একটি মাছি সাধারণত একশ’র বেশি প্যাথোজেন বহন করেন। প্যাথোজেন হলো মাইক্রো অর্গানিজম যা রোগ বালাই সৃষ্টি করে। অনেক অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসার পরে মাছি উড়ে এসে আপনার খাবারে বসে। ফলে খাবারে মাছির শরীরে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং প্যারাসাইট এগ লেগে যায় যা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নোংরা মাছি রোগ জীবাণুর অন্যতম বাহক হওয়ায় বাড়িতে, অফিসে, রেস্টুরেন্টে বা রাস্তায় যে মাছি প্রতিনিয়ত দেখছেন তা কিন্তু আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। আপনি এতদিন ধরে যা জেনেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর।
মাছি কী করে?
খুব সাধারণভাবে চিন্তা করলে মনে হয় মাছি হয়তো খাবার খেতে বসেছে। আরেকটি ভালো করে দেখলে মনে হতে পারে একটি পায়ের সঙ্গে আরেকটি পা ঘষছে। কিন্তু মাছি মূলত বমি করে। মাছি খাবারে বসে শেষবার গ্রহণ করা খাবারটি বমি করে খাবারটাকে তরল করার জন্য। তরল করে নিলে খাবার গ্রহণ করা সহজ হয় মাছির জন্য। মাছির পায়ে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়ার থেকেও বমিতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া আরও ভয়াবহ।
কী করা উচিৎ
মাছি খাবারে বসলেই যে পুরো খাবারটি ছুড়ে ফেলে দিতে হবে এমনটা নয়। খাবারের যেই অংশে বসেছে শুধু সেই অংশটি ছিঁড়ে ফেলে দিলেই আপনি নিরাপদ। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এসব ব্যাকটেরিয়া সাধারণত কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তবে অবশ্যই সাবধান থাকা জরুরী। বাইরের খাবার এড়ানোর পাশাপাশি ঘরের খাবারও ঢেকে রাখুন যেন মাছি বসতে না পারে খাবারে।
পেন স্টেটের গবেষকরা ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর এবং আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১১৬ টি ব্লোফ্লাই এবং হাউজফ্লাই সংগ্রহ করেন। শহরের খাবারের বাজার, হাসপাতাল, গ্রামের খামার এবং বুনো পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন ধরনের মাছি সংগ্রহ করেন তারা। বুনো পরিবেশ থেকে যে মাছি ধরা হয়েছে সেগুলো মাছিদের এক কলোনি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, সংগৃহিত সব ধরনের মাছিদের দেহ বিশেষ করে বুনো মাছিদের দেহ ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ। তাদের দেহে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা মানবদেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।
অবশ্য যেসব ব্যাকটেরিয়া তারা বহন করে চলে তাদের সবগুলোই মানুষকে টার্গেট করে না। তবে হেলিকোবাক্টার পাইলোরি আপনার বছরের পর বছর বাস করতে পারে। এটা আলসারসহ অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাছিবাহিত ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীতে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এই সংক্রমণের প্রতি আপনার দেহ কতটা সংবেদনশীল তার ওপর নির্ভর করেও জীবাণু হানা দেয়। তবে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের পেটে এই ব্যাকটেরিয়া আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
এসব মাছিদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের পাখা এবং পায়ে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। এই দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়েছেন যে, শহুরে মাছিগুলোর দেহে আরো বেশি সংখ্যক এবং শক্তিশালী সব জীবাণু অবস্থান করে। মাছি যে জীবাণু বহন করে তা অনেক আগে থেকেই মানুষ জানে। কিন্তু এগুলো যে কতটা ভয়াবহ তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়নি। যত নোংরা স্থানেই তাদের চলাফেরা। কাজেই মাছিদের নিয়ে যতটুকু বাজে ধারণা আপনার রয়েছে, তা যে আরো অনেক বেশি মারাত্মক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইয়াহু ও চ্যানেল আই অনলাইন