পারিবারিক সমস্যার সমাধান দ্রুত না করার ফলে সৃষ্টি হয় পারিবারিক কলহ, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আর বাড়ে দূরত্ব। যার প্রভাব পড়ে কোমলমতি শিশুদের ওপর। এই সমস্যা সমাধান করতে বাচ্চাদের বাইরে রেখে পারিবারিক মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা, বুঝে-শুনে কথা বলা, কারো কথা বলার মাঝে কথা না বলা, তাড়াহুড়া না করে ধৈর্যসহ মোকাবিলা করা, সামনাসামনি কথা বলে সত্য জানা যেতে পারে। পুরনো সমস্যার সাথে বর্তমান সমস্যার সম্পর্ক থাকলে নির্ভরযোগ্য-বিশ্বাসযোগ্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করুন।
পারিবারিক সমস্যার সমাধান যেভাবে
সমস্যাকে চিহ্নিত করা
পারিবারিক সমস্যা মিটাতে প্রথমে সমস্যাকে চিহ্নিত করুন। এরপর সম্ভাব্য সমাধানগুলো খুঁজে বের করে লিখুন। যতগুলো সমাধানের পথ খোলা আছে সেগুলোর র্যাঙ্কিং করে নিন। নিরাপদে দ্রুত সমাধানে পৌঁছে দেবে, এমন পথটা বেছে নিন। নেতিবাচক চিন্তা না করে সমাধানে পৌঁছাতে নিজে আগে এগিয়ে আসুন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনায় বলুন এই সমস্যা পরিবারের কোন কোন সম্ভাবনা নষ্ট করে দিচ্ছে। নিজের দোষগুলো এক বাক্যে স্বীকার করে নিন। তারপর তাদের বলতে দিলে সঠিক সিদ্ধান্ত বের হবে এবং সমন্বিত সিদ্ধান্ত মেনে নিন। স্বামী-স্ত্রী বা অভিভাবকদের সঙ্গে সন্তানদের অথবা পরিবারের অন্যান্য সম্পর্কগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের উন্নতি করার মাধ্যমে সমস্যা কমে আসে। পরিবারের ভিতরের বিবাদের কারণ সন্ধান করে তা থেকে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকত্বের সমস্যা, পরিবারের বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ে ও শিশুদের আচরণগত সমস্যা, পরিবারের প্রিয়জনের মানসিক অসুস্থতা দূর করতে এবং কিভাবে তার সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলা উচিত সে বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন।
ভালোবাসার উষ্ণতা ধরে রাখা
বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে- পরকীয়া, সম্পর্কে অবনতি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণা, মাদকাসক্তি ও যৌন সমস্যা ইত্যাদি। দাম্পত্য জীবনে মতবিরোধ ও মনোমালিন্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তাকে বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। সম্পর্কে অবনতি যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কেউ কারো সাথে কথা বলছে না তাহলে সমস্যা জটিলতর হয়ে ক্রমান্বয়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। দৈহিকভাবে অত্যাচার, শারীরিক মারপিট ও রুক্ষ আচরণ অথবা মানসিকভাবে নির্যাতন তথা অপমান, হেয়প্রতিপন্ন, গালাগালি করা ইত্যাদি বড়ই বিপজ্জনক আচরণ। জীবনে একঘেয়েমি ও বিরক্তি ছড়িয়ে পড়া সংসার ভাঙ্গার একটি কারণ।
দীর্ঘদিন ঘর সংসার করার পরও যদি দেখা যায়, ভালোবাসার উষ্ণতা শীতল হয়ে পড়েছে এবং পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে তাহলে পরিণতিতে তা তালাকের দিকে গড়ায়। দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণা যাতে চলে না আসে সেজন্য পারস্পরিক ভালোবাসার উষ্ণতা ধরে রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। মাদকাসক্তি দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংসের অতল তলে নিয়ে যায়। এর ধ্বংসাত্মক অনেক দিকের মধ্যে আছে-প্রচুর অর্থ অপচয়, অপর পক্ষের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন, শারীরিক নির্যাতন, সন্দেহজনক অবৈধ সম্পর্ক আর পরিশেষে দাম্পত্য জীবন ধ্বংস।
সুমধুর দাম্পত্য জীবনের জন্য সুস্থ যৌনমিলন অপরিহার্য। যখন স্বামী স্ত্রী পরিতৃপ্ত যৌন মিলনে ব্যর্থ হয় তথা যৌন সমস্যা দেখা দেয় তখন তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে, ঘুমের ঘর থেকেই দাম্পত্য জীবন সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। তাই পরিবারের সদস্যদের যৌন সম্পর্কগুলো বোঝা, বিয়ের পর দম্পতিদের পারিবারিক ভূমিকার বদল, ঘনিষ্ঠতাজনিত সমস্যা, দুজনের মধ্যে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে তোলা, মাঝবয়সী দম্পতিদের মধ্যকার শূন্যতার বোধজনিত সমস্যার (এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম) সমাধান জরুরি।
ভিতরের জটিলতাগুলো স্পষ্ট হওয়া
পরিবারের ভিতরের জটিলতাগুলো স্পষ্ট হলে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো যায়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মনস্তাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের সমস্যার কারণ বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণ খোঁজা কিংবা পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক যোগাযোগের ধরন বোঝা যেতে পারে। একটা পরিবারের পূর্ণাঙ্গ ধারণা বা গুরুত্ব সীমারেখা, তার বংশপরম্পরাগত অবস্থান, সিদ্ধান্ত নেয়াসহ কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। সীমারেখা বলতে বোঝায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গড়ে ওঠা পারস্পরিক বিধিনিষেধ। এই সীমারেখা থাকতে পারে পরিবারের অভিভাবকের, যারা একরকম পারিবারিক নিয়মকানুন গড়ে তোলে, তাদের সঙ্গে ওই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম বা পরিবারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে। বংশপরম্পরাগত অবস্থান হলো পরিবার তথা পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার বিন্যাস, যার প্রভাব সদস্যদের পারস্পরিক যোগাযোগ এবং কার্যকলাপের উপরেও পড়ে। সমস্যার চরিত্রের উপর সমাধানের রকমফের নির্ভর করে। যদি পরিবারের মধ্যে সদস্যদের চিন্তা-ভাবনা বা মতামতের সহাবস্থান না থাকে এবং পারস্পরিক যোগাযোগের অভাব থাকে তাহলে পারিবারিক সেসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
বিরক্তিকর সমস্যা এড়ানো
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপে দাম্পত্য সমস্যার আবির্ভাব ঘটে। দাম্পত্য সমস্যা মূলত সৃষ্টি হয় একজনের প্রয়োজনের চাহিদার সাথে অন্যজনের প্রয়োজনের চাহিদার মধ্যে সংঘর্ষ থেকে। দাম্পত্য সমস্যার কারণ হলো-ব্যক্তি নিজে, বিবাহের মূল উপাদানে এবং বাইরের বা পারিপার্শ্বিকতায়।
কিছু মৌলিক সমস্যা, কিছু অ-মৌলিক সমস্যা ও কিছু অযৌক্তিক বা বিরক্তিকর সমস্যা দেখা দেয়। অনেক দম্পতিরই পারিবারিক বিবাদে বিয়ে টিকিয়ে রাখা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে দেখা যায়। এ সময় বিবাদ মেটাতে সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেন পিতা-মাতা বা অনুরূপ মুরব্বিরা। কিন্তু সন্তান নিলে সমস্যা কমার বদলে বেড়েও যেতে পারে। সমস্যার ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসার অভাব, বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার অভাব, পর-পুরুষ পর-নারীতে আসক্তি, সম্পর্কে বহুগামিতা, ব্যভিচার, যৌন সম্পর্কে অক্ষমতা-স্বার্থপরতা ও অবিবেচক হওয়া, পুরুষত্বহীনতা, স্বামী স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, যৌন মিলনে অনীহা ও এড়িয়ে চলা, যৌন বিকৃতি ও সমকামিতা, পাশবিকতা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, একেবারেই ভুল সঙ্গী নির্বাচন, মানসিক বিকারগ্রস্থতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভবঘুরে, ব্যক্তিত্বে দুর্বলতা, অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব হওয়া, অতিরিক্ত বহির্মুখী হওয়া, দুর্বল ব্যক্তিত্ব, পরনির্ভরশীলতা, সন্দেহবাতিকতা, কর্তব্য পালনে উদাসীনতা, অবহেলা, প্রতারণা, অসততা, নেশাসক্তি।
এছাড়া পিতা-মাতা, ভাই-বোন, শ^শুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ-ননাশ তথা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও বাড়াবাড়িও দেখা যায়। কোনো গুজবে বিশ্বাস করা, সময় ও সমর্থন না দেয়া, টাকা পয়সা বেতন-ভাতার অস্বচ্ছতা, পেশাগত গোপনীয়তা, অন্যের পক্ষপাতিত্ব মনোভাব, অন্যের অতিরিক্ত আবেগ-সোহাগ, ঈর্ষা-প্রতিহিংসা, মদ-নেশা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, অভাব-অর্থ সংকট-বেকারত্ব ও চাকরিচ্যুতি, অসৎ ব্যবসা, মোবাইল, ফেসবুক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অসততা, মিথ্যাচার, অতীত টেনে আনা, বশ করা, চাকরির তাগিদে দূরে অবস্থানও দাম্পত্য সমস্যার পারিপার্শ্বিক কারণ হয়ে আসে।
ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব নিরসন
দাম্পত্য সমস্যার আরো কারণ হচ্ছে- শারীরিক দীর্ঘকালীন রোগ ব্যাধি-দুর্বলতা-অসুস্থতা-অক্ষমতা, ছোঁয়াছে রোগ, ট্রমাটিক, সাইকিক, নিয়োরটিক, সিজোফ্রেনিক, এলকোহলিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। ঘরকোনা, চাপা স্বভাব, হীনমন্য, সন্দেহবাটিক, সংকীর্ণচেতা, নিঃসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ সম্পন্ন অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব হওয়া কিংবা অতিরিক্ত হৈহুল্লুড় স্বভাব, সময় জ্ঞানের অভাব, বাইরে বাইরে সময় কাটানো, বন্ধু সার্কেল নিয়ে আড্ডা মারা, দায়িত্বজ্ঞানহীন বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব হওয়া।
সিদ্ধান্তহীনতা, দায়িত্ব নেওয়ার অক্ষমতা, অন্যের কথায় কান দেওয়া, গোপনীয়তা রক্ষা না করার দুর্বলতা, মেরুদণ্ডহীন হীনমন্য, আস্থার অভাব, খুঁতখঁতে স্বভাব, সবকিছুতে সামান্য কিছুতে উত্তেজনা-রাগারাগি, অধৈর্য ও তর্কাতর্কি, নিজস্বতা রক্ষা করার দুর্বল মানসিকতা ও সন্দেহপ্রবণ দুর্বল ব্যক্তিত্ব হওয়া। এছাড়া আত্ম-অহমিকা, ব্যক্তিমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা, দমনীয় ভাব, নমনীয়তার অভাব, কর্তৃত্বপরায়ণতা, অতিরিক্ত মেজাজ ও আবেগপ্রবণতা, গ্রহণশীলতার অভাব, প্রবল আত্মমর্যাদা বোধ, স্বার্থপরতা, পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতা, শারীরিক মানসিক নির্যাতন, অস^চ্ছলতা, আয় পরিবারে ব্যয় না করা, গোঁয়ার্তুমি ভাব, অনাস্থা আপসহীন মানসিকতা, জেদ, স্বামী স্ত্রীর কাজ ও মর্যাদার লড়াই, অসামাজিক কার্যকলাপ, জবাবদিহিতার ভাব ও দোষ খোঁজার মানসিকতা থাকায় ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখা দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করে দেয় বা শেষ করে দেয়, প্রতিদিনের সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি অস্থিরতা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
সমস্যার সমাধানে আন্তরিক পদক্ষেপ
উভয়ের সচেতনতা, প্রয়োজনীয় আন্তরিক পদক্ষেপ ও পারস্পরিক ক্ষমা, সহনশীলতার মধ্য দিয়ে অনেক মৌলিক গুরুতর সমস্যারও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ উন্মুক্ত হয়। বিরক্তিকর সমস্যাগুলো স্বামী স্ত্রীর উভয়ের অসচেতনতার জন্য বা ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে।
যেমন- ছোট ছোট বিষয়ে খুঁত ধরা, পরস্পরকে সমাদর-আদর-কদর না করা, সময়মত কিছু না করা, সময় না দেওয়া, পক্ষাবলম্বন করা, যার যার বাবা মার পক্ষে কথা বলা, ঠিক সময়ে ঘরে না ফেরা, একে অন্যের সম্বন্ধে ও তাদের পরিবার নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলা, সময়মত বাজার না করা, মোবাইলে লুকিয়ে বা এড়িয়ে কথা বলা, দাম্পত্য যৌন সম্পর্কে পরস্পরকে না বোঝা, মিথ্যা কথা বলা, কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করা, পরস্পরের কাজের খোঁজ খবর না রাখা, অসুস্থতায় খেয়াল না করা, পরস্পরের যত্নে খেয়ালে ঘাটতি, সংসারের প্রয়োজনে বেখেয়ালিপনা, নেশায় বদ অভ্যাস ইত্যাদি।
এছাড়া জেদ,কথা ও আচরণে রূক্ষতা,পরস্পর কথা বন্ধ করে দেওয়া, রান্না-বান্নার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা, পরস্পর চাহিদা পূরণে খেয়ালিপনা ও অনীহা, গুজবে কান দিয়ে ভুল বুঝা, অতীত টেনে আনা, স্বামী স্ত্রীর কথা অন্যকে বলে দেয়া, কোন ঘটনা লুকানোর চেষ্টা, সন্তান না হওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে দোষারোপ করা, প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে না যাওয়া, বৌ-শাশুড়ি-শ^শুরের মধ্যে আন্তরিকভাবে গ্রহণ না করার জের, অহেতুক সন্দেহ, কোনো কিছু চাওয়া পাওয়ার অধৈর্য হওয়া, অতিরিক্ত পীড়াপীড়ি, অন্যেরটা দেখে তুলনা করা, সংসার স্রোতে নতুনত্বের অভাব, বিনোদনের অভাব, সংসারে অভাব, গায়ে হাত তোলা, পারিবারিক কড়াকড়ি নিয়ম, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করা; অবহেলায় বিরক্তিকর সমস্যাগুলো বড় আকার ধারণ করতে পারে।
পরিবারের যত্ন নেয়া
সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে এবং সব বয়সের সকলের জন্য ভালো থাকা নিশ্চিত করতে পরিবারের বিকল্প নেই। পরিবারের মধ্যে জেন্ডার সমতা থাকলে, শিশু ও প্রবীণদের অধিকার সংক্রান্ত সচেতনতা থাকলে এবং প্রতিবন্ধী সদস্যদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব থাকলে তা’ হয় সুখী পরিবার। মানুষের উত্তরোত্তর আরো বেশি ভালো থাকা নিশ্চিত করতে তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিবার গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সংহতি তৈরিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে পরিবার। পরিবারের সদস্যদের কর্মে ভারসাম্য নিশ্চিত হলে পারিবারিক দারিদ্র্য নিরসন সহজ হয় এবং সামাজিক বর্জনের মুখোমুখি হওয়া থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। যে পরিবারে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের বেশি ত্যাগ থাকে, সে পরিবারে সাধারণত সন্তানও ত্যাগী হয়ে গড়ে ওঠে; তবে শাসন ও আদরের ভারসাম্য দরকার। তাই পরিবারগুলো শক্তিশালী করার মানেই দেশকেও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়া।
শিশুদের বিকাশে খেয়াল রাখা
শিশুরা ট্যাব, স্মার্টফোন, আইপ্যাডে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে। মনস্তত্ত্ববিদ পামেলা লেভিসের (১৯৮০) দেয়া শিশুর বিকাশগত তত্ত্বে বিকাশের চক্রকে ৭টি স্তরে বর্ণনা করেন। ১. অস্তিত্ব স্তর (০-৬ মাস) ২. কার্যস্তর (৬-১৮ মাস) ৩. চিন্তা স্তর (১৮ মাস-৩ বছর) ৪. আত্মপরিচয় স্তর (৩ বছর-৬ বছর) ৫. দক্ষতার স্তর (৬ বছর-১২ বছর) ৬. নব জীবন সঞ্চারণ (১৩ বছর-১৮ বছর) ৭. পুন:ব্যবহারযোগ্য স্তর (১৮-চলমান)। মনোবিজ্ঞানী নিকেরসনের (১৯৭৩) মতে, খেলা হলো শিশুর আত্মপ্রকাশ, পরীক্ষণ ও শিক্ষণের প্রাকৃতিক মাধ্যম। খেলার মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ হয় যা শিশুর কল্পনা শক্তি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান, সামাজিক যোগাযোগ বা ভাষার দক্ষতা, সূক্ষè ও স্থুল পেশির দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
প্লেটোর মতে, ‘একজন মানুষের সাথে সারা বছর ধরে কথা বলার থেকে এক ঘন্টা খেলা করলেই তাকে বেশি আবিষ্কার করা যায়।’ খেলা বুদ্ধিগত, শারীরিক, সামাজিক ও আবেগীয় কল্যাণে অবদান রাখে। শিশুদের প্রতি সহমর্মিতা হচ্ছে নিজেকে তার জায়গা থেকে বোঝা, তার চোখ দিয়ে দেখা, তার কান দিয়ে শোনা, তার হৃদয় দিয়ে বোঝা; অর্থাৎ তার জায়গা থেকে বোঝা ও অনুভব করা।
শিশুর সাথে সহমর্মী হতে তার অনুভূতি ও ইচ্ছাকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা, উদ্দেশ্য-চেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয়া, জ্ঞান-বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেয়া, সম্পর্কের স্বীকৃতি দেয়া, নি:শর্তভাবে গ্রহণ করা, সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করা, বারবার অনুশীলন করা, সীমা নির্ধারণ করা। ছোটবেলা থেকেই যথাযথ পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত হতে হবে। কারণ পোশাক মানব জাতির একটি মৌলিক প্রয়োজন, ভূষণ। এর মাধ্যমে ব্যক্তির রুচি, পছন্দ, ব্যক্তিত্ব, মন-মানসিকতা ও বিশ্বাস প্রভৃতি প্রকাশ পায়। দেহকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি জৌলুস ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের মাধ্যমও পোশাক।