ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব গঠন করুন। একজন ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব-দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সুবিবেচনা করেন, সকলের লাভ হোক এই চিন্তা করেন, সতর্কতার সাথে শব্দচয়ন করেন, অপরের ব্যবহারের ইতিবাচক ব্যাখ্যা করেন; সমালোচনা ও অভিযোগ করেন না, আলোচনা করেন তবে তর্ক করেন না, খোশগল্প করেন না। ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব গঠনের পদ্ধতি হচ্ছে, প্রসন্ন ও সদয় হওয়া, ভালো শ্রোতা হওয়া, সৎ ও আন্তরিকভাবে কাজের মূল্য উপলব্ধি করে অন্যের প্রশংসা করা, ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছায় ভুল স্বীকার করে নেয়া, কেউ ভুল স্বীকার করলে তা মেনে নেয়া ও তার মুখ রক্ষার সুযোগ দেয়া, প্রতিজ্ঞাকে অঙ্গীকারে পরিণত করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অন্যের কাছে কৃতজ্ঞতার আশা না করা, নির্ভরযোগ্য হওয়া ও আনুগত্য অনুশীলন করা, উদ্যমী হওয়া, বিদ্বেষ পোষণ না করে ক্ষমা করা, সততা-সার্বিক ন্যায়পরায়ণতা ও আন্তরিকতা অনুশীলন করা, বিনম্রতা অনুশীলন করা, অপরকে বোঝবার চেষ্টা করা ও তার সম্পর্কে মনোযোগ দেয়া, প্রতিদিনের ব্যবহারে সৌজন্যমূলক আচরণ অনুশীলন করা, বিদ্রƒপাত্মক বাক্য পরিহার করা, অন্যকে দমনের মনোভাব না থাকা এবং বন্ধুলাভের জন্য বন্ধু হওয়া।
প্রভাব
প্রভাবিত হওয়া নয় প্রভাব ফেলুন; নিয়ন্ত্রিত না হয়ে নিয়ন্ত্রণ করুন। যাদের মস্তিষ্ক পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা সদা নিয়ন্ত্রিত তারা স্বকীয়তাবোধসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্বের মানদণ্ডে সম্পূর্ণ অনুত্তীর্ণ। শুধু নিয়ন্ত্রিত হওয়া দাসসুলভ আচরণ। অবশ্য, খুব কম মানুষই প্রকৃতার্থে মুক্ত-স্বাধীন জীবনের সন্ধান পান। মনের অজান্তেই অধিকাংশেই দাসসুলভ মনোভাব তৈরি হয়। যা তাদেরকে আমৃত্যু দাসত্বের স্বভাবে বেঁধে ফেলে, নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ করার সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তির উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস ঝুঁকিপূর্ণ। যারা অল্পতেই প্রভাবিত হন তারা প্রভাব ফেলার শক্তির সন্ধান পেলেও তা এড়িয়ে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
প্রতিভাবানের ক্ষিপ্রতা অনেক প্রতিভাহীনের কাছে পাগলামো বৈ কিছুই নয়। অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায়, হীনমন্যতায় ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। প্রতিযোগিতা ও সংগ্রামমুখর এ জগতে এদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বলতে কিছুই নেই। অন্যের চিন্তায় চিন্তা করেন, অন্যের ভাবে নিজের ভাষা সাজান। এরকম অন্ধ অনুকরণ, বিবেচনাহীন অনুসরণ ব্যক্তিত্বশালীরা করেন না।
সিদ্ধান্ত
অভিজ্ঞতা থেকে ভালো কিছু গ্রহণের মানসিকতা না থাকলে ভালো কিছু করা যায় না। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ গঠনমূলক উদ্যোগে সাহসী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ। অতৃপ্ত হৃদয় কারোরই প্রিয় হবার যোগ্য নয়। জীবন সফল মানুষেরা মস্তিষ্ক দ্বারাই সিদ্ধান্ত নেয়। পরনির্ভরশীলতারা ভাগ্যোন্নয়নের দায়িত্ব অন্যদের কাঁধে তুলে দেয়। নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনড়, অবিচল থাকতে হবে। নিজ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন।
অতৃপ্ত হৃদয় নয়; দরকার প্রশান্ত আত্মা সম্পন্ন মানুষ। যাদের আত্মমর্যাদাবোধ তীব্র। আত্মমর্যাদাবোধহীন মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী। কেননা তাদের থাকে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি। আর আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ কোনো গঠনমূলক উদ্যোগেও সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে না। যে নিজেই সামনে এগিয়ে থাকতে প্রত্যয়ী নয়, অন্যের সহযোগিতা তার ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ হয় না। স্ব-উদ্যোগ ও দৃঢ়সিদ্ধান্ত যেখানে নিস্ক্রিয় চারপাশের সকল প্রচেষ্টা, আন্তরিক প্রয়াস ও সব ধরনের সহযোগিতা সেখানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতে বাধ্য।
বাহুবলে লড়াই করে পেরে ওঠা নয়, মগজ খাটাতে হবে। সকলের পরামর্শ গ্রহণ করেন, তবে সিদ্ধান্ত নিজেই নিন এবং সিদ্ধান্তে অনড় থাকুন। কবি ইকবাল বলেছেন, যে নিজের আদেশ পারে না পালন করতে সে অন্যের আদেশে হয় চালিত। জীবনে সফল মানুষেরা সাধারণত মস্তিষ্ক দ্বারাই সিদ্ধান্ত নেয়।
সক্রিয়তা
সংকীর্ণ চিন্তা নিয়ে বৃহৎ কিছু করা যায় না। বাধা ও প্রতিকূলতার ফলে কারো চেতনমনের সক্রিয় অনুভূতি শক্তির বিলুপ্তি ঘটে আবার কারো মন সাহসী হয়ে ওঠে, প্রতিবাদী চেতনা যুক্তিশীল হয়, মর্যাদাবোধ তীব্রতর হয় এবং আত্মশক্তি জেগে ওঠে। একই পরিবেশ-পরিস্থিতি দুটি মনে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যা ব্যক্তিত্বের অবস্থানের ভিন্নতাকে স্পষ্ট করে, পরিচয়ে বিচিত্রতা আনয়ন করে।
বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা অনেকের কর্মপরিসর সীমাবদ্ধ করেছে। অথচ ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্যের সীমানা এত বড় যে ক্ষুদ্রতর থেকে ক্রমই বৃহত্তর দিকে নিয়ে যায়, যতই সামনে চলা হয় ততই ক্রমান্বয়ে আরো বিরাট কর্মপরিসর উন্মোচিত হতে থাকে। আসলে ব্যক্তিমাত্রই অযুত সম্ভাবনাময় ও অফুরন্ত শক্তিধর; কিন্তু সম্ভাবনা ও শক্তিকে সীমিত করে সে নিজেই।
ব্যক্তি নিজে তার পরিসরকে সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ করলে পৃথিবীর কোনো শক্তিরই সাধ্য নেই তাকে বিস্তৃত করার। জীবন থেকে অল্প প্রত্যাশা করলে জীবন তাকে অল্পই দেয়; তাই জীবন থেকে বেশি প্রত্যাশা করবে। বৃহৎ চিন্তা ও বেশি প্রত্যাশা অনেকে ক্ষেত্রে জীবনে কৃতকার্য হতে সহায়ক হয়। নিজের আকাক্সক্ষা, বিশ্বাস ও প্রত্যাশাকে আয়ত্তের মধ্যে আনলে সফলতা লাভ সহজ।
প্রতিটি কাজই বুঝে-শুনে-চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে। আন্তরিকতা না থাকলে, আনন্দের সংমিশ্রণ না ঘটলে কখনো নীরস কাজ সফলতার মুখ দেখে না। কে কী ভাবলো এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ক্ষুদ্র মনের মানুষ মহৎ ব্যক্তির বৃহৎ আয়োজনেরও ইতিবাচক অর্থ খুঁজে পায় না।
মূল্যায়ন
নেতিবাচক মূল্যায়ন বদলে ফেলুন, নিজের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা রাখুন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ও মূল্যায়নই তাকে ক্ষুদ্র মানুষে পরিণত করে। আবার অতি উঁচু ধারণা, আত্মদাম্ভিকতা ও অহংকারই পতনের কারণ হয়। নিজের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা সবারই থাকা উচিৎ। নিজের সম্পর্কে ধারণার তিনটি দিক রয়েছে-বিশ্বাস, মনোভাব ও ব্যবহার।
নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন বদলে না ফেললে তার দ্বারা বড় কাজ হওয়া অসম্ভব। কল্যাণের দিকে ডাকতে হবে সবাইকে। মানব সমাজের অন্তর্ভুক্ত সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন এমন একজন মানুষও নেই যিনি ভালোপথের দিকে আহ্বান শুনারও অনুপযুক্ত। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত ভালো-সুন্দর-কল্যাণকর সবকিছুর প্রচার-প্রসার ঘটানোর চেষ্টা সাধ্যানুযায়ী করা উচিত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কল্যাণের পথ দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উপলব্ধির ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন। সংকীর্ণতা, অন্ধপ্রেম ও অতিরিক্ত আবেগ পরিহার করুন। জ্ঞানের স্বল্পতা থাকলে জ্ঞান বাড়াতে অধ্যবসায়ী হোন। বাস্তবসম্মত চিন্তা করুন। যত বেশি অসচেতন পরিণতি তত বেশি ভয়াবহ। মনুষ্যত্ব সম্পন্ন মানুষই আসলে মানুষ; যাদের মাঝে মানবপ্রেম থাকে। মনুষ্যত্বহীন মানুষ আসলে মানুষ নয়।
কঠিন সংগ্রাম
কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হউন, কাজ শুরু করুন। অফুরন্ত সম্ভাবনা ও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও ছোট হয়ে থাকাতেই অনেকে তৃপ্তি খোঁজে। বড় হতে চেয়েও অনেকে বড় স্বপ্ন-আশা পূরণের জন্যে জীবনে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ না হয়ে অলস সময় কাটায়, অসচেতনভাবে পরে থাকে। মানসিক প্রশান্তি পেতে নিরুপায় মানুষের বিধিলিপির আশ্রয় নেয়া তার গতি স্থিমিত করে।
সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আসিসি বলেন, যা প্রয়োজনীয় তা করা শুরু কর, তারপর যা সম্ভবপর তা করা শুরু কর; অবশেষে দেখা যাবে যে অসম্ভব কাজও সম্ভব হচ্ছে।
নেপোলিয়ন হিল বলেন, কঠিন প্রতিজ্ঞা থাকলে-‘মানুষের মন যা কল্পনা করে এবং বিশ্বাস করে, মানুষ তা অর্জন করতেও পারে’।
ডা. লুৎফর রহমানের ভাষায়-‘গুণ থাকলেও চেষ্টা না করলে জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় না।’ চেষ্টা বাড়াতে হবে, কাজ করতে হবে, পরিশ্রমপ্রিয় হতে হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম জেমস বলেন, ‘যদি নিজেদের জীবনকে বদলানোর মনস্থ করে থাক তা হলে তা শুরু করা দরকার এখনই এবং খুব সোচ্চার ও দর্শনীয়ভাবে।’
এডগার এ্যালেনপো বলেছেন, যে বেশি জানে, সে কর্মে বিশ্বাস করে। তাই আর অপেক্ষা নয় কাজ শুরু করুন এবং তা এখনই।
সমালোচনা ছাড়ুন
সমালোচনাকে হাসিমুখে গ্রহণ করুন। সমালোচকরা অভিশাপ নয় কখনো কখনো আশীর্বাদও। যারা গঠনমূলক ও সৃষ্টিশীল কিছু করে তাদেরকে সমালোচকেরাই বেশি উপকার করে। ফুঁ দিয়ে নেভানোর প্রচেষ্টা দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনকে যেমন আরো জ্বলে উঠতে সাহায্য করে; সমালোচনা তেমনই উদ্যমী ব্যক্তিত্বদের উদ্যোগে বেশি গতিসঞ্চার করে। সমালোচনার মাধ্যমে ত্রুটিগুলো সহজেই চিহ্নিত করে তা নিরসন ও সমস্যা-সংকটগুলো স্পষ্ট হওয়ায় তা দূর করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হওয়া যায়। ফলে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় ব্যয় না করে তা উত্তরোত্তর আরো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে ব্যয় করা যায়।
যারা প্রত্যেক বস্তুরই দাম জানেন কিন্তু কোনো বস্তুরই প্রকৃত মূল্য জানেন না তারাই সমালোচক। যখনই কোনো ব্যক্তি গড়পড়তা মানুষের উপরে উঠে যাবেন তখনই কিছু লোক তাকে ছিঁড়ে ফেলতে চেষ্টা করবেন। গড়পড়তা মানুষ সমালোচনা এড়িয়ে বলতে চান। সাফল্য ও সমালোচনার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। সমালোচনাকে তারাই ভয় করে যারা চিরকাল ছোট হয়ে থাকে।
এখন সমালোচনা সমাজের অন্যতম অনুষঙ্গ ও সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে; এ ধরণের চর্চা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। উপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে হতে হবে স্নেহার্দ্য ও সৃজনশীল, ব্যবহার করতে হবে কোমলতর ও প্রীতিপূর্ণ ভাষা এবং এড়িয়ে যেতে হবে আক্রমণাত্মক ভাষা। যাকে উপদেশ দেবেন তার মনে যেন এই ধারণা হয় যে আপনি সত্যিই তার শুভাকাক্সক্ষী এবং ভালোবেসেই উপদেশ দিচ্ছেন।
একটি খারাপ কাজ করলে, খারাপ কথা বললে বা খারাপ কিছু লিখলেই চিরদিনের জন্য তাকে অপরাধী ভাবা ঠিক না। একটি আচরণ দিয়ে কাউকে বিচার করা এক ধরনের চরিত্র হননের মতো ব্যাপার। উপদেশ দিতে হবে সচেতনভাবে-ভদ্রভাবে, বুঝিয়ে বলতে হবে, বেশি বেশি আন্দাজ-অনুমানের ওপর ভিত্তি করা যাবে না, খারাপ-নীচ ভাষা ব্যবহার করা যাবে না, কুধারণা করা যাবে না, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা যাবে না।
সততা ও সহমর্মিতার সাথে ভুল ধরিয়ে দিলে হৃদয়গুলো পরস্পরের কাছাকাছি আসে। অন্যের দোষ খুঁজতে অনেকে এত ব্যস্ত যে, নিজেদের মধ্যের ভালোটুকু ছড়িয়ে দেয়ার সময়-ই পান না। স্বচ্ছভাবে দেখা মানুষ হতে হবে, খোলামনের হতে হবে। আন্দাজ-অনুমানে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়, পরিবারগুলো দূরে সরে যায় এবং বিভেদ ও অনৈক্য তৈরি হয়। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোন, উজ্জীবিত করুন অন্তরকে, পরিকল্পনা করুন সুন্দর এক বিশ্ব গড়ার।
অভিজ্ঞতা
অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে কাজে লাগান: জে আর লাওয়েল বলেছেন, অনেক সময় বিদ্যার চেয়ে অভিজ্ঞতাই বেশি কাজে লাগে। লুসিলার কাম বলেছেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা যে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব, পুস্তকের সীমাবদ্ধ গণ্ডিতে তা সম্ভব নয়।
ইরাসমুস বলেছেন, বছর হিসেবে অভিজ্ঞতার হিসাব করা অর্থহীন।
জোসেফ রক্স বলেছেন অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে অনেক মহৎ কাজ করা যায়। অভিজ্ঞতা, শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে।
শেখ সাদী বলেছেন, তুমি যা শিখলে, তা যদি তোমার বাস্তব জীবনে রূপায়িত করতে না পারলে, তবে তুমি মস্ত বোকা।
তাই জীবন থেকে নেয়া শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বাস্তবে কাজে লাগান। অভিজ্ঞতা থেকে ভালো কিছু গ্রহণের মানসিকতা না থাকলে ভাল কিছু করা যায় না। প্রকৃত জ্ঞানী মূর্খ মানুষের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখে থাকেন আর যে খাঁটি বোকা সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতের সংস্পর্শ থেকেও কিছুই শিখতে পারে না।
সক্রেটিস বলেছেন- অপরীক্ষিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা গ্লানিকর। পোষাক হলো বাইরের আবরণ, মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে তার জ্ঞান। নিজেকে জানো। জ্ঞানের শিক্ষকের কাজ হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে তার কাছ থেকে উত্তর জেনে দেখানো যে জ্ঞানটা তার মধ্যেই ছিল। যাই হোক বিয়ে কর। তোমার স্ত্রী ভালো হলে তুমি হবে সুখী, আর খারাপ হলে হবে দার্শনিক। কঠিন যুদ্ধেও সবার প্রতি দয়ালু হও। শক্ত মন আলোচনা করে ধারনা নিয়ে, গড়পড়তা মন আলোচনা করে ঘটনা নিয়ে, দুর্বল মন মানুষ নিয়ে আলোচনা করে।
জীবনের উদ্দেশ্য
জীবনের কোনো কাজই উদ্দেশ্যবিহীন হবে না। একটু সময়ও উদ্দেশ্যহীনভাবে ব্যয় হবে না। থাকতে হবে আবেগ। কেননা আবেগে পরিপূর্ণ অন্তরই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে। পরাজয় অগ্রহণযোগ্য বলেই পরাজয়কে জয়ে রূপান্তর না করা পর্যন্ত ক্লান্ত হওয়া যাবে না। বড় কিছু যারা করতে চায় তাদের মধ্যকার মানসিক বিপ্লব তাদের জীবনাচরণে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। কঠিন সংগ্রামে যারা আত্মনিয়োগ করে তাদের জীবনটা কখনোই সাধারণ, গতানুগতিক, স্বাভাবিক হওয়াটা যৌক্তিক নয়।
অলসরা ভাগ্যে বিশ্বাস করে নিষ্ক্রীয় হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে কর্মঠরা ভাগ্য তৈরি করে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে। নিজেকে উন্নত করার জন্য এত সময় ব্যয় করতে হবে যাতে অপরের সমালোচনা করার জন্য সময় অবশিষ্ট না থাকে। এত বড় হতে হবে যাতে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কাবু করতে না পারে, এত মহান হবে যেন ক্রোধ না বশীভূত করতে পারে। যদি বড় কিছু করতে চান স্বাভাবিক জীবন যাপন করা থেকে বিরত থাকুন। একজন সংগ্রামী মানুষকে অস্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতেই হবে।
জ্যানেট কোল বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন লোক দেখান যে নিজেকে সাধারণ লোক বলে মেনে নিয়েছে এবং আমি আপনাকে একজন লোক দেখাবো যার ভাগ্যে অসাফল্য সুনিশ্চিত।’
নীরবতা ভেঙ্গে সক্রিয় কর্মী ও কর্মতৎপর হোন। মৌল মানবীয় গুণসম্পন্ন, সমাজ সচেতন, ব্যক্তিত্বের বিকাশে উদ্যোগী হউন। ইন্টার পার্সোনাল স্কিল, স্পোকেন অ্যান্ড রিটেন কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ান। লিডারশিপ ও টিমওয়ার্ক দক্ষতা আয়ত্তে আনুন। বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, শুধু পাঠ্যবই নয়, বিশ্বকে জানুন। মানসিক প্রস্তুতি নিন, ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ ঘটান, উদ্দেশ্য ঠিক করুন, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করুন, প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করুন, সময়ানুবর্তী হোন। নিজের যোগ্যতার প্রকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।