অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
“যে সব বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিদেশে থাকে তারা আমাদের দেশে রেমিটেন্স করে, টাকা পাঠায়, তাদের কষ্টে-শ্রমে-ঘামে-রক্তে উপার্জন করা টাকা দেশে পাঠায়, সেই টাকা দিয়ে আমাদের বাইশ বিলিয়ন ডলার জমেছে। এর ফলে আমাদের শিরদাঁড়া কিছুটা শক্ত অবস্থায় আছে। কিন্তু আমাদের যারা প্রফেশনালরা বাইরে আছে তারা কী পাঠায়? কয়জন পাঠায়? আমি তো মনে করি একজন শ্রমিকের ঋণ এই দেশের কাছে যতটা একজন প্রফেশনালের ঋণ তার থেকে বেশি না কম? অনেক বেশি। অনেক বেশি ঋণ। তারা এই দেশ থেকে সব নিয়েছে। গরিব মানুষের রক্ত– যে গরিব মানুষের ছেলেটা কোনোদিন কলেজে আসতে পারবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবে না– তার সেই হাড়ভাঙ্গা খাটনির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে এদেশে পড়াশুনা করে চলে গেছে।”
“ঋণ থাকলে তো তার ঋণ পরিশোধের একটা হৃদয় থাকা উচিৎ। তোমাকে এই দেশের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে। কিছু না কিছু তোমায় দিতেই হবে। তুমি যদি না দাও আমি মনে করি তারও শাস্তি হওয়া উচিৎ। আমি গভার্মেন্টের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাবার্তা শুরু করেছি যে, যারা দেশের বাইরে আছে তাদের আর্নিং এর থ্রি পার্সেন্ট বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। এই থ্রি পার্সেন্ট সে দিয়ে দেবে না। এই থ্রি পার্সেন্ট হয় সে ইনভেস্ট করবে তারই জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ ডলারটা পাবে। সে ইনভেস্ট করবে, না হলে সে কোনো আত্মীয়কে দেবে, স্বজনকে দেবে। না হলে কিছু একটা ভালো কাজের মধ্যে দেবে। এইটুকু হওয়া উচিৎ। আর তা না হলে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট যদি থাকে সেটা ক্যানসেল করে দেওয়া উচিৎ এবং কোনোদিন যেন সে ভিসা না পায় বাংলাদেশের আসার সে ব্যবস্থা করতে হবে।”
“মানুষ যে, সে তার ঋণ পরিশোধ করে। অমানুষ ঋণ পরিশোধ করে না।”
“আমি বিদেশে গিয়ে দেখেছি যারা চাকুরী করে– সেই সকাল ছয়টায় উঠে রেডি হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে অফিসে যায়। তারপর সারাদিন অফিস করে রাত আটটা সাড়ে আটটার দিকে ফেরে। একটু যদি ভাগ্যবান হয়, মানে নিচের দিকের অফিসার হয়, তারাই তাড়াতাড়ি ফেরেন। আর উপরের হলে তো রাত বারোটার আগে কোনো উপায় নেই। বাড়িতে আসল, বসল, সোফার উপর টাই টেনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে একটু টেলিভিশন দেখল। কিছু খেল, কিছুক্ষণ ঘুমল। পরের দিন আবার সেই দৌড়। পাথর ঠেলতে ঠেলতে আর দৌড়াদৌড়ি করতেই জীবন শেষ হয়ে গেল। জীবন কত মহিমান্বিত আলোকময়, সৌন্দর্যময়, শ্রেষ্ঠ, মহৎ সে কথা জানার কোনো সুযোগ মানুষ পাচ্ছে না।”
“আমি আশাবাদে বিশ্বাস করি। পতন বলে কিছু নেই, নৈরাশ্য বলে কিছু নেই। নৈরাশ্য বলতে কিছু নেই পৃথিবীতে। নৈরাশ্য এক ধরনের বিভ্রম।”
ইউটিউবে অপলোড করা কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বকতৃতা থেকে