আনিসুর রহমান এরশাদ
মানব জীবন সাধারণত চার ভাগে বিভক্ত। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন। এর মধ্যে পারিবারিক জীবন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকে বাদ দিয়ে যেমন সমাজের কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রও অচিন্তনীয়। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক ভিত্তি এ পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। জাগতিক জীবনের আরাম-আয়েশ, শান্তি ও স্থিরতা, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনের ওপর নির্ভর করে।
সমষ্টিগত ভবিষ্যৎ নির্মাণ
পরিবারই মানুষকে প্রদান করেছে সমষ্টিগত ভবিষ্যৎ নির্মাণের মহান লক্ষ্য আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মানুষ এক মহান প্রাণী। বলা হয়ে থাকে- ‘পরিবারের চেয়ে বড় কোনো সম্পত্তি নেই। বাবার চেয়ে বড় কোনো পরামর্শদাতা নেই। মায়ের চেয়ে বড় কোনো জগৎ নেই। ভাইয়ের চেয়ে ভালো কোনো ভাগীদার নেই। বোনের থেকে বড় কোনো শুভ চিন্তক নেই। স্ত্রী থেকে বড় কোনো বন্ধু নেই। এ জন্যে পরিবারে জীবন অমূল্য’। পরিবার মানুষের জন্য যেমন নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তেমনি মানসিক প্রশান্তি লাভের স্থান।
পরিবার শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করে, সুন্দর-নিরাপদ-সমৃদ্ধ জীবনযাপন নিশ্চিত করে, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে, দেশকে ভালোবেসে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করে এবং মেধা-মনন-মানসিকতা-সৃজনশীলতার বিকাশ করে। খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুদের ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী করে। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে সমাজে ছেড়ে দিতে পারার মাঝেই মা-বাবা সার্থকতা খুঁজে পায়; যা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে।
সবার আগে পরিবার
গঞ্জালো হিগুয়াইন বলেন, ‘জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে পরিবার সবার আগে। পরিবার কিংবা সন্তানদের কেউ অপমান করলে তা একদম বরদাস্ত করব না।’
লিওনেল মেসি বলেন, ‘পরিবার আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবকিছুর ঊর্ধ্বে।’
চার্লস কোর্ট বলেছেন, ‘পরিবারের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের প্রশংসা সম্পদ এবং বিশেষাধিকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
পারিবারিক জীবনের সুফল হচ্ছে- বাবা গাছের ন্যায় পরম ছাঁয়া দেয়, মায়ের অতুলনীয় মায়া বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে, বোন শেখায় ভালোবাসা, ভাই স্বপ্ন পূরণের আশা জাগায়, অনিঃশেষ সম্পর্ক জনম ধরে চলতে থাকে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, ‘সবার আগে পরিবার’।
জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, ‘একটি সুখী পরিবার কিন্তু আগে একটি স্বর্গ।’
অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি বলেন, ‘আমার কাছে পরিবার সবার আগে। তাই যতটা সম্ভব পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। যারা আমার অভিনয় পছন্দ করেন, তাদেরও বলি পরিবারকে বেশি করে সময় দেবেন।’
সুসময়ে যেমন থাকে মমতার বন্ধন অসময়েও সর্বপ্রথম কাছে আসে পরিবার। পরিবার জুড়েই রয়েছে ভালোবাসার বন্ধন। এ ভালোবাসা সহজাত।
আদর্শ সমাজ গঠন
পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্দেশনা গড়ে ওঠে। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে পরিবারবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। মানুষের অস্তিত্বের জন্য যেমন পারিবারিক জীবন অপরিহার্য তেমনি আদর্শ সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত আদর্শ পরিবার গঠন। শিশুরা আদর্শবান হয়ে গড়ে ওঠে পরিবার থেকে।
পরিবারে যে শিশু সঠিকভাবে গড়ে ওঠে, সে বড় হয়েও সঠিক পথে অবিচল থাকে। যে শিশু পরিবারে খারাপ শিক্ষা পায়, সে বড় হয়ে খারাপ পথেই চলতে থাকে। এজন্য পিতা-মাতার উচিত সন্তানকে পারস্পরিক দায়িত্ব কর্তব্য, পারস্পরিক সহমর্মিতা শেখানো। এর পাশাপাশি সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, তাদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা এবং তাদের সঙ্গী-সাথী ও বন্ধুবান্ধবদের সম্পর্কেও নজর রাখা; যাতে অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ না হয়।
অনেকে পরিবারের বাইরে সফল কিন্তু ঘরকে ঠিকভাবে সামলাতে পারেন না, সুখী-সুন্দর পরিবার গঠন করতে পারেন না। বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তিও স্ত্রীর কাছে স্বামী কিংবা সন্তানের কাছে বাবা ছাড়া কিছুই নন। পারিবারিক পরিসরের অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলমান সম্পর্ক এবং যারা চলে গেছেন, যারা এখন আছেন ও যারা ভবিষ্যতে আসবেন তাদের মধ্যকার সেতুবন্ধ তৈরি হয় পরিবারের মাধ্যমেই। নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র পরিবারের স্বচ্ছতায়ই গড়ে ওঠে একটি সুন্দর সমাজ। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র করেই। তাই পরিবার যত সুন্দর হবে, সমাজ তত সুন্দর হবে।
সুনাগরিক উপহার দেয়
পরিবার সমাজেরও দর্পণ; কোনো জাতি-সমাজ-রাষ্ট্র কতটা সুসভ্য-ভদ্র-উন্নত তা প্রকাশ পায় পরিবারগুলোর মাধ্যমেই। যেখানে পরিবারগুলো সুন্দর সেখানকার সমাজও সুন্দর, রাষ্ট্রও সুন্দর। পরিবারের পরিবেশ ভালো মানে পরিবারের সদস্যরা ভালো মনের অধিকারী। জাতিকে ভালো মানের ও মনের সুনাগরিক উপহার দেয় পরিবার। একটি জাতিও অনেক পরিবারের সমন্বিত একটি পরিবার। পরিবার অপরাধ ও হিংস্রতা কমানোর শক্তিশালী মাধ্যম রূপে সামাজিকীকরণে বাস্তব ভূমিকা পালন করে।
প্রকৃতপক্ষে শিশুর সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য পরিবারের সান্নিধ্য খুবই প্রয়োজন। শান্তি-সুখ-তৃপ্তি-নিশ্চিন্ততা ও নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ লাভ এবং জীবনে সত্যিকারভাবে সাফল্য ও চরম কল্যাণ লাভে দরকারি কর্মপ্রেরণা সুস্থ ও সুন্দর পরিবার থেকেই আসে। আর প্রতিটি সুনাগরিকই হয় সৎ, নির্লোভ, সত্যবাদী ও স্বদেশপ্রেমিক।
সুনাগরিকদের থাকে- স্বজাতির প্রতি প্রেম, দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় সচেতন থাকে। এরা অহেতুক গাছপালা কাটেন না, বনাঞ্চল উজাড় করেন না, নদী ভরাট করেন না ও প্রবহমান পানিতেও মলমূত্র ত্যাগ করেন না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সচেষ্ট থাকেন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা-অখণ্ডতা-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চরম ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকেন, জীবন বাজি রেখে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন, সুষ্ঠু জীবনযাপন-শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলেন, দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন, যোগ্য ও উপযুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে সুবিবেচনার সাথে ভোট দেন এবং সুদিন ও দুর্দিনে সব অবস্থায়তেই রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন, বিধিবিধান মেনে চলেন।
সুনাগরিক সবধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকেন ও তা প্রশ্রয় দেন না, সন্ত্রাসে জড়িত হন না, দুর্নীতি করেন না, স্বজনপ্রীতি করেন না, নিয়োগ বাণিজ্য করেন না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেন, জনগণকে ভালোবাসেন, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশান না। অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখেন ও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। কখনো নিজের স্বার্থকে আগে না দেখে দেশের স্বার্থে নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
নিরাপদ জায়গা
ডা. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, ‘প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা, যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে।’
মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘ফ্যামিলি ইজ এভরিথিং।’
মাদার তেরেসা বলেন, ‘বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দেবার জন্য আপনার করনীয় কি? নিজের ঘরে ফিরে যান এবং আপনার পরিবারকে ভালোবাসা দিন।’
উইনস্টন চার্চিল বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে পরিবার ও আপন ঘরের মাঝেই সমস্ত গুণাবলী, মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণগুলোর বিকাশ হয়, শক্তিশালী হয় এবং টিকে থাকে।’
নিরাপদ খাদ্য, নিরাপদ পানি, নিরাপদ সবজি, নিরাপদ আশ্রয়, নিরাপদ ভ্রমণ, নিরাপদ যৌনতা সব কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হয় পরিবারকেই। অসুস্থতায় সেবা, ক্ষুধার্ত হলে খাদ্য, পিপাসার্ত হলে পানি, মৌল মানবিক চাহিদার পূরণসহ পরিবারেই মানব জীবন হয় বিকশিত ও পায় জীবন-সম্পদ-সম্মানের নিরাপত্তা।
মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র
আমাদের দিনের শুরু ও শেষটা হয় ঘর থেকেই। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত ও পরস্পরের সম-অধিকারসম্পন্ন যৌথ প্রতিষ্ঠান পরিবার গড়ে ওঠে উচ্চতর এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। উচ্চতর সামাজিক বিধান পরিবারই সমাজকে ইতিবাচক অর্থে কিছু দিতে পারে, যা সুস্থ সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পারিবারিক ভিত্তিকে কেন্দ্র করেই আত্মীয়, সামাজিক সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এবং ঐক্যবদ্ধ কাজের মাধ্যমে তা সার্থকভাবে রূপায়িত হয়।
শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন ও নারীর সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং মানুষের ব্যক্তিগত মানবিক উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে পরিবারের কোনো বিকল্প নেই। শুধু উন্নয়ন নয়, মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটলে, বুদ্ধি ও হৃদয়ের মুক্তি না ঘটলে, মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ না জন্মালে, মন-মানসিকতার উন্নতি না ঘটলে, সমস্ত উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যায়। অর্থনৈতিক মানদণ্ড নয়, সভ্যতার মানদণ্ডণ্ড জ্ঞান-সৃষ্টিশীলতা-শিল্পসাহিত্য। মানবিক উন্নয়ন ঘটলে মানুষ সভ্য হয়, সমাজ সভ্য হয়, দেশ ও জাতি সভ্য হয়। মানবিক উন্নয়ন হলে মানুষ অতিরিক্ত লোভে দুর্নীতিতে জড়াবে না, অমানবিক হবে না।
সাফল্যের জন্যে অপরিহার্য
পরিবার প্রথা মানুষকে সৃষ্টির সেরা প্রাণী হিসেবে জগতের বুকে স্থান করে দিয়েছে। যুগে যুগে মানুষের কল্যাণ সাধন করে এসেছে। দিনে দিনে এর গুরুত্ব ও কাজের ক্ষেত্র আরও বেড়ে চলেছে। পরিবারই সম্মিলন ঘটায় এমন স্থায়ী সঙ্গী ও একান্ত নির্ভরযোগ্য সাথীদের, যারা জীবনব্যাপী সংগ্রাম অভিযানে সকল ক্ষেত্রে, সকল সময় ও সব রকমের অবস্থায়ই সহচর হয়ে থাকে ছায়ার মতো এবং অকৃত্রিম সঙ্গী-দরদী সাথী-খাঁটি বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব পালন করে; হয় প্রকৃত সহযাত্রী ও পরম সান্ত্বনা বিধায়ক আশ্রয়। ব্যক্তির যাবতীয় বিকাশ, মননগত উন্মেষ, ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় পারিবারিক অবকাঠামোর ভেতরেই।
সমাজ ও সামাজিক জীবনের সাফল্যের জন্যে পরিবার অপরিহার্য। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাবা মায়ের সমর্থন এবং সহযোগিতা। সুসময়ে সবাই বাহবা দিলেও দুঃসময়ে তিরস্কার না করে সাপোর্ট ও সান্ত্বনা দেয় পরিবার। খারাপ সময়ে ধৈর্য দেখানো, মেধার সঠিক ব্যবহার করে ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জনের ব্যাপারে বোঝানো ও ব্যর্থতা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে সাহায্য করে পরিবার।
কানিজ আলমাস খান বলেছেন, পারিবারিক সমর্থন পেলে বিশ্বজয় সম্ভব। ক্রিকেটার লিটন দাসের২৩ প্রেরণা তার পরিবার। তার ভবিষ্যৎ ভাবনা হলো পরিবারকে সুখী রাখা এবং সৎ থাকা। অসুস্থ থাকাকালীন সময়ের কথা স্মরণ করে ডেভিড ওয়ার্নার২৪ বলেন, আমি বিছানা ছেড়ে ঠিকভাবে উঠতেই পারতাম না। তবে আমার বাচ্চারা আর আমার স্ত্রী আমাকে সবসময় সাহায্য করেছে। আমি আমার ঘর, আমার পরিবার থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। বিশেষ করে আমার স্ত্রী। সে আমার পরশমণি। সে অবিশ্বাস্য। সে সর্বদা আমার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বিনয়ী ও নিঃস্বার্থ।
সামগ্রিক কল্যাণ
সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, অগ্রগতি ইত্যাদি পারিবারিক সুস্থতা ও দৃঢ়তার উপরই বহুলাংশে নির্ভরশীল। উন্নত-নৈতিক-পবিত্র ও নির্দোষ জীবন যাপন পরিবারের লক্ষ্য। প্রকৃত প্রেম ভালোবাসা ও প্রীতি-প্রণয় পরিবারের মধ্যেই উৎকর্ষতা ও বিকাশ লাভ করে। তাই সুষ্ঠু রীতি-নীতির ভিত্তিতে পরিবার গঠন, যৌক্তিক আচরণের মাধ্যমে পরিবার সুরক্ষা এবং পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়করণের মাধ্যমেই সামগ্রিক কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে পারে সমাজ। বর্তমান যুগে শিশুদেরকে সামাজিকভাবে বড় করে তোলার জন্য এবং বয়স্কদের মানসিক প্রশান্তির জন্য পরিবারের কোনো বিকল্প নেই।
পরিবারই শেখায়- ভালো-মন্দের ব্যাপারে উদাসীন না থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হবে, অন্যের সিদ্ধান্তের নিকট আত্মসমর্পণ করে নির্লিপ্ত থাকা যাবে না, নিজের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না, অন্যের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধাকে উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার স্বার্থপর মানসিকতা রাখা যাবে না, সমাজের বা রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে, রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না, মানুষকে কষ্ট দিয়ে অবৈধ পন্থায় সম্পদ বৃদ্ধি করা যাবে না, টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোককে ভোট দেয়া যাবে না, নিজের জ্ঞান-ক্ষমতা-কাজকে অন্যের তুলনায় বড় মনে করার আত্মদম্ভ মনোভাব-দাম্ভিকতার দৃষ্টিভঙ্গি রাখা যাবে না, উচিত-অনুচিত-করণীয়-বর্জনীয় বিবেচনা না করে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না, অন্য ধর্ম-বর্ণ-ভাষার লোকদের প্রতি বিদ্বেষের মনোভাবের কারণে অন্যায় ও অবিচার করা যাবে না এবং শুধু জীবন-জীবিকা নিয়েই ব্যস্ত না থেকে সমাজের মঙ্গলের কথাও চিন্তা করতে হবে।
সবচেয়ে মূল্যবান
পরিবার চিরকালের জন্য পরিবার। ‘আজ যদি আমরা মারা যাই- তাহলে যে প্রতিষ্ঠানে আমরা চাকরি করি সেই প্রতিষ্ঠান কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের জায়গায় অন্যকে বসাবে। অথচ পরিবারকে ছেড়ে চলে গেলে পরিবার সারা জীবন আমাদের অনুপস্থিতি অনুভব করবে। অথচ পরিবারের চেয়ে আমরা আমাদের কর্ম প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজেকে বেশি উজার করে দেই।’
এক দর্শনের শিক্ষক ক্লাসে এলেন কতগুলো জিনিস নিয়ে এবং জিনিসগুলো তার সামনের টেবিলের উপর রাখলেন। তিনি হাতে একটা বড় জার নিলেন এবং এটাকে পাথর দিয়ে ভরতে শুরু করলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন জারটি পূর্ণ কিনা, ছাত্ররা উত্তরে বললো হ্যাঁ। এরপর তিনি কিছু নুড়ি পাথর নিয়ে জারটিতে ঢাললেন, তিনি যখন জারটি হাল্কা করে ঝাঁকালেন তখন নুড়ি পাথরগুলো বড়ো পাথরগুলোর ফাঁকে জায়গা করে নিলো। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন জারটি পূর্ণ কিনা, ছাত্ররা উত্তরে বললো হ্যাঁ। তারপর তিনি এক বাক্স বালি নিয়ে জারটিতে ঢেলে দিলেন, বালিগুলো জারের সমস্ত খালি জায়গা পূর্ণ করে ফেললো। তিনি আরও একবার জিজ্ঞাসা করলেন জারটি পূর্ণ কিনা, ছাত্ররা এবারো উত্তরে বললো হ্যাঁ।
এরপর তিনি ছাত্রদেরকে বললেন, আমি চাই তোমরা মনে করো যে জারটি তোমাদের জীবন। বড়ো পাথরগুলো হচ্ছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো- তোমার পরিবার, জীবনসঙ্গী, তোমার স্বাস্থ্য, তোমার বাচ্চারা। তোমার জীবন থেকে যদি এরা ছাড়া অন্য সবকিছু হারিয়ে যায়, তবুও তোমার জীবন পূর্ণ থাকবে। নুড়ি পাথরগুলো হচ্ছে- তোমার ঘর-বাড়ি, চাকরি ইত্যাদি। আর বালি হচ্ছে তোমার জীবনের অন্য সব ছোট ছোট জিনিসগুলো। তুমি যদি জারটিতে প্রথমে শুধু বালি ভরতে তাহলে পাথর আর নুড়ি পাথরগুলোর জন্যে কোন জায়গা থাকতো না। একইভাবে তুমি যদি তোমার সবশক্তি ছোট ছোট জিনিসগুলোর পিছনে খরচ করে ফেলো, তবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোর খেয়ালই রাখতে পারবে না। তাই তুমি প্রথমে তোমার পরিবারকে সময় দাও, তারপর অন্যকিছু। সবকিছুর আগে বড় পাথরগুলোর যত্ন নিতে শেখো, যেগুলো তোমার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। বাকি সবকিছুই বালির মতো।