দৃষ্টিটা গাছে বসা পাখির উপর এমন গভীরভাবে আটকে গিয়েছে যে পুরো গাছটা আর দেখাই হয়নি। পুরো গাছটি কিংবা বিশাল আকৃতির রূপ সৌন্দর্য উপভোগেরই সুযোগ হয়নি। হয়তো প্রকৃতির বিশালতা সম্পর্কেই ধারণা নেই ফলে পাখিটা দেখতে পেরেই যে তৃপ্ত। আর অতৃপ্তিও নেই।
দৃষ্টি বিশাল হয়ে গেলে সংকীর্ণ কিছুতে তৃপ্ত থাকা অত সহজ নয়। মনের চোখ বা অর্ন্তচক্ষু যার শক্তিশালী নয় তার সীমিত পরিসরেই সক্রিয় অস্তিত্ব। তাই অজ্ঞতার কারণে, অযোগ্যতা ও দুর্বলতা ও অসচেতনার কারণে যে তৃপ্তির সৃষ্টি হয় সেই ধরনের প্রশান্ত আত্মাকে সৌভাগ্যবান বলা যুক্তিহীন।
দীর্ঘ সফর। ওরা দুইজন। গাড়িতে হয়তো পাশাপাশিই বসেছে। একজন সুন্দর প্রকৃতির নয়ন জুড়ানো দৃশ্য দেখেছে। আকাশের বিষণ্নতা, প্রকৃতির উদারতা দেখে মুগ্ধ হয়েছে। মাঝে মাঝে দেশের গান শুনেছে। শ্রবণেন্দ্রিয়, দর্শনেন্দ্রিয় ও চিন্তাশক্তির আধার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করেছে। আরেকজন নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।
একজন রাস্তায় বের হয়ে মানুষের সাথে কথা বলেছে, তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা জেনেছে। সেখানকার সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনাচরণ বুঝেছে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেছে। দুঃখী অসহায় কাউকে ফেলে সামর্থানুযায়ী সহযোগিতা করেছে, সান্ত্বনা দিয়েছে। হতাশ কাউকে আশার বাণী শুনিয়ে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করেছে। কর্মব্যস্ত থেকে সময়টা কাটিয়েছে। আরেকজন চোখ দিয়ে দেখেছে অনেক কিছু। এ দেখার সাথে মন ছিল না। চিন্তাশক্তির যোগসূত্র ছিল না।
সাদা মাঠ দর্শন, কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। নিঃসন্দেহে দু’জনকে একই সারিতে ফেলা যাবে না। কেউ মায়ের পেট থেকে বের হয়, পরে একসময় মাটির পেটে ঢুকে। এর মাঝে অতিক্রান্ত সময়টা চোখ মুখ বুঝে কাটায়। আরেকজন পেট থেকে কবরে যাবার পথে অনেক কর্মব্যস্ত থাকে, সর্বশক্তি ব্যবহার করে, থাকে কর্মতৎপরতা ও স্বতঃস্ফুর্ততা, এই যে কর্ম এটিই মূলত দু’জনের মধ্যকার শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় করে, দু’জনকে আলাদা করে।