কৃপণতা সামাজিক অপরাধ

বুখল বা কৃপণতা একটি মন্দ স্বভাব। অতিরিক্ত লোভ-লালসা থেকে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়; যা মানুষকে পাপাচারে ডুবিয়ে দেয়, ধ্বংস ডেকে আনে। কৃপণতা সফল আর সমৃদ্ধ জীবনের অন্তরায়। কার্পণ্য উত্তমের পরিপন্থী অভ্যাস।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

বুখল থেকে শুহ

বুখল বা কার্পণ্য অর্থে আরও কোরআন-হাদিসে ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো- ‘শুহ।’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ- কৃপণ হওয়া, কমে যাওয়া, লোভ করা ইত্যাদি। শব্দটি যখন নাফসুন শব্দের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করে ‘শুহ্হান নাফস’ বলা হয়, তখন তা দৃষ্টি ও মনের সংকীর্ণতা, পরশ্রীকাতরতা এবং মনের নীচতার সমার্থক হয়ে যায়। যা কৃপণতার চেয়েও ব্যাপক অর্থ বহন করে।

কৃপণের পরিচয়

দানশীলতার বিপরীত স্বভাব হচ্ছে কার্পণ্য। যারা কার্পণ্য করে তারাই কৃপণ। কৃপণ শব্দের অর্থ অত্যন্ত ব্যয়কুন্ঠ, কিপটে, কঞ্জুস, খরচ না করে কেবল সঞ্চয় করতে চায় এমন লোক। এরা লোক সমাজে নিন্দিত, ঘৃণিত এমনকি উপহাসের পাত্রও বটে।

কৃপণের বৈশিষ্ট্য

কৃপণের মন এতই সংকীর্ণ যে, তার কাছে আল্লাহর রহমতের আশার চেয়ে তার সঞ্চিত সম্পদ শেষ হয়ে যাবে যে আশংকাই প্রবল, যদ্দরুণ নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত খরচ করেনা। আর দানের বেলায় তো তার মন চায়ই না।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: বলুন, যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে থাকতো, তবুও ব্যয়িত হয়ে যাওয়ার আশংকায় অবশ্যই তা ধরে রাখতে। মানুষতো অতিশয় কৃপণ। [বনী ইসরাইল-১০০] এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়। [নজম-৩৪]

কৃপণ ঘৃণিত আল্লাহ কাছে

কৃপণতা আল্লাহ পছন্দ করেন না, শাস্তিরও বিধান রেখেছেন। কৃপণতা মহান প্রতিপালকের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য কারীদের জন্য সম্পদ অচিরেই কিয়ামত দিবসে অকল্যাণকর হবে।

আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।’ -সূরা আল ইমরান: ১৮০

দেখ, তোমরাইতো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে। যারা কার্পণ্য করে তারাতো কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’  যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না। [মুহাম্মদ-৩৮]

উদ্ধত, অহঙ্কারী, কৃপণ ও কার্পণ্যে প্ররোচনা দানকারীদের আল্লাহ অপছন্দ করেন। (ধর্ম বিধান থেকে) কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলেও (তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি নেই। কারণ) আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সদাপ্রশংসিত।’ (সূরা হাদিদ ২৩-২৪)

কৃপণতা পছন্দ করেন না রাসুল

জগতের সেরা সফল শিক্ষক মুহাম্মদ সা. মানুষকে বলে গেছেন কৃপণতা থেকে বিরত থাকতে।

কৃপণতা মুমিনের স্বভাব নয়। মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। মিশকাত, হাদিস : ১৮৭২।

যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে সে-ই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু দাউদ, হাদিস : ২৫১১

কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাসুল (সা.)। আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৯৬।

রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা এই অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৪০।

কৃপণের ঠিকানা জাহান্নাম

কার্পণ্যের জন্য কোরআনে কারিমে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা শুহ বা মনের সংকীর্ণতা, কার্পণ্য থেকে মুক্ত থেকেছে, তারাই সফলকাম হয়েছে।’ –সূরা তাগাবুন: ১৬

আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা প্রবৃত্তির লালসা ও মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত রয়েছে, তারাই পরকালে সফলকাম হবে।’ –সূরা তাগাবুন ১৮।

রাসূল সা. বলেছেন, ‘কৃপণ ব্যক্তি জান্নাত হতে দূরে, আল্লাহ হতে দূরে, কিন্তু জাহান্নামের নিকটবর্তী।’–সুনানে তিরমিজি

‘জাহান্নাম সেদিন উচ্চস্বরে ডাকবে তাদের, যারা ন্যায় থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যারা ধন-সম্পত্তি সংগ্রহ করে (সৎ কাজে ব্যয় না করে) কৃপণের মতো সংরক্ষিত করে রেখেছিল।’ (সূরা মা’আরিজ ১৭-১৮)

কৃপণ অন্যের অধিকার স্বীকার করে না

যারা অর্থলোভী মূলত তারাই কৃপণ হয়।  কৃপণতা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি অন্যের অধিকার স্বীকার করে না। সে চায় দুনিয়ার সবকিছু সে একাই লাভ করুক। সম্পদ জমাতে জমাতে এক পর্যায়ে মানবিক প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি কোনো কিছুই আর থাকে না। এমনকি নিজের লোককেও চরম বিপদের সময়ে দান করতে সে কুন্ঠাবোধ করে।

কৃপণতা সামাজিক অপরাধ

কৃপণতা সামাজিক অপরাধ। এটি সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে। ফলে মানুষের অন্তরেও কৃপণ ব্যক্তির ঠায় নেই। কৃপণতা সবখানে প্রত্যাখিত ও বঞ্চিত এবং কলঙ্কিত।

কৃপণতা এমন সামাজিক ব্যাধি; যা একটি সুস্থ সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে নষ্ট করে। যেমন  ভ্রাতৃত্ববোধ শেষ করে দেয়। অথচ এটা ছাড়া কখনও একটি সুস্থ-সুশীল সমাজ গঠিত হতে পারে না।

মানবতা বিবর্জিত কর্ম কৃপণতা

মানবতার পথে অন্তরায় তৈরি করে। মানবতা বিবর্জিত কর্ম হলো কৃপণতা। সত্য সমাজ গঠনে বড় বাধা তৈরি করে মানুষের এ রোগ। কৃপণতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিছু দুঃখী মানুষের জীবন। মানবতা বিবর্জিত এ ধ্বংসত্মক পাপ; ব্যক্তি জীবনে সুফল বইয়ে আনতে অক্ষম।

কৃপণ অর্থের আবর্তন রুখে দেয়

লোকদের মধ্যে এতটুকু ভারসাম্য থাকতে হবে, যাতে তারা কৃপণ হয়ে অর্থের আবর্তন রুখে না দেয় এবং অপব্যয়ী হয়ে নিজের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস না করে ফেলে। এ দু’টির মাঝামাঝি তাদের মধ্যে ভারসাম্যের এমন সঠিক অনুভূতি থাকতে হবে, যার ফলে তারা যথার্থ ব্যয় থেকে বিরত হবে না। আবার অযথা ব্যয়জনিত ক্ষতিরও শিকার হবে না।

জীবনকে ভারসাম্যহীন করে কৃপণতা

স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা পরিহার করে নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে প্রতিটি সৎকাজে এবং ইসলাম ও সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ব্যয় করতে হবে।  ইসলামি সমাজে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পরস্পরকে আর্থিক সাহায্য তথা ঋণ দেয়া অপরিহার্য কর্তব্যরূপে চিহ্নিত হবে। ইসলাম একটি ভারসাম্য জীবন ব্যবস্থা হিসেবে জীবনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য বা মধ্যমপন্থার শিক্ষা দিয়েছে।

‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃপণ হয়ো না বা অন্যকে সাহায্য করতে অনিচ্ছুক হয়ো না। আবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে মুক্ত হস্ত হয়ে (তোমরা সামর্থে্যর) সীমা ছাড়িয়ে যেও না। যদি করো, তাহলে তুমি নিন্দিত বা নিঃস্ব হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৯)

ইসলামে কার্পণ্য হারাম

ইসলামি শরিয়তে পরিভাষায় কৃপণতা বলা হয়, যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা কারও ওপর ওয়াজিব; তা না করাকে। এ কারণেই কার্পণ্য হারাম এবং এ জন্য কোরআনে কারিমে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যে সব ব্যয় ওয়াজিবের আওতাভুক্ত নয়, সে সব ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য সাধারণ অর্থে তাকেও কার্পণ্য বলা হয়। এ ধরনের কার্পণ্য হারাম নয় তবুও এটি উত্তমের পরিপন্থী এক অভ্যাস।

দান করা অপছন্দ করে কৃপণ

কৃপণ চায় অন্য কেউ যাতে কিছু না পায়। নিজে তো দান করেই না বরং সে অন্যের দান করাটাও পছন্দ করে না। তার লালসার দৃষ্টি নিজ সম্পদের বাইরে অন্যের সম্পদের ওপর গিয়ে পড়ে। সে চায় চারদিকে যত ভালো বস্তু আছে তা সে দু’হাতে লুটে নেবে অন্যরা কিছু পাবে না।

আল্লাহতা’লা মানুষকে সম্পদ দান করেছেন। সম্পদের হক আদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। দান করতে উৎসাহিত করেছেন। অভাবগ্রস্থদের জন্য ব্যয় করতে সামর্থ্যবানদের আদেশ করেছেন। কিন্তু কৃপণের জন্য তা পাহাড়ের চেয়ে ভারি বোঝার মতো।

কৃপণতা ধ্বংস করে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কৃপণতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কারণ এটিই তোমাদের পূর্বের লোকদের ধ্বংস করেছে। এটিই তাদেরকে রক্তপাত ঘটাতে এবং অপরের মর্যাদাহানি নিজের জন্য বৈধ করতে প্ররোচিত করেছে। এটিই তাদের জুলুম করতে উদ্বুদ্ধ করেছে তাই তারা জুলুম করেছে। পাপের নির্দেশ দিয়েছে তাই পাপ করেছে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে বলেছে তা তারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

কৃপণের শাস্তি কষ্টদায়ক

কৃপণতাকে অকল্যাণকর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ  বলে উল্লেখ করে এর শাস্তি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা স্বর্ণ-রোপ্য জমা করে রাখে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও।’ -সূরা তওবা: ৩৪

কৃপণতা মুমিনের স্বভাব নয়

কৃপণতা একটি মন্দ স্বভাব। তা শুধু মানুষের অভাবই বাড়িয়ে দেয়। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, তারা যেন সম্পদগুলোকে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করছে। রাসুল (সা.) কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বনু সালামা! তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ্দ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি। ’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৯৬)

কৃপণের সম্পদ সাপ হয়ে দংশন করবে

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা থাকতে পারে না—কৃপণতা ও অসদাচরণ। (মিশকাত, হাদিস : ১৮৭২)। সম্পদ আল্লাহর দান। আল্লাহর দেওয়া সম্পদ তার দেওয়া নিয়ম মেনেই পরিচালিত করতে হবে। অন্যথায় নিজের যত্নে গড়া সম্পদই সাপ হয়ে নিজেকে দংশন করবে।

কৃপণ নিকৃষ্ট মানুষ

রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃপণতার অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৪০)

তিনি বলতেন যে মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে সে-ই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫১১)

কৃপণ হতে উৎসাহ যোগায় শয়তান

কৃপণতা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর বখিল বা কৃপণ হতে উৎসাহ যোগায়। অপরদিকে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।

‘কিন্তু যখনই তিনি তাঁর অনুগ্রহ-সম্পদে ওদের ধন্য করলেন, তখন ওরা কৃপণের ন্যায় ধন-সম্পত্তি আঁকড়ে ধরল এবং (আল্লাহর সঙ্গে) অঙ্গীকার ভঙ্গ করল। ’ (সূরা তওবা ৭৬)।

 কৃপণের জন্য দুর্ভোগ

‘যখনই মানুষ অভাব বা বিপদে পড়ে তখন হা-হুতাশ করে। আবার যখন স্বচ্ছলতা বা সৌভাগ্য আসে তখন হয়ে যায় স্বার্থপর, অতিকৃপণ।’ (সূরা মা’আরিজ ২০-২১)

‘(দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে) যে (কৃপণের মতো) অর্থ জমায় আর বার বার তা গণনা করে এবং একে নিজের রক্ষাকবচ মনে করে।’ (সূরা হুমাজাহ ২)

 কৃপণরা অকৃতজ্ঞ

‘আর যারা নিজেরা কৃপণ এবং অন্যকে কৃপণতা করতে উৎসাহিত করে (বা দানে নিরুৎসাহিত করে) এবং আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ গোপন করে, আল্লাহ তাদেরও অপছন্দ করেন। এ ধরনের অকৃতজ্ঞদের জন্যে আমি অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।’ (সূরা নিসা ৩৭)

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকেই কৃপণতা করছ। (আল্লাহর পথে) কার্পণ্য করে, তারা তো আসলে নিজেদের প্রতিই কার্পণ্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত আর তোমরা সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। যদি তোমরা (আল্লাহর পথ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেবেন। আর তারা তোমাদের মতো আচরণ করবে না।’

কৃপণতা  সমৃদ্ধির পথে অন্তরায়

আল্লাহ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন- সম্পদ ব্যয় করলে তিনি অনুগ্রহ করে সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেবেন। এর বিপরীতে শয়তানের সতর্কবার্তা- সম্পদ যদি ব্যয় করে ফেল তাহলে তো গরিব হয়ে পড়বে, তাই নিজ সম্পদকে আঁকড়ে ধর, কৃপণতা অবলম্বন কর! কথাটি এভাবেও বলা যায়- কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে সে মানুষকে সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।

স্বভাবজাত কৃপণতাকে জয় করতে হবে

সম্পদ ব্যয়ের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে ক্ষমা ও দয়ার ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে স্বভাবজাত কৃপণতাকে জয় করতে হবে। নিজের প্রয়োজনে, অন্যের প্রয়োজনে এবং ইবাদতের জন্যে, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে মুমিনকে নিজ উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করে যেতে হবে।

কৃপণের পরিণাম

যারা নিজেরাও কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তা গোপন করে। আমি এরূপ অকৃতজ্ঞদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। [নিসা-৩৭]

দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও বার বার তা গণনা করে; সে ধারণা করে তার অর্থ সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে; কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (-জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুনে)। [হুমাযা: ১-৪]

কৃপণতা শয়তানের কুমন্ত্রণায় কাজ

কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল। সে মানুষের অন্তরে সম্পদের মোহ সৃষ্টি করে, দারিদ্রের ভয় প্রকট করে তোলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাপাকের ইরশাদ : শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [বাকারা-২৬৮]

কাজে আসবে না কৃপণের সম্পদ

সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজপথ। (পক্ষান্তরে) কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। এবং তার সম্পদ কোন কাজে আসবেনা, যখন যে ধ্বংস হবে। [লাইল: ৫-১১]

 

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *