বাড়ছে ধর্ষণ : চাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার

সাখাওয়াত হোসেন মিজান

করোনা মহামারিতে আমরা এক অদ্ভুত সময় পার করছি। চারদিকে হাহুতাশ! যেন কেউ সুখে নেই। ব‍্যবসায়ি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চাকরিজীবী, কৃষক কেউ শান্তিতে নেই। ইদানীং পত্রিকার পাতায়, বিভিন্ন মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটা না কুকর্মের কাহিনি। যেন আমরা আস্তে আস্তে জাহেলিয়াতের দিকে চলে যাচ্ছি! সমাজ সংস্কৃতি কোনো কিছুই যেন আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, সব চলে গেছে কিছু হিংস্র দানব আর উন্মাদের হাতে। আমরা আজ জিম্মি।

কেন ধর্ষণ বেড়ে গেল?

কি এর কারণ? এর প্রতিকারই বা কী? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?  উপায় হলো সামাজিক অনুশাসনগুলো শিক্ষা দেওয়া, পারিবারিক নিয়মকানুন মেনে চলা, টেকনোলজি ব‍্যবহারে সর্তক হওয়া, মন মানসিকতার পরিবর্তন, লোভ-লালসা পরিহার করা। তবেই আমাদের সমাজ সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায়, সমাজে বসবাসরত লোকজনের উপর সমাজকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলে সমাজে যেসব বীভৎস অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার মধ্যে অন‍্যতম ঘৃণিত হচ্ছে ধর্ষণ। আজ সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, নীতি-নৈতিকতার অনুশীলন নেই বললেই চলে। সমাজের অনুশাসন আমরা আর মানতে রাজি নই। সমাজকাঠামো আমাদের যে শিক্ষা দিত তা আজ আর মানতে চাই না।অতীতে দেখেছি, সমাজিক অপরাধ বিশেষ কর ধর্ষণ, সমাজে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হতো। উন্মুক্ত স্হানে ব‍্যাভিচারের বিচার হতো। তা দেখে যুবসমাজ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস পেতো না।

পারিবারিক দৃষ্টিকোণ

পারিবারিক অনুশাসন আর আজকালকার ছেলেমেয়েরা মানতে চায় না। ইন্টারনেট, মোবাইলফোন, সামাজিক মাধ্যমে আর বন্ধুবান্ধব আজকালকার ছেলেমেয়েদের মহা পন্ডিত বানিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছে প্রতিনিয়ত। তারা আর বাবা-মা কিংবা শিক্ষকের কথা শুনতে চায় না। ভার্চুয়াল মাধ্যম যা শিখাচ্ছে তা শিখছে। আর তাই করছে। এখানে টেকনোলজির দোষ নেই, আমাদের ছেলেমেয়েরা ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর ভালো দিকটা গ্রহণ না করে খারাপটা বেশি করে গ্রহণ করছে। কিন্তু কে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে? এটা পরিবারের দায়িত্ব। আপনার ছেলেমেয়েকে টেকনোলজির সঠিক ব‍্যবহার শিক্ষা দিন। কতটুকু করতে পারবে, কতটুকু করতে পারবে না, কতটুকু দেখতে পারবে আর কতটুকু দেখতে পারবে না সেই  সীমানাটা স্পষ্ট করে দিন।  সাথে সাথে আপনার ছেলে-মেয়েকে সামাজিক অনুশাসন শিক্ষা দিন। যাতে পরবর্তীতে সে সমাজ বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী কোনো কাজ না করে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব

আমরা যে বাঙালি এবং মুসলিম তাতো ভুলেই আছি। মুসলিম সংস্কৃতিকে আজ-কালকার ছেলে-মেয়েরা হাসিঠাট্টায় উড়িয়ে দিচ্ছে। কতক ছেলে-মেয়ে মুসলিম সংস্কৃতি গ্রহণের ভান করলেও কেন যেন ভন্ডামির ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ সস্তা গল্প কাহিনি টিভি পর্দায় দেখে গ্রহণ করছে আর তা সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে।

মন-মানসিকতায় পরিবর্তন

আমাদের বিবেক মরে যাচ্ছে, মন-মানসিকতা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে, যেকোনো উপায়ে আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টায় দিনদিন হিংস্র হয়ে উঠছে।ভোগাবাদী মানসিকতা ও স্বার্থপরতার কারণে পাওয়াটাই আজ  সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। যে কোনো ভাবে পেতেই হবে এই অসুস্থ মানসিকতা অপরাধের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে আর সমাজও কলুষিত হয়ে পড়ছে।

ধর্ষণ ও বাস্তবতা

মানুষ দেখে শিখে এবং তা কাজে পরিণত করে। প্রতিনিয়ত যা দেখে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গিয়ে অপরাধ করছে। খোলামেলা গল্প, নগ্ন ভিডিও, মেয়েদের খোলামেলা পোশাক, ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা, সামাজিক মাধ্যমের অবাধ ব‍্যবহার, পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে সমাজে ধর্ষণের মত ঘৃণ‍্য অপরাধ হচ্ছে।  যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে অপরাধীরা হবে আরো বেপরোয়া, আরো ভয়ঙ্কর, হয়ে ওঠবে আরো বিপদজনক। তাই সচেতনতা বাড়ানো এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।

 

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *