গৃহিণী : পারিশ্রমিক ছাড়াই ফুলটাইম জব

হাউজওয়াইফ বা গৃহিণী চিরকালই একটি পেশা ও পারিশ্রমিক ছাড়াই ‘ফুলটাইম জব’। সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জন করেও অনেক গৃহিণী ছেলেমেয়েদের পড়া-শুনা, ক্লাসে আনা-নেয়া, খাওয়া-গোসল থেকে শুরু করে সংসারের বিভিন্ন দিক চিন্তা করে চাকরি করেন না বা সন্তানদের মানুষ করাকে প্রাধান্য দিয়ে বাড়িতে থাকেন। একজনের একার উপার্জনে ভালোমতো সংসার চললে চাকরি-বাইরে কাজ-রোজগারের চেয়ে সন্তান লালন পালনকে প্রাধান্য দিয়ে বাড়িতে থেকে শুধুমাত্র গৃহিণীর ভূমিকা পালন করেছেন অনেক মায়েরাই। বাইরে চাকরি না করলেও তিনি ঘরে যে শ্রমটা দিচ্ছেন তা কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রমের এবং অবশ্যই এর অর্থনৈতিক মূল্য আছে।

গৃহিণীর কাজের মূল্য

গৃহ যেখানে আছে, গৃহকর্মও সেখানে আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার মায়ের উপর জরিপ করে স্যালারি ডট কম জানিয়েছে, এক সপ্তাহে একজন চিকিৎসক ৫৬ ঘণ্টা কাজ করলে মাসে পান ১ লাখ ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার। সেই অনুযায়ী গৃহিণীদের সপ্তাহে ৯৪ ঘণ্টা কাজের হিসেবে বছরে কত বেতন হওয়া উচিত? গৃহিণীরা ৯টা থেকে ৫টা কাজের বাইরে সপ্তাহে যে অতিরিক্ত ৫৮ ঘণ্টা খাটেন, সেটা হিসেব করলে তাদের বাড়তি বেতন হওয়া উচিত বছরে ৬৭,৪৩৬ মার্কিন ডলার। একজন গৃহিণীকে সপ্তাহে কমপক্ষে অন্তত ১৪ ঘণ্টা রান্না করতে হয়। ঘণ্টায় ৯ দশমিক ০৩ মার্কিন ডলার হিসাব করলে বছরে কেবল রান্নায় তাদের আয় হওয়া উচিত ৬,৫৭০ ডলার। একজন গৃহিণী সন্তানকে স্কুলে দেয়া, বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে সপ্তাহে ৯ ঘণ্টা গাড়ি চালান। ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ৮৫ ডলার হিসেবে বছরে সেই কাজের পারিশ্রমিক দাঁড়ায় ৬,৪৮২ মার্কিন ডলার। সন্তানদের পড়ালেখায় একজন মা সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা সময় দেন। একজন শিক্ষিকার বেতন হিসেবে ঘণ্টায় ১৮ দশমিক ২৩ ডলার হিসাব করলে বছরে সেই কাজের পারিশ্রমিক দাঁড়ায় ৭,২৯০ ডলার।

সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘণ্টা সন্তানের যত্নে সময় দেন। ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৬৫ ডলার করে হিসাব করলে এর জন্য তারা পারিশ্রমিক পেতে পারেন ২০ হাজার ডলার। সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা ঘর পরিষ্কারে ব্যয় করেন গৃহিণীরা। ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৮৮ ডলার করলে বছরে যা দাঁড়ায় ৫,১৩৫ ডলার। সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা যদি গৃহিণীরা বাজার-সদাইয়ে ব্যয় করেন, তাদের পারিশ্রমিক ঘণ্টায় ১০ ডলার করে ধরলে বছরে দাঁড়ায় ১,৬৯৬ ডলার। সপ্তাহে আধা ঘণ্টা করে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার কাজে সময় দেন গৃহিণীরা। ঘণ্টায় এ কাজের জন্য তাদের যদি ২৪ দশমিক ৯০ ডলার দেয়া হয় বছরে দিতে হবে ৬৪৭ ডলার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গৃহিণীদের স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যেও কাজ করতে হয়। স্বামীর টিফিন প্রস্তুত করা, অফিসে যাওয়ার তার কাপড়-চোপড় প্রস্তুত রাখা এসব।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭। উন্নয়ন অন্বেষণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আছে, বাংলাদেশের নারীদের বার্ষিক মজুরিবিহীন গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।  অথচ একটি সংসারের সমগ্র কাজ নিঃশব্দে করে যাওয়া গৃহিণীর প্রকৃত মূল্যায়ন নেই। একবার ভেবে দেখুন, বাড়িতে গৃহিণীর করা কাজগুলি অন্য কোনো মানুষ দিয়ে করাতে কত টাকার প্রয়োজন বা আদৌ এই কাজ টাকা দিয়ে করালে আপনার গৃহিণীর মতো করে কাজটি তারা করতে পারবে কি না?

গৃহিণী পেশার মর্যাদা

গৃহিণী সবচেয়ে সৃজনশীল পেশার মর্যাদা পাওয়া উচিত। একজন নারীর নিজেকে গৃহিণী পরিচয় দিতে লজ্জা পাওয়া বা নিজেকে ছোট মনে করার কোনো কারণ নেই। অথচ আমাদের শিক্ষিত সমাজে গৃহিণীকে কোন পেশাদারিত্বে সঠিকভাবে সম্মান দেওয়া হয় না। একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী যদি গৃহিণী হিসাবে ঘরে কাজ করে তবে তার যথাযথ সম্মান এবং কাজের মূল্যায়ন পাওয়াটা খুবই জরুরি। গৃহস্থালি অর্থনীতির উপর একটি দেশের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল। যদি একজন গৃহিণী তার সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে সেই ঘরের সন্তান সঠিক দীক্ষা না পেয়ে সমাজের বা দেশের বোঝা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তেমনি ভাবে ঘরের কাজগুলো করার জন্য বাইরের মানুষ ঘরে রেখে শিশু পালন, শিশুকে পড়াশোনার দায়িত্ব তাদের উপর ছেড়ে দেওয়া অর্থনীতির জন্য যেমন সঠিক পদক্ষেপ নয় শিশুদের মূল্যবোধ বিকাশেও বড় অন্তরায়। যদি চাকরি একটি পেশা হয়, যদি ব্যবসা একটি পেশা হয়, যদি শিক্ষকতা একটি আদর্শ পেশা হয় তবে গৃহিণীকেও একটি আদর্শ পেশা হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। কারণ একজন গৃহিণীই তার সন্তানকে প্রথম শিক্ষা তার মা হিসাবে দিয়ে থাকেন। সকল গৃহিণীর প্রতি শ্রদ্ধা কারণ তারাই আমাদের অর্থনীতির মূলে থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

ঝটপট রান্না

ঘর-সংসার সামলে, সন্তান লালন-পালনের মতো কঠিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম রান্না। সপ্তাহের বা মাসের বাজার একসঙ্গে করে ফেলতে পারলে রান্নার সময় বাজার গোছানোর ঝক্কি অনেকটাই কমে যায়। আগের দিন রাতেই ঠিক করে রাখুন কাল সারাদিন কী রান্না হবে। এক সপ্তাহের পেঁয়াজ কেটে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। সে সময় আদা রসুন পেস্ট, জিরা গুঁড়া এগুলো প্রায় এক মাসের জন্য তৈরি করে রেখে দিতে পারেন। মাছ- মাংস আগেই কেনা থাকলে কেটে-ধুয়ে প্রতিদিনের পরিমাপ অনুযায়ী কন্টেইনারে রাখবেন। এতে ডিফ্রস্ট করে সরাসরি চুলায় দিতে পারবেন। বেশি সবজি বাজার করা হয়ে গেলে কেটে ভাপিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন ১ মাসের মতো। এতে করে রান্নার সময় বেশি সময় দিতে হবে না। রান্না করার মসলা বিভিন্ন কৌটায় রাখতে হয়।

রান্না করার সময় কোন কৌটায় কোন মসলা থাকে ভুলে যান। কৌটার গায়ে বা বয়ামে মসলার নাম লিখে রাখলে সহজেই খুঁজে পাবেন। মাংস দ্রুত সেদ্ধ করতে চাইলে পেঁপে কেটে দিন, নতুবা প্রেসার কুকারে দিন বা সুপারি মধ্যখানে কেটে দিন, কাঁচা পেঁপেও দিতে পারেন, তরকারিতে সামান্য পরিমাণ মেথি ছেড়ে দেন বা এক টেবিল চামচ সিরকা মিশিয়ে দিন। ডাল যদি তাড়াতাড়ি গলাতে চান তবে ফুটন্ত ডালে ২ থেকে ৪টা চাল ফেলে দিন অথবা চাল ধোয়া পানিতে ঐ ডাল সিদ্ধ করুন।  দেখবেন ডাল পূর্বের চেয়ে দ্রুত সিদ্ধ হচ্ছে। ডাল লোহার কড়াইয়ে করে ভেজালে কিংবা অন্য পাত্রে ভিজিয়ে তাতে একটা লোহার হাতা বা চামুচ রেখে দিলে কলাইয়ের ডাল তাড়াতাড়ি ভিজবে।

রান্নাঘর

রান্না করা খাবার পর খাওয়ার সময় গরম করতে গেলে অনেক সময় নিচের অংশ পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে একটি পাত্রে পানি দিয়ে তার ওপর খাবারসহ পাত্র বসিয়ে গরম করলে ঠিকমতো গরমও হবে এবং পুড়বে না। রান্নার পর দেখা যায় চুলার চার ধার এবং কখনো চুলার পাশের দেয়ালে তেল চিটচিটে হয়ে যায়। আর সেটা সাধারণ পানি দিয়ে ধুলে কখনোই ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। গরম পানি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায়। স্টিলের মাজুনিতে সাবান গরম পানি মিশিয়ে দেয়াল এবং চুলার চারপাশ পরিষ্কার করুন। নতুন বোতল থেকে সস বের করা সহজ নয়। বোতলের তলা পর্যন্ত একটি স্ট্র ঢুকিয়ে দিন। স্ট্র বের করে নিলে এবার সস বের করা সহজ হবে। প্রেসার কুকারের মরিচা দূর করার জন্য লেবুর খোসা দিয়ে ঘষে পরে পানিতে সিদ্ধ করুন। মরিচা থাকবে না।

রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিশেষ করে চুলা, দা, বঁটি, ছুরি, কেঁচির কাজ শেষে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে রাখুন। ফলে এগুলোর স্থায়িত্ব বাড়বে। রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিল বা কড়াই যদি চকচকে করতে চান তাহলে কিছু পরিমাণ তেঁতুল বা টমেটো সংশ্লিষ্ট পাত্রে রেখে পানি দিয়ে পূর্ণ করে কিছুক্ষণ ফুটাতে থাকুন। ধুয়ে ফেলুন পাত্র চকচকে হয়ে যাবে। রান্নাঘরে বা খাবার ঘরে অনেক সময় মাছির উৎপাত বেশি হয়। নিমপাতা থেঁতলে ঘরের দু’চার জায়গায় রেখে দিলে, মাছি সহজে আসে না। কাচের গ্লাসে গরম কিছু ঢালার আগে একটি চামচ গ্লাসে রেখে দিলে গ্লাসে চিড় ধরবে না। বঁটি বা ছুরিতে জং ধরলে পাতিলেবুর বা আলুর টুকরো দিয়ে ঘষে নিলে জং ছেড়ে যায়। ব্রাসের সঙ্গে সামান্য পাতিলেবুর রস মিশিয়ে কাঁসার জিনিস ঘষুন দেখবেন সোনার মতো ঝকমক করবে। চাল-ধোয়া পানিতে স্টিল ও কাচের বাসন কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে দিলে বাসনগুলো ঝকঝকে হয়ে যাবে।

মুরগির ডিমের সাদা তরল অংশ পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে থার্মোফ্লাস্কের ভেতরটা ২ থেকে ৩ বার ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকবে না ও পরিষ্কারও হবে। রান্না এবং খাওয়ার কাজে অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র লাগেই। পাত্র যাতে তাড়াতাড়ি কালচে হয়ে না যায় তার জন্য মাঝে মাঝে পাত্রে টেবিল-সল্ট ঘষে নিন। প্লাস্টিকের কৌটো, বোতল ইত্যাদি সাবানের গুঁড়ো মেশান ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে নিলে খুব পরিষ্কার থাকে। উনুনে পানি ঢেলে কয়লার আগুন নেভালে পরে দরকার পড়লে ঐ কয়লায় আবার চট করে আগুন ধরানো যায় না। কিন্তু পানি না ঢেলে, ঐ কয়লার টুকরো তুলে একটা পুরনো টিনের কৌটতে রেখে, মুখটা ঢাকনা বন্ধ করে দিলে, হাওয়ার অভাবে ঐ কয়লার আগুন নিভে গিয়ে কয়লা শুকনোই থাকবে। কিছুক্ষণ পরে ঐ কয়লায় আবার নতুন করে উনুন ধরাতে পারবেন। লিকার হয়ে যাবার পর ছাঁকুনিতে চা-পাতার যে ছিবড়ে পড়ে থাকে তা দিয়ে বাসন মাজলে তেলচিটে ভাব দূর হয়। স্টিলের বাসন-পত্র তেঁতুল দিয়ে মেজে ২ থেকে ৩ মিনিট রেখে দিন। তারপরে ধুলেই ঠিক রূপোর বাসনের মতো ঝকঝক  করবে। ডেকচি ব হাঁড়ির তলায় সাবানের পানি লাগিয়ে উনুনে চাপালে পাত্রে কালি লাগে না। স্টোভে যদি ডিজেল তেল ব্যবহার করেন তবে প্রতি দশ লিটারে আধ কাপ লবণ মেশালে রান্নার সময় ধোঁয়া হবে না। পাত্রের তলাও কালো হবে না।

রান্নায় টিপস

নুডলস সিদ্ধ করার সময় একটু তেল পানিতে মিশিয়ে দিলে নুডলসগুলো ঝরঝরে হবে। খাবারে বেকিং পাউডারের পরিবর্তে পাউরুটি টুকরা করে ব্যবহার করা যায়। রান্নায় ব্যবহৃত উদ্বৃত্ত তেল বা ঘি পরিষ্কার করতে এক টুকরা আলু দিয়ে তাপ দিতে থাকুন। হাতের কাছে ঝাল মরিচ না পেলে চিলি সস বা গোলমরিচ ব্যবহার করুন। একটি নারকেল ভাঙ্গার পরে একটি মালাই যদি কোরার প্রয়োজন থাকে এবং অন্যটিকে তুলে রেখে দিতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে দুটি মালাই আধখানা করে কুরে তুলে রেখে দিলে, দু-চার দিন ভালো থাকবে। কিছু কিছু পাতিলেবু টিপলে রস বেরোয় না। এই ধরনের লেবুকে চুলা বা উনুনের পাশে রেখে অথবা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে নিংড়েলে অনেক রস বেরোবে। অনেক সময় লবণ গলে পানি হয়ে যায়। লবণদানিতে গোটা কয়েক চাল রেখে দিলে লবণ বেশ ঝরঝরে থাকে। অনেক সময় লবণ ডেলা ডেলা হয়ে যায়। ডেলা লবণ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে কড়ায় গরম করে শিশিতে রাখলে ভালো থাকে।

পেঁয়াজ ছাড়াতে গেলে চোখে পানি আসে। কিন্তু মাথার দিক থেকে ছোকলা ছাড়ালে চোখের পানি বেরোয় না। পেঁয়াজের মাঝখানে কেটে দু’ভাগ করে ঠাণ্ডা পানিতে মিনিট পাঁচেক রেখে তারপর কাটলে চোখ দিয়ে পানি গড়াবে না, চোখ জ্বালা করবে না। সহজে খোসা ছাড়ানো যাবে। রাঁধবার পর দেখা গেল ডাল, ঝোল ইত্যাদিতে লবণ বেশি হয়ে গেছে। একটা আলু চাকা চাকা করে কেটে নিয়ে ঝোলে বা ডালে দিয়ে তরকারিটা ফের উনুনের উপর কিছুক্ষণের জন্য জ্বাল করতে হবে। অল্পক্ষণ পরেই আলুর ঐ টুকরোগুলো কিছুটা লবণ টেনে নেবে। চিনি বা গুড়ের রস করার জন্য জ্বাল দেওয়ার সময় তাতে যদি একটু-দুধ ঢেলে দেয়া হয় তবে চিনি এবং গুড়ে যে নোংরা থাকে তা ভেসে ওঠে। তরিতরকারি শুকিয়ে গেলে পাতিলেবুর রস মেশানো পানিতে ঘন্টাখানেক ডুবিয়ে তুলে নিন, সেগুলো টাটকা দেখাবে।

গ্রীষ্মকালে দুধ ফেটে যায় প্রায়ই। তাই দুধ ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে, যে কোন পাত্রে পানি দিয়ে তার উপর দুধের পাত্রটি রাখলে দুধ ফাটবে না। যদি দেখেন জ্বাল দিলে দুধ ফেটে যাবার আশঙ্কা আছে তাহলে জ্বাল দেবার আগে দুধে একটু খাবার সোডা ফেলে দেবেন। সিদ্ধ ডিমের খোসা ভালোভাবে ছাড়াতে যদি চান তবে ডিম গরম পানিতে সিদ্ধ করবেন। মোচার টুকরো ঘোলে ডুবিয়ে তুলে নিয়ে রাঁধলে তরকারি কালো হয় না।

পিঠে, পাটিসাপ্টা, মালপো প্রভৃতি তৈরি করার সময় গোলায় একটু আটা মিশিয়ে দিলে পিঠে প্রভৃতি ঠিকভাবে তৈরি হয়। কাঁচকলা কাটার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখলে রাঁধবার সময় তরকারি কালো হবে না। ফুলকপি রাঁধতে গিয়ে অনেক সময়েই কালচে হয়ে যায়। তরকারি কাটার সময় কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস তাতে ফেলে দিন। রান্নার পরেও ফুলকপির রঙ প্রায় সাদাই থাকবে। আঙুর, টমেটো প্রভৃতি ফুটন্ত পানিতে ২/৩ মিনিট রেখে, তুলে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে খোসা ছাড়ালে, খুব সহজেই পাতলা খোসা ছেড়ে আসবে। কোনো কোনো ঢেঁড়সের গায়ে কাঁটা কাঁটা ভাব থাকে। চটে ঘসে নিয়ে কাটুন ঐ কাঁটা কাঁটা ভাব চলে যাবে। ঢেঁড়স ভাজতে গেলে কষ বেরোয়। ঢেঁড়সের টুকরো কড়ায় ছাড়বার আগে ঘোলে ভিজিয়ে ছাড়ুন। আর কষ বেরোবে না।

বেগুন কেটেই পানিতে ফেলে দিলে তরকারির রং কালো হয় না। কয়েকদিন রাখার ফলে বেগুন একটু তেতো হয়। কেটে কেটে লবণ পানিতে চুবিয়ে তুলে নিলে এবং সিদ্ধ হওয়ার সময় লবণ হলুদের সঙ্গে একটু গুড় বা চিনি দেবেন, তেতো ভাব আর থাকবে। পেঁয়াজ ভাজার সময় সামান্য পরিমাণ কাঁচা লবণ ছিটিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি বাদামি বর্ণ ধারণ করবে।

খাবার সংরক্ষণ

পাকা টমেটো ঘরে রাখলে সেগুলো নরম হয়ে যায়। নরম টমেটোগুলো শক্ত করতে চাইলে কিছুক্ষণ লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন টমেটো শক্ত হয়ে উঠেছে। ঘি বেশিদিন ঘরে রাখলে একটু গন্ধ হয়ে যায়। দই খুব বেশি টক হয়ে গেলে পাতলা কাপড়ে দইটুকু ঢেলে ১০-১৫ মিনিট ঝুলিয়ে রাখুন। পানি ঝরে গেলে দইয়ের অংশে দুধ বা পানি মেশান। টক স্বাদ থাকবে না। বেশি করে কাঁচামরিচ আনা হলে দেখা যায় তা শেষ হওয়ার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার শুকনো শিশিতে কাঁচামরিচ রেখে, মুখটায় একটা ন্যাকড়া রেখে ছিপি এঁটে দিলে, সপ্তাহ খানেক তাজা থাকে।

ঢেঁড়স, বিন, কাঁচামরিচ ইত্যাদি বেশিদিন থাকে না। শুকিয়ে যায়। তার বোঁটা ছাড়িয়ে বা কেটে রাখলে বেশ কিছুদিন তাজা থাকে। অনেকগুলো লেবু ভুলবশত কাটা হয়ে গেলে বাড়তি লেবুর টুকরোগুলো লবণের পাত্রে রেখে দিলে, ৩ থেকে ৪ দিন ভালোই থাকবে। কফির লিকার বেশি হয়ে গেলে ফেলে না দিয়ে, তাতে দু’ চামচ চিনি দিয়ে রেখে দিলে পরের দিন অনায়াসেই খাওয়া যায়। পাতলা ন্যাকড়ায় খানিকটা চাল পোঁটলা বেঁধে লবণের পাত্রে রেখে দিলে সেই লবণের জলীয় অংশ টেনে নিয়ে লবণকে ঝরঝরে রাখবে। কুরে নেওয়া নারকেল একটি পাত্রে রেখে সারাদিন কড়া রোদে শুকিয়ে সেটা কাচের পাত্রে ভরে মুখটা ভালোভাবে এঁটে দিন। কমপক্ষে একমাস তো তাজা থাকবেই। ঝুনো নারকেলের ভাঙা টুকরো লবণের পাত্রে ফেলে রাখুন, ৪ থেকে ৫ দিন ভালো থাকবে।

ঘিয়ের গন্ধ বজায় রাখতে হলে ঘি রাখার শিশিতে এক টুকরো আখের গুড় রেখে দিন। ঘিয়ের সুগন্ধ বাড়াতে হলে মাখন জ্বাল দিয়ে ঠিক নামানোর আগ মুহূর্তে তাতে ৪ থেকে ৫টা মেথি ফেলে দেবেন। গোটা পাতিলেবু বেশিদিন টাটকা রাখতে হলে প্রতিদিন ঘণ্টাখানেক করে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। তাহলে তাজা থাকবে। আদা টাটকা রাখতে বালিতে ঢুকিয়ে রাখুন। কারিপাতা ২/৪ দিন তাজা রাখতে হলে পানির গ্লাসে ডুবিয়ে রাখুন। স্টোভের খারাপ হয়ে যাওয়া ওয়াশারে কিছুটা তেল লাগিয়ে নিলে আবার কিছুদিন ভালোভাবে কাজ চালানো যায়। ৪ বা ৫টা গোলমরিচ এবং কয়েকদানা চাল কর্পূরের শিশি বা কৌটায় ফেলে রাখলে কর্পূর তাড়াতাড়ি উড়ে যায় না।

সেমাই বেশিদিন ভালোভাবে রাখতে হলে, ভেজে লাল করে কৌটোতে ভালো করে ঢেকে রাখুন। কাঁচকলা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন অন্য কোনো পাত্রে। তাহলে ৪ থেকে ৫ দিন টাটকা থাকবে, সহজে পাকবে না। বিস্কুট যদি ১০ থেকে ১২ দিন তাজা আর মচমচে রাখতে চান, তাহলে বিস্কুটের কৌটায় এক চামচ চিনি অথবা এক টুকরো ব্লটিং পেপার রেখে দিন। সিদ্ধ করার পর ডিমগুলোকে যদি রেফ্রিজারেটারে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ রাখবার দরকার হয় তবে খোসা ছাড়িয়ে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে দেবেন। যাদের রেফ্রিজারেটার নেই তারা ডিমের উপর সরষের তেল অথবা দালদা মাখিয়ে রাখতে পারেন। এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। ডালের কৌটোয়  কয়েকটা শুকনো নিমপাতা ফেলে রাখুন, সহজে পোকা ধরবে না। উচ্ছে, করলা প্রভৃতির পেটটা চিরে রেখে দিলে সহজে পাকে না।

খাবারে টিপস

কাঁচা আমের টুকরো যদি খুব বেশি টক লাগে খেতে, তবে সেগুলোকে আগে  চুনের পানিতে ধুয়ে নিয়ে খেলে ততটা টক লাগবে না। চা তৈরির লিকারে একটু খাবার সোডা ফেলে দিলে প্রতিবারেই কিছুটা চা বাঁচবে। কফির স্বাদ বাড়াতে হলে একচিমটি লবণ মিশিয়ে নিন। বোঁটা ছাড়ান কাঁচামরিচ মাঝখানে চিরে ঘোলে ডুবিয়ে রোদে শুকিয়ে, ছাঁকা তেলে ভেজে খান, চমৎকার লাগবে। পাকা ঢেঁড়স ছোট ছোট টুকরো করে কেটে লবণ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে, পরে ভেজে ভেজে খান ভালোই লাগবে। চা তৈরি করার পর কাপে ঢালার আগে লিকার করা কেটলিতে গোটা কয়েক কৎবেলের চোকলা ফেলে দিলে চায়ের স্বাদ বেড়ে যায়। বেশি রাত্রে মাংস, পোলাও ইত্যাদি গুরুপাক দ্রব্য খেলে পেট প্রায়ই ভার হয়ে থাকে। খাবারের আগে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ গরম পানি খেলে পেট গরম হবে না, হজমও চটপট হবে।

গৃহকর্মে টিপস

পিঁপড়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে এক টুকরা স্পঞ্জ চিনির পানিতে ভিজিয়ে পিঁপড়ার গর্তের কাছে রেখে দিন। স্পঞ্জের মধ্যে সব পিঁপড়া জড়ো হবে। এবার পিঁপড়াসহ স্পঞ্জটি দূরে ফেলে দিন। সমস্যা মিটে যাবে। পাতিলেবু নিংড়ে নেবার পর যে চোকলাগুলো থাকে, সেগুলো ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে, কিছুক্ষণ পরে সেই পানিতে গোসল করলে শরীর ঝরঝরে হয়ে ওঠে। ডিমের খোসা আর ফেলে দেওয়া চা-পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে গোলাপ ফুলের গাছের গোড়ায় দিলে ফুলগুলো বড় বড় হবে।

নারকেল ভাঙার আগে কিছুক্ষণ পানিতে রেখে তারপর ভাঙুন-দেখবেন সমান দু’টুকরো হয়ে ভেঙেছে। ঘরে যদি রূপোর বাসন কিংবা গয়না থাকে তবে আলু সিদ্ধ করার পর পানিটা ফেলে না দিয়ে, তাই দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও ঝকঝকে করে এমন সব পাত্র একইভাবে ধুতে পারেন। খুব পরিষ্কার হয়ে যাবে। পেঁয়াজ বাটার পর হাতে লবণ ঘষে হাত ধুয়ে নিলে পেঁয়াজের গন্ধ থাকে না। মোম রেফ্রিজারেটরে রাখলে বেশি সময় ধরে জ্বলে।

গৃহস্থালীর কাজ

গাছে পানি দেওয়া, ছোটদের খেয়াল রাখা, পাখি পালনে সহায়তা করা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা, কাপড় গোছানো, থালা বাসন পরিষ্কার করা, রান্না করা, ঘর-বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা, ঘর সাজানো, সন্তান লালনপালন এবং পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দেখাশোনা ইত্যাদি কাজই গৃহস্থালির কাজ। গৃহস্থালির কাজে বাড়তি বিড়ম্বনা এড়াতে বিস্কুট মচমচে রাখতে বয়ামের ভেতর এক টুকরো ব্লটিং পেপার রাখুন। চিনির বয়ামে কয়েকটি লবঙ্গ রাখলে পিঁপড়া আসবে না।

চালের ভেতর নিমপাতা দিলে পোকামুক্ত থাকবে চাল। লবণের বয়ামে কয়েকটি চাল ফেলে দিলে লবণ গলবে না। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করে প্রতি তাকে লেবুর টুকরা বা ছোট বাটিতে ভিনেগার রেখে দিন।  কচু কাটার আগে হাতে সরিষার তেল মেখে নিলে কালচে হবে না হাত। হাতের আঁশটে দুর্গন্ধ দূর করতে লেবুর টুকরা ঘষে নিন। মোমবাতি ফ্রিজে রাখলে ক্ষয় কম হয়। শুকনা নিমপাতা গুঁড়া করে রান্নাঘরে ছড়িয়ে দিলে পোকার উপদ্রব কমবে।

ঘর গৃহস্থালির কাজে ছোটখাটো ঝামেলা বা সমস্যার সহজ সমাধান হচ্ছে- মুড়ি নরম হয়ে গেলে চুলার আঁচে খানিকক্ষণ গরম করে নিলে মচমচে হয়ে উঠবে। রসুনের খোসা ছাড়ানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে খুব সহজেই খোসা খুলে আসবে। ছোলা সেদ্ধ হতে না চাইলে এক চিমটি খাবার সোডা দিয়ে দিন। মাছ ভাজার সময় তেল ছিটলে একটু লবণ দিয়ে দিলে আর তেল ছিটবে না।

গরম তেল ছিটকে শরীরে পড়লে সাথে সাথে ক্ষতস্থান ঠাণ্ডা পানির মধ্যে ২০-২৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে জ্বলুনি কমে যাবে। খেজুরের গুড় দুধে দিলে অনেক সময় ফেটে যায়। এজন্য দুধের সঙ্গে মেশানোর আগে গুড় পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে তারপর মেশান। দুধ ফাটবে না। কাঁচা মুগডাল ভেজে পানিতে ধুয়ে নিলে কালো হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। ডাল রান্না করার আগের রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দ্রুত সেদ্ধ হবে। কাঁচা মরিচ বোঁটা খুলে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন তাজা থাকে। মাছ ভাজার সময় একটু ময়দা বা চালের গুঁড়া মিশিয়ে ভাজলে খেতে মচমচে হবে।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *