নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গর্বের পারিবারিক বন্ধন এখন হুমকির সম্মুখীন। ভেঙে যাচ্ছে পরিবারের আদর্শ-মূল্যবোধ; ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে পরিবারিক-বন্ধন। যান্ত্রিক জীবনে অস্থিরতা ও হতাশা বাড়ায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এবং খুন-খারাবির মতো ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। পরিবারের সামগ্রিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করতে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ হলেও তুলনামূলকভাবে নারীর ভূমিকা খানিকটা বেশি। নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন বিচক্ষণ নারীই কেবল সবার মন যোগানোর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিবারের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে আপন সঙ্গী-শ^শুর-শাশুরি ও ননদের সাথে বোঝাপড়ার, পরস্পরের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও খুঁটিনাটি বিষয়ে সমঝোতার ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেন। পরিবারে বিবাদ সৃষ্টি হলে ধৈর্য ধরুন, বিতর্কে যাবেন না, নীরবতা অবলম্বন করুন, তাৎক্ষণিক ঝগড়া পরিহার করুন, ঝগড়ার সুদূরপ্রসারী পরিণাম নিয়ে ভাবুন, কাউকে অপমান করবেন না, কারো সমালোচনা করবে না, কারো সাথে তুলনা করবেন না, আওয়াজ উঁচু করবেন না, সদয় মনোভাব প্রকাশ করুন।
টেকসই উন্নয়ন
টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন টেকসই উন্নয়নকর্মী। পারিবারিক জীবনে সুষ্ঠুতা না থাকলে সামাজিক জীবনের সুষ্ঠুতা ব্যাহত হয়। পরিবারে সবার অধিকার নিশ্চিত হলে জীবন অর্থবহ হয় , টেকসই আগামীও নিশ্চিত হয়। দরিদ্র পরিবারের মেয়েটিও দীর্ঘতর সময় বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে কি না, তুলনামূলক দেরিতে বিবাহিত জীবন শুরু করে কি না, তুলনামূলক কম সন্তান নেবে কি না, প্রয়োজনীয় প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাবে কি না, সহিংসতা ও নিপীড়নমুক্ত জীবন যাপন করতে পারবে কি না, নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ও ক্ষমতা পাবে কি না ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। পরিবার প্রথার বন্ধনকে আঁকড়ে ধরে রাখা না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাও ব্যর্থ হয়ে যাবে। পরিবার প্রথায় বিপর্যয় নেমে এলে সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটবে। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, দেরিতে বিবাহ, পারিবারিক সহিংসতা, বৈষম্য, পারিবারিক বন্ধনে দুর্বলতা, পারিবারিক ভাঙনে শিশু-নারী-বয়স্কদের ছিন্নতা কমিয়ে সবার সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের শরীর, মন ও আত্মাকে সুস্থ রাখতে পরিবারকে যথাযথ মানে টিকিয়ে রাখতে এবং বিকশিত করতে হবে।
যেহেতু ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, আর সমাজ থেকে একটি দেশ বা রাষ্ট্র। সেহেতু একটি পরিবার যদি ভালো হয়, ব্যক্তি ভালো হবে, ব্যক্তি ভালো হলে দেশ বা রাষ্ট্র ভালো চলবে। এক্ষেত্রে কোনো পরিবারের তারুণ্যের শক্তি যথাযথ বিকাশ ও ব্যবহার যদি নিশ্চিত না হয় তবে সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সবার মানবাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে; ক্ষমতা ও সম্পদ বন্টনে অসমতা তৈরি হলে টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। একটি ন্যায্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবারে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চাকরিকেন্দ্রিক লেখাপড়ায় স্বপ্ন ছোট হয়, জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য হারিয়ে যায়। জীবনকে সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় করতে অবিরম উৎকর্ষ অর্জনের প্রচেষ্টা থাকে না। শিশুর যথাযথ ‘মানুষ হয়ে উঠা’ না হলে শুধু একটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না. একটি সম্ভাবনারও অকাল পরিসমাপ্তি ঘটে। তাই সন্তানের শারীরিক সুরক্ষা, মানসিক সুরক্ষা, আধ্যাত্মিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আধ্যাত্মিক সুরক্ষার জন্য ধৈর্য, কর্মকৌশল ও সমস্যা সমাধানে দুআ প্রয়োজন। শুধু পোশাক পড়লেই স্মার্ট হওয়া যায় না; উত্তম বাচনশৈলি রপ্ত করতে হয়। যাদের সাথে মিশবেন, ধারাবাহিকতার সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ অব্যাহত রাখুন। অনেক দিন যাদের সাথে দেখা হয় না, তাদের খোঁজখবর নিন। কথা বলার সময় মনোযোগ সহকারে বক্তার কথা শুনুন। যে নামে ডাকা পছন্দ করে সে নামেই ডাকুন।
কাউকে সংশোধন করতে গিয়ে অন্যের সামনে বিব্রত করবেন না। সব সময় ন্যায্য, সঠিক ও সৎ থাকার চেষ্টা করুন। অন্যদের যথাযথ সম্মান দিন এবং তাদের উচ্চ মর্যাদাবোধের দিকে নজর রাখুন। ব্যক্তিগত কারণে রাগ করবেন না বা নিজের জন্য প্রতিশোধপরায়ন হবেন না। যাদের সাথে মেশেন, তাদের গভীরভাবে বোঝার ও ভালো করে জানার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক, মধ্যপন্থা এবং শ্রদ্ধাশীল হোন। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী লোকদের সাথে কথা বলুন। সব সময় হাসিখুশি ও উদ্যমকে গুরুত্ব দিন। পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতাকে গুরুত্ব দিন। ভালোভাবে সন্তানকে গাইড করতে চাইলে পারিপার্শ্বিকতার দিকে বাবা-মায়ের তীক্ষè নজর রাখতে হবে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতা
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হতে হবে। ইতিবাচক বিশ্বাস পরিবারের শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে, তাই নেতিবাচকতা পরিহার করতে হবে। অসৎ সঙ্গে মিশে ছেলে-মেয়ে যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কার সাথে চলাফেরা, উঠাবসা, খেলাধুলা ও বন্ধুত্ব স্থাপন করে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। যৌতুক নামক পরিবারবিধ্বংসী প্রথা বন্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়েই যাতে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে পরিবারকে নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জ থেকে রক্ষা করে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিই হতে পারে এসব সমস্যা সমাধানের সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।
স্বপ্ন, আশা, ইতিবাচকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাস করতে হবে। পারস্পরিক কল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নবীনেরা যাতে সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, যাতে তাদের প্রত্যাশিত মানসম্মত জীবন সুনিশ্চিত হয়। মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ ও সুন্দর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সুযোগ অবারিত করতে হবে। পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-ভালোবাসা, রুচি-দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকলেও সমাজ গড়ায় বৃহত্তর স্বার্থে একসাথে পথ চলতে হবে; একজন আরেকজনকে সম্মান করতে হবে, বিভিন্ন পেশার প্রত্যেককেই গুরুত্ব ও মর্যাদা দিতে হবে। পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ-কলহ যাতে না হয় এবং হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
আমাদের সব কর্মকাণ্ডের প্রভাব আছে আমাদের শরীরে। মানসিক চিন্তা প্রবাহের সামষ্টিক বা তাৎক্ষণিক ইফেক্ট পড়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর, হরমোনের উপর, রক্তচাপের উপর। হঠাৎ উত্তেজনায় রক্তচাপ বাড়ে। অধিক টেনশনে পাকস্থলির এসিড তৈরি বাড়ে। ভয়ে-তাড়াহুড়োয় ‘এড্রিনালিন রাশ’ বাড়ে। টিভি থেকে নির্গত রশ্মি, বারবার দৃশ্য বা ফ্রেম পরিবর্তন, রশ্মির তীব্রতার দ্রুত পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব আছে মস্তিষ্ক-চোখ-রক্তচাপের উপর; পেটের সন্তানের উপরও। একই কথা মোবাইল ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দুর্ব্যবহার, রাগ, উত্তেজনা পরিহার করুন। গর্ভে ৫ মাসে সন্তান শ্রবণক্ষমতা পায়। তখন গান-মিউজিক-রাগারাগি-কটুবাক্য-গালিগালাজ সেও শুনতে পায়, এগুলোর প্রভাব পড়ে। এমনকি মায়ের চিন্তাপ্রবাহের প্রভাব অবশ্যই গর্ভের শিশুর উপর পড়ে। প্রথম তিন মাসেই বাচ্চার যা গঠন হবার, হয়ে যায়। এরপর শুধু সাইজ বাড়ে। তাই এ সময়ে যেন প্রোটিন সাপ্লাই কম না পড়ে।
পেটে বাচ্চা যখন আকারে বড় হবে, তখন আপনার রক্ত থেকে গ্লুকোজ টেনে নেবে। ফলে আপনার গ্লুকোজ শর্ট পড়বে। তাই বাসায় মিষ্টি জাতীয় খাবার বানিয়ে রাখবেন। মাথা হালকা হয়ে যাওয়া, ঘুরানো, ব্যথা করলে ফ্রিজ থেকে বের করে খেয়ে নেবেন মিষ্টি-সেমাই-পায়েস-বিস্কুট-শরবত। ৪র্থ মাস থেকে ১টা আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট, আর ১টা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে হবে। দুধ খেতে না পারলে দিনে ২টা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট। আয়রন এক বেলায় আর ক্যালসিয়াম আরেক বেলায় ভরা পেটে; দুটো কখনোই একবেলায় খাবেন না।
সাধারণত ৪ মাস, ৭ মাস, ৮ মাস ও ৯ মাস- এই ৪ বার ডাক্তারের কাছে যাবার কথা। কোনো সমস্যা মনে না হলে ৪ মাসে ও ৯ মাসে গেলেও হবে। পেটের উপর চাপ দিয়ে করতে হয় এমন কাজ, ভারী কাজ করবেন না। টিটেনাস টিকার ডোজ ৫টা। ১৫ বছর বয়সে, তার ২৮ দিন পর, তার ৬ মাস পর, তার ১ বছর পর, তার আরেক বছর পর। আগেই নেয়া থাকলে গর্ভাবস্থায় আর নেয়ার দরকার নেই। গর্ভকালীন সময়ে স্বামী একটু মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে টেনে নিলেই স্ত্রীর কলিজাটা বড় হয়ে যায়, সাহস বেড়ে যায়, টেনশান দূর হয়ে যায়।
প্রসব পরবর্তীতে বাচ্চার ছবি তুলবেন না, নজর লাগানোর সুযোগ রাখবেন না। যত বেশি কালে নেয়া হবে, তত ইনফেকশান হবার চান্স বেড়ে যাবে। কোলে নেবার আগে হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা রাখবেন। যত দ্রুত সম্ভব শালদুধ খাওয়াবেন। মাকে দিনে খেতে হবে পাঁচ বেলা। দিনে ৮-১০ বার পেশাব করলে ধরে নেবেন বাচ্চার খাওয়া ঠিক আছে। ফিডারে বাইরের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করলে কিন্তু ও আর টেনে বুকের দুধ খাওয়ার কষ্টটা করতে চাইবে না। সামান্য সর্দি-কাশিতে সরিষার তেল মাখিয়ে ভোরের নরম রোদে রাখুন।
নারীর মন ও আবেগকে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে মানবশিল্পের জন্য; শুধু পুঁজিবাদী কর্পোরেট কালচারের ক্যারিয়ার উদ্বগ্নতা-টেনশনের জন্য নয়। পুঁজিপতিদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা, মানব শিল্পিসত্তাকে বেখেয়াল বুয়ার হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে আনফিট একটি প্রজন্ম। ‘ব্যা ব্যা ব্ল্যাকশীপ’ বা ‘টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল’ মুখস্ত করালেই হবে না। তাদের সাথে বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলুন। বেশি বেশি কথা বলুন। বইয়ের সাথে ভালোবাসা তৈরি করে দিন। ডায়েরি লেখার অভ্যাস করান। প্রতিটি মানুষের গুণ তালাশ করলে ওই গুণ আমারও পেতে ইচ্ছা হবে; আর দোষ খোঁজার পিছনে পড়লে ওই দোষ আমার ভেতরেও এসে যাবে; এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে পারিবারিক সমস্যা বড় আকার ধারণ না করে। পারিবারিক ছোট ছোট সমস্যা থেকে কোমলমতি শিশুদেরকে দূরে রাখুন এবং তা নিজেরাই সামলে নিন। সাপ্তাহিক অথবা মাসিক পারিবারিক মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে সবার কথা জানুন, বুঝে-শুনে সরাসরি কথা বলুন, অন্যের কথা বলার মাঝে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। সমস্যায় পড়লে তাড়াহুড়া না করে ধৈর্যসহ তা মোকাবিলা করুন। যাতে পরিবারে সবসময় দৃঢ়বন্ধন আর অটুট ভালোবাসা বজায় থাকে।
মাদকাসক্ত শিশুদের মাদক থেকে দূরে রাখতে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকে। যারা মাদকাসক্ত হয়ে গেছে, তাদের সুচিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের আওতায় আনুন। অন্যদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি নিজেরও যত্ন নিন। মাদক ও ধূমপান মুক্ত পরিবার গড়ুন। বিলাসী দ্রব্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া নেয়ার পূর্বে পরিবারে সবার পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন। আরামদায়ক ও আনন্দদায়ক জীবন নিশ্চিতই যথেষ্ট মনে না করে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুন্দর করার দায়িত্ব প্রধানত বাবা-মায়ের। আনন্দময় পাঠই স্থায়িত্ব পায় এবং জীবনকে সামনে টেনে নেয়। পরিবারের বাইরের পরিবেশ পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণাধীন না হলেও বাড়তি সতর্কতা সন্তানের বেড়ে উঠাকে প্রাণবন্ত করতে পারে। সন্তানকে এটা শেখাতে হবে- জিপিএ-৫ পাওয়া বা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চেয়ে আলোকিত মানুষ হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষিত হবার চেয়েও জ্ঞানী হওয়া বেশি মূল্যবান। যুক্তরাষ্ট্রে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুলিয়ান স্টেনলি গবেষণায় দেখতে পান, অল্প বয়সে কোনো বিষয় পরিষ্কার করে বোঝার, আত্মস্থ করার এবং সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা যে শিশুর যত বেশি থাকে, পরবর্তী জীবনে তার সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে। তাই বুদ্ধির বিকাশের জন্য শিশুকে নানা ধরণের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করুন, তাদের প্রতিভা ও আগ্রহকে উৎসাহিত করুন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগের চাহিদাকে সাহায্য করুন, জানা বা শেখার চেষ্টার প্রশংসা করুন, ভাবতে শেখান ব্যর্থতা ভীতিকর কিছু নয়, শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং শিশুর সক্ষমতা যাচাই করুন। সামাজিক দক্ষতায় সমৃদ্ধ মানুষ অনন্য মানুষ। আত্মকেন্দ্রীকতা সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির অন্তরায়। অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, অগ্রাধিকার দেওয়া মানবিক আচরণের উৎকর্ষমণ্ডিত দিক। যার আন্তঃসম্পর্কের বিস্তৃতি যত ব্যাপক, তার জন্য সমাজে উপযোগ সৃষ্টির সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি।