আনিসুর রহমান এরশাদ
পৃথিবীতে মৃত্যুর মতো সত্য আর কিছু নেই। সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে দুনিয়ার মায়ারজাল ছিন্ন করে। ক্ষণস্থায়ী জীবনকে কেউ স্থায়ী করতে পারবে না। জীব মাত্রই মৃত্যু অনিবার্য। এমন কেউ নেই যাকে দুনিয়া ছেড়ে পরজগতে পাড়ি জমাতে হবে না। প্রত্যেকেই মরণশীল। মওতের শরবত সকলেরই পান করতে হবে। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হয় জীবন নামক গল্পের। জীবনে একমাত্র নিশ্চয়তা মৃত্যু।
আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কী আছে- যাকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে না। নেই। কারণ জন্ম মানেই নিশ্চিত মৃত্যু! মৃত্যু অবধারিত! আছে কী কারো ক্ষমতা? ইহজীবনকে স্থায়ী করার। মৃত্যু যন্ত্রণা এড়ানোর। নেই। কারণ- স্রষ্টার কাছেই ফিরতে হয়।যতই বেদনাদায়ক হোক চলে যাওয়া।
মৃত্যু জাগতিক জীবনের সমাপ্তি। পরবর্তী জীবনের প্রবেশদ্বার। জাগতিক দেহ হতে আত্মার পৃথকীকরন! দুনিয়া হতে আখিরাতের উদ্দেশ্যে আত্মার যাত্রা। চলমান জীবন প্রক্রিয়ার একটি পরিবর্তনীয় অবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবেই।’ তাইতো বিশ্বাসীদের কাছে- মৃত্যু মানেই জীবনের চূড়ান্ত সমাপ্তি নয়। মৃত্যু মানে অনন্ত জীবনের শুরু।
একজন বিশ্বাসী মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় না। ভয় পায় মৃত্যু-পরবর্তী জীবন। প্রস্তুত থাকে সেই জীবনের জন্য। চিন্তা করে পরবর্তী জীবনের পরিণতি! মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হলো নিজেকে ভালো কাজে নিয়োজিত করা। মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। পাপ কাজ পরিহার করা। অতীত পাপ-ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
জীবনতো চোখের কয়েকটি পলক মাত্র। মৃত্যুকে দূরে রাখা অসম্ভব। নির্ধারিত সময়েই সে আসবে। মৃত্যু যেমন অপরিহার্য, তেমন অনিশ্চিত তার সময়কাল। কেউ জানে না কখন তার মৃত্যু হবে। তাইতো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় সব সময়। প্রতিটি মুহূর্ত! মৃত্যু কামনা অবৈধ। আত্মহত্যাও নিষিদ্ধ।
কেউ বলতে পারে না- কার জন্ম হবে! কিন্তু সবাই জানে- কার মৃত্যু হবে; শুধু জানে না কখন হবে। সব মৃত্যুই প্রিয়জনের চোখে সৃষ্টি করে অশ্রুরবান। হৃদয়ে জাগায় কষ্টের তুফান। স্বজনের বিয়োগ মানেই হৃদয়ে যন্ত্রণা।অন্তরে বয়ে যাওয়া বেদনা ঝড়! গভীর শোক! ব্যথিত হৃদয়! মর্মাহত হওয়া! দুঃখের সাগরে ডুবা।পীড়াদায়ক!
নশ্বর পৃথিবী থেকে যিনি চলে যান- তার সাথে দেখা হয় না পৃথিবীর কারো।শুধু আত্মার চোখে দেখা! চিরজীবনের কথা স্মরণ! মৃত্যুর পথ স্পষ্ট হওয়া!শুধু- কান্নায় ভেঙ্গে পড়া। অশ্রুসজল হওয়া! হৃদয়ে ক্রন্দন ধ্বনি! আর রুহের মাগফেরাত কামনা। জান্নাতবাসি করার দোয়া।
অগণিত স্মৃতির ভিড়ে একসময় হারিয়ে যায় স্মৃতিগুলোও। তবে মনের মণিকোঠায় গভীরভাবে দাগ কাটা কিছু স্মৃতি হয় অম্লান! মানসপটে থাকে প্রজ্বোলিত! তারপরও থেকে যায়- নেক কাজের অস্তিত্ব! পায়- ভালো কর্মের উত্তম প্রতিদান। ব্যথিত হৃদয় আশার আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে!
যারা মৃত্যুকে যথাযথ গুরুত্ব দেন না। মৃত্যুকে ভুলে যান। ভুলে থাকতে চান। তারাই পার্থিব লোভ-লালসা ও ভোগবিলাসে মত্ত থাকেন। মৃত্যু স্মরণেই আসে না। অন্যায়, অনাচার, অপকর্ম ও অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না। স্বভাব, আচার, ব্যবহার ও কর্ম করেন মৃত্যু কখনোই তাদের নাগাল পাবে না ভেবেই।
অথচ বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় কারো হায়াত বাড়ে না। মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এর এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক হয় না। স্রষ্টা যতদিন হায়াত রেখেছেন ততদিনই কেউ বেঁচে থাকেন। তাই অনাচার, অপকর্ম ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকুন।