্তিরা ধান্দাবাজ হয়। অন্যের সর্বনাশ করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে খুব স্বাভাবিক থাকতে পারে। এরা কথাবার্তা দিয়ে আপনাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেবে এবং আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করবে।এরা বিশ্বাস ঘাতক। এরা আপনার কষ্টকে কোনো মূল্য দেবে না। এরা ধারণা করে এই পৃথিবীতে তারা বিশেষ কিছু এবং পৃথিবীর সব মানুষকে যথেচ্ছা ব্যবহার করার অধিকার তাদের আছে।এরা নিজের প্রতি অন্যকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। এরা মিথ্যাবাদী।এরা দৈত সত্ত্বায় বসবাস করে। এরা সত্য কে আড়াল করে। আপনার সময়ের কোনো মূল্য এদের কাছে নাই। এরা কখনো অনুশোচনায় ভোগে না। এরা অপরাধ স্বীকার করে না। শুধু সত্য নয়, এরা তথ্যও গোপন করে। এরা দায়িত্ব জ্ঞানহীন, মানুষ কে ব্যবহার করে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দেয়, সন্ধান করে নতুন কারও ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের।

হিংসা করে কারা কীভাবে বুঝবেন

চোখের দিকে তাকান! চোখের মণিতে মেকআপ করা যায় না। চোখ থাকে মেকআপহীন। তাই কে হিংসা করে, সহজেই জানা যায় চোখে চোখ রেখে। গভীরে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে অনেক কিছু ধরা পড়বে। লক্ষ করুন কথায় কোনো খোঁচা আছে কি না। চোখ যদি হয় মনের আয়না, শব্দ কিন্তু মনের ভাব। সাফল্যে দেখেন কেউ একটু বেঁকা সুরে কিছু বললে সতর্ক য়ে যান। এই ব্যক্তি কিন্তু হিংসা করে আপনাকে। পরনিন্দা, পরচর্চা করে, এমন ব্যক্তিদের থেকে সাবধান। অন্যের সমালোচনা করে এমন ব্যক্তির থেকে দূরে থাকুন। এরা কারও ভালো সহ্য করতে পারে না। ভালো বন্ধু হতে পারে না। সবাইকে ঈর্ষা করে। সামনে মিষ্টি ব্যবহার করলেও আড়ালে নিন্দেই করবে।

আত্মীয়স্বজনের একাংশ থেকে সাবধান। প্রত্যেক পরিবারেই এমন কয়েকজন সদস্য থাকে, যারা অন্যদের ভালো সহ্য করতে পারেন না। এরা চায় না বাকিরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। এরা কখনওই সরাসরি বিবাদে যায় না বরং হিংসা করে দূর থেকে। অনেক বন্ধুর মধ্যেই অ-বন্ধুসুলভ আচরণ দেখা যায়। যে বন্ধু নিজে না খেয়ে জোর করে বন্ধুকে মদ্যপান করায়, ভুল পথে চালিত করে, হাতে নেশার দ্রব্য তুলে দেয়, সে কখনওই প্রকৃত বন্ধু হয় না।

লোভীদেরকে কীভাবে চিনবেন?

লোভী মানুষগুলোকে চিনে রাখাটা ভীষণ জরুরী। লোভীদেরকে একটু সামান্য লোভ দেখিয়ে পরীক্ষা করুন এবং দেখুন সে সেই প্রস্তাব পেয়ে কি রকম আচরণ করে। লোভী মানুষ সামান্য লোভের সন্ধান পেলে সেটি নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়, স্বার্থের কারণে ভালো আচরণ করে, অন্যের কোনো ভুলের কারণে সামান্য ক্ষতিও হলেও আচরণ সম্পূর্ণরূপে বদলে ফেলে।

মিষ্টিভাষী হয়ে থাকেন। কথায় মিষ্টতা থাকে। মিষ্টি -ভালো কথা বলে মানুষকে ভুলিয়ে থাকেন, মন যোগানোর চেষ্টা করেন। ভালো ব্যবহার করেও এরা বিপদে ফেলে দিতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। অনেক সুন্দর করে কথা বলেও  বড় ক্ষতি করেন। এদের কোনো প্রকৃত বন্ধু নেই। এরা শুধু প্রয়োজনেই মানুষের সাথে মিশে থাকেন। প্রয়োজন শেষ হলে সঙ্গ ছেড়ে দেন। এক বন্ধুর থেকে আরেক বন্ধুর কাছে সুযোগ বেশি পেলে তারা বন্ধুত্ব নষ্ট করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

 

 

 

 

 

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *