কম সময়ে বেশি কাজ করতে সময় ব্যবস্থাপনা

আনিসুর রহমান এরশাদ

অনেকেই হেলায়-খেলায়-অবহেলায়-অথবা অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত থেকে মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। আসলে সময়ই জীবন। সুতরাং সময় যার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় তার জীবনটাই মূল্যহীন। জীবনটাকে যিনি অবমূল্যায়ন করবেন তিনি তো অপমানিত হওয়ার যোগ্য। নীচু স্তরের মানুষেরা টাকাকে যেভাবে মূল্যবান মনে করেন, সময়কে সেভাবে  দেখেন না। জীবনের গত হয়ে যাওয়ার আগে প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে অন্তিম মুহূর্তের ৫টি মিনিটের মূল্য বুঝে কোনো লাভ হয় না। যারা সময়ের সে দাবি পূরণ করে সময়োপযোগী করে নিজেকে গড়তে পারে তারাই এগিয়ে যায়। আসলে পিছিয়ে পড়া মানুষের বড় শত্রু সে নিজেই। নিজের অলসতা, আরামপ্রিয়তা, অদূরদর্শিতা ও স্বভাবগত ত্রুটির কারণে সে পিছিয়ে পড়ে। তাই সময়কে কাজে লাগান। টাকার চেয়ে সময়ই বেশি মূল্যবান। চার্লস ডিকেন্স১২৪ বলেন, ‘বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।’ কেননা প্রবাদ আছে, সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই সীমিত সময়ের মধ্যে আরো বেশি কাজ করার কলাকৌশল রপ্ত করতে হবে।

সময়ের মূল্য

পাশ্চাত্য দেশে বলা হয় ‘সময়ই অর্থ’। সর্বত্রই সময়ের মধ্যে অর্থ নিহিত। সময় হলো কাজের আত্মা। এটা মানুষের জীবনের মৌলিক কাঠামো। সর্বত্র মানুষের সাফল্যের পথ। সময়ই সকল অর্থের মূল উৎস। সময়ের প্রকৃত নাম মূলত জীবন। সময় ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র হচ্ছে সময়ের প্রকৃতি ও গুরুত্ব অনুধাবন করা। সময় হলো অদ্বিতীয় সম্পদ, সময় অস্থিতিস্থাপক, সময় ক্ষয়প্রাপ্ত, যা কখনো জমা থাকে না, সময় কখনো প্রতিস্থাপনযোগ্যও নয় এবং এর কোনো বিকল্পও নেই। আল্লামা সুয়ুতি রহ.১২৫ ‘জামউল জাওয়ামে’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, ‘প্রতিনিয়ত সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘দিন’ এই ঘোষণা করতে থাকে যে, যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে যেন সে তা করে নেয়। আমি কিন্তু আর ফিরে আসব না। আমি ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, রাজা-প্রজা সকলের জন্য সমান। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় ব্যবহার করতে শিখিনি। তবে আমার সঙ্গে যে সদ্ব্যবহার করবে সে কখনও বঞ্চিত হবে না।’

সময়ের সদ্ব্যবহার

সময়ের সদ্ব্যবহারেই সাফল্যের সিঁড়ি। জীবন কতগুলো মুহূর্তেরই যোগফল। এই মুহূর্তগুলোকে যে যত বেশি কাজে লাগাতে পারে, তার মানব জীবন ততবেশি সার্থক। মানুষ যখন তার স্বল্পস্থায়ী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য বোঝে, আর তাকে ফলপ্রসূ কাজে লাগায়, তখনি তার জীবন হয় সার্থক। যারা অলস যখন সে কাজ করা দরকার তখন সেই কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে না, তারা ইহলোকে এবং পরলোকে উভয় জগতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলে যাওয়া মুহূর্তগুলো যেমন মানুষের জীবনে ফিরে আসে না, তেমনি ঐ মুহূর্তগুলোতে করণীয় কাজও জীবনে আর করা হয়ে ওঠে না। তাই সময়ের সদ্ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে।

বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে যেমন বিশাল সমুদ্র, কণা কণা বালি নিয়ে মরুভূমির বিস্তৃতি তেমনি অসংখ্য মুহূর্তের সমন্বয়ে মানবজীবন। এই সময়কে যতটা সতর্কতার সাথে কাজে লাগাতে পারবেন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ততটাই সহজ হবে। জগতে যারা বড় তারা সময়ের অপচয় সহ্য করবেন না। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে ব্যক্তিগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অপরিকল্পিত জীপন-যাপনের চেয়ে সময়কে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা দরকার। নিজেকে গড়ার জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়েই সুচিন্তিতভাবে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, যুগোপযুগী, কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সময়কে  কাজে লাগানো

সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উপায়গুলো হচ্ছে : সময়কে কোন কাজে না লাগিয়ে সময় হত্যা থেকে বিরত থাকা। সময় ব্যয়ের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে সময় বাঁচালে বছরে ৩৬৫ ঘণ্টা সময় বেশি কাজ হবে। অগ্রাধিকার তালিকা না করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ থেকে গেছে আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়। কোন কাজ কোন সময় করা হবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করা। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা। বিলম্বিত না করে সময়ের কাজ সময়ে করা। কাজের সময়সূচি সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট ও লিখিতভাবে হওয়া। একেবারে প্রান্তিক সময়ে বা শেষ সময়ের জন্য কাজ রেখে না দেয়া। এক সাথে অনেক কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করা। গাড়িতে বসে প্রয়োজনীয় ফোন করার কাজটা সেরে নেয়া।

কার্যতালিকা করা

সময় ব্যবস্থাপনার কার্যকর পন্থা হচ্ছে- যাবতীয় কাজ সমূহ সম্পাদনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট সময় গুছিয়ে এবং পরিকল্পনা করে নেওয়া। এতে কাজ সহজ হবে, কম সময়ে অধিক কাজ করতে সক্ষম হবেন এবং কর্মদক্ষতাকে বাড়াতে সক্ষম হবেন। সময় ব্যবস্থাপনার জন্য না বলতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক বিষয়ে ব্যস্ততা মূল কাজ থেকে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। একইসাথে একাধিক কাজ কখনো কাজকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে না। একটি কাজ সম্পন্নের পর অপর একটি কাজ সময়মত সম্পন্ন করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটানো সময়কে সীমিত  করে সময় বাঁচান। একটি কার্য তালিকা তৈরি করুন।

কার্যতালিকার সবগুলো কাজ না করে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনভিত্তিক কাজগুলো করার দিকে মনোযোগ দিন। কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট দিন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করুন। কখন, কবে কোন কাজটি করবেন, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন। নিজের কাজের পরিকল্পনা রাখুন এবং নিজের সময়কে পূর্ণভাবে কাজে লাগান। যদি কখনো কোনো কাজের জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হয়, তখন আপনি সময়কে কাজে লাগাতে পারেন কোনো কাজের নোট তৈরির মাধ্যমে বা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল আইডিয়ার কথা চিন্তা করে। অথবা সকল কাজ হতে অবসর হয়ে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় গ্রহণ করতে পারেন। আপনার কাজগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বরাদ্দ করুন। নিজেই সব কাজ করার চেষ্টা করবেন না। যথোপযুক্ত মানুষদের হাতে কাজগুলো বন্টন করুন।

সময়সূচি  করা

সময়সূচি  বাস্তবায়িত না হবার কারণগুলো হচ্ছে-অবাস্তব সময়সূচি, অস্পষ্ট সময়সূচি, ডেড লাইনের আগ মুহূর্তের জন্য কাজ রেখে দেয়া এবং  প্রতিদিন কাজ না করে এক সাথে করার জন্য কাজ জমিয়ে রাখা ইত্যাদি। তাই সময়সূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন- আত্মবিশ্বাস, অ্যাডভান্সড পরিকল্পনা করা, সময়সূচি নিজের সুবিধা অনুসারে তৈরি করা, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা, অন্যান্য কাজের সাথে খাপ খাইয়ে সময়সূচি করা এবং কাল নয় আজই শুরু করা।

পরিকল্পনা করা

পরিকল্পনাবিহীন কাজ মানেই উদ্দেশ্যবিহীন কাজ। লক্ষ্য বা টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সময় ব্যবস্থাপনার সুন্দর পরিকল্পনা। সময় ব্যবস্থাপনা হলো প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য সময়কে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা। ক্লান্তি এড়ায়ে কাজ ঠিকমত সম্পন্ন করতে কাজের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর বিরতি নিন। বিরতির সময় কম্পিউটারে যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাকা নিশ্চিত করুন। কোনো কাজ করার পরিকল্পনায় সময় নিয়ে কাজটি সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝে এবং এর বাস্তবতা সম্পর্কে হিসাব করে নিন। যদি কেউ দ্রুত ও দক্ষতার সাথে কোনো কাজ করতে সক্ষম হয়, তবে তার উপর আপনার কাজটি অর্পণ করুন।

সময়োপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে বাৎসরিক, মাসিক, দৈনিক ও ঘণ্টাসহ বিভিন্ন মেয়াদে বিন্যাস করুন। যে কাজে যতটুকু সময় ব্যয় করবেন তার ফলটুকুও নিয়ে নিতে সচেষ্ট হবেন। সময় ব্যবস্থাপকের চাই দৈনন্দিন কার্যকর রুটিন, যা তৈরির ক্ষেত্রে অতি আবেগী হবে না, ধীরে ধীরে কাজের ভার বেশি গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করবে, সাময়িক লাভজনক কিন্তু ভবিষ্যৎ অকল্যাণকর এমন কর্ম হবে না। দৈনন্দিন সময় ব্যয়ের কার্যতালিকা রাখুন ও দেখুন। মহাবীর আলেকজান্ডার বলেছেন, মৃত্যুর পর দাফনের সময় আমার হাত দুটো উন্মুক্ত করে রাখবে। তাহলে মানুষ বুঝতে পারবে, যে ধনদৌলতের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছি মৃত্যুর সময় তা না নিয়ে খালি হাতেই চলে যেতে হচ্ছে।

শ্রেণীবদ্ধ করা

কাজের পরিকল্পনায় থাকবে আজ/এ সপ্তাহে/এ মাসে/এ বছরে কী কী কাজ করবো। অতঃপর গুরুত্বানুসারে শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে। যেমন: আজই করা দরকার এবং আমাকেই করতে হবে। আজই করা দরকার তবে অন্যের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। আগামী কাল করলেও চলবে। কম গুরুত্বপূর্ণ, করলে কল্যাণ আছে না করলে ক্ষতি নেই।

পরিকল্পনা প্রণয়ন

পরিকল্পনা প্রণয়নে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যেমন: ভিশন হলো- স্বপ্ন, কেন প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে, কী করতে চায়?   ভিশনে পৌঁছার জন্য বর্তমানে যা করণীয় তাই মিশন ।  উদ্দেশ্য হলো কোনো কাজের চূড়ান্তরূপ।   লক্ষ্য অর্জনের উপায় হলো কৌশল।  নীতি বা পলিসি হলো কোনো কিছু করার বা না করার নির্দেশনা।  কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কার্যক্রম নেয়া হবে তা নির্ধারণ করা বিধি। ভবিষ্যতে কাজ সম্পাদনের জন্য উত্তম প্রণালী ঠিক করে দেয় কার্যপ্রণালী । পরিকল্পনা যখন সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হলে তা হয়ে যায় বাজেট।

লেখক পিটার ড্রাকার সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। ১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন ২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন ৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন।

সময়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর টিপস হচ্ছে- কাজের তালিকা তৈরি করা,  নিজের সক্ষমতাকে জানা, একটি ভালো পরিকল্পনা করা, পরিকল্পনাকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা, কাজের পর্যালোচনা করা,  সময় ব্যবস্থাপনার টিপসসমূহ মেনে চলা, ঘুমানোর আগে সারা দিনকে পর্যালোচনা করা, প্রতিদিনের একই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকা, সম্ভব হলে কিছু কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করানো এবং সময় এবং কাজকে উপভোগ করা ইত্যাদি।

কর্মস্থলে সময় ব্যবস্থাপনা

কর্মস্থলে সফলতা পেতে চাইলে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে হয়। কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে অন্য কাজগুলো যেমন পিছিয়ে যেতে পারে, তেমনি এর প্রভাব পড়তে পারে পুরো প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে। কর্মস্থলে সময় ব্যবস্থাপনার মানে হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজগুলো শেষ করার লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত সময় ভাগ করে নেওয়া এবং প্রতিটি সেকেন্ডের সর্বোত্তম ব্যবহার করা। যখন কাজের পরিমাণ বেশি হয়, তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজগুলোকে ভাগ করে নিতে হয় গুরুত্ব অনুসারে। কে কাজ করবে এটা পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট করা দরকার। তা করার জন্যই কাউকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হবে।

সময় ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি ধাপ হলো স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলোকে আলাদা করে নেওয়া এবং সে অনুসারে কাজ করা। কাজের তালিকা থেকে গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো ছেঁটে ফেলুন। কাজের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো। সময় মানুষের সবচেয়ে সীমিত সম্পদ। কোনো কাজের পরিকল্পনাই কাজের অর্ধেক। সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন সময়ের পরিকল্পিত ব্যবহার ও সুন্দর পরিকল্পনা।

সময় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

বলা হয়ে থাকে- আপনি সময়কে ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না; তাই সময় অনুসারে আপনার নিজেকেই ব্যবস্থাপিত হয়ে যেতে হবে। সুতরাং সময় ব্যবস্থাপনার কৌশলের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় লক্ষণীয়- টেলিফোনে সাক্ষাতের সময় নিশ্চিত করা। কাগজ, কলম, নোট বুক সাথে রাখা।

কিছু কাজ অন্যকে দিয়ে করান। গড়িমসি বন্ধ করা। কিভাবে সময় নষ্ট হয় তা খুঁজে বের করা। গুরুত্ব অনুসারে কাজের ক্রম নির্ধারণ।  রুটিন তৈরি করা ও যতটা সম্ভব মানার জন্য চেষ্টা করা। কাজের জন্য সময় নির্ধারণ। কাজ হওয়া উচিত পরিকল্পনার আলোকে। শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে শিখে নেয়া।  ফাইলপত্রসহ সবকিছুর সঠিক আর্কাইভিং করা।  বড় কাজকে ছোট ছোট পার্টে ভাগ করে ফেলা। ছুটির দিন বা অবসরের দিনকে কাজে লাগানো। তাড়াতাড়ি করুন, কিন্তু তাড়াহুড়া করবেন না। কাজের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা জরুরি।

সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কতিপয় বিবেচনার বিষয় হচ্ছে- যে কোনো কাজের মধ্যে সময় বাঁচানোর চেষ্টা। সময় ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। কাজ দ্রুত শুরু করা। কাজ ও দায়িত্ব বন্টন। ভ্রমণের সময় স্টাডি করা। এক সাথে অনেক কাজ করা। কোনো কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় না দেয়া ইত্যাদি।

ফোর-ডি ফর্মুলা

অনেক জরুরি কাজের মধ্য থেকে সবচেয়ে জরুরি কাজটা খুঁজে বের করা। স্বাভাবিকভাবে অফিসে থাকাকালীন আমাদের অনেক কাজ করা লাগে। এই প্রসঙ্গে সময় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হ্যারল্ড টেইলর বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বেছে নিতে হবে।

১. নিজেকে না বলুন – গুরুত্ব বিবেচনা করে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ফেলে রাখুন ও ‘আমি এখন করব না’ এই বিষয়টি নিজেকে বলতে হবে। এই ব্যাপারে দৃঢ় থাকতে হবে।

২. সহকর্মীর সহযোগিতা নেয়া – সব কাজ নিজেকে করতে হবে বিষয়টি ঠিক তেমন না। কোনপ্রকার সংকোচ ছাড়াই যে কাজটি অন্যকে দিয়ে করানো যাবে তাকে দিয়ে করাতে হবে। ফলে অল্প সময়ে অনেক কাজ করার সুযোগ থাকবে।

৩. এই মুহূর্তে করার দরকার নাই- কিছু কাজ আছে যেগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে না করলেও চলবে।

৪. এই মুহূর্তে করা দরকার- যে কাজটি ঠিক এই মুহূর্তে করার কারণে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।

টিএ-ডিএ পদ্ধতি 

এই পদ্ধতি যে কাউকে ভবিষ্যতের আসন্ন সমস্যা মোকাবেলায় সতর্ক হতে সাহায্য করবে। আর তাই যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, এই পদ্ধতি ব্যবহার খুবই কার্যকর।

১. গভীর মনোনিবেশ- যথাসময়ে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর গভীর চিন্তা সকল বিষয় সামনে নিয়ে আসে।

২. পরামর্শ করুন- কাজের বিষয়ে জ্ঞান আছে এমন একজন পরামর্শকের সাথে পরামর্শ করা।

৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ – সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় ফলাফল কেমন হতে পারে তার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে।  সিদ্ধান্ত গ্রহণই হচ্ছে মূল কাজের অর্ধেক।

৪. সিদ্ধান্তের পর কাজে নেমে পড়ুন- গভীর মনোনিবেশের ওপর তথ্য বিশ্লেষণ এবং সর্বোপরি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর কাজে নামা।

সময় ব্যবস্থাপনার উপকারিতা

পরিকল্পিত সময় ব্যয় করার উপকারিতা হচ্ছে- অল্প সময়ে সুন্দরভাবে অধিক কাজ করা সম্ভব। গুরুত্বানুসারে কাজ করতে সাহায্য করে। অপরিকল্পিত সময় ব্যয় থেকে বিরত রাখে। সময়-সুযোগ কাজে লাগাতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়। ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব হয়। অগ্রগতি পর্যালোচনা সম্ভব হয়। রাসূল সা: পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের ওপর অগ্রাধিকার বা গুরুত্ব দেয়ার জন্য বলেছেন : ‘বৃদ্ধকাল আসার আগে যৌবনের, অসুস্থতার আগে সুস্থতার, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার, ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবসরের ও মৃত্যু আসার আগে জীবনের।’১২৮

সময় বাঁচানোর কৌশল

প্রত্যেকটি জিনিস তার নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। একটি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা। সফলতার জন্য বারবার চেষ্টা করা। বদঅভ্যাস ত্যাগ করা। কী ধরনের কাজ তা পরিকল্পনা করা। সময়ের ধারাবাহিক ব্যবহার করা। সময় নষ্টের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা। বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপমুক্ত থাকা। পরিকল্পিত সময় ব্যয় করতে না পারার কারণ হচ্ছে: জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সিরিয়াস না হওয়া। অগ্রাধিকার তালিকা না থাকা। দৈনিক পরিকল্পনা না থাকা। খুঁত খুঁতে স্বভাবের মন থাকা। ব্যক্তিগতভাবে অগোছালো হওয়া। হঠাৎ প্রতিবন্ধকতা আসা। যেভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করবেন তা হচ্ছে- ভারসাম্যপূর্ণ করা, কাজের পরিকল্পিত সময় নির্ধারণ, কাজের মধ্যে বৈচিত্র্য আনা, একটি কাজের সময়সূচি পরিবর্তিত হলে অন্যটি পরিবর্তন না করা,  কাজের রিভিউ/পর্যালোচনা এবং স্টাডি টাইম-টেবিল যথাযথভাবে কাজে লাগানো ইত্যাদি।

সময় বাঁচানোর কৌশল নিয়ে হিশাম আল তালিবের১২৯ পরামর্শ হচ্ছে: দিনের শুরুতে সকল কাজের লিখিত পরিকল্পনা নেয়া এবং হয়ে গেলে একটি একটি করে কেটে নেয়া। টেলিফোনে না জানিয়ে কারো কাছে না যাওয়া। কাগজ কলম বা ছোট নোট সব সময় সাথে রাখা। বিশ্রামের সময়কে নামাজের সময়ের সাথে মিলিয়ে পরিকল্পনা করা। লেখাপড়া করে, কোনো কিছু মুখস্থ করে বা গঠনমূলক কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করা। সাক্ষাৎ-সূচি করার সময় উভয়ই যেন সঠিক সময় ভালোভাবে বুঝে নেন সে দিকে লক্ষ্য রাখা।

দূরে যেতে হলে সম্ভাব্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাতে রাখা। যে কোনো কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে নেয়া। সময়ক্ষেপণ হতে পারে এমন চিন্তাশূন্য এবং আত্মকেন্দ্রিক লোক এড়িয়ে চলা। চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কাজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে না যাওয়া। কারো সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে কথা বলতে যাওয়া এবং কত সময় কথা বলবেন তা জানানো। নিজেই নিজের ম্যানেজার-ব্যবস্থাপক হওয়া।

দৈনন্দিন সময় ব্যবস্থাপনা

পরিকল্পতিভাবে দিন শুরু করুন। যেকোনো কাজের জন্যই তাড়াহুড়ো করে সকালে বের হবেন না। ঘুম থেকে জলদি উঠুন এরপর বসুন ঠান্ডা মাথায় সারাদিনের পরিকল্পনাগুলো সাজিয়ে নিন। সকাল বেলায় নিজের সাথে বসে নিজের কাজের জন্য কোন সময়ে কোন কাজগুলো করবেন সেগুলোর পরিকল্পনা সারা দিনের টনিক হিসেবে কাজ করবে।

জরুরি কাজগুলোর পাশাপাশি অসমাপ্ত ও অর্ধসমাপ্ত কাজগুলোর একটি তালিকা করে ফেলুন। বড় বড় কাজগুলো একবারে করতে গেলে অনেকসময়ই কাজের উদ্যমশীল মনোভাব হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরোপুরি প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য তাই কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করুন। দিনের শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন কোন কাজগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সময় বিভাজন সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আগে করুন। প্রয়োজনীয় কাজে থাকার সময়গুলোতে অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোকে না বলুন। যেকাজ গুলোতে আপনার অধীনস্থরা ভালো সেই কাজগুলো অধীনস্থদের ভাগ করে দিন। সেই সময়ে আপনি যেকাজে দক্ষ সেইকাজগুলো করুন। নিজের পছন্দের কাজের জন্য সময় বের করুন। ভালো ঘুম, পরিমিত খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম ও সামাজিকতার জন্য সময় রাখুন।

একটানা কাজ মনের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে দাঁড়াবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য বড় কাজ বা একটানা কাজের মাঝে একটু বিরতি নিন। অবিরাম কাজ করে যাবেন না। সময়টাকে গুছিয়ে নিন কোন সময়ে আপনি বিরতি নিবেন। তবে অবশ্যই একটানা কাজের মাঝে খানিকটা বিরতি নেবার চেষ্টা করবেন।

প্রতিদিন টানা দশ মিনিট অসমাপ্ত কাজগুলো করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, দেখবেন ধীরে ধীরে সব কাজই শুরু করার সাহস এবং শেষ করা পর্যন্ত মনোবল আপনার আয়ত্তে এসে গেছে। প্রতিটি দিন শেষ করুন আগামীকালের পরিকল্পনায়।

About আনিসুর রহমান এরশাদ

শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

View all posts by আনিসুর রহমান এরশাদ →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *