অসততা ও বোকামি দুটোই অসামাজিকতা। অসৎ লোক কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে জিতে যান। আর বোকা লোক সরলতার কারণে ঠকেও যান। অসৎ চালাক অন্যের উপকার করতে চাইলে করতে পারেন কিন্তু বোকা উপকার করতে যেয়েও ক্ষতি করেন। অসতর্কতা আর সরলতা এক নয়; সরলতা মানে সহজ পথে চলা আর অসতর্কতা মানে অসচেতনতা।
স্বার্থপররাই বেশি শো অফ করেন। প্রতি মূহুর্তে অন্যকে বুঝান তার জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন।সকল দায়িত্ব মাথায় নেয়ার এবং নিজেকে উজার করে বিলিয়ে দেয়ার জানান দেন। উচ্ছ্বাসগুলো ও অন্তর্লীন বেদনাগুলো প্রকাশ করে অন্যের হৃদয় জয় করেন।
নীরব পরিশ্রমের মূল্য সাধারণত কেউ দেয় না। ত্যাগ ও বিনয় মূখ্য বিষয় নয়। অন্তর্মূখীতার কোনো স্থান এই সমাজে নেই।নিজের ঢোল নিজে না পিটালে তাকেও অসামাজিক আখ্যা পেতে হয়। অন্যকে সমাজচ্যুত করতে পারলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়া সামাজিক মানুষগুলো আসলে কতটা সামাজিক?
নীরবে নিভৃতে কাজ করে যেতে পছন্দকারী নিজের অবদান বুঝাতেই ব্যর্থ হন; সমাজও তাকে অহমিকা সম্পন্ন ভাবে। যত বেশি প্রদর্শন করবেন আবদ্ধ করে রাখা দেয়াল ততই দূরে সরে যাবে।নিজেকে আড়ালে রাখতে চাইলে ভেতরকে দেখার চেষ্টা করবে না কেউ। কৃত্রিমতা বাড়িয়ে, অভিনয় করে, হিপোক্রেট হয়ে আশেপাশের মানুষগুলোকে নিজের গুরুত্ব যিনি বুঝিয়ে দিতে পারেন তিনিই মূল্যবান হয়ে ওঠেন ।
কোনটা অভিনয় আর কোনটা অকৃত্রিম তা বোঝার ক্ষমতা অধিকাংশেরই নেই। মুখে প্রশংসা শুনে মনের ভেতর ধারালো ছুরিতে রক্তাক্ত করার নীলনকশা সাজানোর কথা চিন্তাও করেন না। যারা বড্ড বোকা, বেশি অভিমানী, ভালোবাসা চায় না, কামনা চায় না, খ্যাতি চায় না; তারা মনোযোগও চায় না। ফলে তাদের আবেগ মূল্যায়নও হয় না।
অসামাজিক বা আনসোস্যাল কিংবা অ্যান্টিসোস্যাল বা সমাজবিরোধী শব্দগুলো আমরা ব্যবহার করি।সমাজবিরোধীরা অপরাধ ও অপকর্মের মাধ্যমে সমাজের নিয়ম লঙ্ঘন করে, সমাজের স্থিতি ও শান্তি নষ্ট করে। তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও বিতাড়িত হন না বা অসামাজিক তকমাও পান না; সমাজের বড় দুর্বৃত্ত বড় স্থানটি দখল করেন। অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল করা, যেকোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা, এলাকাকে কব্জায় রাখার জন্য দুর্বৃত্তদের চাহিদা ও কদর বেড়ে গেছে। এরা সমাজে অসামাজিক বা আনসোস্যাল বলে পরিগণিত হন না, যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি ও ইজ্জত নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকেন; সমাজেও সমাদৃত হন; সমাজে দাদাগিরিও করেন।
অসততা ও বোকামি দুটোই অসামাজিকতা
