উপর থেকে নিচের দিকে চাপিয়ে দেয়ার যে দৃষ্টিভঙ্গি এটা সবসময় যৌক্তিক নয়। পলিসি নির্ধারণে, নীতিমালা বা কর্মপদ্ধতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে নীচের দিকে সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা রেখে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। উপর থেকে নীচের দিকেই কোনো সংস্থা, দল বা প্রতিষ্ঠানে কর্ম ধারার আদর্শ প্রবাহিত হয়। উপরে থেকেই নীচের দিকে চিন্তা- চেতনা গড়িয়ে পড়বে তবে সেটা চাপানো বা বাধ্য করার চেয়ে-গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করা তথা নতুনকে মেনে নেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি বেশি ফলপ্রসূ নিঃসন্দেহে।
বাধ্য-বাধকতার নিরুপায় হয়ে কিছু মানা, অনুশীলনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে আর বুঝে শুনে, স্বেচ্ছায় হাসিমুখে কোনো পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির দিকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে খাপ খাইয়ে নেয়ার ফলাফলটা একই রকম হয় না। যারা অধঃস্তন তারা উর্ধ্বতনদের অনুকরণ করে, আর ঊর্ধ্বতনরা অধঃস্তনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই প্রভাবটা, ক্ষমতাটার অনেক সময় অপব্যবহার হয় এতেই সামষ্টিক পর্যায়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।
তাই উভয় পক্ষেরই প্রয়োজন সচেতনতার। বিচার-বিবেচনা করার বোধ ও আন্তরিকতা সম্পন্ন বিবেকবান ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। কর্মধারার আদর্শ গ্রহণের ভাগ্য অনেক মানুষের নানা মতের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। পরামর্শ হতে পারে, তবে সিদ্ধান্ত উঁচু স্তরের সুবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে পরামর্শের ভিত্তিতে হওয়াটা ভালো। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনেক সময়। সেক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
যৌথ উদ্যোগ, কিংবা সামষ্টিক পরিসরে বৃহৎ কোনো প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে ভুল সিদ্ধান্ত অনেক সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সিদ্ধান্ত সঠিক বা ভুল বা নির্ভুল হওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানকারীরা দায়ী নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরাই দায়ী থাকবে। কেননা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিই বিবেচনা করবেন অনেকের অনেক ধরনের পরামর্শের মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য বা উত্তম।
সিদ্ধান্ত প্রদানকারী যদি পরামর্শদানকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হন, নিজস্ব সামর্থ্যরে আলোকে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার পরিপক্ক না হন তবে সেটি বড়ই অমঙ্গলজনক হবে। আর কি করা হবে, কি করা উচিৎ, কি করা হবে না, কিভাবে করতে হবে এসব ব্যাপারে যদি চূড়ান্ত নীতিমালা না থাকে, নীচের দিকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। যে বিশৃঙ্খলা পতনকে অনিবার্য করে তুলবে। তাই পূর্বসতর্কতা ও সচেতনতাই কাম্য।