সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে পেশাদারিত্ব নিয়ে কখনই প্রশ্ন ওঠে না। দায়িত্বশীলতার সাথে পেশাদারিত্বের সম্পর্ক রয়েছে। পরিশ্রম করেই পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হয়, উচ্চতায় পৌঁছতে হয় এবং সমৃদ্ধ হতে হয়। পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় দরকার হয় নিরপেক্ষ মূল্যায়নের। কে কার আস্থাভাজন, কোন মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত শুধু এসব বিবেচনায় রাখা আস্থার সংকট তৈরি করে। ঘুষের লেনদেন, অনৈতিক অর্থ আদায় ও নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবজনিত সংকট কাটিয়ে পেশাদারিত্ব বাড়াতে হয়।
পেশাদারিত্ব না থাকলে অন্যরা নিরুৎসাহিত হয়। নিয়োগকর্তারা প্রাধানত নিয়োগপ্রার্থীর পেশাদারিত্ব দেখেন। কঠোর পরিশ্রম করা, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার মানুষ অনেক। কিন্তু পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে এমন লোক খুজে পাওয়া কঠিন। পেশাদারিত্ব বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞ পরামর্শদাতাদের মাধ্যমে। পেশাদারিত্বের জন্য সময়ানুবর্তিতা (Punctuality), উপস্থাপনা (Presentation) ও ঐকান্তিকতা বা অধ্যাবসায় (Perseverance) খুব প্রয়োজন।
সময়ের যথাযথ ব্যবহার, সকল কাজই সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা, কারো সাথে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে এ্যাপয়েন্টমেন্টস্থলে উপস্থিত হওয়া, ই-মেইলের প্রতিত্তোর দিতে খুব বেশি দেরি না করা, প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়েরও বাইরেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ করা, নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করা, ক্লায়েন্টের সাথে সাক্ষাতের সময় সুন্দর ড্রেস পরা, ক্লায়েন্টের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা পেশাদারিত্বের মূল বিষয়। দূর্বল ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনা হচ্ছে- সেভহীন মুখ (দাঁড়িসহ), অপরিচ্ছন্ন শার্ট, ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত থাকার কারণে চোখ লাল হয়ে থাকা। দেখতে কেমন লাগছে, কিভাবে কথা বলছে এবং লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করছে সেটিই উপস্থাপনার মূখ্য বিষয়।
একজন পেশাদার সর্বোচ্চ কোয়ালিটি এবং ঐকান্তিকতা দেখান। ক্লায়েন্টের সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। শুধু এসে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে সময় শেষে বাড়ি চলে যান না। পেশাগত দায়বদ্ধতা না থাকলে এবং পেশাদারিত্বের ঘাটতি থাকলেই কেবল কমিশন বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে পেশাকে নষ্ট করা যায়, কমিশনের ওজন অনুযায়ী লেখা যায়, রোগীর কথা না শোনেই ব্যবস্থাপত্র হাতে দেয়া যায়। এখন পেশাজীবীরা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে পেশার উন্নয়নের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থোদ্ধারে বেশি নিবেদিত বলেই শনির দশা জনসাধারণের। শপথ নিয়ে শপথ ভাঙার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, মানুষ নিজের ওপরই বিশ্বাস হারাচ্ছে, মানবিকতা হারাচ্ছে। প্রশাসকরা মানবিক নন, শিক্ষকরা মানবিক নন, পেশাজীবীরা মানবিক নন।
পেশাদার হওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- যোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা, সততা, দুর্নীতিমুক্ত থাকা, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা, আত্ম-উন্নয়ন, ইতিবাচক হওয়া, অন্যদের সহযোগিতা করা, কাজে ব্যস্ত থাকা ও মনোযোগ সহকারে শুনা। আপনি যা করেন তাতে আপনি ভালো এবং আপনার এমন দক্ষতা ও জ্ঞান রয়েছে যা আপনাকে আপনার কাজটি ভালোভাবে করতে সক্ষম করে। সময়মতো লোকেরা আপনার উপর নির্ভর করতে পারে। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা সেভাবেই আপনি প্রস্তুত হন, যখন যে কাজ শেষ করার কথা সেই সময়েই শেষ করেন। সত্য বলেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত নীতি চর্চার জন্য পরিচিত হন।
যে যেমন বা যার সাথে যেমন আচরণ করা দরকার তার সাথে যথাযথ আচরণ করেন। দক্ষতা বা জ্ঞানকে পুরানো হওয়ার পরিবর্তে বর্তমানের উপযোগী থাকার উপায় অনুসন্ধান করেন। হতাশাবাদীকে কেউ পছন্দ করে না। উত্সাহী মনোভাব দেখান এবং সমস্যা সমাধানকারী হওয়ার চেষ্টা করেন। সহকর্মীদের সাথে কাজ ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন, অন্যেও কীভাবে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে তা দেখান, শেখানোর জন্য সময় দেন। অযথা ব্যক্তিগত জীবনকে কাজের উপর প্রভাব ফেলতে চান না এবং ব্যক্তিগত বিষয়ে কাজ করে সময় ব্যয় করেন না। লোকেরা শুনাতে চায়, তাই লোকদেরকে তাদের ব্যাখ্যাগুলো শুনানোর সুযোগ করে দেন।