আপনি যাই করেন না কেন মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হোন। নৃশংসতা ও লুটপাট রাজনীতির সাথে যায় না। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজনীতি। এর উল্টোটা হলে তা লজ্জাকর ও অবমাননাকর। রাজনীতি দলগুলো কী ধরনের মানুষ তৈরি করতে চায়, আর কী ধরনের রুচিবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষ তৈরি হচ্ছে- তা ভাবনার বিষয়।
দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম ছাড়া দলকানা হয়ে সেবার রাজনীতি হয় না। স্বার্থের রাজনীতি ভবিষ্যতের জন্যে উদ্বেগের-উৎকণ্ঠার। মানুষের জন্য, দেশের মাটির কল্যাণে, জাতির উন্নয়নের জন্যে রাজনীতি, মানবসেবর মহৎ নেশায় নিঃস্বার্থভাবে পরের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়াইতো ব্রত হওয়ার কথা জাতির সেবকদের। বাড়ি ও গাড়ির স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে রাজনীতি যখন সবচেয়ে কার্যকর, ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত হয়ে তখন দুঃখের সীমা থাকে না।
অস্ত্রনির্ভর ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি কী জন্য? কোন্ স্বার্থে? দেশের সম্ভাবনাময় সোনালী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহার কার স্বার্থে? স্বার্থ হাসিলের ধান্ধায় থেকে চাঁদা তোলে, টেণ্ডারবাজি করে আর অবৈধ অর্থ উপার্জন করে দেশের জন্য কল্যাণকর ছাত্ররাজনীতি হয় না। মেধানির্ভর ছাত্ররাজনীতি দরকার।
বিভক্তির রাজনীতির চেয়ে ঐক্যের ও কল্যাণের রাজনীতি দরকার। দেশের আপামর মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় চলা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে খুন করতে পারে, হলের একজনকে চড় থাপ্পর মারতে পারে, একই বিভাগের বা একই ব্যাচের একজন বন্ধুকে রক্তাক্ত করে উল্লাস করতে পারে কোন্ মানসিকতার সৃষ্টির ফলে। নিজের রুমমেট, হলমেট, ক্লাসমেট অথচ মায়া-মমতা, স্নেহ-শ্রদ্ধা, প্রীতি-ভালোবাসা নেই। পারস্পরিক সম্পর্কের নেই সুদূর সেতুবন্ধন। কোন্ লোভে, কোন্ প্রয়োজনে, কার ইশারায়, কার ছত্রছায়ায়-পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামের সহজ সরল ছেলেটি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুর্ধর্ষ ক্যাডার, সকলের আতঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, পারস্পরিক অবিশ্বাস, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-শঙ্কা, ক্ষোভ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধ্বংসাত্মক নারকীয় তাণ্ডব কেউ চায় না। ধ্বংসাত্মক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, পেশীশক্তি বা অস্ত্রের জোরে মোড়ল সেজে স্বার্থের প্রয়োজনে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা বন্ধ হোক। ছাত্রদের ভোটে ছাত্রপ্রতিনিধি বা ছাত্রনেতা নির্বাচিত হতে পারে। যারা ছাত্রদের প্রয়োজনে প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা সংগ্রাম করতে পারে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে।
বিভিন্ন সংস্কৃতির সংগঠন সেবামূলক সংগঠন সৃজনশীলতা, মেধা-মননশীলতা-রুচিশীলতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ক্লাব থাকতে পারে। যার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও বিশ্লেষণী শক্তি বৃদ্ধি পাবে। সুস্থ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, বুদ্ধিবৃত্তিক সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। এসব সৃষ্টিশীল, যৌক্তিক বোধের কল্যাণকর চেতনার প্রসারে ভূমিকা রাখতে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চলতে পারে।
প্রতিপক্ষ হলেই মেরে আহত-নিহত করা অমঙ্গলজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই একই পরিবারের মতো মিলেমিশে বসবাসকরুক, জ্ঞানচর্চা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, সৃজনশীল ঠিকানা ঘটুক, গবেষণা হউক বৃহত্তর প্রয়োজনে। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত, দেশপ্রেমিক, যোগ্য-দক্ষ-জ্ঞানী মানুষ সৃষ্টির কারখানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখবে এটাই প্রত্যাশা করে।