সামাজিক নেতৃত্ব বিকাশের নতুন নতুন পথ খোঁজে বের করা দরকার। কারণ সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে, সম্পদের ঘাটতি বাড়ছে, সামাজিক জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সব ধরণের সামাজিক নেতাই গুরুত্বপূর্ণ।
একক সামাজিক নেতৃত্ব, যৌথ সামাজিক নেতৃত্ব কিংবা সামাজিক উদ্যোক্তা নেতৃত্ব। সামাজিক নেতৃত্বের সোস্যাল জাজমেন্ট স্কীলসহ এমন কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে যা অন্যান্য সেক্টরের নেতৃত্ব থেকে তাদের আলাদা করে। সামাজিক নেতৃত্বের বিকাশ চাইলে সামাজিক নেতৃত্ব চর্চা বাড়ানো বেশি প্রয়োজন।
স্বেচ্ছাসেবায় মাঠে-ময়দানে থেকেই থেকেই সামাজিক নেতা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে। সমস্যার সমাধানেই সামাজিক নেতৃত্বের উন্নতি ঘটে। সামাজিক কী কী সমস্যা রয়েছে? সেসব সমস্যার সমাধানে কী কী কাজ হচ্ছে এবং কী কী কাজ কিভাবে হতে পারে? সামাজিক নেতৃত্ব সামাজিক উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারেন, সামাজিক ব্যবসা করতে পারেন, সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারেন, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে পারেন কিংবা সমাজসেবা-মানবসেবার কাজও করতে পারেন।
সামাজিক নেতৃত্বে সমাজের পরিবর্তন হয়, সামাজিক সংগঠনে তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ হয়, সামাজিক আন্দোলনে সমাজের মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তার সুফল ভোগ করে। সমাজ এখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে নানা রকম ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য এমন নেতৃত্ব দরকার, যারা ঘূর্ণিঝড়ের সময় যেমন এগিয়ে আসবেন, তেমনি ইভ টিজিং, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম প্রতিরোধে কাজ করবেন।
যৌতুক সমস্যার বিরুদ্ধে অনেক বলা হচ্ছে, ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তার পরও যৌতুক প্রথা বন্ধ হচ্ছে না। যৌতুকের বিরুদ্ধে তরুণদের মোটিভেট করতে হবে। দুর্নীতি এবং সমাজের বিভিন্ন অপকর্ম, কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্যও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সমাজের অবহেলিত নারী, শিশু-কিশোরদের এগিয়ে নিতে হবে।
সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে হলে পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, অনেক বেশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন লাগবে এবং মননশীলতা বাড়াতে চর্চা বাড়াতে হবে। সুপ্ত প্রতিভা ও চিন্তা বিকাশে নজর দিতে হবে। ভালো কাজ ও ভালো চিন্তাকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
যে কালোটাকার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে ও বৈষম্য জিইয়ে রাখবে তার দ্বারা সামাজিক নেতৃত্ব দান হবে না। টিভি কিংবা ফেসবুকের সামনে বসে বসে সামাজিক নেতৃত্ব হবে না। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগও খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। অনেকে ভেজাল বিরোধী সামাজিক আন্দোলন করছেন, প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করছেন, অনলাইন শিক্ষা দিচ্ছেন, পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তোলছেন- এগুলো খুবই সময়োপযোগী উদ্যোগ।
সামাজিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের পরিবর্তন জরুরি। তারপর নিজের পরিবারকে পরিবর্তন করতে হবে। তারপর আশপাশের সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে যেতে হবে। সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। সামাজিক নেতৃত্বের বিকাশের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে সমাজ।
সামাজিক নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট অনেক তত্ত্বই রয়েছে। যেমন- নেট মডেল অব সোস্যাল লিডারশীপ, সোস্যাল চেঞ্জ লিডারশীপ থিউরী- এসসিএলটি, ফ্যাসিলিটেটিভ সোস্যাল চেঞ্জ লিডারশীপ থিউরী- এফএসসিএল, ইন্টিগ্রেটেড সাইকোলজিক্যাল থিউরী, ট্রানজেকশনাল এন্ড ট্রান্সফরমেশনাল থিউরী, সোস্যাল আইডেন্টিটি থিউরী অফ লিডারশীপ ও নেটওয়ার্ক থিউরী অফ লিডারশীপ।
আনিসুর রহমান
০২-০৮-২০২১