আনিসুর রহমান এরশাদ
সত্যকে জেনে বুঝে বিকৃত করা, জেনে শোনে বিষপানের মতোই ক্ষতিকর। অসৎ পথে পরিচালিতরা বিভ্রান্ত। অঙ্গীকার ভঙ্গকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। অহংকারেই পতন, সীমালঙ্ঘনেই পদস্খলন। সত্যপন্থীরা ধোঁকা দেয় না, ধোঁকা খায় না। প্রকৃত শিক্ষিতরা সৎপথের অনুসারী, প্রকৃত জ্ঞানীরা মিথ্যাবাদী হতে পারে না। অন্তরের ব্যাধি বৃদ্ধি পেলেই মানুষ বিভ্রান্তের মতো ঘুরে ফেরে। উত্তম জীবিকা ও নিরাপদ আবাস ছাড়া উন্নত জীবন-যাপন হয় না।
যে সৃষ্টিকে কষ্ট দেয়, সে স্রষ্টাকে সুখ দিতে পারে না। যিনি সব গোপন ব্যাপারই জানেন, লজ্জাতো তাকেই বেশি করা উচিৎ। ঘৃণা থেকে ভয় নেতিবাচক, আর ভক্তি থেকে ভয় ইতিবাচক। অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে শ্রেষ্ঠত্ব কমে না। যে বিপদগ্রস্ত বিপদ থেকে উদ্ধারকারীর প্রতি অকৃতজ্ঞ, তার কাছে কৃতজ্ঞতার আশা করা দুরাশা মাত্র। ক্ষমা পেয়ে যে কৃতজ্ঞ না হয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে, সে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য ছিল না। শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে পুরস্কৃত হবার আশা করা মহাঅপরাধ। পুরস্কৃত হবার জন্য আগে তিরস্কৃত হবার পথ ছাড়তে হবে।
যে নিজের প্রতিই জুলুম করে, অন্যের প্রতি জুলুম করা তার জন্য স্বাভাবিক। কারো ক্ষতি করে তার কাছে নিজে সাহায্য পাবার আশা করা অযৌক্তিক। সত্যকে মিথ্যার সাথে মেশানো, হালালকে হারামের সাথে মেশানোর মতই। অবৈধ উপার্জনে অতৃপ্তি বাড়ে, বৈধ উপার্জনে তৃপ্তি বাড়ে। নিজে দুর্নীতি করে অন্যকে সুনীতিতে অটল থাকার উপদেশ দান মূর্খতা থেকে উৎসারিত। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না হলে নিরপরাধীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। অনুশোচনাহীন অপরাধীকে ক্ষমা করায় ভিকটিমের উদ্বিগ্নতা বাড়ে।
যারা অর্জনে কষ্ট স্বীকার করে না, তাদেরকে সহজদানের দীর্ঘমেয়াদী কুফল মারাত্মক। অন্যের শাস্তি দেখে তৃপ্ত হৃদয়ের চেয়ে নিজেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে পারা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। বিনয়ীর নত শির দরজা দিয়ে শান্তির ভূবনে প্রবেশ করে, ঔদ্ধত্য শির দরজা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অশান্তি বৃদ্ধি করে। নিজের মান বাড়াতে অন্যের অবমাননা চরম নির্বুদ্ধিতা। সস্তা মানসিকতার মানুষ সামান্য মূল্যেই দামি কিছুও বিক্রি করে। যে যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজের সময়কে ব্যয় করে, তার জীবন তত বেশি মূল্যবান। অধিকার হননে সহযোগিতাকারীরা অধিকার লঙ্ঘনকারী।
ভালো কিছুকে খারাপ কিছুর সাথে বদলানো, সম্মান-মর্যাদার পরিবর্তে ঘৃণা-লাঞ্ছনাকে বেছে নেয়ার মতোই। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনের পরিণতি তিরস্কার ও দুঃখ। যার কিছু নেই তার ভয়ও কম, যার যত আছে তার ভয় তত বেশি; এটি হারিয়ে ফেলার ভয়। অসাবধানতা ও অসতর্কতা বাড়লে মুক্তির আনন্দও স্বাধীনতা হারানোর বেদনায় পর্যবসিত হতে পারে। অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রার্থনাকারী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ক্ষতিগ্রস্তরাই। অকৃতজ্ঞ ও হিংসুক মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষার চেয়ে উপকারী পশুর প্রতিপালন করা অধিক নিরাপদ।
অতিরঞ্জিতকারীরা যখন ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয় তখন নিরানন্দে তারা দিশাহীন উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় আচরণ করে। অনেক পাথর থেকেও ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়, তবে অনেক কঠিন হৃদয়ই মৃত্যুর দেখা না পাওয়া পর্যন্ত নরম হয় না। শুধু অলীক বা কাল্পনিক ধারণা নিয়ে বাস্তব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা মিথ্যা। যে সমাজ উৎকৃষ্ট জিনিসের নিকৃষ্ট মূল্য দেয় এবং নিৎকৃষ্ট জিনিসের উৎকৃষ্ট মূল্য দেয় সে সমাজ ভীষণ দূষিত। বিচারক যদি হয় পথভ্রষ্ট, অপরাধী দেখে আশার আলো, ভিকটিম কোনো কূল-কিনারা পায় না। প্রতিশ্রুতি ভুলে যাওয়া যতটা না স্মৃতিভ্রষ্টতা, তারচেয়ে বেশি উপেক্ষা।