বস- আদেশ দেন, নিয়ন্ত্রণ চান, দায়িত্ব অর্পণ করেন, একক সিদ্ধান্ত নেন, নিজেকেই ঠিক মনে করেন, অন্যদের কী করা উচিত তা জানান । বস সর্বদা লাভমুখী, সব সময় নিজে ক্রেডিট নেন, বলেন আমি কাজটি ভালোভাবে করেছি এবং প্রশংসা শুনতে খুবই ভালোবাসেন।
আর নেতা লক্ষ্য অর্জনে অন্যকে প্রভাবিত করেন, অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা রাখেন, লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন, লক্ষ্য অর্জনের দিকে অবিরাম চেষ্টা করেন, উদাহরণ স্থাপন করেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেন ।
নেতা সম্মান অর্জন করেন, মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে আচরণ করেন, কীভাবে কাজটি সঠিকভাবে করা যায় তা নিজে জানেন এবং অন্যদেরও জানান। নেতা দলের সবাইকে ক্রেটিড দেন, বলেন আমরা সবাই মিলে কাজটি করেছি এবং প্রশংসা করতে ভালোবাসেন।
বস কাউকে কাউকে ঈর্ষা করেন। যাদের যোগ্যতা বসের চেয়ে বেশি, তাদের ওপরই কোপ পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্যদের যোগ্যতায় বিরক্ত থাকেন বসেরা। নিজের ঘাটতি তারা মেনে নিতে পারেন না এবং ঘাটতি পূরণের জন্য ওই কাউকে অধিক যোগ্য মনে করলে তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন।
যখন কেউ অসাধারণ কাজ করতে থাকেন এবং নেতৃত্বগুণের প্রকাশ ঘটান—ঠিক তখনই ঈর্ষার বীজ বপন হয় বসের মনে। তাকে নিজের জন্য হুমকি বলে মনে করতে থাকেন যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকা বস। তার হিংসে হয়। তিনি বুঝতে পারেন, ওর এমন কিছু অসামান্য গুণ আছে, যা তাঁর নেই। আর তাতেই হয় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!
কিছু বিষয়ে অন্যের চেয়ে পিছিয়ে থাকলে ঈর্ষার উদ্ভব হয়। ঈর্ষায় জিঘাংসা থাকলে অবমাননাকর আচরণ করতে থাকেন বস। ফলে আত্মসম্মানে ঘা লাগে এবং কর্মক্ষেত্রে ধীরে ধীরে নিভে যান অন্যরা। পক্ষান্তরে নিজের দোষ-ত্রুটি মেনে আত্মউন্নয়নের কাজ করে সবাইকে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যান নেতা।
বসের নেতিবাচক ঈর্ষা হলে যোগ্য কর্মী নিপীড়নমূলক আচরণের শিকার হোন। বস তার ব্যাপারে বলেন- সে উপযুক্ত সাড়া দেয় না, যোগ্য হলেও বন্ধুভাবাপন্ন নয়। বাজে ব্যবহারই বসের বসগিরির অস্ত্র হলে এবং অন্যকে অসুবিধায় ফেলার প্রবণতা বেশি দেখা গেলে কাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
বস ক্ষমতার বলয়ে নিজেকে দেখতে চায়। নিজের অবস্থানকে সুসংহত করার চেষ্টা করে। কেউ বেশি ভালো কাজ করলে বা তার সম্ভাবনা বেশি থাকলে বস হুমকি অনুভব করেন বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। এক ধরনের উদ্বেগ তাঁর মধ্যে কাজ করে। তখন বস যার জন্য এ ধরনের হুমকি অনুভব করেন, তাঁর সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেন। এ ধরনের আচরণ কখনো সচেতনভাবে আবার কখনো অবচেতনভাবেও সংঘটিত হতে পারে।
বসের নেতিবাচক আচরণ অন্যদের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে। অন্যরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তারা আরো ভালো ও বেশি বেশি কাজ করার প্রেরণা পান না। কাজের পরিমাণ ও মান কমে যায়। ফলে ক্ষতি হয় প্রতিষ্ঠানের। ফলে মানসিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা বস প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিশাপে পরিণত হন।
আর নেতা সবার ব্যাপারে সমানভাবে দায়িত্বশীল থাকেন। ফলে অন্যরা বেশি উদ্যম ও সন্তোষ উপভোগ করেন। প্রতিষ্ঠানকে পরিবারের মতো মনে করেন। নিজের দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করেন। সবারই বোধশক্তির সাহায্যে যাবতীয় কাজকর্ম সেরে নেন। সব প্রতিষ্ঠানেই নেতা থাকা দরকার, বস থাকলেও থাকবে নিয়ন্ত্রিত।