প্রচুর রোগী, প্রচণ্ড ভিড়। তাই রোগের বর্ণনা শুনে না শুনেই দ্রুত রোগীকে বিদায় করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে প্রেসক্রিপশন, নেয়া হচ্ছে টাকা। লেখা হয়েছে অনেকগুলো টেস্ট করাতে। কোন্ ক্লিনিকে টেস্ট করাবে, কোন্ ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনবে, কোন্ কোম্পানীর ঔষুধ তাও বলতে ভুলেনি। রোগীকে সাক্ষাতে যে সময়টুকু দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই ব্যয় হয়েছে তাতে।
বড় ডাক্তার বলে কথা। নামি দামি চিকিৎসক। রোগী নিজের সমস্যার কথা, রোগের কথা ঠিকমত বলতে না বলতেই চিকিৎসা পত্র পেল। আসলে অভিজ্ঞ ডাক্তার বলে কথা। এত কিছু শুনা বুঝা লাগে না। চোখ মুখের দিকে তাকিয়েই রোগ বুঝে ফেলেন। এভাবেই রোগীর মানসিক তৃপ্তির চিন্তার আবির্ভাব। ডাক্তার বেশ আনন্দের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণায় কাতর মুখগুলো দেখে করুণা হচ্ছে এমন মায়ার লক্ষণ ফুটে উঠছে না চেহারায়। যত রোগী তত বেশি টাকা।
আবার ক্লিনিক থেকে, ফার্মেসী থেকে, ঔষুধ কোম্পানী থেকে বাড়তি আয়, আনন্দ হওয়ারই কথা। অথচ, দরিদ্র, ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত, জীর্ণ, শীর্ণ দেহের মানুষগুলো বড় কষ্টে চিকিৎসা করতে এসেছে, অনেক পরিশ্রম ও কষ্টে জমানো টাকা ডাক্তারকে দিয়ে মনে মনে ভাবে, আমি গরীব মানুষ, আমার এই ৫০০ টাকা কী না নিলে পারত না। আমার কথাও তো ব্যস্ততার কারণে ভাল করে শুনলো না। যদি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে পারতাম!-দীর্ঘশ্বাস বেরোয়।
বিপদগ্রস্তকে সহযোগিতা করুন;লোভী হবেন না। স্বার্থের প্রেমে মানবপ্রেমের বিলুপ্তিও ঘটে। বর্ষাকালে চারদিকে থৈ থৈ করে পানি। আষাঢ়ের ঢল নেমে জল এসে নদী-নালা, খাল-বিল উপচে ঘরবাড়ি পর্যন্ত স্পর্শ করে। দুঃখের শেষ নেই। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে মানুষ বড়ই অসহায়। শিশু, নারী ও বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়াদের করুণ অবস্থা সে কী মর্মান্তিক দৃশ্য। আর্তমানবতার করুণ সে চিত্রে সবারই ব্যথিত হবার কথা। কিন্তু কী নিষ্ঠুর, নির্মম বাস্তবতা। এসব অসহায় বিপন্ন মানবতার জন্যে বরাদ্দ ত্রাণ সামগ্রীও চুরি করার আনন্দের স্বাদ আস্বাদন করে অনেকে।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন জিনিস চুরি করতে দানবীয় পশুত্ব শক্তির কার্যকর তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়।পুকুরের বাঁধ ভেঙ্গে যখন মাছ ছড়িয়ে পড়ে সে মাছ ধরার আনন্দ অনেকের উৎসবে পরিণত হয়। অথচ এ পুকুরটিই যার বেঁচে থাকার অবলম্বন, আয়- রোজগারের একমাত্র মাধ্যম তার কলিজাটা তো ছিড়ে যায়। তার দুঃখ কষ্টে একটু সহানুভূতি ও সমবেদনা জানায়ে সান্ত্বনাও দেয় না কেউ। সামাজিক বিশৃঙ্খলা-মারামারি এসব অশান্তি অনেকের জন্য অভিশাপ মনে হলেও কেউ কেউ আশীর্বাদ মনে করে। মামলা- মোকদ্দমা না হলে আইনজীবীদের উপরি আয়টা ভাল হয় না।
বেশি বেশি টাকা-পয়সা উপার্জন হলেই শান্তি। অথচ কত অশান্তির মধ্য দিয়ে এই শান্তি হাসিলের সুযোগ আসছে সেটি কী চিন্তার জগতে থাকে? অনেক সময়ই থাকে না। তবে হ্যাঁ বাস্তবতাকে তো স্বীকার করতেই হবে। তাই বলে এটা বুঝার সুযোগ নেই আমি বিভিন্ন পোশাকে তুচ্ছ জ্ঞান করলাম। সবাই তো আর একরকম নয়, ভালো-মন্দ থাকবেই। যারা এমন তাদের হয়তো সমালোচনা হল, ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। আমি আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হউক সে প্রত্যাশা করি। পেশা থাকবে, আয়-উপার্জন থাকবে তবে মানব দরদী চেতনা যাতে বিলুপ্ত না হয়। মানবপ্রেম ভুলে অদ্ভূত আনন্দ পাওয়া মোটেই কাক্সিক্ষত নয়, এটা অমানবিকতা, অযৌক্তিক।